[ আগের দিনের এপিসোডের একেবারে শেষে একটা গল্পের অবতারনা করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল ঈশ্বর সূচের ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে উট(হাতি!) গলাতেও পারেন।…]
শুনতে মজাদার এবং অসম্ভব লাগলেও –ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এটাই সত্য ! তিনি যে কি করতে পারেন – আর কি করতে পারেন না, তা কে বলতে পারে ? যাইহোক, এইসব নানান উদাহরণ উপস্থাপনা করে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হল যে, ঈশ্বরের অবতারগণের যে বিশেষ ক্ষমতা থাকে. সেটা অন্য কোনো মহাপুরুষের মধ্যে থাকে না – ফলে কোনো ব্যক্তি অবতারকল্প পুরুষগণের দ্বারা অনুগৃহীত হলেও যে সে অন্যান্য কোনো মহাপুরুষের কাছেও আদরণীয় হবে বা গ্রহণযোগ্য হবে – এমন কোনো মানে নাই । তবে সেই হিসাবে আমাদের অনেককেই ঈশ্বর একটু অধিক কৃপা করেছিলেন এবং সেইজন্যেই গুরুমহারাজের শরীর ছাড়ার পরও ন’কাকা আমাদেরকে আরো আঠারো (১৮) বছর হাতটা ধরে রেখেছিলেন ।
আমাদের প্রতি ন’কাকার এই যে বিশেষ প্রীতি – সেই কথা স্মরণে এলে শুধু চোখের জলে ওই মহাপুরুষদের চরণ ধৌত করার কথাই মনে আসে । এর বেশী সাধারন বা বলা চলে অতি সাধারণ মানুষ হিসাবে আমরা আর কি-ই বা করতে পারি !
একটু নিজের কথা হয়ে যাচ্ছে_তবু একটা ঘটনার উল্লেখ করি! কারন এর থেকে বোঝা যাবে ন’কাকা , বাবা বা মায়ের মতোই আমাদেরকে ভালোবাসতেন। ন’কাকা একদিন আমাকে বলেছিলেন – ” জানো, … অমুক (মহারাজ) আমাকে সরাসরি তোমার সাথে মেলামেশা করতে বা তোমাকে বেশি পাত্তা দিতে নিষেধ করেছিল ৷ আমি(ন’কাকা) বললাম, ‘আমি কি তোমার কথা শুনে চলবো ? আমারও তো নিজস্ব জগৎ রয়েছে । আমার ওকে (শ্রীধরকে) ভালো লাগে তাই ওর সঙ্গে মিশি বা ওকে পাত্তা দিই ! তোমার ভালো না লাগলে তুমি মিশো না !”
এইবার আপনারাই বিচার করে বলুন ‘ওই অলৌকিক সহজ-সরল মানুষ ন’কাকা’ (শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ে-র প্রতি কতটা শ্রদ্ধা, কতটা ভক্তি বা ভালোবাসা, কত কোটি কোটি প্রণাম তাঁকে আমার জানানো উচিৎ ? যেখানে ন’কাকা শুধুমাত্র আমার মতো একজন সামান্য ব্যক্তির জন্য কোনো মহারাজের সাথে মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছেন বা হয়তো তার সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি করছেন – এইটা ভাবলে সত্যি সত্যি-ই এখনও আমি শিউরে উঠি ! এখনও আমার শরীরে কাঁটা দেয় – আমি তাঁর (ন’কাকা) প্রতি আরও বেশি বেশি করে শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়ে পড়ি ।৷
অনেকটাই নিজের কথা বলা হয়ে গেল ! অবশ্য হবে না-ই বা কেন ? এই লেখাগুলি তো “আমার দেখা বা আমার সাধ্যমত বোঝা ন’কাকা” – প্রসঙ্গে, তাই আমার প্রসঙ্গ তো মাঝে মাঝে আসবেই ৷ অবশ্য এতে আত্মশ্লাঘার কোন স্থান নাই আর না থাকাই তো উচিৎ ! যাইহোক, এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি।
ন’কাকার সংক্ষিপ্ত অথচ যথাযথ এবং তাৎক্ষণিক উত্তরদানের যে অসামান্য ক্ষমতা ছিল – সেটা আমাদের অনেকেরই জানা ! “সানাই বাজলে কানাই-এর কথা মনে পড়া”-র গল্প তো সম্ভবত আগে বলেছি । সেই যে একটা ছাত্র তার পরীক্ষার আগে ন’কাকাকে ফোন করতেই – একদম সঙ্গে সঙ্গে উনি ওই কথাটা বলে উঠলেন ! তারপর বললেন – “সারাবছর তো কোনদিন ফোন করতে দেখি না – হঠাৎ করে তোমার ফোন পেতেই আমার মনে হলো নিশ্চয়ই কোন বিশেষ প্রয়োজনে আমাকে মনে পড়েছে ! তাই বললাম ওকথা ! তা বেশ বেশ ! তোমার পরীক্ষা ভালোই হবে – যাও ৷ তুমি সারা বছর যেমনটা পড়েছ – ফলও তেমনটাই পাবে ।”
ন’কাকার ওই তাৎক্ষণিক ‘সানাই বাজলে কানাই-এর কথা মনে পড়া’-র কথা শুনে সেদিন আমরা ,যারা ওনার কাছে উপস্থিত ছিলাম,তারা খুবই আমোদ পেয়েছিলাম। ফলে এই গল্পটা তখন বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের মুখে মুখে ঘুরতো !
আর একদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে – তখন গুরুমহারাজ শরীরে রয়েছেন, আমি আর বনগ্রামের নগেন সকালের দিকে মুখার্জি বাড়িতে গেলাম ন’কাকার সাথে দেখা করার জন্য (আমি বনগ্রাম আশ্রমেই তখন ছিলাম) । আগের রাত্রে বেশ এক পশলা ভালোমতো বৃষ্টি হয়েছিল – কিন্তু কখন তা হয়েছিল সেটা আমি বা নগেন দুজনের কেউই বুঝতেই পারিনি । এ কথায় – ও কথায় গত রাত্রির বৃষ্টির কথা উঠলো । নগেন বলল – ” ন’মামা (গ্রাম সম্পর্কে ওরা ওই নামেই ন’কাকাকে সম্বোধন করতো), কাল রাত্রে যে কখন বৃষ্টি হয়েছে –তা আমি বুঝতেই পারিনি !” আমিও নগেনের কথায় সম্মতি জানালাম । নগেনের কথা শেষ হতে না হতেই ন’কাকা বলে উঠলেন – ” হ্যাঁ বাবা ! ওই চরম অসতর্ক মুহূর্তে ‘ঝেরে’- দিয়ে চলে গেছে !”
ন’কাকার মতো মানুষের মুখ থেকে হঠাৎ করে ওই ধরনের কথা শুনে প্রথমটায় আমরা দুজনে একটু হতচকিত হয়েছিলাম ঠিকই – তারপর আমাদের সে কি হাসি ! সেই হাসিতে ন’কাকাও যোগদান করে বললেন – ” তা আর কি বলবো বাবা ! ওই ভোরের দিকে বৃষ্টিটা হয়েছিল, আসলে – বেশিরভাগ মানুষের তো সেই সময়েই ঘুমটা জোর হয় ! তাই তোমরাও ঘুমিয়ে গেছিলে বলেই বুঝতে পারো নি !” ….. [ক্রমশঃ]