গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন প্রথম বনগ্রাম আশ্রমে কুঠিয়া তৈরী করে থাকতে শুরু করেন (১৯৭৮ সালের কোজাগরী পূর্ণিমার পর থেকে) তখন আশ্রমের মাঝখানে যে বটগাছটি ছিল – সেটি ছিল মৃতপ্রায় ! “গাছটি কি মারা যাবে ?”– কোন ভক্তের এই জিজ্ঞাসার উত্তরে গুরু মহারাজ তখন বলেছিলেন – ” না – না গাছটি মারা যাবে না , এটি আরও অনেকদিন বাঁচবে ৷ এর এইরূপ অবস্থা কেন জানোতো — এই গাছকে আশ্রয় করে অনেকগুলি প্রেতযোনি রয়েছে , এদের মুক্তি ঘটলেই গাছটি নতুন রূপ পাবে ৷” এরপর গুরু মহারাজ কার্ত্তিক মাসের কালীপূজার আগের দিন অর্থাৎ ভূতচতুর্দশীর দিন এই প্রেতযোনিগুলির মুক্তির ব্যাবস্থা করেন । উনি নিজের হাতে ওদের জন্য ভোগ-প্রসাদ রান্না করেন (খিচুড়ী ইত্যাদি) এবং গভীর রাত্রে পাতা পেতে লাইন দিয়ে তাদেরকে ঐ প্রসাদ বিতরণ করেন ৷ তখন মাত্র কয়েকজন ব্রহ্মচারী আশ্রমে যোগদান করেছিল । এদের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের দেবেন্দ্রনাথ (স্বামী বিশুদ্ধানন্দ.) সেদিন গুরু মহারাজকে ওনার কাজে Help করেছিল ৷ কিন্তু যখন প্রসাদ বিতরণের কাজটি করেন তখন গুরু মহারাজ দেবেন্দ্রনাথকে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে যেতে বলেছিলেন – কিন্তু সে যায় নি! অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে গুরু মহারাজের ক্রিয়াকর্ম দেখছিল । গুরু মহারাজ যখন মাঠের মাঝখানে পরপর শালপাতা পেতে দিয়ে হাতায় করে ওদেরকে একহাতা করে খিচুড়ি পরিবেশন করছিলেন – তখন দেবেন্দ্র দেখেছিল যে , দিতে দিতেই তা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে !
তারপর সবাইকে দেওয়া হয়ে গেলে – একটা ঝড় এসে সমস্ত পাতা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে পুকুরের ধারে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল । এইসব অদ্ভুতুরে কান্ড দেখে দেবেন্দ্রনাথ সারারাত পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায় – পরদিন সকালে গুরু মহারাজ আবার ওকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে দেন।
গুরু মহারাজ ঐ একবারই নিজের হাতে ভূতচতুর্দশীর দিন প্রসাদ দিয়ে প্রেতযোনিদের মুক্তি প্রদান করেছিলেন । তারপর থেকেই এই ভার পড়ে ন’কাকার উপর । আমরা যখন থেকে বনগ্রামে যাওয়া আসা শুরু করলাম , তখন থেকেই দেখতাম – ন’কাকা কালীমন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকতেই বাঁদিকে (টিনের চালাঘর আর মন্দিরের মাঝে) যে জবা গাছটা বা অন্যকিছু ফুলের গাছ রয়েছে – ওইখানটায় গভীর রাত্রিতে (রাত্রি ১১টার পর) একটা হাঁড়িতে জ্বাল দিয়ে ‘চরু’ বা ঐ ধরনের কিছু রান্না করে নিবেদন করতেন । প্রথম প্রথম আমি, নগেন, পরে পরে অসীমদা, মুকুল, ধীরুভাই মাঝে মাঝেই ঐদিন (ভূতচতুর্দশী) আশ্রমে এসে হাজির হোত ৷ তারপর ন’কাকার অনুমতি নিয়ে আশ্রমে রাত্রির খাওয়া দাওয়া সেরে, গুরু মহারাজের সিটিং শুনে, আশ্রমে শোবার জন্য ফিরে না গিয়ে_ ন’কাকাদের কালীমন্দিরে অপেক্ষা করে বসে থাকতাম, কখন ন’কাকা যোগাড়যন্ত্র নিয়ে আসবেন ! আমরা মন্দিরে অপেক্ষা করতাম আর নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতাম , অবশেষে ন’কাকা আসতেন । উনি