গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছিলাম মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাস । Need of Life অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের বিবর্তনের পর আমরা এখন ছিলাম Necessity of Life অর্থাৎ শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনায় ৷ শিক্ষার বিবর্তন নিয়ে আগে অনেক আলোচনা হয়েছে – আজ আরও একটু হোক ! গুরু মহারাজ বলেছিলেন একটি বিখ্যাত পৌরাণিক গল্পের কথা ! যে গল্পটি রূপকাকারে বহির্মুখী বিদ্যা ও অন্তর্মুখী বা অধ্যাত্মবিদ্যার তুলনা করা হয়েছে । গল্পটিতে রয়েছে – মা পার্বতীর দুই পুত্র গণেশজী এবং কার্তিকেয়-র মধ্যে মায়ের কোলের দখল নিয়ে ঝগড়া চলছিল – কে মায়ের কোলে জুড়ে বসা অবস্থায় শোভা পাবে ! ৺রী মা বিধান দিলেন, দুই পুত্রের মধ্যে যে জন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে সাতবার প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে – সেই পুত্রকেই তিনি আজ তাঁর কোলে বসার সুযোগ দেবেন ! মা-য়ের কথা শুনে বালক কার্তিকেয়-র ফুর্তি আর দেখে কে ? সে তার বাহন ময়ূরকে ডেকে পাঠালো এবং বেরিয়ে গেল ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমায় ! কিন্তু গণেশ কি করে –তার তো বাহন ইঁদুর, ফলে তার তো আর তাতে চেপে ব্রহ্মাণ্ড ঘোরা সম্ভব নয় ! কি করা যায় – কি করা যায় ! চিন্তার গভীরে ডুবে গেল গণেশ ! চকিত চমকে তার ধ্যান ভঙ্গ হলো – তাই তো ! তার মা-ই তো সাক্ষাৎ জগৎজননী – জগৎস্বরূপা ! তাহলে তাঁকে প্রদক্ষিণ করা মানেই তো বিশ্বজগৎ প্রদক্ষিণ ! যেমন ভাবা – তেমন কাজ ! সাতবার প্রদক্ষিণ করার পরেই –গনেশ দেখল মায়ের মুখে প্রসন্ন হাসি ! তাকে কিছুই করতে হলো না, ৺রী মা নিজেই দুহাত বাড়িয়ে জয়ী পুত্রকে কোলে তুলে নিলেন । কার্তিকেয় বহু শ্রম করে, বহু পথ ঘুরে, বহু সময় পরে ফিরে এসে দেখলেন – শ্রীগনেশ ৺রী মায়ের কোল আলো করে বসে রয়েছে ।
গুরুমহারাজ গল্পটি শেষ করার পর বলেছিলেন – ” এই গল্পটির প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে ৺রী মায়ের প্রসন্নতা অর্জন অর্থাৎ মহাপ্রকৃতির অনুকূলে ব্যক্তিসত্ত্বাকে প্রতিষ্ঠা করে – তদাকার হওয়ার দুটো পথ রয়েছে, একটি বহির্মুখী এবং অপরটি অন্তর্মুখী । বহির্মুখী বিদ্যার বিকাশের ফল আজকের সাহিত্য দর্শন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সমুদ্রবিজ্ঞান, মহাকাশ গবেষণা, পরমানবিক গবেষণা, নানাবিধ আবিষ্কার সমূহ ইত্যাদি ইত্যাদি ! অপরপক্ষে সুপ্রাচীনকাল থেকেই অন্তর্মুখী শিক্ষার অনুগামী সাধকগণ কোন না কোন নির্জনস্থান দেখে বসে গেলেন এবং ধ্যানলীন হয়ে ঢুকে গেলেন নিজের অন্তশ্চেতনার গভীরে ! সমস্ত বিকল্প ত্যাগ করে, সবিকল্প সমাধির অবস্থা পেরিয়ে আপন অস্তিত্ব হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নির্বিকল্প অবস্থায় !
