শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা ওনার স্বহস্ত-রচিত *সহজতা ও প্রেম* গ্রন্থে উল্লেখিত ‘প্রেম’-বিষয়ক কথায় ছিলাম। গুরুমহারাজ পাণ্ডুলিপি থেকে যেহেতু পাঠ করে শুনিয়েছিলেন (যার রেকর্ডিং রয়েছে), তাই “উনি বলেছেন”- এই কথাটি-ই ব্যবহার করা হোচ্ছে, কারণ ওনার ঐ পাঠ-এর বহু পরে আমরা গ্রন্থগুলি (সহজতা ও প্রেম, বাউল কথা – ইত্যাদি যে গ্রন্থগুলি উনি পাঠ করে শুনিয়েছিলেন) ছাপার আকারে ‘চরৈবেতি কার্যালয়’ থেকে পেয়েছিলাম।
যাইহোক, ওই গ্রন্থে তারপরে উনি আরও কি কি কথা বলেছেন তা দেখে নেওয়া যাক্। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – অভিমানশূন্য হও। রাগ-দ্বেষ বর্জিত হও। কারণ অভিমান, রাগ-দ্বেষ এগুলি মিথ্যা জ্ঞানের খেলা। এগুলি থাকলে প্রেমের উন্মেষ হয় না। কৃত্রিমতা পরিহারপূর্বক অকৃত্রিমতার দিকে অগ্রসর হও। অকৃত্রিম প্রেমিকই একমাত্র পরমেশ্বরকে উপলব্ধি করেন। প্রেম – সাধনা, ভালোবাসা – পথ, পরমেশ্বর – লক্ষ্য। আনন্দ প্রতিষ্ঠিত – পরমেশ্বরের মহিমা অপার।৷”
গুরুমহারাজ (পূর্ব পূর্ব মহাপুরুষেরাও বলেছেন) তো সমাজের মানুষদেরকে উদ্দেশ্য করে, করুণায় বিগলিত হয়ে, পিতার স্নেহে উপরিউক্ত বাণী তুলে ধরেছেন। কিন্তু ওনার কথা কি আমাদের কানের ভিতর দিয়ে ঢুকে মরমে স্পর্শ করছে ? কথাগুলি নিঃসন্দেহে মর্মস্পর্শী, কিন্তু আমাদের মরম বা মর্মের দ্বার যে রুদ্ধ। তা- তো এখনও খোলা হয়েই ওঠেনি ! সেই দ্বার খোলার জন্য যেটুকু (সামান্য) সাধন-ভজনের প্রয়োজন – আমরা আলস্য-বিলাসে মত্ত থেকে সেটুকুও তো করি না ! তাহলে কি করে আমাদের মধ্যেকার (শরীর অভ্যন্তরস্থ) রুদ্ধদ্বার গুলি খুলবে ? আমাদের মধ্যে রাগ-দ্বেষ অর্থাৎ ক্রোধ-ঈর্ষা-হিংসা যথেষ্টই রয়েছে, অভিমানও চরম রয়েছে ! এগুলি থাকাকালীন আমাদের মধ্যে ‘প্রেমের বোধ’ জাগ্রত হবে কি করে ?
আর গুরুমহারাজ যে বললেন কৃত্রিমতা পরিহার করার কথা বা অকৃত্রিম হবার কথা – এটা খুবই ভিতরকার কথা ! মানুষের মধ্যে গভীরভাবে বসে থাকা কৃত্রিমতার ভাব বিনষ্ট হয় সম্ভবত নির্বিকল্প সমাধিতে – তার আগে এই ভাব যায় না।
গুরুমহারাজ যেটা বারবার বলতে চাইছেন ‘সহজতা’ – এই সহজতাই অকৃত্রিমতা। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে, ” সহজ নয় ‘সহজ’ হওয়া।” এই সহজ অবস্থাকেই গুরুমহারাজ অন্যত্র বলেছেন – কপটতা পরিত্যাগ করে ‘অকপট’ হয়ে ওঠা ! কিন্তু ঐ যে বলা হোলো – আমরা ৯৯.৯% মানুষেরাই কপট, কৃত্রিম, অসহজ। আর আমরা এই অবস্থাতেই থেকে যেতে ভালবাসি। আমরা সহজ, অকৃত্রিম, অকপট হোতে চাইনা বলেই আমরা ঐ অবস্থায় পৌছাতে পারি না।
আমাদের অন্তর্জগতে যে কপটতা বা কৃত্রিমতা রয়েছে, অনেক সময় আমরা নিজেরাও তা জানি না, আমরা সত্যিই সেটা বুঝিও না – আমরা কতোটা কপট, কতোটা অসহজ বা কতোটা কৃত্রিম ! আমি দু-একটা উদাহরণ এখানে টানতেই পারি – যা দিয়ে বোঝা যাবে যে, অন্তর্জগতে আমরা কতোটা কপট !
