গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ একদিন বলছিলেন কোনো বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার মৃত্যুকালীন সময়ের কথা ! বৃদ্ধ বয়সে natural death হলে শরীরের সমস্ত অঙ্গ কেমন ভাবে একটা একটা করে কাজ বন্ধ করে দেয় এবং শেষে হৃৎপিণ্ড ক্রিয়া বন্ধ করে দিলেই রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং শারীরবৃত্তিয় সমস্ত ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সমস্ত Joint গুলি stiff হয়ে যায় (Rigor Mortis), তখন ঐ শরীরটিকে মৃতশরীর বলে গণ্য হয় !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – মৃত্যুযন্ত্রণা বলতে শরীরের যন্ত্রণাই শুধু নয় – মনের যন্ত্রণা এবং প্রাণের যন্ত্রণা আরো প্রবল হয়, এই সবগুলো মিলে মৃত্যু যন্ত্রণা ! মানুষের পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় এবং পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় রয়েছে, আর প্রতিটি কর্মেন্দ্রিয়র সঙ্গে কোন না কোন জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ রয়েছে । চক্ষুর সাথে পাণি বা হাত, কর্ণের সাথে বাকশক্তি, নাসিকার সাথে গুহ্য বা পায়ু, জিহ্বার সাথে লিঙ্গ বা উপস্থ এবং ত্বকের সাথে পদদ্বয়। পরিণত বয়সে কোন মানুষের যখন স্বাভাবিক মৃত্যু হয় (heart attack বা cerebral attack নয়)– অর্থাৎ বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় – তখন দেখা যায় ওই ব্যক্তির পদদ্বয়ের আগে মৃত্যু হয় বা বলা যায়_ হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা এতোই দুর্বল হয়ে যায় যে, পা দুটির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আর রক্ত চলাচল করতে পারে না । তাই ওই অঞ্চলের কোষগুলি প্রয়োজনীয় উত্তাপ এবং পুষ্টি না পাওয়ায় ধীরে ধীরে ক্রিয়াশীলতা হারায় এবং ঠান্ডা (বরফ শীতল) হতে শুরু করে ৷ পদদ্বয় মৃত হতে শুরু করলেই মানুষের চেতনা থেকে ‘স্পর্শ তন্মাত্রা’ অপসারিত হয় অর্থাৎ ওই মানুষটির ত্বক(!) আর ঠিকমতো কাজ করে না – ওই মানুষটিকে touch করলেও সে কোন sensetion পায় না !
এরপর ওই মানুষটির নাসিকা ক্রিয়াশীলতা হারায়, তখন সে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। তখন সে গন্ধ তন্মাত্রা হারায় এবং ওই মানুষটির পায়ুর পেশী আলগা হয়ে যায় ফলে – ঐ সময় অসারে পায়খানা হয়ে যেতে পারে ! তারপর ওই বৃদ্ধ/বৃদ্ধাটির আর বাকশক্তির ক্রিয়াশীলতা থাকেনা এবং সে শব্দ তন্মাত্রা হারায়, অর্থাৎ তার কর্ণ আর কোনো কাজ করে না – তারই প্রিয়জনেরা হয়তো তাকে ‘মা’ বা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করছে কিন্তু তার মনে হয় দূরাগত কোন শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে – তারপর শত চিৎকার করলেও ওই ব্যক্তি আর শুনতে পায় না ! এরপর ওই ব্যক্তির রস তন্মাত্রা চলে যায় অর্থাৎ জিহ্বা আর কাজ করে না ! সেই সময় যারা ওই ব্যক্তির মৃত্যুশয্যার পাশে উপস্থিত থাকে – তারা ভাবে তাদের ‘বাবা’ বা ‘মা’ বোধহয় জিহ্বা নাড়িয়ে কিছু বলতে চাইছে – কিন্তু তা নয় ! ওই ব্যক্তি বুঝতে পারছে যে তার জিহ্বাটা সে আর নাড়াতে পারছে না – তাই সে সেটা নাড়াবার আকুল প্রচেষ্টা করে বলে ঐরকমটা মনে হয় ।
মৃত্যুকালে মানুষের একেবারে শেষকালে চলে যায় রূপ তন্মাত্রা ! শেষ পর্যন্ত চোখটা খোলা থাকে কিন্তু এবার যেন চোখের আলোটুকুও নিভে আসে – আর সঙ্গে সঙ্গে সে হাতদুটো তোলার চেষ্টা করে – যেন কোনকিছুকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে – কিন্তু পারে না । একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে এবং সে বুঝতে পারে যে তার চোখের সামনে থেকে সমস্ত প্রিয়জনের মুখগুলি আবছা
হয়ে যাচ্ছে – সমস্ত আলো নিভে যাচ্ছে – সে এক গভীর অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করছে ৷ ভয়ে-আতঙ্কে সে চিৎকার করে উঠতে চায় – কিন্তু পারে না ! মৃত্যুকালীন সময়ে অনেকের মধ্যে যে একটা চরম অস্বস্তির ভাব ফুটে ওঠে – তা এইজন্যই !
