গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজ) যখন ইউরোপে ঘুরছিলেন , তখন ওনার সাথে বা ওনার সামনে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছিল – সেই সমস্ত কথা আমি যেটুকু জানি তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করছিলাম ৷ অনন্ত ভাবময় প্রভু পরমানন্দ স্বামীর অনন্ত লীলা ! তাঁর সমস্ত কথা পরিবেশন করতে পারে – এমন কেউই কখনও জন্মাবে না । তিনি নিজে কৃপা করে যেটুকু জগৎকে জানাবেন জগৎবাসী সেইটুকুই জানতে পারবে ! আর যদি কোনদিন স্বয়ং তিনি পুনরায় শরীর ধারণ করে এসে তাঁর নিজের কথা বলেন – তাহলে তখনকার মানুষ আবার তাঁর এখনকার এই লীলার কথা বিশদে জানবে – অনেক না-জানা তথ্য বা ব্যাখ্যা তখনকার মানুষ পেয়ে ধন্য হবে !
আমরা আগের দিন আলোচনা করছিলাম – গুরু মহারাজ একবার ‘ইউরো-রেল’ চেপে বেয়র্নের সাথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরছিলেন । সেই সময় দুটো দেশের কোন এক বর্ডারে (সম্ভবতঃ বুলগেরিয়া !) গুরু মহারাজ নিজে নিজেই ইচ্ছা করে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন – এখানে সেই ঘটনাটি আলোচনা করা হচ্ছিল । সেদিন ওই ট্রেনে রুটিন চেকআপ চলছিল ৷ কিন্তু দুজন চেকিং অফিসার গুরু মহারাজদের কম্পার্টমেন্টে বসে থাকা একজন কালো আমেরিকান যুবকের প্রতি খুবই খারাপ ব্যবহার করছিল । প্রথমদিকে ছেলেটি খুবই শান্ত ও বিনীতভাবে ওই অফিসারদের কাছে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছিল , কিন্তু যখন ওই অফিসারেরা ওর কাগজপত্র ছুঁড়ে সিটে ফেলে দিয়েছিল এবং ব্যাগ সার্চ করার নামে ওর জামাকাপড় বা অন্যান্য দ্রব্যাদি বাইরে ছুঁড়ে বা ছিটিয়ে ফেলে দিচ্ছিল – তখন ছেলেটি আর নিজেকে সংযত রাখতে পারল না ৷ আর পারবেই বা কি করে ! ছেলেটির শরীর-স্বাস্থ্য ছিল একেবারে মল্লবীরদের মতো । তাছাড়া ছেলেটি মার্শাল আর্টেও খুবই পটু ছিল – সেটা গুরু মহারাজ কার্যক্ষেত্রে টের পেয়েছিলেন ! এখন ঘটনাটা ঠিক ঠিক কি হয়েছিল – সেইটা বলি !
ছেলেটির ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছড়িয়ে ফেলতে শুরু করতেই – ওই ছেলেটি সিট থেকে উঠে ঐ দুই অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকল – ” please – তোমরা আমার জিনিসপত্র ঐরকমভাবে ছুঁড়ে ফেলো না ! যেগুলো ফেলেছো – সেগুলো ঠিক মতো তুলে গুছিয়ে রাখো – না হলে কিন্তু তোমাদের চরম Punishment দেব !” ছেলেটির কথা শুনে ঐ অফিসারদের একজন ওকে খিস্তি দিয়ে একটা বাজে কথা বলেছিল । যেই না বলা , ওমনি ‘দ্রাম’ ! এক ঘুঁষিতে ছেলেটি ওই অফিসারকে মাটিতে ফেলে দিল ৷ অন্য অফিসারটি তেড়ে আসতেই এক হাতে ওর কলার ধরে ওকে চাগিয়ে মাটি ছাড়া করে তাকে ট্রেনের গেটের কাছে গিয়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিল ৷ দু-একটা পুলিশকর্মী গেটের বাইরে প্রহরায় ছিল – তারা এগিয়ে আসতেই তাদেরকেও ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের বাইরে ফেলে দিয়েই – গেটটা টেনে দিয়ে ছেলেটি এসে আবার নিজের সিটে বসে পড়লো ৷ এদিকে প্রথম অফিসারটি সেই ফাঁকে চুপিসারে কখন যেন কেটে পড়েছিল !