এসেই সোজা ঐ জবাগাছতলায় চলে যেতেন, রান্নার ব্যবস্থা করে অস্থায়ী উনুনে (ইট সাজিয়ে) – পাটকাঠির জ্বাল দিয়ে মাঝে মাঝেই আমাদের কাছে এসে বসতেন, গল্প করতেন – আবার উঠে যেতেন ৷ কিন্তু কখনই আমাদেরকে ঐ গাছতলায় যাবার অনুমতি দেন নি । আমরা মন্দিরের দাওয়াতেই বসে থাকতাম ৷ আমি, অসীম দা, ধীরুভাই, মুকুল মিলে একবারই শুধু সামান্য একটু ভয় পেয়েছিলাম – একটা কুকুর (মুখটা কিন্তু সত্যিই একটু অস্বাভাবিক লম্বা ছিল — ভয় পাওয়ারই মতো – তাছাড়া ওটা কুকুর নাও হতে পারে) অন্ধকারের মধ্যে থেকে আবির্ভাব হয়ে আমাদের মাঝখান দিয়ে তার লম্বা গলাটা বাড়িয়ে দিতেই — অসীমদার সে কি ভয়ার্ত আর্তনাদ ! আর স্বাভাবিক ভাবেই বাকীদের তাকে অনুসরণ ! এক সেকেন্ডের মধ্যে কুকুরও Vanish – এবং আমরাও যে যার মতন ! ন’কাকা জবাগাছতলা থেকেই জিজ্ঞাসা করলেন , ” কি হোল ?” আমরা বললাম – “একটা কুকুর এমনভাবে এখানে মুখটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে, অসীম দা ভয় পেয়ে গেছিল !” উনি বললেন – ” খাবার-দাবার আছে মনে করেছে বোধয় ! যাক্ পালিয়েছে তো ?” আমরা বললাম – “হ্যাঁ ন’কাকা ! সাথে সাথেই Vanish !”
আসলে একে ছিল অমাবস্যার অন্ধকার! তার উপর তখন তো বনগ্রামে বিদ্যুৎ ঢোকেনি, ফলে সন্ধ্যার পর গ্রামটি যেন কালো চাদরে মুড়ে যেতো! মানুষজন-ও রাস্তায় থাকতো না বললেই চলে। তাই একটু কিছুতেই একটা গা-ছমছম ভাব থেকেই যেতো! তাই ঐ অবস্থায় একটু ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক!
যাই হোক, আমরা এইভাবে ঐদিনটি মানানো শুরু করেছিলাম এবং তারপর প্রতিবারই যেতাম আর ভুতচতুর্দশীর রাত্রির বেশ কিছুক্ষণ ন’কাকার সাথে কাটাতাম।
বনগ্রামের নগেনের মুখে শুনেছিলাম __গুরুমহারাজ বনগ্রামে আসার অনেক আগে থেকেই ন’কাকা এই কাজ করতেন। উনি বিশেষ তিথিতে ঐরকম খাবার তৈরি করে আশ্রম ঢুকতে(তখন আশ্রম ছিল না _ঐ জায়গাটা পতিত পড়ে ছিল) _যেখানে একটা অশথ্য গাছ ছিল (এখন যেখানে রান্নাঘর যাবার পথ)_সেই গাছের তলায় দিয়ে আসতেন। নগেন বলেছিল _ওরা তখন মাঠে যাওয়ার সময় দেখতো যে, মাঝমাঠে গাছতলায় পড়ে থাকা সত্ত্বেও ঐ খাবার কোন কুকুর – বিড়ালেও মুখ দিতো না। এমনকি কাক-পক্ষীতেও খেতো না! এইটা দেখে ওরাও আশ্চর্য হয়ে যেতো! আমি এসব শুনে ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম _”ব্যাপারটা কি ন’কাকা?”উনি বলেছিলেন _” প্রেতযোনীরা যে খাদ্যে দৃষ্টিপাত করে (দৃষ্টির মাধ্যমেই ওদের খাওয়া হয়ে যায়) _পশুপাখীদের special sense থাকায় ওরা সেটা বুঝতে পারে_তাই সেই খাবার কেউ মুখে তোলে না।”
অনেক সময় আশ্রমের কোন বিশেষ ভক্ত মারা গেলে _ কোন গুহ্য কারনে গুরুমহারাজ তাকে ওনার নিজের কাছে কাছে কয়েকদিন রেখে দিতেন। গুরুমহারাজের ঘরে সবসময়ই প্রচুর পরিমাণে প্রসাদ থাকতো (গুরুমহারাজকে প্রনাম করলেই উনি তাকে প্রসাদ দিতেন _তাই ভক্তরা আশ্রমে গেলেই শুকনো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যেতো)। একবার ঐ ধরনের সুক্ষশরীর বিশিষ্ট ভক্ত(যিনি প্রেতযোনী অবস্থায় কয়েকদিনের জন্য গুরুমহারাজের কাছে ছিলেন) গুরুমহারাজের ঘরে ওত প্রসাদ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে বলে ফেলেছিলেন _”কত প্রসাদ!!”