কিন্তু ওই ব্যক্তি যদি কোন না কোন সদ্গুরুর কৃপালাভ করে থাকে – তাহলে ওই চরম অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে সে দেখে আলোর জ্যোতি – আর তার মধ্যে বরাভয় মুদ্রায় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে তার ইহকাল-পরকালের ত্রাতা তার গুরু _তার ইষ্ট ! তাঁকে দেখেই মৃত্যুপথযাত্রীর মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির হাসি ।৷ … [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – মৃত্যুযন্ত্রণা বলতে শরীরের যন্ত্রণাই শুধু নয় – মনের যন্ত্রণা এবং প্রাণের যন্ত্রণা আরো প্রবল হয়, এই সবগুলো মিলে মৃত্যু যন্ত্রণা ! মানুষের পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় এবং পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় রয়েছে, আর প্রতিটি কর্মেন্দ্রিয়র সঙ্গে কোন না কোন জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ রয়েছে । চক্ষুর সাথে পাণি বা হাত, কর্ণের সাথে বাকশক্তি, নাসিকার সাথে গুহ্য বা পায়ু, জিহ্বার সাথে লিঙ্গ বা উপস্থ এবং ত্বকের সাথে পদদ্বয়। পরিণত বয়সে কোন মানুষের যখন স্বাভাবিক মৃত্যু হয় (heart attack বা cerebral attack নয়)– অর্থাৎ বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় – তখন দেখা যায় ওই ব্যক্তির পদদ্বয়ের আগে মৃত্যু হয় বা বলা যায়_ হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা এতোই দুর্বল হয়ে যায় যে, পা দুটির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আর রক্ত চলাচল করতে পারে না । তাই ওই অঞ্চলের কোষগুলি প্রয়োজনীয় উত্তাপ এবং পুষ্টি না পাওয়ায় ধীরে ধীরে ক্রিয়াশীলতা হারায় এবং ঠান্ডা (বরফ শীতল) হতে শুরু করে ৷ পদদ্বয় মৃত হতে শুরু করলেই মানুষের চেতনা থেকে ‘স্পর্শ তন্মাত্রা’ অপসারিত হয় অর্থাৎ ওই মানুষটির ত্বক(!) আর ঠিকমতো কাজ করে না – ওই মানুষটিকে touch করলেও সে কোন sensetion পায় না !
এরপর ওই মানুষটির নাসিকা ক্রিয়াশীলতা হারায়, তখন সে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। তখন সে গন্ধ তন্মাত্রা হারায় এবং ওই মানুষটির পায়ুর পেশী আলগা হয়ে যায় ফলে – ঐ সময় অসারে পায়খানা হয়ে যেতে পারে ! তারপর ওই বৃদ্ধ/বৃদ্ধাটির আর বাকশক্তির ক্রিয়াশীলতা থাকেনা এবং সে শব্দ তন্মাত্রা হারায়, অর্থাৎ তার কর্ণ আর কোনো কাজ করে না – তারই প্রিয়জনেরা হয়তো তাকে ‘মা’ বা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করছে কিন্তু তার মনে হয় দূরাগত কোন শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে – তারপর শত চিৎকার করলেও ওই ব্যক্তি আর শুনতে পায় না ! এরপর ওই ব্যক্তির রস তন্মাত্রা চলে যায় অর্থাৎ জিহ্বা আর কাজ করে না ! সেই সময় যারা ওই ব্যক্তির মৃত্যুশয্যার পাশে উপস্থিত থাকে – তারা ভাবে তাদের ‘বাবা’ বা ‘মা’ বোধহয় জিহ্বা নাড়িয়ে কিছু বলতে চাইছে – কিন্তু তা নয় ! ওই ব্যক্তি বুঝতে পারছে যে তার জিহ্বাটা সে আর নাড়াতে পারছে না – তাই সে সেটা নাড়াবার আকুল প্রচেষ্টা করে বলে ঐরকমটা মনে হয় ।
মৃত্যুকালে মানুষের একেবারে শেষকালে চলে যায় রূপ তন্মাত্রা ! শেষ পর্যন্ত চোখটা খোলা থাকে কিন্তু এবার যেন চোখের আলোটুকুও নিভে আসে – আর সঙ্গে সঙ্গে সে হাতদুটো তোলার চেষ্টা করে – যেন কোনকিছুকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে – কিন্তু পারে না । একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে এবং সে বুঝতে পারে যে তার চোখের সামনে থেকে সমস্ত প্রিয়জনের মুখগুলি আবছা
হয়ে যাচ্ছে – সমস্ত আলো নিভে যাচ্ছে – সে এক গভীর অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করছে ৷ ভয়ে-আতঙ্কে সে চিৎকার করে উঠতে চায় – কিন্তু পারে না ! মৃত্যুকালীন সময়ে অনেকের মধ্যে যে একটা চরম অস্বস্তির ভাব ফুটে ওঠে – তা এইজন্যই !
কিন্তু ওই ব্যক্তি যদি কোন না কোন সদ্গুরুর কৃপালাভ করে থাকে – তাহলে ওই চরম অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে সে দেখে আলোর জ্যোতি – আর তার মধ্যে বরাভয় মুদ্রায় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে তার ইহকাল-পরকালের ত্রাতা তার গুরু _তার ইষ্ট ! তাঁকে দেখেই মৃত্যুপথযাত্রীর মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির হাসি ।৷ … [ক্রমশঃ]