সে যাইহোক , বেয়র্ন গুরু মহারাজকে বললো – ” গুরুজী ! আপনি চুপচাপ থাকবেন , কোনো কথা বলবেন না – এরপর দেখবেন বিরাট ঝামেলা হবে ৷ ট্রেন এখানেই detained করে দেবে ৷ যেহেতু আমরা এই কম্পার্টমেন্টেই রয়েছি – তাই আমরা কেউই রেহাই পাব না । আমাদের সকলকে সাক্ষী দেবার জন্য নিয়ে যাবে। তাই বলছিলাম – আপনি কোন কথা বলবেন না – আমি ঠিক সামলে নেব !”
বেয়র্নের কথা শুনে ঐ কম্পার্নমেন্টে বসে থাকা জাপানী ছেলে দুটি কাঁদতে লাগল! ওরা অলিম্পিকে (এশিয়াডে) সোনা জেতা ছেলে হওয়া সত্ত্বেও কি ছিঁচকাঁদুনে! ঐ টা দেখে পাশে বসে থাকা এক ভদ্রমহিলা ওদেরকে বোঝাতে লাগলো_’তোমরা তো কিছু কর নি, যদি কমিশন হয় তাহলে যা সত্যি _সেটাই বলবে!’
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”কম্পার্নমেন্টে ঐ মহিলাই একমাত্র steady ছিলেন _বাকি সবাই ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে ছিল।”
আর জাপানী ছেলে দুটি ভয় পাচ্ছিল তার কারণ ওরা কাঁদতে কাঁদতেই বলছিল যে _ওদের দেশের আইন প্রচন্ড কড়া! যদি এইসব ঝামেলায় ওদের নাম জড়িয়ে পেপারে ছবি বের হয় বা টেলিভিশনে দেখায় _তাহলে দেশে ফেরা মাত্রই ওদের সব প্রাইজ কেড়ে নেওয়া হবে এবং সারাজীবনের মতো খেলার কেরিয়ার শেষ! তাই ওরা কোন ঝামেলায় যাবে না _ওরা বলবে যে ওরা কিছুই দেখেনি!
বেয়র্নও খুব ছটফট করছিল এবং ওর আশঙ্কাই সত্যি হল! ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই বিপদসূচক সাইরেন বাজতে শুরু করল_ট্রেনটির ইন্জিন stop করিয়ে দিয়ে গোটা ট্রেনটিকে সশস্ত্র পুলিশে ঘিরে ফেলেল!
বিভিন্ন স্টেশনে খবর পাঠিয়ে দেওয়া হোল যে ঐ ট্রেনটিতে terrorist attack হয়েছে, তাই ঐ পথে সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ! এইপ্রকারে ঐ ছোট্ট ঘটনাটা এক বিরাট ঘটনায় রুপ নিয়ে নিল!
‘বিরাট ঘটনা’ _এইজন্যে বলা হচ্ছে যে, ঐ সব উন্নত দেশের রেল-ব্যবস্থায় হুট করতেই কয়েকঘন্টা ট্রেন বন্ধ হয় না! কারণ ঐসব দেশে মানুষের সময়ের মূল্য আছে _উপযুক্ত কারণ ছাড়া কতৃপক্ষ মানুষের দেরি করিয়ে দিলে _যাত্রীদেরকে প্রচুর টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়! তাই ওসব দেশে ট্রেন বাস ঠিক সময়ে চলে _চট করে কোন কারনেই late করে না! কিন্তু সেদিন অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঐ লাইনে ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছিল _এটাই ছিল বিরাট ঘটনা!!
পরের দিন গুরুমহারাজের ভূমিকা! (ক্রমশঃ )