গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ ঊর্ধ্বরেতা সম্পর্কে যে আলোচনা করেছিলেন – সেই সম্বন্ধে কথা হচ্ছিল(আমাদের মূল আলোচনা ছিল মৈথুন) । প্রকৃত কথাটা, যেটা আমরা বুঝেছিলাম তা হোলো – জীবজগতে যে শক্তির ‘ধারা’ নিম্নমুখী হয়ে ক্রিয়াশীল হয়ে রয়েছে – তার গতিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী করতে পারলেই ‘ধারা’- ‘রাধা’ হয়ে উঠবে । এইজন্যেই বৈষ্ণবশাস্ত্রে ‘রাধা’-কে পরম প্রেমময়ী বলা হয়েছে । বৈষ্ণব পদকর্তাগণ বলেছেন – “কামগন্ধ নাহি তায়”। গুরু মহারাজ বলেছিলেন – শ্রীকৃষ্ণের মাথার চূড়ায় শিখীপুচ্ছ (ময়ূরের পাখা) কামকে জয় করার প্রতীক । যেহেতু জীবজগতে দেখা যায় – অন্যান্য জীবের ন্যায় ময়ূরের কোন দৈহিক মিলন হয় না _তাই শিখীপুচ্ছ শ্রীকৃষ্ণের মাথায় শোভা পায়। ভক্তিশাস্ত্রে রয়েছে অনুরাগ-রস-রতি-ভাব-মহাভাব ইত্যাদি ক্রমের কথা ৷ রতিকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে – সাধারণী, সমঞ্জসা ও সমর্থা ! সমর্থা রতির নায়িকাই হচ্ছে রাধার প্রতীক ! অর্থাৎ যে প্রেমে নিজের কোন চাহিদাই নাই, শুধু প্রেমাস্পদের সুখেই সুখ, তার আনন্দেই আনন্দ ! আহ্লাদে কৃষ্ণ – তাই রাধাকে হ্লাদিনী শক্তির প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে !
বাউলমতের কথা বলেছিলেন গুরুমহারাজ (বৈষ্ণবেরাও প্রায় একই মতে এই সাধনা করে) – সেখানে দুই ধরনের সাধক রয়েছে । প্রথম দলে ‘নারী বর্জিত সাধন’ _করেন যাঁরা,তারা রয়েছে এবং দ্বিতীয় দলে রয়েছে যারা নারী নিয়ে নিয়ে সাধন করে ! নারী বর্জিত সাধনকারী বাউলরাই বিশুদ্ধ বাউল । যাঁরা তার নিজের দেহের মধ্যে, মনের মধ্যে, প্রাণের মধ্যে – সোনার মানুষ রয়েছে, মনের মানুষ রয়েছে, প্রানের মানুষ রয়েছে – সেটাকে আবিষ্কার করার নেশায় ছুটে চলেন এবং অবশেষে নিজের মধ্যে ‘তা’ আবিষ্কার করে পূর্ণ হ’ন ৷ তাইতো তাঁরা গেয়ে ওঠেন _” আমি কোথায় পাবো তারে,আমার মনের মানুষ যে রে”!
দ্বিতীয় দলের সাধকেরা এতটা শক্তিশালী নয় ৷ তাই তারা দ্বৈত সত্ত্বায় বিশ্বাস করে । কোনো না কোনো নারীকে সাধন সঙ্গিনী হিসাবে বেছে নিয়ে একসাথে সাধন-ভজন করে । সাধন এবং ভজন অর্থাৎ গোপনে সাধন করে আর বাইরে ‘ভজন’ করে অর্থাৎ সংগীতের মাধ্যমে নেচে গেয়ে নিজেদেরকে engaged রাখে ! এর দ্বারা তাদের যেমন মঙ্গল হয়, তেমনি বাউলমতের দেহতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব সাধারণ মানুষের কাছে পরিবেশন করে – এতে সাধারণ মানুষেরও মঙ্গল হয় ৷
গুরুমহারাজ একেবারে সরাসরি বাউলমতের ঊর্ধ্বরেতা হবার সাধনার কথা বলেননি – ঠারেঠোরে বলেছিলেন ! অনেকে এই মত আলোচনা করতে চাইলে উনি তেমন অন্তরঙ্গ হোলে বলতেন – ” ওই বিদ্যা আমার জানা আছে – প্রয়োজনে একান্তে আমার সাথে দেখা করবি – আমি শিখিয়ে দেবো “! যাইহোক, বাউল সাধনায় পুরুষেরা প্রথম যৌবন থেকেই আসন এবং প্রাণায়ামের control করে একটা বিশেষ তলপেটের ‘আকুঞ্চন’ ক্রিয়া অভ্যাস করেন ৷ যোগশাস্ত্রে রয়েছে ”শঙ্খ প্রক্ষালন ক্রিয়া”। এর দ্বারা যোগীরা মলত্যাগ করার পর তার গুহ্যদ্বার এবং নাড়ীগুলোকে প্রক্ষালন করেন অর্থাৎ ভালোভাবে wash করতে পারেন । বাউল মতের এই বিশেষ-সাধনাও প্রায় সেইরকমটাই । ওখানে গুহ্যের সাহায্যে বেশ খানিকটা জল টেনে নিয়ে একেবারে সবটা ”ভোঁচ্” করে ছেড়ে দেওয়া হয়, আর বৈষ্ণব-বাউল মতের সাধনায় লিঙ্গনাল দিয়ে ঠিক এইই ভাবে জল বা দুধ টেনে নেবার অভ্যাস করা হয় । এই ব্যাপারে সিদ্ধ হয়ে গেলে – তখন ঐ বাউল সাধক, উপযুক্ত নারীকে সাধন সঙ্গিনী হিসাবে গ্রহণ করে সাধনায় প্রবৃত্ত হ’ন ! … [ক্রমশঃ]