গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – “আত্মা বুদ্ধির সাক্ষীস্বরূপ, মনের অধিষ্ঠান হলো বুদ্ধি এবং অহংকারের অধিষ্ঠান মন । এইজন্যেই মন বা বুদ্ধি দ্বারা আত্মাকে বা আত্মতত্ত্বকে জানা যায় না ! একমাত্র আত্মাই আত্মাকে জানতে পারে, অন্য কোন কিছুর দ্বারা আত্মাকে জানা যায় না ! আত্মা অবাঙমানসগোচর ! আত্মা এবং পরমাত্মার মধ্যে যে ভেদ পরিলক্ষিত হয় – সেটা অজ্ঞানতা এবং অভিমানবশতঃ ৷ দেশ-কাল-পাত্রের অভিমানই জীবত্ব এবং ঐ জীবাত্মা যখন দেশ-কাল-পাত্রের বন্ধন মুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ অবস্থায় লাভ করে – তখন ওই বিশুদ্ধ চৈতন্যরূপ আত্মাতেই পরমআত্মার স্বরূপ উপলব্ধি হয় ৷” তখন জিজ্ঞাসা হয়েছিল – তাহলে আমরা আত্মস্বরূপ (যেহেতু গুরুমহারাজ সকলকেই ‘প্রিয় আত্নন্’ বলে সম্বোধন করতেন এবং বলতেন সকলেই আত্মস্বরূপ!) হয়েও সেই পরমাত্মার বোধ করতে পারছিনা কেন ? গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” যেমন আকাশে মেঘ থাকলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে দেখা যায় না – তেমনি মানবের চিত্তে অজ্ঞানরূপ মেঘ থাকায় আত্মস্বরূপ সূর্য প্রত্যক্ষ করা যায় না । যোগীরা এই অজ্ঞান-কে বাসনা বলেছেন, বাসনাই যথাক্রমে ‘মল-বিক্ষেপ-আবরণরূপে মানবের চিত্তাকাশকে আচ্ছন্ন করে রাখে ফলে মানব আত্মস্বরূপ হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে আত্মারূপে উপলব্ধি করতে পারে না ।”
গুরুমহারাজের এই কথাগুলি আমাদের আলোচনায় আজকে উল্লেখ করার দুটো উদ্দেশ্য ! নম্বর এক – গুরুমহারাজের এই অমূল্য বাণী সকলকে আর একবার মনে পড়িয়ে দেওয়া – কারণ আত্মশক্তি জাগ্রত করার জন্য এর থেকে শক্তিশালী কোন ‘টনিক’ পৃথিবীতে আর নাই ! এইটা বোঝাতেই উপনিষদে গল্প রয়েছে ছাগলের পালে সিংহশিশু বড় হয়ে যেমন ম্যা-ম্যা করে কিন্তু যখনই ঝর্ণার জলে নিজে নিজের ছায়া দেখিয়ে অন্য একটি সিংহ বলে – ” তুইও যা – আমিও তাই !” তখন ঐ সিংহ গর্জন করে ওঠে “অহম্ ব্রহ্মাস্মি”! গুরু মহারাজ এই অবস্থা বোঝাতে বলেছিলেন_”বেদান্ত কেশরী”!
আর দ্বিতীয় কারণটি হলো – আমরা যে আলোচনার মধ্যে ছিলাম অর্থাৎ আহার-নিদ্রা-ভয় ইত্যাদি জৈবপ্রবৃত্তির কথায় – প্রকৃতপক্ষে এইগুলিই চিত্তাকাশে অজ্ঞানরূপী মেঘসঞ্চারের এক একটি উপাদান ৷
আমরা ফিরে যাই আমাদের আলোচনা প্রসঙ্গে ৷ ‘আহার’ নিয়ে গুরুমহারাজ আরো অনেক কথা বলেছিলেন – সেগুলি বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে – তাই আমরা এখন নিদ্রা-মৈথুন ও ভয় প্রসঙ্গে একে একে আসি !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – সাধন জীবনের অন্যতম অন্তরায় নিদ্রা । ছেলেবেলায় অর্থাৎ ছাত্রজীবনেও নিদ্রা ভালো রেজাল্টের অন্যতম বাধাস্বরূপ ! জীবজগতের সমস্ত সদস্যরাই সতত সংগ্রামশীল ! struggle – struggle – struggle ! struggle for existence, struggle for survival ! খাদ্যের জন্য সংগ্রাম, বাসস্থানের জন্য সংগ্রাম, পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম, অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম, আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – শুধুই সংগ্রাম ! গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম মনুষ্যেতর জীবজগতে ‘নারী’-র অধিকার নিয়েও জীবনপণ সংগ্রাম চলে ! তাহলে এই সংগ্রামশীল জীবনে বিশ্রামের তো একান্ত প্রয়োজন – আর সর্বাপেক্ষা ভালো বিশ্রাম হোল নিদ্রা । এতেই শরীরের পেশীসমূহ সম্পূর্ণ rest পায় (যদিও হৃৎপিণ্ড,ফুসফুস ইত্যাদিদের rest হয় না)এবং পুনরায় নতুন উদ্যমে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠার ক্ষমতা অর্জন করে । তাই জীবজগতের অন্যতম একটা বৃত্তি বা প্রবৃত্তি ‘নিদ্রা’ !