তপিমাও সেদিন গুরুমহারাজের ঘরে ছিলেন। গুরুমহারাজ ওনাকে বলেছিলেন _”ওগুলো আর প্রসাদ হিসাবে কাউকে দেওয়া যাবে না। কারন ওগুলো খেলে শরীর খারাপ হতে পারে _তাই সব প্যাকেট ফেলে দেওয়াই ভালো।”
জয় গূরূজী ।জয় ন’কাকা ।(ক্রমশঃ)
তারপর সবাইকে দেওয়া হয়ে গেলে – একটা ঝড় এসে সমস্ত পাতা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে পুকুরের ধারে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল । এইসব অদ্ভুতুরে কান্ড দেখে দেবেন্দ্রনাথ সারারাত পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায় – পরদিন সকালে গুরু মহারাজ আবার ওকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে দেন।
গুরু মহারাজ ঐ একবারই নিজের হাতে ভূতচতুর্দশীর দিন প্রসাদ দিয়ে প্রেতযোনিদের মুক্তি প্রদান করেছিলেন । তারপর থেকেই এই ভার পড়ে ন’কাকার উপর । আমরা যখন থেকে বনগ্রামে যাওয়া আসা শুরু করলাম , তখন থেকেই দেখতাম – ন’কাকা কালীমন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকতেই বাঁদিকে (টিনের চালাঘর আর মন্দিরের মাঝে) যে জবা গাছটা বা অন্যকিছু ফুলের গাছ রয়েছে – ওইখানটায় গভীর রাত্রিতে (রাত্রি ১১টার পর) একটা হাঁড়িতে জ্বাল দিয়ে ‘চরু’ বা ঐ ধরনের কিছু রান্না করে নিবেদন করতেন । প্রথম প্রথম আমি, নগেন, পরে পরে অসীমদা, মুকুল, ধীরুভাই মাঝে মাঝেই ঐদিন (ভূতচতুর্দশী) আশ্রমে এসে হাজির হোত ৷ তারপর ন’কাকার অনুমতি নিয়ে আশ্রমে রাত্রির খাওয়া দাওয়া সেরে, গুরু মহারাজের সিটিং শুনে, আশ্রমে শোবার জন্য ফিরে না গিয়ে_ ন’কাকাদের কালীমন্দিরে অপেক্ষা করে বসে থাকতাম, কখন ন’কাকা যোগাড়যন্ত্র নিয়ে আসবেন ! আমরা মন্দিরে অপেক্ষা করতাম আর নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতাম , অবশেষে ন’কাকা আসতেন । উনি এসেই সোজা ঐ জবাগাছতলায় চলে যেতেন, রান্নার ব্যবস্থা করে অস্থায়ী উনুনে (ইট সাজিয়ে) – পাটকাঠির জ্বাল দিয়ে মাঝে মাঝেই আমাদের কাছে এসে বসতেন, গল্প করতেন – আবার উঠে যেতেন ৷ কিন্তু কখনই আমাদেরকে ঐ গাছতলায় যাবার অনুমতি দেন নি । আমরা মন্দিরের দাওয়াতেই বসে থাকতাম ৷ আমি, অসীম দা, ধীরুভাই, মুকুল মিলে একবারই শুধু সামান্য একটু ভয় পেয়েছিলাম – একটা কুকুর (মুখটা কিন্তু সত্যিই একটু অস্বাভাবিক লম্বা ছিল — ভয় পাওয়ারই মতো – তাছাড়া ওটা কুকুর নাও হতে পারে) অন্ধকারের মধ্যে থেকে আবির্ভাব হয়ে আমাদের মাঝখান দিয়ে তার লম্বা গলাটা বাড়িয়ে দিতেই — অসীমদার সে কি ভয়ার্ত আর্তনাদ ! আর স্বাভাবিক ভাবেই বাকীদের তাকে অনুসরণ ! এক সেকেন্ডের মধ্যে কুকুরও Vanish – এবং আমরাও যে যার মতন ! ন’কাকা জবাগাছতলা থেকেই জিজ্ঞাসা করলেন , ” কি হোল ?” আমরা বললাম – “একটা কুকুর এমনভাবে এখানে মুখটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে, অসীম দা ভয় পেয়ে গেছিল !” উনি বললেন – ” খাবার-দাবার আছে মনে করেছে বোধয় ! যাক্ পালিয়েছে তো ?” আমরা বললাম – “হ্যাঁ ন’কাকা ! সাথে সাথেই Vanish !”