এই ভাবেই মানবসমাজ যুগে যুগে উপহার হিসেবে পেয়েছে এক একজন ঋষিকে ! এঁরাই গণেশ যারা সেই নির্বিকল্পের ভূমি থেকে নেমে এসে দিশাহীন মানবকে দিয়েছে জীবনে এগিয়ে চলার পথের দিশা, অজ্ঞান অন্ধকারময় জীবনকে করেছে আলোকিত, শান্তিহীন-আনন্দহীন ধূ ধূ মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক মানবজীবনে এনেছে প্রেমের স্নিগ্ধতা-শীতলতা , দিয়েছে তাতে অবগাহন করার সুযোগ ! সকলকে সম্মোধন করেছে “অমৃতস্য পুত্রাঃ”- এই নামে । গুরু মহারাজ বলেছিলেন অবতার পুরুষরাই গণেশ ! যাঁর শুঁড় নাভি পর্যন্ত অর্থাৎ কুলকুন্ডলিনী শক্তি সদা-জাগ্রত এবং তার ক্রিয়া সর্বদা ঊর্ধ্বগতির দিকে ক্রিয়াশীল , নিম্নগামী হোলেও নাভি পর্যন্তই __তার নিচে আর নামে না!!
জড়বিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ, মহাকাশবিদ-রা শুধুই উক্ত গল্পের কার্তিকেয়-র মতো বহির্বিশ্বের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে চলেছে ! খোঁজ – খোঁজ – খোঁজ – আর খোঁজ ! শুধু খোঁজাই চলছে – নিত্য নতুন আবিষ্কারও নিশ্চয়ই হয়ে চলেছে ! কিন্তু মহা মহা বিজ্ঞানীরা জানেন অনন্ত এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অতল রহস্যের কাছে বর্তমান বিজ্ঞানের আবিষ্কারসমূহ অতি ক্ষুদ্র, অতি তুচ্ছ, অতি নগন্য ! এই জন্যেই অন্যতম বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ নিউটন বলেছিলেন – ” আমার জ্ঞান খুবই সীমিত ! আমি জ্ঞান সমুদ্রের তীরে নুড়ি-পাথর কুড়োতে পেরেছি এইমাত্র – পুরো জ্ঞান-সাগরটা আমার সম্মুখে – সেখানটা এখনও স্পর্শ করতেই পারিনি !” সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, বহির্মুখী জ্ঞানের চর্চা-য় মানবের জীবনে ভোগ-ঐশ্বর্য-প্রাচুর্যের আগমন ঘটে, মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ফাঁসে বাঁধা পড়ে এবং এইসব পেয়ে মানব তার জীবনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ Purpose of Life-এর কথা ভুলে যায় । অন্তর্মুখী হয়ে গবেষনায় রত মানব বা মহা মহা সাধকদের দেওয়া তত্ত্বসমূহের ব্যাখ্যা করেন পরবর্তী কালের পণ্ডিতেরা – দার্শনিকেরা! সেই তত্ত্বসমূহের ধারা ধরেই আজকের যত কিছু গবেষণা ও আবিষ্কার এবং আগামীর গবেষণা বা আবিষ্কারের সম্ভাবনা _ গুরু মহারাজ বলেছিলেন একথা!
বিশ্বের উন্নত দেশগুলি (বিশেষতঃ আমেরিকা, জার্মানি, সুইডেন ইত্যাদি দেশ) ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রগুলি থেকেই এখন নতুন নতুন তত্ত্বসমূহ খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে (কারণ ভারতীয় প্রাচীন পুরাণাদি শাস্ত্রসমূহে বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব রূপকাকারে লুকানো রয়েছে) – যাতে করে আরো নতুন নতুন কোন না কোন কিছু আবিষ্কার করা যায় !
