গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরছিলেন – তখনকার নানান কথা এখানে আলোচনা করা হচ্ছিল । নরওয়ের কুনুথের সাথে , ক্যারিয়াদার সাথে আমার কিছু কথা হয়েছিল , ইতালির আলেক্স – ইলারিও – ক্লাউডিও – রুজেরোর সাথেও কথা হয়েছিল , জার্মানির শান্তি-র কাছেও আমি “ইউরোপে থাকাকালীন গুরু মহারাজ”-এর সম্বন্ধে নানা কথা জানার চেষ্টা করেছিলাম ! কিন্তু খুব বেশি লাভবান হতে পারি নি! ওদের প্রায় সবাই এত ভালো যে __ওদের দেখে , ওদের সাথে কথা বলে_ আমরা অবাক হয়ে যেতাম! কেননা ওদের গুরু মহারাজের প্রতি এত ভক্তি , এত শ্রদ্ধা যে আমাদের মনে হোত আমরা বোধহয় ওদের ধারে কাছেও যেতে পারি না ! আমার মনে আছে ক্যারিয়াদাকে একদিন নরওয়ের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে আলোচনার সময় আমি যেইমাত্র বলেছি যে, এই কথাগুলো গুরু মহারাজের কাছে শুনেছিলাম! অমনি সাথে সাথে ক্যারিয়াদা হাত জোড় করে ওনার উদ্দেশ্যে নমস্কারের ভঙ্গিতে বলে উঠলো – ” he Knows better than me , about Norway !” – ফলে বুঝতেই পারছেন ইউরোপীয়রা গুরুমহারাজকে এত বেশি শ্রদ্ধা-ভক্তি কোরতো যে ওনার সম্বন্ধে খুব একটা বেশি কথা বলতে চাইতো না – বরং ওরা শুনতে চাইতো, গুরু মহারাজ সম্বন্ধে আরও বেশি বেশি জানতে চাইতো !
এইজন্যে গুরু মহারাজের ইউরোপের বিভিন্ন ঘটনার বেশিরভাগ কথাই আমরা গুরু মহারাজের কাছেই শুনেছি ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘোরার সময় ওনার সবচাইতে বেশি অসুবিধা হয়েছিল — বিমানবন্দরে বা দুটো দেশের যেখানে বর্ডার _সেখানে।
ওখানে ইউরো-রেল রয়েছে যা সমগ্র ইউরোপকে Cover করে । এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য যদি সমুদ্র পেরোতেও হয় – তাতেও কোনো অসুবিধা নাই ! হয় ট্রেন টানেলের(টিউবের) মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের তলা দিয়েই চলে যাচ্ছে অথবা গোটা ট্রেন বা একসাথে ২/৩-টে ট্রেন চেপে যাচ্ছে বিশাল বিশাল জাহাজে ! ওই জাহাজগুলিতেও ট্রেন-লাইন রয়েছে! একতলা , দোতলায় পৃথক পৃথক লাইন, আর তাতে একসাথে দু-তিনটে ট্রেন ধরতে পারে ৷ জাহাজ সমুদ্রের অপর পাড়ে যেখানে নোঙর করছে – সেখান থেকে এমন সুন্দর ট্রেন লাইনের System রয়েছে যে জাহাজ থামতেই_ হুস্-হুস্ করে ট্রেনগুলি ছুটতে শুরু করে দিচ্ছে !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন সমুদ্রের উপর দিয়ে যাবার সময় সেখানেও স্টেশন রয়েছে – যাতে যাত্রীরা সমুদ্রের মজা নিতে পারে ! সমুদ্রের গভীরে Tube-এর মতো রয়েছে , যার মধ্যে দিয়ে ট্রেন যেতে পারে – এরমধ্যে যেখানে কাঁচের দেওয়াল – সেই সমস্ত স্থানে ১০ মিনিটের ব্রেক ! কোচ-এর ভিতর থেকে সমুদ্রের জল এবং সামুদ্রিক প্রাণীসমূহ দেখা যায়! কপাল ভালো থাকলে দু-একটা তিমি-র ও দেখা পাওয়া যায় ! এইরকম স্থানে হল্ট করার কারণ _যাতে করে train journey boring না হয় , বরং Attrective হয় ! ঠিক এই রকম ভাবেই ইউরো-রেল যখন পাহাড় বা পর্বতের মধ্যে দিয়ে যায় , তখন যে কোন পাহাড় বা পর্বতের মাথায় রেলস্টেশন রয়েছে ! সেই সমস্ত স্থানেও ট্রেন ২০/২৫ মিনিট বা আরও বেশি সময় দাঁড়ায় ! সেখানে চা-কফি এবং স্নাক্সের স্টলও রয়েছে ৷ গুরু মহারাজ আল্পস পর্বতের কোন এক চূড়ায় ঐ ধরনের একটা স্টেশনে নেমে কফি খেয়েছিলেন । উনি বলেছিলেন অত উচ্চতা থেকে দূরের দৃশ্যাবলী দেখতে অপূর্ব লেগেছিল ! এই শোভা যাতে সমস্ত যাত্রীরা দেখতে পায় – উপভোগ করতে পারে, সেই জন্যেই ওইসব দেশের সরকারেরা অত অর্থ ব্যয় করে ঐ ধরনের স্টেশনগুলি নির্মাণ করে । ইউরোপের উন্নত দেশগুলি মানুষের জন্যে তবু কিছুটা ভাবে – তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এই ধরনের ভাবনা কোথায় ?