গুরুমহারাজ শরীরে থাকাকালীন সময়ে বেশকিছু উচ্চশিক্ষিত (পড়াশুনায় ভালো) বেকার ছেলের সাথে আমার পরিচয় ছিল, যারা গুরুমহারাজের কাছে প্রায়ই আসতো, গুরুমহারাজেরই দীক্ষিত ভক্ত ছিল। তারা আলাদা আলাদা ভাবে আমাকে বলেছিল – ” জানো, আমার একটা চাকরি খুবই প্রয়োজন ! কারণ গুরুমহারাজ এই যে বিশাল কর্মকান্ড ফেঁদেছেন, এতো অনাথ ছেলেদের থাকা-খাওয়া, পড়াশুনার ভার নিয়েছেন – এই কাজে তো আমাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন ! তাই চাকরি একটা আমার খুবই প্রয়োজন !”
ওইসব ছেলেদের কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই চাকরি লাভ(শিক্ষকতা) হয়েছিল। কিন্তু এরপর কি দেখলাম জানেন – অতিসত্বর ওইসব ছেলেগুলি পটাপট্ বিয়ে-থা করে ফেললো এবং কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চুটিয়ে সংসার করতে লাগলো। গুরুমহারাজের প্রতি কর্তব্য, আশ্রমের প্রতি কর্তব্য_ইত্যাদি কোথায় যেন হারিয়ে গেল ! হয়তো বছরে দু’একবার কিছু চাঁদা পাঠায় – এইমাত্র !
এছাড়া অনেক ছেলেমেয়েকে দেখেছিলাম – যারা ব্রহ্মচারী বা ব্রহ্মচারিণীর ন্যায় দীর্ঘদিন ধরে বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে বা কোনো শাখা-আশ্রমে কাটালো – পরে কোনো কারণে পুনরায় কর্মক্ষেত্রে বা সংসার জীবনে প্রবেশ করলো। যে সময়টা আশ্রমে কাটালো – তখন ঘর-সংসার, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন যেন তুচ্ছ ছিল ! তখন গুরুমহারাজ এবং তাঁর আশ্রমই ধ্যান-জ্ঞান। কর্মের দ্বারা, সেবার দ্বারা, সাধন-ভজনের দ্বারা গুরুমহারাজের প্রসন্নতা অর্জন করাই ছিল জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য !
কিন্তু সংসারজীবনে ফিরে যাবার পর সেইসব ছেলেমেয়েদের জীবনচর্যা দেখে, কাজকর্ম দেখে সত্যিই অবাক হই ! কোথায় আর গুরু-ভাবনা, গুরুর আশ্রম-ভাবনা ? সে তার নিজের সংসার (স্ত্রী বা স্বামী, পুত্র বা কন্যা), নিজের বাবা-মার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য – এইসব নিয়ে এতো বেশি মত্ত হয়ে গেল যে, সে তুলনায় গুরুমহারাজ বা আশ্রমের প্রতি কর্তব্য যেন ম্লান হয়ে গেল।
আমি মাঝে মাঝে এইসব দেখে ভাবি যে, আমি নিজেও তো ঐ দলেই পড়ে যাবো ! গুরু মহারাজের জন্য, আমাদের প্রাণের প্রাণ-হৃদয়ের হৃদয়, আমাদের ইহকাল-পরকালের কর্তার জন্য কতোটুকুই বা করতে পারি !!