কিন্তু উন্নত মানবেরা তো প্রচলিত ধারায় চলতে চান-না ! তাঁরা তো উল্টো পথে উজান পথে চলে, ‘ধারা’ থেকে ‘রাধা’ হয়ে উঠতে চান ! তাই যোগীরা নিদ্রাকে জয় করার চেষ্টায় ব্রতী হলেন এবং হয়ে উঠলেন – নিদ্রজিৎ ! শ্রীমদ্ভগবতগীতায় রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলা হচ্ছে ‘হৃষিকেশ’ অর্থাৎ যিনি সর্বদা হৃদয়ে অধিষ্ঠাত্র এবং অর্জুনকে বলা হচ্ছে – ‘গুঢ়াকেশ’– যার অর্থ নিদ্রজিৎ । অর্জুন শুধু একজন বড় যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি একজন বড় যোগীও ছিলেন – তিনি নিদ্রাকে জয় করেছিলেন বলেই ভগবান তাকে ‘গুঢ়াকেশ’ বলে সম্বোধন করেছিলেন ! (বাকি আলোচনা পরের সংখ্যায়) … [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজের এই কথাগুলি আমাদের আলোচনায় আজকে উল্লেখ করার দুটো উদ্দেশ্য ! নম্বর এক – গুরুমহারাজের এই অমূল্য বাণী সকলকে আর একবার মনে পড়িয়ে দেওয়া – কারণ আত্মশক্তি জাগ্রত করার জন্য এর থেকে শক্তিশালী কোন ‘টনিক’ পৃথিবীতে আর নাই ! এইটা বোঝাতেই উপনিষদে গল্প রয়েছে ছাগলের পালে সিংহশিশু বড় হয়ে যেমন ম্যা-ম্যা করে কিন্তু যখনই ঝর্ণার জলে নিজে নিজের ছায়া দেখিয়ে অন্য একটি সিংহ বলে – ” তুইও যা – আমিও তাই !” তখন ঐ সিংহ গর্জন করে ওঠে “অহম্ ব্রহ্মাস্মি”! গুরু মহারাজ এই অবস্থা বোঝাতে বলেছিলেন_”বেদান্ত কেশরী”!
আর দ্বিতীয় কারণটি হলো – আমরা যে আলোচনার মধ্যে ছিলাম অর্থাৎ আহার-নিদ্রা-ভয় ইত্যাদি জৈবপ্রবৃত্তির কথায় – প্রকৃতপক্ষে এইগুলিই চিত্তাকাশে অজ্ঞানরূপী মেঘসঞ্চারের এক একটি উপাদান ৷
আমরা ফিরে যাই আমাদের আলোচনা প্রসঙ্গে ৷ ‘আহার’ নিয়ে গুরুমহারাজ আরো অনেক কথা বলেছিলেন – সেগুলি বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে – তাই আমরা এখন নিদ্রা-মৈথুন ও ভয় প্রসঙ্গে একে একে আসি !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – সাধন জীবনের অন্যতম অন্তরায় নিদ্রা । ছেলেবেলায় অর্থাৎ ছাত্রজীবনেও নিদ্রা ভালো রেজাল্টের অন্যতম বাধাস্বরূপ ! জীবজগতের সমস্ত সদস্যরাই সতত সংগ্রামশীল ! struggle – struggle – struggle ! struggle for existence, struggle for survival ! খাদ্যের জন্য সংগ্রাম, বাসস্থানের জন্য সংগ্রাম, পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম, অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম, আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – শুধুই সংগ্রাম ! গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম মনুষ্যেতর জীবজগতে ‘নারী’-র অধিকার নিয়েও জীবনপণ সংগ্রাম চলে ! তাহলে এই সংগ্রামশীল জীবনে বিশ্রামের তো একান্ত প্রয়োজন – আর সর্বাপেক্ষা ভালো বিশ্রাম হোল নিদ্রা । এতেই শরীরের পেশীসমূহ সম্পূর্ণ rest পায় (যদিও হৃৎপিণ্ড,ফুসফুস ইত্যাদিদের rest হয় না)এবং পুনরায় নতুন উদ্যমে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠার ক্ষমতা অর্জন করে । তাই জীবজগতের অন্যতম একটা বৃত্তি বা প্রবৃত্তি ‘নিদ্রা’ !
কিন্তু উন্নত মানবেরা তো প্রচলিত ধারায় চলতে চান-না ! তাঁরা তো উল্টো পথে উজান পথে চলে, ‘ধারা’ থেকে ‘রাধা’ হয়ে উঠতে চান ! তাই যোগীরা নিদ্রাকে জয় করার চেষ্টায় ব্রতী হলেন এবং হয়ে উঠলেন – নিদ্রজিৎ ! শ্রীমদ্ভগবতগীতায় রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলা হচ্ছে ‘হৃষিকেশ’ অর্থাৎ যিনি সর্বদা হৃদয়ে অধিষ্ঠাত্র এবং অর্জুনকে বলা হচ্ছে – ‘গুঢ়াকেশ’– যার অর্থ নিদ্রজিৎ । অর্জুন শুধু একজন বড় যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি একজন বড় যোগীও ছিলেন – তিনি নিদ্রাকে জয় করেছিলেন বলেই ভগবান তাকে ‘গুঢ়াকেশ’ বলে সম্বোধন করেছিলেন ! (বাকি আলোচনা পরের সংখ্যায়) … [ক্রমশঃ]