যাইহোক , যে কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল – গুরু মহারাজ বলেছিলেন যে , যেকোন বিমান বন্দরে বা দুটো দেশের বর্ডারে ওনার খুবই অসুবিধা হতো ৷ এর কারণ হিসাবে উনি বলেছিলেন যে ওইসব জায়গায় ওনাকে নিজে নিজে Form Fill-up করতে হতো । যেহেতু উনি লেখাপড়া জানতেন না , তাই ইংরেজিতে Form গুলোতে নাম – ঠিকানা – পাসপোর্ট নাম্বার – পাসপোর্ট অ্যাড্রেস – Destination – সেই স্থানে যাবার Purpose – Time Period ইত্যাদি নানা কিছু Form-এ লিখতে হতো ।
এইটা করতে ওনার খুবই অসুবিধা হোত! একটা একটা করে অক্ষর ভেবে ভেবে, বানান করে করে লিখতে হোত_এর ফলে দেরি হোত। আর দেরি হওয়া মানেই, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পিছনের লোকেদের একটু অসুবিধা তো হোতোই! হয়তো তাদের কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশও করে বসতো!
এইজন্যই গুরুমহারাজ বারবার বলতেন _”লেখাপড়া শেখাটা মানুষের জীবনে খুবই দরকারী। এ জীবনে তো আমার লেখাপড়া শেখা হোল না, তাই কেউ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও যদি কেউ লেখাপড়া শিখতে চায় _তাহলে আমার খুব আনন্দ হয়! এই রকম কেউ আমার আশেপাশে থাকলে আমি সবসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করি(গুরুমহারাজ এমন অনেককে সরাসরি সাহায্য করতেন)! তবে এ জন্মে বা এই শরীরে মা জগদম্বা আমাকে লেখাপড়া শিখতে দিলেন না ঠিকই, তবে পরের শরীরে আমি খুব লেখাপড়া করব।।”
গুরুমহারাজ যখন ইউরোপের দেশগুলি ভ্রমন করতেন _তখন বেশিরভাগ সময়েই ওনার সাথে নরওয়ের ভক্ত বেযর্ন পিটারসন থাকতো_তবে অবশ্যই সবসময় নয়। কোন কোন সময় অন্যরাও থেকেছে, কিছু কিছু সময় উনি একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছিলেন_সঙ্গে কেউই ছিল না!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _” ইংল্যান্ড, ইতালি ইত্যাদি দেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট উন্নত হলেও _ওখানে প্রচুর ভিখারী রয়েছে! ভিখারী বলতে_ বেশিরভাগই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা! যাদের আর কর্মক্ষমতা নেই, রোজগার নেই, সঞ্চিত টাকা যা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে _তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া উপায়ই বা কি আছে!! ইউরোপীয় মানসিকতা_ ইন্ডিয়ানদের সাথে একদম মেলে না। ওদের যা lifestyle সেইটা শেষ বয়স পর্যন্ত বজায় রাখতে চায়। ঘরের সমস্তরকম comfort, সপ্তাহান্তে outing, ক্যাসিনো, disco সবকিছু চাই _কোনটাই ছাড়বে না। তাতে ভিক্ষা করে হলেও সব কিছু বজায় রাখতে চায়!
