গুরু মহারাজের অন্তর্ধানের পর আমাদের পুরোনো গুরুভাইদের সাথে প্রায় আর কোনো যোগাযোগ-ই ছিল না – তবু যাইহোক, ফেসবুকের মাধ্যমে এখন অনেক গুরু-ভাইবোনেদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে ! অথচ মাত্র কয়েক বৎসর আগে অর্থাৎ যখন গুরুমহারাজ শরীরে ছিলেন তখন আমরা প্রত্যেক গুরু ভাই-বোন, প্রত্যেকের ভালো-মন্দের খবর রাখতাম, প্রত্যেকের দুঃখে দুঃখী হতাম, প্রত্যেকের সুখে সুখী ! আর কি আশ্চর্য ! ঐ একটা মানুষের অভাবে এইভাবে এত এত মানুষ কিভাবে আবার মূল কক্ষ থেকে ছিটকে কে কোথায় চলে গেল !
গুরু মহারাজের শরীর ছড়ার আঠারো বছর পরে _ন’কাকার অন্তর্ধানের পর আবার একটু ছোট আকারে সেই একই দৃশ্যের অবতারণা হলো ! ন’কাকাকে কেন্দ্র করে যে ভক্তমন্ডলী গড়ে উঠেছিল (বীরভূমের বেশিরভাগ ভক্তেরা মাত্র ৫/৭ বছর পেয়েছিল) তাদেরও সকলের bonding-টা সবে সবে একটু দৃঢ় হয়ে উঠেছিল – কিন্তু যেন দমকা হওয়ায় হঠাৎ করে কেরোসিনের লম্ফ নিভে যাবার মতো – ভক্তমন্ডলীর সুখের হাট ভেঙে গেছিলো ! আবার তারা সবাই isolated – আবার তারা যেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিধির মধ্যে বাঁধা পড়ে গেছে – যেখান থেকে আর নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারছে না ! আবার আমরা সকলে মহামায়ার ঘোরতর মায়ায় আটকে গেছি ৷ আবার দীর্ঘদিন হোলো – কারোর সাথে কারোর দেখা নাই – কথাবার্তাও নাই, হয়তো ফোনে একটু-আধটু কথা, তাও কখনো-সখনো !
এত যে কথা বললাম – কিন্তু কেন বললাম তা নিশ্চয়ই পাঠককুল বুঝতে পারছেন ! বললাম এইজন্যেই যে, একজন মহাপুরুষের সাথে সাধারণ মানুষের পার্থক্যটুকু বোঝাতে ৷ সুতরাং সিদ্ধান্ত এটাই যে, সাধারণ মানুষের বুদ্ধি দিয়ে, বিশ্লেষণ দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে – মহাপুরুষদের বোঝা যায় না, বোঝার চেষ্টাও করা যায় না । আমরা সাধারন মানুষেরা আমাদের সামর্থ্য দিয়ে তাঁদেরকে বুঝতে পারিনা বলেই , হয় তাঁদেরকে মেনে নিই_তাঁদেরকে ভক্তি করতে শুরু করি_পূজা করতে শুরু করি অথবা তাঁদের বিরোধ করি, সমালোচনা করি, অবমূল্যায়িত করার চেষ্টা করি ! এইরকমটাই যুগ যুগ ধরে হয়ে চলেছে ৷
গুরুমহারাজ এই দ্বিতীয় দলের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন – ” এরা আহাম্মক ! কারণ তারা যে বলছে, ‘আমি মানি না অথবা আমি মানি’ – এখানে এই ‘আমি’ টি কে ? কোনো ব্যাক্তি, যে ‘আমি’-কে মানছে_ তার মানে সে তার নিজের অস্তিত্বে বিশ্বাস করছে , আর তাহলেই তো সে ‘আস্তিক’!