স্বাস্থ্যের কথাও কিছুটা আগে বলা হয়েছিল – এখন আর একটু বলা যাক্ ! যদিও গুরু মহারাজ এই সবগুলি (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা) সম্বন্ধে যত কথা বলেছিলেন – তার সব তো বলা সম্ভব হবে না – তবু কিছু কিছু Touch-ও যদি পাওয়া যায়, তাহলেই আমাদের আর কিছু না হোক – জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হবে , (এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি__আজ আজ থেকে প্রায় 30-40 বছর আগে গুরু মহারাজ বলেছিলেন বর্তমানে দেখবি ধনী ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক ব্যবসায় নামবে__ আর তাই হয়েছিল।) তাই এই প্রচেষ্টা ! আদিম মানবসমাজ থেকেই মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন ছিল, কারণ বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের সাথে সাথেই মানুষ ‘Prevention’ এবং ‘Care’ – এই দুটি ব্যাপারে যত্নশীল হতে শিখেছিল । পশুর চামড়া বা ‘বর্ম’ শরীরে বেঁধে হিংস্র পশুদের মোকাবিলা করলে কম আহত হতে হয়, পাথরকে ঘষে ঘষে ছুঁচালো করে তা দিয়ে ওই সব পশুদের আঘাত করলে পশুদেরকে কাবু করা বা পরাস্ত করা সহজ হয় – এগুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছিল ৷ এরপর ধীরে ধীরে চাকার আবিষ্কার, ধাতুর আবিষ্কার তাদের জীবনকে আরো গতিশীল এবং সুরক্ষিত করেছিল ৷ খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবহার, উদ্ভিদজ খাদ্যের অপেক্ষা প্রাণিজ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা – ইত্যাদি গুলিকেই সুস্বাস্থ্যের প্রাথমিক শর্ত বলে বিবেচিত হতো ! সংযম, আসন, প্রাণায়াম বা যোগবিদ্যার দ্বারা শরীরকে প্রকৃতপক্ষে নিরোগ করে তোলা বা প্রকৃত সুস্বাস্থ্য পাবার উপায় জানতে আরও বহু শত বছর সময় লেগেছিল । গুরুমহারাজের বলা কথা থেকে আমরা এটাই বুঝতে পেরেছিলাম যে মানব সভ্যতার বিকাশের প্রতিটি ধাপে ঈশ্বরীয় শক্তি-ই কোন না কোন সমাজে কোনো না কোনো মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে(আজও এটাই হয়ে চলেছে)এবং তখন তিনি-ই সমাজশিক্ষক রূপে সেই সমাজকে (সমাজের মানুষকে) ‘আরো এগিয়ে চলা’-র মন্ত্র শিখিয়ে দেন। আর এইভাবেই সমগ্র মানব সমাজের অগ্রগতি হয়। এখন যে সমাজকে আমরা দেখছি এটিও একটু একটু করে আগাতে আগাতে বর্তমান পরিণতি প্রাপ্ত হয়েছে ।
যাইহোক, যা বলা হচ্ছিল – প্রকৃতপক্ষে যোগীদের স্বাস্থ্যই সুস্বাস্থ্য ! তন-মন-প্রান এই তিনটি সম্পুর্ন সুস্থ থাকাটাই সুস্বাস্থ্য। ভোগবাদী জগতের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য দেখে যতই মজবুত লাগুক _আসলে তা সুস্বাস্থ্য নয়।।
গুরু মহারাজ একবার বলেছিলেন – ওনার যুবক বয়সে দেখা (টেলিভিশনে) পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দৈহিকভাবে শক্তিমান, স্বাস্থ্যবান কুস্তিগীর ক্যাসিয়াস ক্লে (পরবর্তীতে মহাম্মদ আলী)-র কথা (যার ঘুসির জোর ছিল – পৃথিবীর যে কোন শক্তিমান অপেক্ষা বেশি) ! ওই ব্যক্তি তার জীবনে বহু শক্তিমান মুষ্টিযোদ্ধাকে অবহেলায় দু-চার ঘুঁষিতেই কাবু করে দিয়েছিল । কিন্তু প্রৗেঢ়বয়সেই তার এমন ‘পারকিনসন ডিজিজ্’ হয়ে গেল যে, সে নিজের জামা নিজে পড়তে পারতো না, জামার বোতাম লাগাতে পারতো না, চায়ের কাপ নিজে মুখে তুলে খেতে গেলে হাত ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতো ! … [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজ গল্পটি শেষ করার পর বলেছিলেন – ” এই গল্পটির প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে ৺রী মায়ের প্রসন্নতা অর্জন অর্থাৎ মহাপ্রকৃতির অনুকূলে ব্যক্তিসত্ত্বাকে প্রতিষ্ঠা করে – তদাকার হওয়ার দুটো পথ রয়েছে, একটি বহির্মুখী এবং অপরটি অন্তর্মুখী । বহির্মুখী বিদ্যার বিকাশের ফল আজকের সাহিত্য দর্শন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সমুদ্রবিজ্ঞান, মহাকাশ গবেষণা, পরমানবিক গবেষণা, নানাবিধ আবিষ্কার সমূহ ইত্যাদি ইত্যাদি ! অপরপক্ষে সুপ্রাচীনকাল থেকেই অন্তর্মুখী শিক্ষার অনুগামী সাধকগণ কোন না কোন নির্জনস্থান দেখে বসে গেলেন এবং ধ্যানলীন হয়ে ঢুকে গেলেন নিজের অন্তশ্চেতনার গভীরে ! সমস্ত বিকল্প ত্যাগ করে, সবিকল্প সমাধির অবস্থা পেরিয়ে আপন অস্তিত্ব হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নির্বিকল্প অবস্থায় !
