গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন প্রথমবার ইউরোপ গেছিলেন – সেই সময়কার কথা হচ্ছিল ৷ তখন ইউরোপের কোন স্থানেই কোন আশ্রম বা গুরু মহারাজের থাকার জন্য কোন আলাদা স্থান ছিল না ! সেইজন্য উনি প্রথমবারে ইউরোপের বিভিন্ন ভক্তদের বাড়িতে অথবা ওদের ব্যবস্থা করে দেওয়া কোন স্থানে থাকতেন । পরবর্তীতে নরওয়ের ‘শান্তিবু আশ্রম’ (যেটা আগে আনন্দ আচারিয়ার আশ্রম ছিল) প্রতিষ্ঠা হয় । প্রথমবার ইউরোপ থেকে ফিরে আসার পর গুরু মহারাজ আমাদের আসামের সন্ন্যাসিনী তৃপ্তি মা বা সংহিতা-প্রাণাকে নরওয়েতে পাঠিয়ে ছিলেন – Peace Univercity তৈরীর কাজে বেয়নকে সাহায্য করার জন্য ! পরের দিকে গুরুমহারাজ আরও বার দুয়েক নরওয়ে গিয়েছিলেন – উনি গেলেই ওখানকার ভক্তদের মধ্যে একটা উদ্যোগ বাড়তো – ইউরোপের অন্যান্য ভক্তরাও আগ্রহ দেখাতো – কিন্তু উনি ফিরে এলেই “যে কে সেই !” সেই জন্যেই গুরু মহারাজ ওনার representative হিসাবে তৃপ্তি মা-কে পাঠিয়েছিলেন । কিন্তু সুদীর্ঘকাল হয়ে গেল (প্রায় ২৫/২৬ বছর) – এখনও peace University-র কাজের যে সাংঘাতিক একটা progress হয়েছে – তার কোন খবর পাইনি ! তবে কাজ চলছে – যে জায়গাটি গুরু মহারাজ peace University -র জন্য selection করে গেছেন (স্থানটি মাউন্ট থর্নের পাদদেশে ) , সেখান সম্ভবত বিশেষ কোন Construction-ই এখনও হয়নি ! একজন ভক্ত তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওখানে একটা বাড়ি নির্মাণ করেছেন – যেটাকে হোটেলও বলা যায় আবার পরমানন্দ ভক্তদের থাকার , মিটিং বা সিটিং করার জায়গা হিসাবেও ব্যবহার করা যায় ৷ এইটা ওই ভদ্রলোক করেছেন – যাতে অন্ততঃ পরমানন্দ ভক্তরা বছরে ২/৪ বার ঐ Spot-এ যায় এবং কিছু করার কথা ভাবে। (এগুলো আমি ওখানকার ভক্তদের কাছে শুনেছি)
Peace University সম্পর্কে কি বক্তব্য ছিল গুরু মহারাজের ? __সেইটা একটু আলোচনা করা যাক ! গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “পরমানন্দ মিশন হলো – হিউম্যান ইউনিভার্সিটি , আর নরওয়েতে যেটার সূচনা হ’ল ওটা হবে -‘ পিস ইনভারসিটি’ ! অশান্ত মানুষকে শান্তির পথ দেখানোর কাজ হবে ওখানে । এমনিতেই ইউরোপের বেশিরভাগ দেশগুলি অর্থনৈতিকভাবে খুবই উন্নত হাওয়ায় , ওখানকার জনজীবন খুবই উশৃংখল ! আর এই বেহিসাবি , শৃঙ্খলাহীন , লাগামছাড়া জীবন কাটাতে গিয়ে ওদের জীবনে নেমে এসেছে প্রচন্ড সমস্যা ! পরিবারগুলি ভেঙে গেছে , পরিবার থেকে বাবা-মা পুত্র-কন্যার স্নেহ বা শ্রদ্ধার ভাবটাও নষ্ট হয়ে গেছে । ছেলে-মেয়েরা ছোট থেকেই একা একা নার্সের Under-এ মানুষ হয় অথবা হোস্টেলে ! বাবা মা গেট-টুগেদার, লিভ-টুগেদার করে , বারবার পার্টনার পাল্টায় – তাহলে কিভাবে সন্তানের সাথে স্নেহ-প্রেমের বন্ধন গড়ে উঠবে? এই সবের ফলে ওদের সমাজে নেমে আসছে হতাশা , প্রেমহীনতা , প্রতিক্রিয়াশীলতা , উশৃংখলতা ! প্রথম বিশ্বের যেকোন দেশেই এখন এগুলি সমস্যা ! প্রধান সমস্যা একাকীত্ব ! বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই শুধু নয় প্রৗেঢ় বা প্রৗেঢ়ারাও একা ! যুব সম্প্রদায়-ও একা ! কিন্তু যতদিন যৌবন রয়েছে ততদিন ওরা নাচে-গানে-outing-এ , জুয়ায়-উদ্দামতায় মেতে থাকে ! দেখে মনে হবে ভীষণ কর্মচঞ্চল – কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফোঁপড়া হয়ে যাচ্ছে ওইসব দেশের যুবসমাজ ! drug addicted হয়ে যাচ্ছে – হঠাৎ হঠাৎ করে আইন ভাঙছে , Crazy হয়ে উঠছে ! ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে বন্দুক নিয়ে যাচ্ছে – সহপাঠীকে অকারণে গুলি করছে , বাড়িতে মায়ের নতুন পার্টনারকে গুলি করছে – এইসব কান্ড চলছে !
