গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বলা নানা কথা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিল । যে তিনটি শক্তিশালী মতবাদ এখন সমগ্র বিশ্বে ক্রিয়াশীল –গুরুমহারাজ সেই সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন । এই তিনটির (রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, অর্থনৈতিক সাম্যবাদ এবং ধর্মীয় মৌলবাদ) followers-রা সদা-সর্বদা নিজ নিজ চিন্তাধারার বাস্তব রূপায়ণ করতে চাইছে__তাতে দুনিয়া উলটপালট হয়ে যায় যাক্ ! তবে সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো এই যে, ওরা সবাই কিন্তু পৃথিবীতে সুখ-শান্তি ইত্যাদি স্থাপনা করার জন্যই এত সব আন্দোলন করছে – কিন্তু ফলটা কি হচ্ছে দ্যাখো ! শুধুই হানাহানি, মারামারি, অশান্তি আর রক্তপাত !
পৃথিবীর উন্নত মেধার মানুষেরা অর্থাৎ জ্ঞানী বা বোধি ব্যক্তিরা এইগুলি দেখেই বুঝতে পারেন যে, পৃথিবীর মানুষ এখনও কতটা নিম্নচেতনায় রয়েছে ! ‘মানুষের ভালো করার কথা বলে’– ওই তিন ধারার সমর্থকেরা জগতে বারবার blood-shed ঘটিয়ে চলেছে, মানুষের জীবনকে চরম অশান্তিময় করে তুলেছে, প্রাকৃতিক বিবর্তন এবং সংবর্তনের মূল ধারাকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে শুধু তাকে পিছন পানে টেনে রাখতে চাইছে !
আর এতেই রুষ্ট হচ্ছে মহাপ্রকৃতি ! মাঝে মাঝেই তার সেই বিরক্তিসূচক মাথা নাড়া টের পাচ্ছি আমরা, কিন্তু তাতেও আমরা সতর্ক হচ্ছি না – শিক্ষা গ্রহণ করছি না !
তাহলে এবার কি হবে ? এবার Mother Nature -এর বৃহত্তর মাথা নাড়ার জন্য অর্থাৎ বিরক্ত হয়ে আরও শাস্তিমূলক ক্রিয়াশীলতার জন্য_ আমাদেরকে প্রস্তুত হতেই হবে ! গুরু মহারাজ তো আমাদেরকে বলেই গিয়েছিলেন – death, disease and destruction !
আমাদের আশ্রমের একজন ভক্ত জ্যোতিষ চর্চা করে একটু নাম কামিয়েছে – ওই থেকেই সে তার জীবিকানির্বাহ করে এবং বেশ সচ্ছল ভাবেই করে । অর্থাৎ তার দ্বারা মানুষের কিছু উপকার হয় বলেই তো এতটা নাম-ডাক ! যাইহোক, সে গতকাল বলছিল – ” শ্রীধরদা দু’চারদিনের মধ্যেই বৃহস্পতি এবং মঙ্গল বক্রী হতে যাচ্ছে – তার মানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা-মারামারি-অগ্নিসংযোগ এবং রোগব্যাধি_ এসব আরো বাড়বে ৷ গ্রহের অবস্থান অনুসারে জুন মাসের ২০-২৫ তারিখের মধ্যে অবস্থা আরও ভয়ংকর হবে – যুদ্ধও লেগে যেতে পারে! এই অবস্থা চলবে বেশ কয়েকমাস!তারপরে সেপ্টেম্বর থেকে গ্রহগুলি আবার ধীরে ধীরে ঠিক ঠিক জায়গায় ফিরে আসবে এবং তখন থেকে ভারতবর্ষের তথা পৃথিবীর অবস্থার আবার উন্নতি হবে ৷”
জ্যোতিষ বন্ধুর কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম – এসব তো হবারই ছিল রে ভাই ! কত অন্যায়, কত মহাপাপ, মানবাত্মার প্রতি কত অপমান আমরা দিনের-পর-দিন করে চলেছি – প্রকৃতি মা আর কত সহ্য করবে ? সব ছেলে-মেয়েরা যখন খুব অবাধ্য হয়ে ওঠে তখন সব মায়েরাই শিশুকে দু-চার ঘা লাগিয়ে তাকে “সবক্” শেখানোর চেষ্টা করে ৷ তবে এই “মা” প্রকৃত স্নেহময়ী জননী – মোহময়ী নয় । প্রয়োজনে এমন শাসন করবে যে ‘ত্রাহি’ ‘ত্রাহি’ রব উঠে যাবে ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” এখন দেখছি বেশিরভাগ মায়েরা সন্তানদের ‘স্নেহ’ করতে পারে না – তারা কেমন যেন ‘মোহ’গ্রস্থ ! আতু-পাতু করে সন্তান মানুষ করছে – এমন ভাব দেখায় যেন তার সন্তানটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাকিরা হীনাতিহীন ! এটাই মোহ ! স্নেহশীলা জননী সকল শিশুদেরকেই__ নিজ সন্তানবৎ স্নেহ করেন এবং প্রয়োজনে শাসনও করেন !” এই ব্যাপারে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “সুন্দরবনের বাঘিনীরা তাদের ছোট ছোট শাবকদের মুখে করে নিয়ে গিয়ে জোয়ারের সময় জলে ভাসিয়ে দেয় – শিশুগুলি প্রাণপণে পাড়ে ওঠার জন্য চেষ্টা করে – মা বাঘটি পাড়ে বসে বসে দেখে, তারপর বেগতিক বুঝলে জলে নেমে গিয়ে একে একে তুলে নিয়ে আসে !” এমনটা করার কারণ হিসেবে উনি বলেছিলেন – ” পৃথিবীতে একমাত্র সুন্দরবনের বাঘেদেরকেই জলা জায়গায় সারাজীবন কাটাতে হয় – সাঁতরে এদ্বীপ-ওদ্বীপ করতে হয় – তাই মা-বাঘেরা ছোট থেকেই বাচ্চাদেরকে এই Training দেয় জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য !” … [ক্রমশঃ]