গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ ছিলেন কথার সাগর ৷ সে কথা তাঁকে যারা দেখেছেন তারা তো জানতোই – যারা তাকে দেখেনি এতদিনে তাদের সকলেরই ব্যাপারটা জানা হয়ে গেছে । সেই জন্য গুরু মহারাজের কোন কথা একবার শুরু করলে সেই কথা ধরে ধরে কোন কথায় যে চলে যাওয়া হয় – তা আর লিখতে বসে মনে থাকে না । তাই একটা প্রসঙ্গ ধরে সেটাকে আর শেষ করার কথা মনে থাকে না ! কিন্তু আমরা এই প্রসঙ্গটি শুরুর সময় যে চারটি জৈববৃত্তির কথা উল্লেখ করেছিলাম – তার মধ্যে ‘আহার’- এই ব্যাপারটি সম্বন্ধে আলোচনা আজকেই শেষ এপিসোড ! পরের দিন থেকে ‘নিদ্রা’, ‘বংশবিস্তার’ ও ‘ভয়’ ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে ৷
আহার বা খাদ্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা বলেছিলাম – সমস্ত জীবের শরীর রক্ষার জন্য আহার্যের প্রয়োজন হলেও _চেতনায় উন্নত মানুষ এই System থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলো । উন্নত চেতনার মানুষেরা বা যোগীরা তাঁদের শারীরিক পুষ্টি বা বৃদ্ধির জন্য চিরাচরিত স্থূল আহার্য গ্রহণ ব্যতিরেকে, প্রাকৃতিক বস্তু, শক্তি বা বিষয় থেকেই যে দিব্যি জীবন কাটানো যায়_তা নিজেদের জীবনে অনুশীলন করে দেখালেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই – সাধারণ মানুষের কাছে যা অখাদ্য বা কুখাদ্য – তা গ্রহণ করেই শরীর ধারণ করতে পারতেন (বামদের নিজের ‘গু’ খেয়ে নিতেন, শংকর ক্ষ্যাপা ‘মোরাম মাটি’ খেতেন) ৷ আবার অনেক যোগী-সাধক সাধারণ কোন কিছু অতি অল্প পরিমাণে (হয়তো সারাদিনে এক কাপ দুধ) গ্রহণ করেই সারাজীবন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে বেঁচে থাকতে শুরু করলেন । এখনো এমন অনেক যোগী রয়েছেন যাঁরা আবার স্থূল কোন কিছু গ্রহণ না করে প্রকৃতির সূক্ষ্ম উপকরণ (সূর্যালোক ইত্যাদি) গ্রহণ করে শরীর ধারণ করে থাকেন ।
অনেক যোগী রয়েছেন – ‘বায়ুভুক্’ ! আমরা গাজীপুরের পওহারী বাবার নাম শুনেছি ৷ পও(বায়ু) – আহারী অর্থাৎ বায়ু যাঁর আহার ! গাজীপুরের স্থানীয় লোকেরা ওনাকে কোনদিন কোনকিছু আহার করতে দেখেনি !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের শরীর ত্যাগের পর স্বামী বিবেকানন্দ যখন পরিব্রাজন করেছিলেন – তখন ঘুরতে ঘুরতে উনি পাওহারী বাবার ওখানেও (গাজীপুরে) গিয়েছিলেন এবং বেশ কয়েকদিন ওই যোগী বাবার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন ।
এছাড়াও ভারতীয় যোগশাস্ত্রে রয়েছে বিভিন্ন সিদ্ধির কথা ! যেখানে অনিমা সিদ্ধি মানে হচ্ছে অনুবৎ হয়ে থাকার মতো এবং লঘিমা সিদ্ধি মানে হচ্ছে লঘু বা তরলবৎ হয়ে থেকে যাওয়া ! এই কথাগুলি শুনে বোঝা যাচ্ছে যে অনিমা-সিদ্ধ বা লঘিমা-সিদ্ধ সাধকদের স্থূল খাদ্যগ্রহণের কোনো প্রয়োজনই হয় না ৷
তবে এবার আমরা আলোচনা করবো গুরু মহারাজের কাছে শোনা যোগের উচ্চস্তরে সমাধি অবস্থাপ্রাপ্ত হলে – ‘সহস্রার’ থেকে নির্গত হয় ‘চন্দ্রবারুণী সুধা’– যা নিচের দিকে বিন্দু বিন্দু ক্ষরিত হতে থাকে এবং সমগ্র শরীরের যাবতীয় পুষ্টি দীর্ঘকাল ধরে যুগিয়ে যায় ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন এই সুধাক্ষরণের মুহূর্তের কথা ! বলেছিলেন এটি ক্ষরিত হতে শুরু করলেই সমস্ত শরীর জুড়ে শতসহস্র রমণসুখ অনুভূত হয় – কেউ কেউ এটাকে প্রতি লোমকূপে রমণের আস্বাদনের ন্যায় হিসাবেও বর্ণনা করেছেন ৷ উনি বলেছিলেন – এই অবস্থায় বাহ্যশরীর স্থির থাকলেও অন্তর্জগতে আনন্দের হিল্লোল-কল্লোল বয়ে যায় ! সমস্ত ইন্দ্রিয়সকল ক্রিয়াশীলতা হারায় কিন্তু চেতনা সদাজাগ্রত থাকে !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবসমাধির কথা আমরা ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ গ্রন্থে পাই, আর ঠাকুর পরমানন্দের জীবনে এই একই ঘটনা প্রথমদিকে অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন ! এই অবস্থার কথা বলতে গিয়ে গুরুজী বলেছিলেন – ” চিন্তার গতি একটু ঊর্ধ্বমুখী হলেই ঐ অবস্থা হয়, তখন আর কথা বলতে পারি না – শুধু হাত নেড়ে ইশারা করতে পারি !” … [ক্রমশঃ]
