উনি গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের দিক্ষিত শিষ্য ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে উনি তন্ত্রসাধনার দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং অন্য কোনো পরম্পরায় সন্ন্যাস নিয়েছিলেন।

গুরু মহারাজ শরীর ছেড়ে দেবার পর কৌশিক মহারাজ একটু সমস্যায় পড়েছিলেন কিন্তু সেইসময় ওনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ন’কাকা(শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)। আমি তখন বনগ্রাম আশ্রম বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। সুযোগ পেলেই ন’কাকার বাড়ি চলে যেতাম। দুপুরের দিকে যেদিন‌ই যেতাম _প্রায়শঃই দেখতাম কৌশিক মহারাজ ন’কাকার কাছে বসে আছে, সঙ্গে বাপ্পা(বাপ্পা ভকত্)।

দু-একদিন এইরকম দেখার পর আমি একদিন ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করলাম_”ন’কাকা! ছেলেটি কে?” ২৩/২৪ বছর আগে ওকে ছেলেমানুষ‌ই মনে হোত।

ন’কাকা উত্তর দিয়েছিলেন_” বাবা ! ওর নাম কৌশিক। ও তন্ত্রসাধনার বিভিন্ন ক্রিয়া নিয়ে কথা বলতে আসে। ছেলেটি তন্ত্রসাধনা নিয়ে থাকতে চায়। কিন্তু মাঝে মাঝেই গোলমাল হয়ে যাচ্ছে_ কোথায় ত্রুটি হোচ্ছে সেটাই আলোচনা করতে আসে।”

এরপরেও ওকে আমি ন’কাকার বাড়িতে কয়েকবার ই দেখেছিলাম। কিন্তু কৌশিক মহারাজের একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতাম_লোকজন এসে গেলেই ও ন’কাকার কাছে বিদায় নিয়ে চলে যেতো। শুনেছিলাম ও সাধারণ মানুষজনের সাথে বড় একটা মিশতে চাইতো না। পাটুলিতেও ওনার এই ব্যাপারে দূর্নাম ছিল।

এরপর ন’কাকার সাথে একবার পাটুলি গিয়ে কৌশিক মহারাজের সাথে দেখা হয়েছিল এবং বাপ্পা(ভকত)-র পরিবারের লোকজন অর্থাৎ সন্তোষ ভকত্(এখন পুলিশ বিভাগে কর্মরত)সহ ওদের বড়ভাই এবং মায়ের সাথে আলাপ হয়েছিল। ওদের যৌথ পরিবার এবং সকলের মধ্যে সুন্দর bonding দেখে আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম।

ওদের বারংবার আমন্ত্রণেই সেবার ন’কাকা ওর আশ্রমে গিয়েছিলেন। একেবারে গঙ্গার ধারে ওর ছোট্ট_ মাটি ও খড়ের কুটির। ঘরে রান্না-বান্না করার বিশেষ কোনো ব্যবস্থাই নাই। ফলে ওর সাথে কথাবার্তা সেরে আমরা বাপ্পাদের বাড়িতেই মধ্যাহ্ণের আহারাদি সেরেছিলাম।।

একেবারে গঙ্গার ধারে থাকা সত্ত্বেও ওর কুটির বেশ কয়েক বছর ধরে একটুও ভাঙনের কবলে পড়েনি ।

আমরা শুনেছিলাম_ দীর্ঘদিন তন্ত্রসাধনার ফলে ওনার মধ্যে বেশ কিছু সাধন-শক্তি অর্জিত হয়েছিল। বাকসিদ্ধি ছিল ফলে ওনার কথা ফলে যেতো। ভুত-প্রেতের উপর control, শুন্য থেকে খাদ্যবস্তু বা অন্যান্য বস্তু সৃষ্টি ইত্যাদি শক্তি ও ওনার অর্জিত হয়েছিল।

কিন্তু যেটা সকল সাধুসন্তের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য_”আত্মতত্ত্বের বোধ” সেইটি অধরা থেকে যাচ্ছিলো। এটাই ছিল কৌশিক মহারাজের শেষ জীবনের যন্ত্রণা!!

আর এই যন্ত্রণা নিয়েই উনি স্থুল শরীর ছেড়ে চলে গেলেন পরবর্তী শরীর গ্রহণ করে সাধন সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে !!!

[কৌশিক মহারাজের ছবি ছাড়া নিচের বাকি ছবিগুলি ওনার ভান্ডারা উপলক্ষে সাধু সমাবেশের।)