গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে যে সমস্ত আলোচনা করতেন – আমরা এখানে তার কিছু কিছু অংশ তুলে ধরেছিলাম । আমরা ‘সাম্প্রতিক প্রসঙ্গে’ আলোচনা শুরু করেছিলাম ‘ভয়’ সম্পর্কে ! ‘ভয়’ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা চারটি জৈব প্রবৃত্তি অর্থাৎ “আহার-নিদ্রা-মৈথুনঞ্চ-ভয়ম্”- এইগুলি নিয়ে আলোচনা করছিলাম । সেখান থেকে বিভিন্ন আলোচনা উঠে আসায় আমরা মূল আলোচনা থেকে অনেকটা সরে এসেছিলাম ৷ এবার আবার সেখানে ফিরে যাবো । কিন্তু তার আগে বলে নেওয়া যাক –অর্জুন কেনো ‘গুঢ়াকেশ’ এবং শ্রীকৃষ্ণ কেন ‘হৃষিকেশ’ !
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ‘হৃষিকেশ’ – কারণ স্বয়ং ঈশ্বররূপী শ্রীকৃষ্ণ_ সকল জীবের হৃদয়ে অবস্থান করেন, সকলের অন্তরের অন্তর্যামীরূপে, পরমাত্মারূপে বিরাজ করেন । এইজন্যই তো বলা হয় – জগতের সকলকে ফাঁকি দেওয়া যায়, শুধু নিজেকে বা নিজের অন্তরের অন্তর্যামীকে ফাঁকি দেওয়া যায় না । ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এইজন্যেই বলতেন – তিনি পিঁপড়ের চরণের নুপুরধ্বনি শুনতে পান অর্থাৎ ভক্তের যে কোনো প্রার্থনা ঈশ্বর শুনতে পান – তারজন্য ঢাক-ঢোল পেটাতে হবে বা মাইক বাজাতে হবে – তার কোনো প্রয়োজনই নাই । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতেই রয়েছে ” হৃদ্দেশে তিষ্ঠতিহর্জুনঃ “।
মহাভারতে উল্লেখ আছে – অর্জুন ‘নিদ্রজিৎ’ ছিলেন । ব্যাপারটা আগের সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছিল – কোন ব্যক্তি বিশ্রামে রয়েছে কিন্তু সদাই সজাগ, যেন তার শরীরে কোনো আলস্য বা জড়তাই নাই_এরূপ অবস্থাই নিদ্রজিৎ-অবস্থা ! অর্জুনের এই গুণটি ছিল । উনি বিশ্রামের প্রয়োজন বুঝলে – ধনুকে ভর দিয়ে বসে বসেই একটু ঘুমিয়ে নিতেন – আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই একদম fresh ! একদিন দ্রোণাচার্য তাঁর শিষ্যদের (কৌরব ও পাণ্ডবদের) কিছু কঠিন কঠিন শস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, উনি শিষ্যদের সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে দিয়েছিলেন যে, পরের দিন উনি ওই বিদ্যার পরীক্ষা গ্রহণ করবেন! ফলে সমস্ত রাজকুমারেরা সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর অনুশীলন করেছিল এবং সন্ধ্যাহ্নিকের পরে খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেল । গভীর রাত্রে অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের একটা অদ্ভুত শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ৷ ওনার শিবিরের পাশেই যে অস্ত্রশিক্ষার জন্য বিরাট মাঠ রয়েছে – শব্দটা সেখান থেকেই আসছিল ।
আচার্য তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন মাঠের ধারে ৷ গিয়ে দেখলেন, অর্জুন একাকী সেই গভীর রাত্রে নিবিষ্টচিত্তে শর-চালনা practice করছে ! অস্ত্রগুরু অর্জুনের concentration নষ্ট না করে বহুক্ষণ সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগলেন । Practice সম্পন্ন করে যখন কিশোর অর্জুন সমস্ত অস্ত্র গুছিয়ে নিয়ে ক্যাম্পে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল – তখন গুরু দ্রোণ তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমেই তাকে তার এই অসাধারণ অধ্যাবসায়ের জন্য বাহবা জানালেন, তারপর তিনি অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করলেন – “এই গভীর রাত্রিতে সমস্ত মানুষ যখন নিদ্রামগ্ন – তখন সে একাকী কেন Practice করছিল ? তার যে task দেওয়া আছে – সেটা তো সে পরদিন সকালেও practice করতে পারতো – কিন্তু এই গভীর রাত্রে কেন ?” তার উত্তরে অর্জুন বলেছিল যে,– প্রতি রাত্রেই কিছুক্ষণ গভীর ঘুমে থাকার পরই তার ঘুম ভেঙে যায় এবং সাথে সাথে সে উঠে পড়ে এবং অস্ত্রশিক্ষা শুরু করে ৷
সেদিন সে যা practice করছিলো – তা হলো অন্ধকারে অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুকে না দেখে শুধু আন্দাজ করে তীরবিদ্ধ করা যায় কি না ! এইজন্যেই অর্জুন চোখ-বাঁধা অবস্থায় বা লক্ষ্যবস্তুর ছায়া দেখেও সেই বস্তুতে নিখুঁত আঘাত করতে পারতো ৷ “অর্জুনের লক্ষ্যভেদ”– ব্যাপারটা প্রবাদবাক্যের ন্যায় হয়ে গেছে – কিন্তু তার পিছনে যে কত ত্যাগ, কত অধ্যাবসায়, কত অভ্যাস, কত নিষ্ঠা – তার খবর আর কজন রাখে ?
