ন’কাকা এমনিতে ছিলেন খুবই শান্ত-শিষ্ট-সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ! কিন্তু তাঁর চোখের মধ্যে একটা ভয়ানক গভীরতা ছিল ! উনি যখন কারো দিকে কোনো বিশেষ কারণে তাকিয়ে থাকতেন – তখন সে এটা বুঝতে পারত যে কি গভীর সেই অন্তর্দৃষ্টি ! সেই শান্ত অথচ গভীর দৃষ্টি যেন আপনার ভেতরের প্রত্যন্ত স্থানগুলিতে প্রবেশ করে আপনার জীবনের সমস্ত রহস্য টেনে টেনে বাইরে বের করে আনছেন অথবা সেগুলোকে শোষণ করে নিচ্ছেন ! আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারতেন – উনি আপনার সমস্ত গোপনীয়তা টের পাচ্ছেন, আর আপনার মনে হবে – এই বুঝি উনি সবার সামনে আপনার সব গোপন রহস্য ফাঁস করে দেবেন !
গুরু মহারাজের কাছে গেলেও আমাদের এই দশাই হতো ৷ আপনারা যারা গুরু মহারাজকে দেখেননি বা কাছে পেলেন না বলে আফসোস করেন , তাদেরকে একটা কথা বলে দিই – আপনারা জীবনে যদি কোন অন্যায় করে থাকেন – তাহলে গুরু মহারাজের সামনে দাঁড়ালেই সেইগুলি সর্বপ্রথমে ওনার চোখের সামনে ভেসে উঠতো, আর ওনার সামনে যা যা ভেসে উঠতো, সেইগুলি সেই মুহূর্তে আপনার কাছেও পরিষ্কার দৃশ্যমান হয়ে উঠতো ! সেই সময়টা যে কি লজ্জার – কি ভয়ের, কি অসুবিধর _তা যারা ওনার সম্মুখীন হয়েছে তারাই জানে ! সেই জন্যেই বলছিলাম যে, ভগবানকে কাছে পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের – কিন্তু তাঁর একেবারে কাছটিতে যাওয়া বা বেশিক্ষণ থাকা–কম ঝামেলার ব্যাপার নয় !
তবে যদি আপনার অন্তঃকরণে কোন পাপবোধ, অন্যায়বোধ না থাকে – তাহলে আপনার আর চিন্তা কি ? আরামসে ভগবানের সাথে বা যে কোন মহাপুরুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন – তাঁর কাছে কাছে থাকুন, এসবে আর আপত্তি কোথায় ?
এখানে আর একটা রহস্যের কথাও বলছি – আপনি ভগবানের কাছে Accepted হলেই যে, অন্য কোন মহাপুরুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবেন – এমন ভাববেন না মোটেই ? কারণ যেকোনো উন্নত সাধক বা মহাপুরুষেরা মহামায়ার অধীন । তাই তাঁরা বাকিদের যেমন ভাবেই দেখুন বা যে দৃষ্টিতেই বিচার করুন না কেন – তা তাঁদেরকে মা মহামায়ার নিয়মের মধ্যে থেকেই করতে হয় – এর বাইরে গিয়ে কিছু করার কোন ক্ষমতাই তাদের থাকেনা ৷ অপরপক্ষে যখন স্বয়ং ভগবান অবতীর্ণ হন – তখন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই – লীলা ! সেই অপূর্ব লীলাখেলায় জগতের আর পাঁচটা মানুষের মতো মহামায়া স্বয়ং নিজেও কখন যেন মত্ত হয়ে যান , নিজেকে ভুলে_ নিজের কাজ ভুলে _দূরে দাঁড়িয়ে লীলা দর্শন করতে শুরু করেন । কোন সময় ভগবানের (অবতার পুরুষেরা – তাঁরা হয় হরির অবতার অথবা শিবাবতার) চোখ পড়ে যায় সেদিকে – তখন তিনি (ভগবান) আবার মহামায়াকে সচেতন করে দেন এবং তাঁকে নিজের কাজে ফিরিয়ে দেন ! এই কথাগুলো আমাদেরকে গুরুমহারাজ নিজে বলেছেন।