আমার দেখা ঐ মানুষ(ছেলে বা মেয়ে)গুলো তো সত্যি সত্যিই ভালো ছিল, ওদের উদ্দেশ্যও মহৎ ছিল। কিন্তু স্থান-কাল-পরিবেশ পাল্টে গেল তো__ মানুষটাও পাল্টে গেল !! ওইসব ত্যাগব্রতী ছেলেমেয়েগুলোর প্রথম জীবনের সদ্-ভাবনা, ত্যাগব্রত এইগুলির অন্তরালে ভোগের বাসনা এবং ভগবানের চেয়েও পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কর্তব্য করার মানসিকতাগুলি ছিল কোথায় ?
শ্রদ্ধেয় ন’কাকা(শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র বলা একটা গল্পের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ! – এক সাঁওতাল মদ খেয়ে রাত্রে বাওয়াল করছিল দেখে ওর বউ ঘর থেকে লন্ঠনটা সরিয়ে নিল – যাতে অন্ধকারে মাতাল স্বামী তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে পারে। কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকে দেখে ওর মাতাল স্বামী বসে বসে তখনও কিছু যেন একটা ভাবছে ! স্ত্রী জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো যে, তার স্বামী ভাবছে যে, ‘ যতক্ষণ ঘরে লন্ঠনটা ছিল ততক্ষণ একঘর আলো ছিল। কিন্তু যেই আলোটা সরিয়ে নেওয়া হোলো – অমনি একঘর অন্ধকার হয়ে গেল ! কিন্তু অন্ধকারটা এতক্ষণ ছিল কোথায় যে, আলো সরানোর সঙ্গে সঙ্গেই চলে এলো !!!’ ওর স্ত্রী লন্ঠনটা ঘরে এনে আবার রাখতেই সে বলে উঠলো – “এইবার বুঝেছি___ অন্ধকারটা এতোক্ষণ লণ্ঠনের নিচে ঘাপটি মেরে বসেছিল !!”
আমাদের কপটতা-অসহজতা-কৃত্রিমতাও ঠিক অমনি আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে ঘাপটি মেরে থেকে যায়__আর পরিবেশ পরিস্থিতি বদলালেই সেগুলি বাইরে বেরিয়ে আসে ।৷
যাইহোক, ওই গ্রন্থে তারপরে উনি আরও কি কি কথা বলেছেন তা দেখে নেওয়া যাক্। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – অভিমানশূন্য হও। রাগ-দ্বেষ বর্জিত হও। কারণ অভিমান, রাগ-দ্বেষ এগুলি মিথ্যা জ্ঞানের খেলা। এগুলি থাকলে প্রেমের উন্মেষ হয় না। কৃত্রিমতা পরিহারপূর্বক অকৃত্রিমতার দিকে অগ্রসর হও। অকৃত্রিম প্রেমিকই একমাত্র পরমেশ্বরকে উপলব্ধি করেন। প্রেম – সাধনা, ভালোবাসা – পথ, পরমেশ্বর – লক্ষ্য। আনন্দ প্রতিষ্ঠিত – পরমেশ্বরের মহিমা অপার।৷”
গুরুমহারাজ (পূর্ব পূর্ব মহাপুরুষেরাও বলেছেন) তো সমাজের মানুষদেরকে উদ্দেশ্য করে, করুণায় বিগলিত হয়ে, পিতার স্নেহে উপরিউক্ত বাণী তুলে ধরেছেন। কিন্তু ওনার কথা কি আমাদের কানের ভিতর দিয়ে ঢুকে মরমে স্পর্শ করছে ? কথাগুলি নিঃসন্দেহে মর্মস্পর্শী, কিন্তু আমাদের মরম বা মর্মের দ্বার যে রুদ্ধ। তা- তো এখনও খোলা হয়েই ওঠেনি ! সেই দ্বার খোলার জন্য যেটুকু (সামান্য) সাধন-ভজনের প্রয়োজন – আমরা আলস্য-বিলাসে মত্ত থেকে সেটুকুও তো করি না ! তাহলে কি করে আমাদের মধ্যেকার (শরীর অভ্যন্তরস্থ) রুদ্ধদ্বার গুলি খুলবে ? আমাদের মধ্যে রাগ-দ্বেষ অর্থাৎ ক্রোধ-ঈর্ষা-হিংসা যথেষ্টই রয়েছে, অভিমানও চরম রয়েছে ! এগুলি থাকাকালীন আমাদের মধ্যে ‘প্রেমের বোধ’ জাগ্রত হবে কি করে ?