‘অস্তি’ অর্থাৎ ‘আছে’ – কিছু তো ‘আছে’, ‘তুই’ তো ‘আছিস’ – তাহলে ন + অস্তি _নাস্তি বা নাস্তিক কথাটা আসছে কোথা থেকে ! ‘তুই’ যখন ‘আছিস’ – তখন তোর চেয়েও শক্তিশালী, মহান, জ্ঞানী-গুণীরা রয়েছে ! আর ‘তারা’ যখন রয়েছে – তখন তাঁদের ভাবনা-চিন্তা, তাঁদের উপলব্ধি, তাঁদের বোধের জগৎ রয়েছে – আর তাঁদের সেই বোধের মূল্য ‘তোর’ বোধের চাইতে অনেক দামী, অনেক গ্রহণযোগ্য ! এইজন্যেই বলা হয়েছে – ” মহাজন’ যেন গতঃ স পন্থা শ্রেয়ঃ৷” নিজের মত জাহির না করে – মহাজ্ঞানী, মহাজনগন, যুগপুরুষগন যেসব কথা বলে গেছেন – সেইসব শিক্ষা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ !”
গুরু মহারাজ বিচার করতে শিখিয়েছিলেন – “এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, তার মধ্যে কত সুপারনোভা, সেগুলি আবার এক একটি গঠিত হয়েছে অনেক ‘নোভা’-র সমন্বয়ে ! এক একটি ‘নোভা’-র মধ্যে কত গ্যালাক্সি ! গ্যালাক্সির মধ্যে রয়েছে কত ছায়াপথ ! এক একটি ছায়াপথের মধ্যে কত কত নক্ষত্রমন্ডলী ! এক একটি নক্ষত্র মন্ডল এর মধ্যে কত সৌরমন্ডল ! এক একটি সৌরমণ্ডলের মধ্যে কত গ্রহ-উপগ্রহাদি ! সেই রকম একটি গ্রহ হল পৃথিবী ! সেই পৃথিবীর আবার কতগুলি মহাদেশ, কতগুলি মহাসাগর ! একটি মহাদেশের অন্তর্গত কতগুলি দেশ ! এক একটি দেশের কত প্রদেশ ! তেমন একটি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ – এই পশ্চিমবঙ্গের আবার কত জেলা – তার মধ্যে তোর জেলা – বর্ধমান ! সেই জেলায় কত মহুকুমা, একটি মহুকুমার মধ্যে আবার কতগুলি থানা, একটি থানার আন্ডারে একাধিক ব্লক – একটি ব্লকে কত পঞ্চায়েত ! একটি পঞ্চায়েতে আবার কত গ্রাম ! সেই গ্রামে কত ঘরবাড়ি – কত জমিজমা – মাঠ-ঘাট ! সেই এক একটা বাড়িতে কতগুলি মেম্বার – আর তাদের মধ্যে ‘তুই’- একজন ! তাহলে বুঝতে পারছিস কি – কত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তুই !”
বিরাট বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিচারে পৃথিবী গ্রহটাই কত ক্ষুদ্র – তাহলে সমগ্র পৃথিবী গ্রহের একজন মানুষ আরও কত ক্ষুদ্র ! মানুষের মনে এই রকম বিচার আসলে, কোন মানুষ নিজেকে ‘বিরাট কিছু’ বলে কখনোই জাহির করবে না । ‘অহংকারে উন্মত্ত পৃথিবী’-র যে চিত্র আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি – তার অবসানের অন্যতম পন্থা এই বিচার মার্গ ! বুদ্ধিমান মানুষ তার জড়ত্ব থেকে, অজ্ঞান অন্ধকারময় জগত থেকে মুক্ত হতে পারে শুধুমাত্র বিচার মার্গ অবলম্বন করেই !
অহংকার এবং অভিমানশূন্য মানবই তো মহামানব!
ন’কাকাকে যে কাছ থেকে দেখেছে – সেই দেখেছে যে অহংকার ও অভিমানশূন্য মানুষ ঠিক কেমনটি হয় ! তাঁর মধ্যে মঙ্গলময় শিবের শান্ত শক্তি ছিল, আবার তাঁর মধ্যে নটরাজের প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসলীলার শক্তিও লুক্কায়িত ছিল !!