এই ভাবেই মানবসমাজ যুগে যুগে উপহার হিসেবে পেয়েছে এক একজন ঋষিকে ! এঁরাই গণেশ যারা সেই নির্বিকল্পের ভূমি থেকে নেমে এসে দিশাহীন মানবকে দিয়েছে জীবনে এগিয়ে চলার পথের দিশা, অজ্ঞান অন্ধকারময় জীবনকে করেছে আলোকিত, শান্তিহীন-আনন্দহীন ধূ ধূ মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক মানবজীবনে এনেছে প্রেমের স্নিগ্ধতা-শীতলতা , দিয়েছে তাতে অবগাহন করার সুযোগ ! সকলকে সম্মোধন করেছে “অমৃতস্য পুত্রাঃ”- এই নামে । গুরু মহারাজ বলেছিলেন অবতার পুরুষরাই গণেশ ! যাঁর শুঁড় নাভি পর্যন্ত অর্থাৎ কুলকুন্ডলিনী শক্তি সদা-জাগ্রত এবং তার ক্রিয়া সর্বদা ঊর্ধ্বগতির দিকে ক্রিয়াশীল , নিম্নগামী হোলেও নাভি পর্যন্তই __তার নিচে আর নামে না!!
জড়বিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ, মহাকাশবিদ-রা শুধুই উক্ত গল্পের কার্তিকেয়-র মতো বহির্বিশ্বের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে চলেছে ! খোঁজ – খোঁজ – খোঁজ – আর খোঁজ ! শুধু খোঁজাই চলছে – নিত্য নতুন আবিষ্কারও নিশ্চয়ই হয়ে চলেছে ! কিন্তু মহা মহা বিজ্ঞানীরা জানেন অনন্ত এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অতল রহস্যের কাছে বর্তমান বিজ্ঞানের আবিষ্কারসমূহ অতি ক্ষুদ্র, অতি তুচ্ছ, অতি নগন্য ! এই জন্যেই অন্যতম বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ নিউটন বলেছিলেন – ” আমার জ্ঞান খুবই সীমিত ! আমি জ্ঞান সমুদ্রের তীরে নুড়ি-পাথর কুড়োতে পেরেছি এইমাত্র – পুরো জ্ঞান-সাগরটা আমার সম্মুখে – সেখানটা এখনও স্পর্শ করতেই পারিনি !” সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, বহির্মুখী জ্ঞানের চর্চা-য় মানবের জীবনে ভোগ-ঐশ্বর্য-প্রাচুর্যের আগমন ঘটে, মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ফাঁসে বাঁধা পড়ে এবং এইসব পেয়ে মানব তার জীবনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ Purpose of Life-এর কথা ভুলে যায় । অন্তর্মুখী হয়ে গবেষনায় রত মানব বা মহা মহা সাধকদের দেওয়া তত্ত্বসমূহের ব্যাখ্যা করেন পরবর্তী কালের পণ্ডিতেরা – দার্শনিকেরা! সেই তত্ত্বসমূহের ধারা ধরেই আজকের যত কিছু গবেষণা ও আবিষ্কার এবং আগামীর গবেষণা বা আবিষ্কারের সম্ভাবনা _ গুরু মহারাজ বলেছিলেন একথা!
বিশ্বের উন্নত দেশগুলি (বিশেষতঃ আমেরিকা, জার্মানি, সুইডেন ইত্যাদি দেশ) ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রগুলি থেকেই এখন নতুন নতুন তত্ত্বসমূহ খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে (কারণ ভারতীয় প্রাচীন পুরাণাদি শাস্ত্রসমূহে বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব রূপকাকারে লুকানো রয়েছে) – যাতে করে আরো নতুন নতুন কোন না কোন কিছু আবিষ্কার করা যায় !