আর গুরুমহারাজ যে বললেন কৃত্রিমতা পরিহার করার কথা বা অকৃত্রিম হবার কথা – এটা খুবই ভিতরকার কথা ! মানুষের মধ্যে গভীরভাবে বসে থাকা কৃত্রিমতার ভাব বিনষ্ট হয় সম্ভবত নির্বিকল্প সমাধিতে – তার আগে এই ভাব যায় না।
গুরুমহারাজ যেটা বারবার বলতে চাইছেন ‘সহজতা’ – এই সহজতাই অকৃত্রিমতা। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে, ” সহজ নয় ‘সহজ’ হওয়া।” এই সহজ অবস্থাকেই গুরুমহারাজ অন্যত্র বলেছেন – কপটতা পরিত্যাগ করে ‘অকপট’ হয়ে ওঠা ! কিন্তু ঐ যে বলা হোলো – আমরা ৯৯.৯% মানুষেরাই কপট, কৃত্রিম, অসহজ। আর আমরা এই অবস্থাতেই থেকে যেতে ভালবাসি। আমরা সহজ, অকৃত্রিম, অকপট হোতে চাইনা বলেই আমরা ঐ অবস্থায় পৌছাতে পারি না।
আমাদের অন্তর্জগতে যে কপটতা বা কৃত্রিমতা রয়েছে, অনেক সময় আমরা নিজেরাও তা জানি না, আমরা সত্যিই সেটা বুঝিও না – আমরা কতোটা কপট, কতোটা অসহজ বা কতোটা কৃত্রিম ! আমি দু-একটা উদাহরণ এখানে টানতেই পারি – যা দিয়ে বোঝা যাবে যে, অন্তর্জগতে আমরা কতোটা কপট !
গুরুমহারাজ শরীরে থাকাকালীন সময়ে বেশকিছু উচ্চশিক্ষিত (পড়াশুনায় ভালো) বেকার ছেলের সাথে আমার পরিচয় ছিল, যারা গুরুমহারাজের কাছে প্রায়ই আসতো, গুরুমহারাজেরই দীক্ষিত ভক্ত ছিল। তারা আলাদা আলাদা ভাবে আমাকে বলেছিল – ” জানো, আমার একটা চাকরি খুবই প্রয়োজন ! কারণ গুরুমহারাজ এই যে বিশাল কর্মকান্ড ফেঁদেছেন, এতো অনাথ ছেলেদের থাকা-খাওয়া, পড়াশুনার ভার নিয়েছেন – এই কাজে তো আমাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন ! তাই চাকরি একটা আমার খুবই প্রয়োজন !”
ওইসব ছেলেদের কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই চাকরি লাভ(শিক্ষকতা) হয়েছিল। কিন্তু এরপর কি দেখলাম জানেন – অতিসত্বর ওইসব ছেলেগুলি পটাপট্ বিয়ে-থা করে ফেললো এবং কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চুটিয়ে সংসার করতে লাগলো। গুরুমহারাজের প্রতি কর্তব্য, আশ্রমের প্রতি কর্তব্য_ইত্যাদি কোথায় যেন হারিয়ে গেল ! হয়তো বছরে দু’একবার কিছু চাঁদা পাঠায় – এইমাত্র !