আসলে একে ছিল অমাবস্যার অন্ধকার! তার উপর তখন তো বনগ্রামে বিদ্যুৎ ঢোকেনি, ফলে সন্ধ্যার পর গ্রামটি যেন কালো চাদরে মুড়ে যেতো! মানুষজন-ও রাস্তায় থাকতো না বললেই চলে। তাই একটু কিছুতেই একটা গা-ছমছম ভাব থেকেই যেতো! তাই ঐ অবস্থায় একটু ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক!
যাই হোক, আমরা এইভাবে ঐদিনটি মানানো শুরু করেছিলাম এবং তারপর প্রতিবারই যেতাম আর ভুতচতুর্দশীর রাত্রির বেশ কিছুক্ষণ ন’কাকার সাথে কাটাতাম।
বনগ্রামের নগেনের মুখে শুনেছিলাম __গুরুমহারাজ বনগ্রামে আসার অনেক আগে থেকেই ন’কাকা এই কাজ করতেন। উনি বিশেষ তিথিতে ঐরকম খাবার তৈরি করে আশ্রম ঢুকতে(তখন আশ্রম ছিল না _ঐ জায়গাটা পতিত পড়ে ছিল) _যেখানে একটা অশথ্য গাছ ছিল (এখন যেখানে রান্নাঘর যাবার পথ)_সেই গাছের তলায় দিয়ে আসতেন। নগেন বলেছিল _ওরা তখন মাঠে যাওয়ার সময় দেখতো যে, মাঝমাঠে গাছতলায় পড়ে থাকা সত্ত্বেও ঐ খাবার কোন কুকুর – বিড়ালেও মুখ দিতো না। এমনকি কাক-পক্ষীতেও খেতো না! এইটা দেখে ওরাও আশ্চর্য হয়ে যেতো! আমি এসব শুনে ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম _”ব্যাপারটা কি ন’কাকা?”উনি বলেছিলেন _” প্রেতযোনীরা যে খাদ্যে দৃষ্টিপাত করে (দৃষ্টির মাধ্যমেই ওদের খাওয়া হয়ে যায়) _পশুপাখীদের special sense থাকায় ওরা সেটা বুঝতে পারে_তাই সেই খাবার কেউ মুখে তোলে না।”
অনেক সময় আশ্রমের কোন বিশেষ ভক্ত মারা গেলে _ কোন গুহ্য কারনে গুরুমহারাজ তাকে ওনার নিজের কাছে কাছে কয়েকদিন রেখে দিতেন। গুরুমহারাজের ঘরে সবসময়ই প্রচুর পরিমাণে প্রসাদ থাকতো (গুরুমহারাজকে প্রনাম করলেই উনি তাকে প্রসাদ দিতেন _তাই ভক্তরা আশ্রমে গেলেই শুকনো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যেতো)। একবার ঐ ধরনের সুক্ষশরীর বিশিষ্ট ভক্ত(যিনি প্রেতযোনী অবস্থায় কয়েকদিনের জন্য গুরুমহারাজের কাছে ছিলেন) গুরুমহারাজের ঘরে ওত প্রসাদ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে বলে ফেলেছিলেন _”কত প্রসাদ!!”
তপিমাও সেদিন গুরুমহারাজের ঘরে ছিলেন। গুরুমহারাজ ওনাকে বলেছিলেন _”ওগুলো আর প্রসাদ হিসাবে কাউকে দেওয়া যাবে না। কারন ওগুলো খেলে শরীর খারাপ হতে পারে _তাই সব প্যাকেট ফেলে দেওয়াই ভালো।”
জয় গূরূজী ।জয় ন’কাকা ।(ক্রমশঃ)