স্বাস্থ্যের কথাও কিছুটা আগে বলা হয়েছিল – এখন আর একটু বলা যাক্ ! যদিও গুরু মহারাজ এই সবগুলি (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা) সম্বন্ধে যত কথা বলেছিলেন – তার সব তো বলা সম্ভব হবে না – তবু কিছু কিছু Touch-ও যদি পাওয়া যায়, তাহলেই আমাদের আর কিছু না হোক – জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হবে , (এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি__আজ আজ থেকে প্রায় 30-40 বছর আগে গুরু মহারাজ বলেছিলেন বর্তমানে দেখবি ধনী ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক ব্যবসায় নামবে__ আর তাই হয়েছিল।) তাই এই প্রচেষ্টা ! আদিম মানবসমাজ থেকেই মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন ছিল, কারণ বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের সাথে সাথেই মানুষ ‘Prevention’ এবং ‘Care’ – এই দুটি ব্যাপারে যত্নশীল হতে শিখেছিল । পশুর চামড়া বা ‘বর্ম’ শরীরে বেঁধে হিংস্র পশুদের মোকাবিলা করলে কম আহত হতে হয়, পাথরকে ঘষে ঘষে ছুঁচালো করে তা দিয়ে ওই সব পশুদের আঘাত করলে পশুদেরকে কাবু করা বা পরাস্ত করা সহজ হয় – এগুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছিল ৷ এরপর ধীরে ধীরে চাকার আবিষ্কার, ধাতুর আবিষ্কার তাদের জীবনকে আরো গতিশীল এবং সুরক্ষিত করেছিল ৷ খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবহার, উদ্ভিদজ খাদ্যের অপেক্ষা প্রাণিজ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা – ইত্যাদি গুলিকেই সুস্বাস্থ্যের প্রাথমিক শর্ত বলে বিবেচিত হতো ! সংযম, আসন, প্রাণায়াম বা যোগবিদ্যার দ্বারা শরীরকে প্রকৃতপক্ষে নিরোগ করে তোলা বা প্রকৃত সুস্বাস্থ্য পাবার উপায় জানতে আরও বহু শত বছর সময় লেগেছিল । গুরুমহারাজের বলা কথা থেকে আমরা এটাই বুঝতে পেরেছিলাম যে মানব সভ্যতার বিকাশের প্রতিটি ধাপে ঈশ্বরীয় শক্তি-ই কোন না কোন সমাজে কোনো না কোনো মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে(আজও এটাই হয়ে চলেছে)এবং তখন তিনি-ই সমাজশিক্ষক রূপে সেই সমাজকে (সমাজের মানুষকে) ‘আরো এগিয়ে চলা’-র মন্ত্র শিখিয়ে দেন। আর এইভাবেই সমগ্র মানব সমাজের অগ্রগতি হয়। এখন যে সমাজকে আমরা দেখছি এটিও একটু একটু করে আগাতে আগাতে বর্তমান পরিণতি প্রাপ্ত হয়েছে ।
যাইহোক, যা বলা হচ্ছিল – প্রকৃতপক্ষে যোগীদের স্বাস্থ্যই সুস্বাস্থ্য ! তন-মন-প্রান এই তিনটি সম্পুর্ন সুস্থ থাকাটাই সুস্বাস্থ্য। ভোগবাদী জগতের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য দেখে যতই মজবুত লাগুক _আসলে তা সুস্বাস্থ্য নয়।।
গুরু মহারাজ একবার বলেছিলেন – ওনার যুবক বয়সে দেখা (টেলিভিশনে) পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দৈহিকভাবে শক্তিমান, স্বাস্থ্যবান কুস্তিগীর ক্যাসিয়াস ক্লে (পরবর্তীতে মহাম্মদ আলী)-র কথা (যার ঘুসির জোর ছিল – পৃথিবীর যে কোন শক্তিমান অপেক্ষা বেশি) ! ওই ব্যক্তি তার জীবনে বহু শক্তিমান মুষ্টিযোদ্ধাকে অবহেলায় দু-চার ঘুঁষিতেই কাবু করে দিয়েছিল । কিন্তু প্রৗেঢ়বয়সেই তার এমন ‘পারকিনসন ডিজিজ্’ হয়ে গেল যে, সে নিজের জামা নিজে পড়তে পারতো না, জামার বোতাম লাগাতে পারতো না, চায়ের কাপ নিজে মুখে তুলে খেতে গেলে হাত ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতো ! … [ক্রমশঃ]