গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ একবার সিটিং-এ বলেছিলেন – ” এমন একটা সময় আসবে, যখন ভারতবর্ষ থেকে নিমগাছ-জাত দ্রব্যাদি সমগ্র বিশ্বে ব্যাপকভাবে রপ্তানি হবে । গ্রামাঞ্চলের কোন গৃহস্থ বাড়িতে পাঁচটি বড় নিমগাছ থাকলে –ওই গাছগুলির আয় দিয়ে পরিবারটি স্বচ্ছলভাবে চলে যাবে।” এই কদিন আগে একটা সমীক্ষায় দেখলাম নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করে সেই জল পান করলে Covid-19 ভাইরাস আর শরীরে বংশবিস্তার করতে পারছে না ৷ Covid ভাইরাসের শরীরে যে ধরনের প্রোটিন রয়েছে – তা নিমের ছাল সিদ্ধ করা জলে দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে বা ঐ প্রোটিনটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে !
আমরা ছোটবেলায় বাবাদের কাছে একটা ছড়া শুনতাম – ” নিম-নিশিন্দা-ইসমূল, এই তিন থাকতে রোগী কি যায় যমের কুল !” নিশিন্দা গাছের পাতা সিদ্ধ করে জল খেলে – তা কর্কটরোগ (ক্যান্সারে)-এ ব্যাপক কাজ করে – একথাও গুরুমহারাজ বলেছিলেন । ইসমূলের ব্যবহার সাপের বিষ কাটানোয় কাজে লাগে এমন শুনেছি, কিন্তু এই নিয়ে আয়ুর্বেদশাস্ত্র আরও কি কি বলেছে – তা গুরুমহারাজের মুখ থেকে কোনদিন (আমি অন্তত:) শোনা হয়ে ওঠেনি ৷
কিন্তু ‘নিম’- নিয়ে গুরুমহারাজ বহুবার এবং প্রতিবারেই বহুক্ষণ ধরে আলোচনা করতেন ! নিমগাছের ফল, ফুল, পাতা, ছাল, মূল এমনকি নিমগাছ থেকে ক্ষরিত রস – সবকিছুই মানুষের শরীরের কোন না কোন রোগের মহৌষধ ! নিমের ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবাণুনাশক হিসাবে, তাছাড়া এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে, ঘা-ফোড়া-দুষ্টক্ষত পরিষ্কার করার কাজেও খুবই কার্যকরী ! এখন তো বহু পরিবার ফিনাইল ব্যবহার করার পরিবর্তে ‘নিমাইল’ ব্যবহার করে । কিন্তু যাদের গ্রামাঞ্চলে বাড়ি, তারা সহজেই নিমপাতার জল ফুটিয়ে সেই জলে স্যানিটাইজ করার কাজটি করতেই পারেন ।অল্প জলে গোটাকয়েক নিমপাতা ফুটিয়ে নিয়ে সেই জলটি স্নানের জলের সাথে মিশিয়ে স্নান করার কথা বলেছিলেন গুরুমহারাজ ! অন্যান্য সাবান ব্যবহার না করে নিমযুক্ত সাবান গায়ে মাখার কথাও একদিন বলেছিলেন ৷
নিমগাছের রস শরীরের জীবনীশক্তি সাংঘাতিকভাবে বাড়িয়ে তোলে । গুরুমহারাজ বলেছিলেন_ রবীন্দ্রনাথ‌ও নাকি তার কোন শারীরিক সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন নিম-রস খেয়েছিলেন ! এটি খেতে নাকি খুব একটা তেতোও নয় ! নিমগাছের গোড়ার দিকে ক্ষত করে দিলে সেখানে থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে খেজুর গাছের মতো রস পড়ে । সেই রস কোন পাত্রে ধরে নিলেই – সারাদিনে এক কাপ বা বড় গাছ হোলে এক গেলাস রস‌ও পাওয়া যেতে পারে ৷
নিম-দাঁতনের প্রসিদ্ধি তো সর্বজনবিদিত_বিভিন্ন কোম্পানি নিমযুক্ত টুথপেষ্ট‌ও তৈরি করেছে ! নিমের ফল থেকে যে তেল পাওয়া যায় – তাও গায়ের ত্বকের পক্ষে ভালো । এর সাথে হলুদ-চন্দন ইত্যাদি মিশিয়ে অত্যন্ত উপকারী প্রাকৃতিক সাবান বানানো যায় ! বাড়ির দক্ষিণে নিমগাছ লাগালে তার হাওয়ায় বাড়িতে কঠিন রোগ-ব্যাধি হয় না । _এই যে এখানে যে সমস্ত কথা বলা হোল _ এ সমস্ত কথাই গুরু মহারাজ কোন না কোন সময়ে সিটিং-এ আলোচনা করেছিলেন। আমার যতদূর মনে পড়ছে_সেইসময় আমেরিকা বা এই ধরনের কোন দেশ “নিমে”র পেটেন্ট নিয়ে খুব ঝামেলার সৃষ্টি করেছিল_ফলে খবরের কাগজে এই প্রসঙ্গটা খুব‌ই আসতো, তাই প্রায়‌ই আলোচনা হোত।
তাহলে তো আজ নিম সম্বন্ধে অনেক কথাই বলা হলো — তাই আজকের প্রসঙ্গের নাম দেওয়া হোক – “নিমায়ণ”। … [ক্রমশঃ]