গুরুমহারাজ এই কথাগুলি বলে সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – ” তোমরাও জীবনে যদি কিছু অর্জন করতে চাও তাহলে তোমরাও এক একটা অর্জুন হয়ে ওঠো !!” … [ক্রমশঃ]
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ‘হৃষিকেশ’ – কারণ স্বয়ং ঈশ্বররূপী শ্রীকৃষ্ণ_ সকল জীবের হৃদয়ে অবস্থান করেন, সকলের অন্তরের অন্তর্যামীরূপে, পরমাত্মারূপে বিরাজ করেন । এইজন্যই তো বলা হয় – জগতের সকলকে ফাঁকি দেওয়া যায়, শুধু নিজেকে বা নিজের অন্তরের অন্তর্যামীকে ফাঁকি দেওয়া যায় না । ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এইজন্যেই বলতেন – তিনি পিঁপড়ের চরণের নুপুরধ্বনি শুনতে পান অর্থাৎ ভক্তের যে কোনো প্রার্থনা ঈশ্বর শুনতে পান – তারজন্য ঢাক-ঢোল পেটাতে হবে বা মাইক বাজাতে হবে – তার কোনো প্রয়োজনই নাই । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতেই রয়েছে ” হৃদ্দেশে তিষ্ঠতিহর্জুনঃ “।
মহাভারতে উল্লেখ আছে – অর্জুন ‘নিদ্রজিৎ’ ছিলেন । ব্যাপারটা আগের সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছিল – কোন ব্যক্তি বিশ্রামে রয়েছে কিন্তু সদাই সজাগ, যেন তার শরীরে কোনো আলস্য বা জড়তাই নাই_এরূপ অবস্থাই নিদ্রজিৎ-অবস্থা ! অর্জুনের এই গুণটি ছিল । উনি বিশ্রামের প্রয়োজন বুঝলে – ধনুকে ভর দিয়ে বসে বসেই একটু ঘুমিয়ে নিতেন – আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই একদম fresh ! একদিন দ্রোণাচার্য তাঁর শিষ্যদের (কৌরব ও পাণ্ডবদের) কিছু কঠিন কঠিন শস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, উনি শিষ্যদের সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে দিয়েছিলেন যে, পরের দিন উনি ওই বিদ্যার পরীক্ষা গ্রহণ করবেন! ফলে সমস্ত রাজকুমারেরা সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর অনুশীলন করেছিল এবং সন্ধ্যাহ্নিকের পরে খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেল । গভীর রাত্রে অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের একটা অদ্ভুত শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ৷ ওনার শিবিরের পাশেই যে অস্ত্রশিক্ষার জন্য বিরাট মাঠ রয়েছে – শব্দটা সেখান থেকেই আসছিল ।
আচার্য তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন মাঠের ধারে ৷ গিয়ে দেখলেন, অর্জুন একাকী সেই গভীর রাত্রে নিবিষ্টচিত্তে শর-চালনা practice করছে ! অস্ত্রগুরু অর্জুনের concentration নষ্ট না করে বহুক্ষণ সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগলেন । Practice সম্পন্ন করে যখন কিশোর অর্জুন সমস্ত অস্ত্র গুছিয়ে নিয়ে ক্যাম্পে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল – তখন গুরু দ্রোণ তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমেই তাকে তার এই অসাধারণ অধ্যাবসায়ের জন্য বাহবা জানালেন, তারপর তিনি অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করলেন – “এই গভীর রাত্রিতে সমস্ত মানুষ যখন নিদ্রামগ্ন – তখন সে একাকী কেন Practice করছিল ? তার যে task দেওয়া আছে – সেটা তো সে পরদিন সকালেও practice করতে পারতো – কিন্তু এই গভীর রাত্রে কেন ?” তার উত্তরে অর্জুন বলেছিল যে,– প্রতি রাত্রেই কিছুক্ষণ গভীর ঘুমে থাকার পরই তার ঘুম ভেঙে যায় এবং সাথে সাথে সে উঠে পড়ে এবং অস্ত্রশিক্ষা শুরু করে ৷
সেদিন সে যা practice করছিলো – তা হলো অন্ধকারে অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুকে না দেখে শুধু আন্দাজ করে তীরবিদ্ধ করা যায় কি না ! এইজন্যেই অর্জুন চোখ-বাঁধা অবস্থায় বা লক্ষ্যবস্তুর ছায়া দেখেও সেই বস্তুতে নিখুঁত আঘাত করতে পারতো ৷ “অর্জুনের লক্ষ্যভেদ”– ব্যাপারটা প্রবাদবাক্যের ন্যায় হয়ে গেছে – কিন্তু তার পিছনে যে কত ত্যাগ, কত অধ্যাবসায়, কত অভ্যাস, কত নিষ্ঠা – তার খবর আর কজন রাখে ?
গুরুমহারাজ এই কথাগুলি বলে সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – ” তোমরাও জীবনে যদি কিছু অর্জন করতে চাও তাহলে তোমরাও এক একটা অর্জুন হয়ে ওঠো !!” … [ক্রমশঃ]