আহার বা খাদ্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা বলেছিলাম – সমস্ত জীবের শরীর রক্ষার জন্য আহার্যের প্রয়োজন হলেও _চেতনায় উন্নত মানুষ এই System থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলো । উন্নত চেতনার মানুষেরা বা যোগীরা তাঁদের শারীরিক পুষ্টি বা বৃদ্ধির জন্য চিরাচরিত স্থূল আহার্য গ্রহণ ব্যতিরেকে, প্রাকৃতিক বস্তু, শক্তি বা বিষয় থেকেই যে দিব্যি জীবন কাটানো যায়_তা নিজেদের জীবনে অনুশীলন করে দেখালেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই – সাধারণ মানুষের কাছে যা অখাদ্য বা কুখাদ্য – তা গ্রহণ করেই শরীর ধারণ করতে পারতেন (বামদের নিজের ‘গু’ খেয়ে নিতেন, শংকর ক্ষ্যাপা ‘মোরাম মাটি’ খেতেন) ৷ আবার অনেক যোগী-সাধক সাধারণ কোন কিছু অতি অল্প পরিমাণে (হয়তো সারাদিনে এক কাপ দুধ) গ্রহণ করেই সারাজীবন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে বেঁচে থাকতে শুরু করলেন । এখনো এমন অনেক যোগী রয়েছেন যাঁরা আবার স্থূল কোন কিছু গ্রহণ না করে প্রকৃতির সূক্ষ্ম উপকরণ (সূর্যালোক ইত্যাদি) গ্রহণ করে শরীর ধারণ করে থাকেন ।
অনেক যোগী রয়েছেন – ‘বায়ুভুক্’ ! আমরা গাজীপুরের পওহারী বাবার নাম শুনেছি ৷ পও(বায়ু) – আহারী অর্থাৎ বায়ু যাঁর আহার ! গাজীপুরের স্থানীয় লোকেরা ওনাকে কোনদিন কোনকিছু আহার করতে দেখেনি !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের শরীর ত্যাগের পর স্বামী বিবেকানন্দ যখন পরিব্রাজন করেছিলেন – তখন ঘুরতে ঘুরতে উনি পাওহারী বাবার ওখানেও (গাজীপুরে) গিয়েছিলেন এবং বেশ কয়েকদিন ওই যোগী বাবার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন ।
এছাড়াও ভারতীয় যোগশাস্ত্রে রয়েছে বিভিন্ন সিদ্ধির কথা ! যেখানে অনিমা সিদ্ধি মানে হচ্ছে অনুবৎ হয়ে থাকার মতো এবং লঘিমা সিদ্ধি মানে হচ্ছে লঘু বা তরলবৎ হয়ে থেকে যাওয়া ! এই কথাগুলি শুনে বোঝা যাচ্ছে যে অনিমা-সিদ্ধ বা লঘিমা-সিদ্ধ সাধকদের স্থূল খাদ্যগ্রহণের কোনো প্রয়োজনই হয় না ৷
তবে এবার আমরা আলোচনা করবো গুরু মহারাজের কাছে শোনা যোগের উচ্চস্তরে সমাধি অবস্থাপ্রাপ্ত হলে – ‘সহস্রার’ থেকে নির্গত হয় ‘চন্দ্রবারুণী সুধা’– যা নিচের দিকে বিন্দু বিন্দু ক্ষরিত হতে থাকে এবং সমগ্র শরীরের যাবতীয় পুষ্টি দীর্ঘকাল ধরে যুগিয়ে যায় ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন এই সুধাক্ষরণের মুহূর্তের কথা ! বলেছিলেন এটি ক্ষরিত হতে শুরু করলেই সমস্ত শরীর জুড়ে শতসহস্র রমণসুখ অনুভূত হয় – কেউ কেউ এটাকে প্রতি লোমকূপে রমণের আস্বাদনের ন্যায় হিসাবেও বর্ণনা করেছেন ৷ উনি বলেছিলেন – এই অবস্থায় বাহ্যশরীর স্থির থাকলেও অন্তর্জগতে আনন্দের হিল্লোল-কল্লোল বয়ে যায় ! সমস্ত ইন্দ্রিয়সকল ক্রিয়াশীলতা হারায় কিন্তু চেতনা সদাজাগ্রত থাকে !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবসমাধির কথা আমরা ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ গ্রন্থে পাই, আর ঠাকুর পরমানন্দের জীবনে এই একই ঘটনা প্রথমদিকে অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন ! এই অবস্থার কথা বলতে গিয়ে গুরুজী বলেছিলেন – ” চিন্তার গতি একটু ঊর্ধ্বমুখী হলেই ঐ অবস্থা হয়, তখন আর কথা বলতে পারি না – শুধু হাত নেড়ে ইশারা করতে পারি !” … [ক্রমশঃ]