তাহলে আপনারাই বলুন ঈশ্বরের অবতারের সাথে অন্য কোন মহাপুরুষের আচার-আচরণে কিভাবে মিল পাবেন !! অবতার পুরুষেরা যা অনায়াসে করতে পারেন – তা কি অন্য কেউ করতে পারে ? – না তা করা সম্ভব ? অবতার পুরুষেরা আচন্ডালে কোল দিতে পারেন, তাদেরকে আধ্যাত্মিক পথে উন্নিত করতে পারেন_ কিন্তু তাঁরা ছাড়া বাকিরা তা পারেন না। এইজন্যেই বলছিলাম ভগবান স্বয়ং যখন যখন অবতীর্ণ হ’ন তখন যেন তাঁরা বন্যার জলের মতো সামনে যাকে পান সেই সবকিছুকেই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রে এনে ফেলে দেন ! এটা তাঁদের বিশেষ Power ! তাঁরা এই নির্দিষ্ট কাজের জন্যেই অবতরিত হয়েছেন ৷
গুরু মহারাজ এসব ব্যাপারেও আলোচনা করেছিলেন, উনি বলেছিলেন – ” এঁদেরকে বলা হয় ‘লোকোত্তর পরম্পরার গুরু’, আর অন্যান্য সদগুরুরা ‘লোক পরম্পরার গুরু’!” গুরু মহারাজ ‘গুরু’ সম্বন্ধে বোঝাতে আরও কিছু কিছু বিশেষ শব্দ ব্যবহার করতেন । যেমন ‘তরণ গুরু’, ‘তারণ গুরু’ এবং ‘তরণ-তারণ গুরু’ ।
‘তরণ গুরু’-রা শিষ্যদের সাধন পদ্ধতি বাৎলে উত্তরণের পথ দেখাতে পারেন, ‘তারণ গুরু’-রা শিষ্যদের সাধনে সাহায্য করে তাদের উত্তরণ ঘটাতে পারেন, আর ‘তরণ-তারণ গুরু’-রা তাঁর সকল শিষ্যদের ভার নিয়ে নেন, তাদেরকে আধ্যাত্মিক ভাবে উন্নত করে গড়ে তোলেন। তারপর তাদেরকেই(শিষ্যদেরকে) তিনি আবার ‘তরণ গুরু’ বা ‘তারণ গুরু’ হিসাবে গড়ে তোলেন ।৷
তাহলে এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেল যে, ঈশ্বরের অবতারগণ যখন গুরু হয়ে আসেন তখন তাঁর ব্যাপারটাই আলাদা ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একবার ভক্তি শাস্ত্রের উদ্ধৃতি তুলে (শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত গ্রন্থে রয়েছে) বলেছিলেন যে, যেহেতু নারদ frequently বৈকুন্ঠ গিয়ে ভগবান নারায়নের সাথে দেখা করতে যেতে পারেন – তাই কোন এক ভক্ত তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল – ” আপনি বৈকুন্ঠে ভগবানের সাথে দেখা করে এলেন – তা উনি এখন কি করছেন ?” উত্তরে নারদ বলেছিলেন – “দেখলাম তিনি এখন সূঁচের গোড়ার ছিদ্র দিয়ে উট (হাতি!) প্রবেশ করাচ্ছেন !” ……. [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজের কাছে গেলেও আমাদের এই দশাই হতো ৷ আপনারা যারা গুরু মহারাজকে দেখেননি বা কাছে পেলেন না বলে আফসোস করেন , তাদেরকে একটা কথা বলে দিই – আপনারা জীবনে যদি কোন অন্যায় করে থাকেন – তাহলে গুরু মহারাজের সামনে দাঁড়ালেই সেইগুলি সর্বপ্রথমে ওনার চোখের সামনে ভেসে উঠতো, আর ওনার সামনে যা যা ভেসে উঠতো, সেইগুলি সেই মুহূর্তে আপনার কাছেও পরিষ্কার দৃশ্যমান হয়ে উঠতো ! সেই সময়টা যে কি লজ্জার – কি ভয়ের, কি অসুবিধর _তা যারা ওনার সম্মুখীন হয়েছে তারাই জানে ! সেই জন্যেই বলছিলাম যে, ভগবানকে কাছে পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের – কিন্তু তাঁর একেবারে কাছটিতে যাওয়া বা বেশিক্ষণ থাকা–কম ঝামেলার ব্যাপার নয় !
তবে যদি আপনার অন্তঃকরণে কোন পাপবোধ, অন্যায়বোধ না থাকে – তাহলে আপনার আর চিন্তা কি ? আরামসে ভগবানের সাথে বা যে কোন মহাপুরুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন – তাঁর কাছে কাছে থাকুন, এসবে আর আপত্তি কোথায় ?