যাইহোক, ওখানকার ভিখারীদের কথায় ফিরে আসি, ওখানকার ভিখারীরা বুকে পিঠে প্লাকার্ড ঝুলিয়ে জনবহুল স্থানে বসে থাকে বা ঘুরে বেড়ায়। প্লাকার্ডে তার পরিচয়, অর্থনৈতিক অবস্থা _কেন ভিক্ষা করছে, সব কিছু লেখা থাকে। ঐসব পড়ে যারা মনে করে যে তার জন্য কিছু করা দরকার _তখন সাহায্য করে। তবে সাবধান! এই ধরনের বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের অনেকে কিন্তু হুকার(hooker) কিংবা pimp!! এদের কথা পরের এপিসোডে!! (ক্রমশঃ)
এইজন্যে গুরু মহারাজের ইউরোপের বিভিন্ন ঘটনার বেশিরভাগ কথাই আমরা গুরু মহারাজের কাছেই শুনেছি ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘোরার সময় ওনার সবচাইতে বেশি অসুবিধা হয়েছিল — বিমানবন্দরে বা দুটো দেশের যেখানে বর্ডার _সেখানে।
ওখানে ইউরো-রেল রয়েছে যা সমগ্র ইউরোপকে Cover করে । এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য যদি সমুদ্র পেরোতেও হয় – তাতেও কোনো অসুবিধা নাই ! হয় ট্রেন টানেলের(টিউবের) মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের তলা দিয়েই চলে যাচ্ছে অথবা গোটা ট্রেন বা একসাথে ২/৩-টে ট্রেন চেপে যাচ্ছে বিশাল বিশাল জাহাজে ! ওই জাহাজগুলিতেও ট্রেন-লাইন রয়েছে! একতলা , দোতলায় পৃথক পৃথক লাইন, আর তাতে একসাথে দু-তিনটে ট্রেন ধরতে পারে ৷ জাহাজ সমুদ্রের অপর পাড়ে যেখানে নোঙর করছে – সেখান থেকে এমন সুন্দর ট্রেন লাইনের System রয়েছে যে জাহাজ থামতেই_ হুস্-হুস্ করে ট্রেনগুলি ছুটতে শুরু করে দিচ্ছে !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন সমুদ্রের উপর দিয়ে যাবার সময় সেখানেও স্টেশন রয়েছে – যাতে যাত্রীরা সমুদ্রের মজা নিতে পারে ! সমুদ্রের গভীরে Tube-এর মতো রয়েছে , যার মধ্যে দিয়ে ট্রেন যেতে পারে – এরমধ্যে যেখানে কাঁচের দেওয়াল – সেই সমস্ত স্থানে ১০ মিনিটের ব্রেক ! কোচ-এর ভিতর থেকে সমুদ্রের জল এবং সামুদ্রিক প্রাণীসমূহ দেখা যায়! কপাল ভালো থাকলে দু-একটা তিমি-র ও দেখা পাওয়া যায় ! এইরকম স্থানে হল্ট করার কারণ _যাতে করে train journey boring না হয় , বরং Attrective হয় ! ঠিক এই রকম ভাবেই ইউরো-রেল যখন পাহাড় বা পর্বতের মধ্যে দিয়ে যায় , তখন যে কোন পাহাড় বা পর্বতের মাথায় রেলস্টেশন রয়েছে ! সেই সমস্ত স্থানেও ট্রেন ২০/২৫ মিনিট বা আরও বেশি সময় দাঁড়ায় ! সেখানে চা-কফি এবং স্নাক্সের স্টলও রয়েছে ৷ গুরু মহারাজ আল্পস পর্বতের কোন এক চূড়ায় ঐ ধরনের একটা স্টেশনে নেমে কফি খেয়েছিলেন । উনি বলেছিলেন অত উচ্চতা থেকে দূরের দৃশ্যাবলী দেখতে অপূর্ব লেগেছিল ! এই শোভা যাতে সমস্ত যাত্রীরা দেখতে পায় – উপভোগ করতে পারে, সেই জন্যেই ওইসব দেশের সরকারেরা অত অর্থ ব্যয় করে ঐ ধরনের স্টেশনগুলি নির্মাণ করে । ইউরোপের উন্নত দেশগুলি মানুষের জন্যে তবু কিছুটা ভাবে – তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এই ধরনের ভাবনা কোথায় ?