তবু ন’কাকা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সারাজীবনটা কাটিয়ে গেলেন নিতান্ত আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ! গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যদি ন’কাকার সম্বন্ধে সত্যপ্রকাশ না করতেন –তাহলে আমরা যে কয়েকজন ,তাঁর কথা একটু-আধটু বলতে পারছি বা লিখতে পারছি – তাও হয়তো পারতাম না ! তবু তাঁকে যারাই দেখেছে ,তারা এইটুকু নিশ্চয় বলতো যে, “ন’কাকা একজন খুব ভালো মানুষ ছিলেন”, “ন’কাকা খুব নিরভিমানী ছিলেন”, “ন’কাকার অহংভাবটা একদমই ছিল না”। … [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজের শরীর ছড়ার আঠারো বছর পরে _ন’কাকার অন্তর্ধানের পর আবার একটু ছোট আকারে সেই একই দৃশ্যের অবতারণা হলো ! ন’কাকাকে কেন্দ্র করে যে ভক্তমন্ডলী গড়ে উঠেছিল (বীরভূমের বেশিরভাগ ভক্তেরা মাত্র ৫/৭ বছর পেয়েছিল) তাদেরও সকলের bonding-টা সবে সবে একটু দৃঢ় হয়ে উঠেছিল – কিন্তু যেন দমকা হওয়ায় হঠাৎ করে কেরোসিনের লম্ফ নিভে যাবার মতো – ভক্তমন্ডলীর সুখের হাট ভেঙে গেছিলো ! আবার তারা সবাই isolated – আবার তারা যেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিধির মধ্যে বাঁধা পড়ে গেছে – যেখান থেকে আর নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারছে না ! আবার আমরা সকলে মহামায়ার ঘোরতর মায়ায় আটকে গেছি ৷ আবার দীর্ঘদিন হোলো – কারোর সাথে কারোর দেখা নাই – কথাবার্তাও নাই, হয়তো ফোনে একটু-আধটু কথা, তাও কখনো-সখনো !
এত যে কথা বললাম – কিন্তু কেন বললাম তা নিশ্চয়ই পাঠককুল বুঝতে পারছেন ! বললাম এইজন্যেই যে, একজন মহাপুরুষের সাথে সাধারণ মানুষের পার্থক্যটুকু বোঝাতে ৷ সুতরাং সিদ্ধান্ত এটাই যে, সাধারণ মানুষের বুদ্ধি দিয়ে, বিশ্লেষণ দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে – মহাপুরুষদের বোঝা যায় না, বোঝার চেষ্টাও করা যায় না । আমরা সাধারন মানুষেরা আমাদের সামর্থ্য দিয়ে তাঁদেরকে বুঝতে পারিনা বলেই , হয় তাঁদেরকে মেনে নিই_তাঁদেরকে ভক্তি করতে শুরু করি_পূজা করতে শুরু করি অথবা তাঁদের বিরোধ করি, সমালোচনা করি, অবমূল্যায়িত করার চেষ্টা করি ! এইরকমটাই যুগ যুগ ধরে হয়ে চলেছে ৷
গুরুমহারাজ এই দ্বিতীয় দলের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন – ” এরা আহাম্মক ! কারণ তারা যে বলছে, ‘আমি মানি না অথবা আমি মানি’ – এখানে এই ‘আমি’ টি কে ? কোনো ব্যাক্তি, যে ‘আমি’-কে মানছে_ তার মানে সে তার নিজের অস্তিত্বে বিশ্বাস করছে , আর তাহলেই তো সে ‘আস্তিক’!
‘অস্তি’ অর্থাৎ ‘আছে’ – কিছু তো ‘আছে’, ‘তুই’ তো ‘আছিস’ – তাহলে ন + অস্তি _নাস্তি বা নাস্তিক কথাটা আসছে কোথা থেকে ! ‘তুই’ যখন ‘আছিস’ – তখন তোর চেয়েও শক্তিশালী, মহান, জ্ঞানী-গুণীরা রয়েছে ! আর ‘তারা’ যখন রয়েছে – তখন তাঁদের ভাবনা-চিন্তা, তাঁদের উপলব্ধি, তাঁদের বোধের জগৎ রয়েছে – আর তাঁদের সেই বোধের মূল্য ‘তোর’ বোধের চাইতে অনেক দামী, অনেক গ্রহণযোগ্য ! এইজন্যেই বলা হয়েছে – ” মহাজন’ যেন গতঃ স পন্থা শ্রেয়ঃ৷” নিজের মত জাহির না করে – মহাজ্ঞানী, মহাজনগন, যুগপুরুষগন যেসব কথা বলে গেছেন – সেইসব শিক্ষা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ !”