এছাড়া অনেক ছেলেমেয়েকে দেখেছিলাম – যারা ব্রহ্মচারী বা ব্রহ্মচারিণীর ন্যায় দীর্ঘদিন ধরে বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে বা কোনো শাখা-আশ্রমে কাটালো – পরে কোনো কারণে পুনরায় কর্মক্ষেত্রে বা সংসার জীবনে প্রবেশ করলো। যে সময়টা আশ্রমে কাটালো – তখন ঘর-সংসার, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন যেন তুচ্ছ ছিল ! তখন গুরুমহারাজ এবং তাঁর আশ্রমই ধ্যান-জ্ঞান। কর্মের দ্বারা, সেবার দ্বারা, সাধন-ভজনের দ্বারা গুরুমহারাজের প্রসন্নতা অর্জন করাই ছিল জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য !
কিন্তু সংসারজীবনে ফিরে যাবার পর সেইসব ছেলেমেয়েদের জীবনচর্যা দেখে, কাজকর্ম দেখে সত্যিই অবাক হই ! কোথায় আর গুরু-ভাবনা, গুরুর আশ্রম-ভাবনা ? সে তার নিজের সংসার (স্ত্রী বা স্বামী, পুত্র বা কন্যা), নিজের বাবা-মার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য – এইসব নিয়ে এতো বেশি মত্ত হয়ে গেল যে, সে তুলনায় গুরুমহারাজ বা আশ্রমের প্রতি কর্তব্য যেন ম্লান হয়ে গেল।
আমি মাঝে মাঝে এইসব দেখে ভাবি যে, আমি নিজেও তো ঐ দলেই পড়ে যাবো ! গুরু মহারাজের জন্য, আমাদের প্রাণের প্রাণ-হৃদয়ের হৃদয়, আমাদের ইহকাল-পরকালের কর্তার জন্য কতোটুকুই বা করতে পারি !!
আমার দেখা ঐ মানুষ(ছেলে বা মেয়ে)গুলো তো সত্যি সত্যিই ভালো ছিল, ওদের উদ্দেশ্যও মহৎ ছিল। কিন্তু স্থান-কাল-পরিবেশ পাল্টে গেল তো__ মানুষটাও পাল্টে গেল !! ওইসব ত্যাগব্রতী ছেলেমেয়েগুলোর প্রথম জীবনের সদ্-ভাবনা, ত্যাগব্রত এইগুলির অন্তরালে ভোগের বাসনা এবং ভগবানের চেয়েও পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কর্তব্য করার মানসিকতাগুলি ছিল কোথায় ?
শ্রদ্ধেয় ন’কাকা(শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র বলা একটা গল্পের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ! – এক সাঁওতাল মদ খেয়ে রাত্রে বাওয়াল করছিল দেখে ওর বউ ঘর থেকে লন্ঠনটা সরিয়ে নিল – যাতে অন্ধকারে মাতাল স্বামী তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে পারে। কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকে দেখে ওর মাতাল স্বামী বসে বসে তখনও কিছু যেন একটা ভাবছে ! স্ত্রী জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো যে, তার স্বামী ভাবছে যে, ‘ যতক্ষণ ঘরে লন্ঠনটা ছিল ততক্ষণ একঘর আলো ছিল। কিন্তু যেই আলোটা সরিয়ে নেওয়া হোলো – অমনি একঘর অন্ধকার হয়ে গেল ! কিন্তু অন্ধকারটা এতক্ষণ ছিল কোথায় যে, আলো সরানোর সঙ্গে সঙ্গেই চলে এলো !!!’ ওর স্ত্রী লন্ঠনটা ঘরে এনে আবার রাখতেই সে বলে উঠলো – “এইবার বুঝেছি___ অন্ধকারটা এতোক্ষণ লণ্ঠনের নিচে ঘাপটি মেরে বসেছিল !!”
আমাদের কপটতা-অসহজতা-কৃত্রিমতাও ঠিক অমনি আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে ঘাপটি মেরে থেকে যায়__আর পরিবেশ পরিস্থিতি বদলালেই সেগুলি বাইরে বেরিয়ে আসে ।৷