এখন কথা হচ্ছে , ঐ দেশগুলির এসব থেকে মুক্তির উপায় কি ? ইউরোপ আমেরিকার কোন বিদ্যা , কোন শিক্ষা , কোন দর্শন পথ দেখাতে পারছে না ! তখন ওরা প্রাচ্যমুখী হচ্ছে ! প্রাচ্যের যে কোন শিক্ষা প্রাচীন ভারতের ঋষিদের প্রদর্শিত পথ ।
সে পথে হাঁটলে মানুষের কল্যাণ হবেই হবে। তাই এখন হু হু করে চিন, জাপান, সিংহল, ভারতবর্ষ ইত্যাদি দেশগুলি থেকে বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, কৃষ্ণ, রাম প্রমূখ মহামানবদের শিক্ষা ঢুকছে, খুব বেশি বেশি করে ঢুকছে ভারতীয় যোগ এবং প্রানায়াম! আমেরিকার হিপি মুভমেন্ট্ ছিল আমেরিকান গভর্নমেন্টের কাছে একটা জ্বলন্ত সমস্যা! ওরা আইনের আশ্রয় নিয়ে, মেরে ধরেও তা প্রশমিত করতে পারছিল না _সেই সময় শ্রীল প্রভূপাদ অভয়চরন ভক্তিবেদান্ত স্বামী ISCKON প্রতিষ্ঠা করে ওদের দেশের ঐ সমস্যা দূর করতে অনেকটা সাহায্য করেছিলেন। কারন দলে দলে ছেলে মেয়েরা ইস্কনে যোগ দিয়ে নেচে গেয়ে খোল করতাল বাজিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতে শুরু করল! আমেরিকান গভর্নমেন্ট হাঁফ ছেড়ে বাঁচল! আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইস্কনের পৃষ্ঠপোষকতা করার এটা একটা অন্যতম কারন জানবে।
এছাড়া যোগ-প্রানায়াম হোল একদম Practical! কিছুদিন অভ্যাস করলেই একেবারে হাতে হাতে ফল! প্রাচ্য থেকে বহু মানুষ ইউরোপ আমেরিকায় যোগ সেন্টার খুলে বসেছে! বহ ইউরোপীয় এদেশে এসে কিছুদিন কোন না কোন আশ্রমে থেকে একটু আধটূ ‘যোগা’ শিখে ওই সব দেশে ফিরে গিয়ে সেন্টার খুলে বসছে এবং প্রচুর টাকা রোজগার করছে। এছাড়াও আমি প্রাশ্চাত্তের উন্নত দেশগুলি ঘুরে দেখেছি _বৌদ্ধ শ্রমণসহ ভারতীয় সাধু পরম্পরার লোকজনেরাও অহিংসা, মৈত্রীর বানী , বেদ-বেদান্ত-গীতার সারকথাগুলি প্রচার করছে! এতেও ঐ সমস্ত ভোগবিলাস ও ঐশ্বর্যে মত্ত দেশগুলির যুবমানসে একটা বিরাট সুপ্রভাব পড়ছে!
প্রথমবিশ্বের দেশগুলিতে এক একজন ভারতীয় যোগীর যোগ সেন্টারের বাৎসরিক turn over দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবার যোগাড! প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ডলার রোজগার! “অমুক দীক্ষার এত টাকা, তমুক দীক্ষার তত টাকা” _অথবা “যোগাক্লাসের এত টাকা, প্রানায়ামের তত টাকা” _সব আশ্রমের ভিতর এই ধরনের চার্ট টাঙানো রয়েছে!
আমি এইসব দেখে প্রথমটায় খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম _কিন্তু আমার ইউরোপীয় বন্ধুরা (ইউরোপীয় ভক্তদের _গুরুমহারাজ বন্ধু বলেই উল্লেখ করতেন) আমাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল! ওরা বলল_”মহারাজ! প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর মানসিকতাই হচ্ছে _’বিনা পয়সায় কিছু হচ্ছে মানেই তা খারাপ এবং পরিত্যজ্য। যে জিনিসের মূল্য যত বেশি _তার quality তত ভালো!’ তাছাড়া একটা sentiment-ও কাজ করে _’ আমাদের পয়সা যখন আছে(যেহেতু অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত) _তখন আমরা বিনা পয়সায় কোন কিছু গ্রহণ করবই বা কেন?” _এইসব sentiment হোল রজঃগুনের প্রভাব! (ক্রমশঃ)