গুরু মহারাজ বিচার করতে শিখিয়েছিলেন – “এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, তার মধ্যে কত সুপারনোভা, সেগুলি আবার এক একটি গঠিত হয়েছে অনেক ‘নোভা’-র সমন্বয়ে ! এক একটি ‘নোভা’-র মধ্যে কত গ্যালাক্সি ! গ্যালাক্সির মধ্যে রয়েছে কত ছায়াপথ ! এক একটি ছায়াপথের মধ্যে কত কত নক্ষত্রমন্ডলী ! এক একটি নক্ষত্র মন্ডল এর মধ্যে কত সৌরমন্ডল ! এক একটি সৌরমণ্ডলের মধ্যে কত গ্রহ-উপগ্রহাদি ! সেই রকম একটি গ্রহ হল পৃথিবী ! সেই পৃথিবীর আবার কতগুলি মহাদেশ, কতগুলি মহাসাগর ! একটি মহাদেশের অন্তর্গত কতগুলি দেশ ! এক একটি দেশের কত প্রদেশ ! তেমন একটি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ – এই পশ্চিমবঙ্গের আবার কত জেলা – তার মধ্যে তোর জেলা – বর্ধমান ! সেই জেলায় কত মহুকুমা, একটি মহুকুমার মধ্যে আবার কতগুলি থানা, একটি থানার আন্ডারে একাধিক ব্লক – একটি ব্লকে কত পঞ্চায়েত ! একটি পঞ্চায়েতে আবার কত গ্রাম ! সেই গ্রামে কত ঘরবাড়ি – কত জমিজমা – মাঠ-ঘাট ! সেই এক একটা বাড়িতে কতগুলি মেম্বার – আর তাদের মধ্যে ‘তুই’- একজন ! তাহলে বুঝতে পারছিস কি – কত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তুই !”
বিরাট বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিচারে পৃথিবী গ্রহটাই কত ক্ষুদ্র – তাহলে সমগ্র পৃথিবী গ্রহের একজন মানুষ আরও কত ক্ষুদ্র ! মানুষের মনে এই রকম বিচার আসলে, কোন মানুষ নিজেকে ‘বিরাট কিছু’ বলে কখনোই জাহির করবে না । ‘অহংকারে উন্মত্ত পৃথিবী’-র যে চিত্র আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি – তার অবসানের অন্যতম পন্থা এই বিচার মার্গ ! বুদ্ধিমান মানুষ তার জড়ত্ব থেকে, অজ্ঞান অন্ধকারময় জগত থেকে মুক্ত হতে পারে শুধুমাত্র বিচার মার্গ অবলম্বন করেই !
অহংকার এবং অভিমানশূন্য মানবই তো মহামানব!
ন’কাকাকে যে কাছ থেকে দেখেছে – সেই দেখেছে যে অহংকার ও অভিমানশূন্য মানুষ ঠিক কেমনটি হয় ! তাঁর মধ্যে মঙ্গলময় শিবের শান্ত শক্তি ছিল, আবার তাঁর মধ্যে নটরাজের প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসলীলার শক্তিও লুক্কায়িত ছিল !!
তবু ন’কাকা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সারাজীবনটা কাটিয়ে গেলেন নিতান্ত আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ! গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যদি ন’কাকার সম্বন্ধে সত্যপ্রকাশ না করতেন –তাহলে আমরা যে কয়েকজন ,তাঁর কথা একটু-আধটু বলতে পারছি বা লিখতে পারছি – তাও হয়তো পারতাম না ! তবু তাঁকে যারাই দেখেছে ,তারা এইটুকু নিশ্চয় বলতো যে, “ন’কাকা একজন খুব ভালো মানুষ ছিলেন”, “ন’কাকা খুব নিরভিমানী ছিলেন”, “ন’কাকার অহংভাবটা একদমই ছিল না”। … [ক্রমশঃ]