যাইহোক , যে কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল – গুরু মহারাজ বলেছিলেন যে , যেকোন বিমান বন্দরে বা দুটো দেশের বর্ডারে ওনার খুবই অসুবিধা হতো ৷ এর কারণ হিসাবে উনি বলেছিলেন যে ওইসব জায়গায় ওনাকে নিজে নিজে Form Fill-up করতে হতো । যেহেতু উনি লেখাপড়া জানতেন না , তাই ইংরেজিতে Form গুলোতে নাম – ঠিকানা – পাসপোর্ট নাম্বার – পাসপোর্ট অ্যাড্রেস – Destination – সেই স্থানে যাবার Purpose – Time Period ইত্যাদি নানা কিছু Form-এ লিখতে হতো ।
এইটা করতে ওনার খুবই অসুবিধা হোত! একটা একটা করে অক্ষর ভেবে ভেবে, বানান করে করে লিখতে হোত_এর ফলে দেরি হোত। আর দেরি হওয়া মানেই, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পিছনের লোকেদের একটু অসুবিধা তো হোতোই! হয়তো তাদের কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশও করে বসতো!
এইজন্যই গুরুমহারাজ বারবার বলতেন _”লেখাপড়া শেখাটা মানুষের জীবনে খুবই দরকারী। এ জীবনে তো আমার লেখাপড়া শেখা হোল না, তাই কেউ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও যদি কেউ লেখাপড়া শিখতে চায় _তাহলে আমার খুব আনন্দ হয়! এই রকম কেউ আমার আশেপাশে থাকলে আমি সবসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করি(গুরুমহারাজ এমন অনেককে সরাসরি সাহায্য করতেন)! তবে এ জন্মে বা এই শরীরে মা জগদম্বা আমাকে লেখাপড়া শিখতে দিলেন না ঠিকই, তবে পরের শরীরে আমি খুব লেখাপড়া করব।।”
গুরুমহারাজ যখন ইউরোপের দেশগুলি ভ্রমন করতেন _তখন বেশিরভাগ সময়েই ওনার সাথে নরওয়ের ভক্ত বেযর্ন পিটারসন থাকতো_তবে অবশ্যই সবসময় নয়। কোন কোন সময় অন্যরাও থেকেছে, কিছু কিছু সময় উনি একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছিলেন_সঙ্গে কেউই ছিল না!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _” ইংল্যান্ড, ইতালি ইত্যাদি দেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট উন্নত হলেও _ওখানে প্রচুর ভিখারী রয়েছে! ভিখারী বলতে_ বেশিরভাগই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা! যাদের আর কর্মক্ষমতা নেই, রোজগার নেই, সঞ্চিত টাকা যা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে _তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া উপায়ই বা কি আছে!! ইউরোপীয় মানসিকতা_ ইন্ডিয়ানদের সাথে একদম মেলে না। ওদের যা lifestyle সেইটা শেষ বয়স পর্যন্ত বজায় রাখতে চায়। ঘরের সমস্তরকম comfort, সপ্তাহান্তে outing, ক্যাসিনো, disco সবকিছু চাই _কোনটাই ছাড়বে না। তাতে ভিক্ষা করে হলেও সব কিছু বজায় রাখতে চায়!
যাইহোক, ওখানকার ভিখারীদের কথায় ফিরে আসি, ওখানকার ভিখারীরা বুকে পিঠে প্লাকার্ড ঝুলিয়ে জনবহুল স্থানে বসে থাকে বা ঘুরে বেড়ায়। প্লাকার্ডে তার পরিচয়, অর্থনৈতিক অবস্থা _কেন ভিক্ষা করছে, সব কিছু লেখা থাকে। ঐসব পড়ে যারা মনে করে যে তার জন্য কিছু করা দরকার _তখন সাহায্য করে। তবে সাবধান! এই ধরনের বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের অনেকে কিন্তু হুকার(hooker) কিংবা pimp!! এদের কথা পরের এপিসোডে!! (ক্রমশঃ)