এখানে আর একটা রহস্যের কথাও বলছি – আপনি ভগবানের কাছে Accepted হলেই যে, অন্য কোন মহাপুরুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবেন – এমন ভাববেন না মোটেই ? কারণ যেকোনো উন্নত সাধক বা মহাপুরুষেরা মহামায়ার অধীন । তাই তাঁরা বাকিদের যেমন ভাবেই দেখুন বা যে দৃষ্টিতেই বিচার করুন না কেন – তা তাঁদেরকে মা মহামায়ার নিয়মের মধ্যে থেকেই করতে হয় – এর বাইরে গিয়ে কিছু করার কোন ক্ষমতাই তাদের থাকেনা ৷ অপরপক্ষে যখন স্বয়ং ভগবান অবতীর্ণ হন – তখন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই – লীলা ! সেই অপূর্ব লীলাখেলায় জগতের আর পাঁচটা মানুষের মতো মহামায়া স্বয়ং নিজেও কখন যেন মত্ত হয়ে যান , নিজেকে ভুলে_ নিজের কাজ ভুলে _দূরে দাঁড়িয়ে লীলা দর্শন করতে শুরু করেন । কোন সময় ভগবানের (অবতার পুরুষেরা – তাঁরা হয় হরির অবতার অথবা শিবাবতার) চোখ পড়ে যায় সেদিকে – তখন তিনি (ভগবান) আবার মহামায়াকে সচেতন করে দেন এবং তাঁকে নিজের কাজে ফিরিয়ে দেন ! এই কথাগুলো আমাদেরকে গুরুমহারাজ নিজে বলেছেন।
তাহলে আপনারাই বলুন ঈশ্বরের অবতারের সাথে অন্য কোন মহাপুরুষের আচার-আচরণে কিভাবে মিল পাবেন !! অবতার পুরুষেরা যা অনায়াসে করতে পারেন – তা কি অন্য কেউ করতে পারে ? – না তা করা সম্ভব ? অবতার পুরুষেরা আচন্ডালে কোল দিতে পারেন, তাদেরকে আধ্যাত্মিক পথে উন্নিত করতে পারেন_ কিন্তু তাঁরা ছাড়া বাকিরা তা পারেন না। এইজন্যেই বলছিলাম ভগবান স্বয়ং যখন যখন অবতীর্ণ হ’ন তখন যেন তাঁরা বন্যার জলের মতো সামনে যাকে পান সেই সবকিছুকেই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রে এনে ফেলে দেন ! এটা তাঁদের বিশেষ Power ! তাঁরা এই নির্দিষ্ট কাজের জন্যেই অবতরিত হয়েছেন ৷
গুরু মহারাজ এসব ব্যাপারেও আলোচনা করেছিলেন, উনি বলেছিলেন – ” এঁদেরকে বলা হয় ‘লোকোত্তর পরম্পরার গুরু’, আর অন্যান্য সদগুরুরা ‘লোক পরম্পরার গুরু’!” গুরু মহারাজ ‘গুরু’ সম্বন্ধে বোঝাতে আরও কিছু কিছু বিশেষ শব্দ ব্যবহার করতেন । যেমন ‘তরণ গুরু’, ‘তারণ গুরু’ এবং ‘তরণ-তারণ গুরু’ ।
‘তরণ গুরু’-রা শিষ্যদের সাধন পদ্ধতি বাৎলে উত্তরণের পথ দেখাতে পারেন, ‘তারণ গুরু’-রা শিষ্যদের সাধনে সাহায্য করে তাদের উত্তরণ ঘটাতে পারেন, আর ‘তরণ-তারণ গুরু’-রা তাঁর সকল শিষ্যদের ভার নিয়ে নেন, তাদেরকে আধ্যাত্মিক ভাবে উন্নত করে গড়ে তোলেন। তারপর তাদেরকেই(শিষ্যদেরকে) তিনি আবার ‘তরণ গুরু’ বা ‘তারণ গুরু’ হিসাবে গড়ে তোলেন ।৷
তাহলে এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেল যে, ঈশ্বরের অবতারগণ যখন গুরু হয়ে আসেন তখন তাঁর ব্যাপারটাই আলাদা ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একবার ভক্তি শাস্ত্রের উদ্ধৃতি তুলে (শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত গ্রন্থে রয়েছে) বলেছিলেন যে, যেহেতু নারদ frequently বৈকুন্ঠ গিয়ে ভগবান নারায়নের সাথে দেখা করতে যেতে পারেন – তাই কোন এক ভক্ত তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল – ” আপনি বৈকুন্ঠে ভগবানের সাথে দেখা করে এলেন – তা উনি এখন কি করছেন ?” উত্তরে নারদ বলেছিলেন – “দেখলাম তিনি এখন সূঁচের গোড়ার ছিদ্র দিয়ে উট (হাতি!) প্রবেশ করাচ্ছেন !” ……. [ক্রমশঃ]