গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছ থেকে, বিভিন্ন সিটিং-এ নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে যে কথাগুলি তখন আমরা শুনতাম, সেইগুলিই আমরা এখানে আলোচনা করছিলাম । আগের দিন আমরা দেখেছিলাম যে প্রকৃতিতে দেখা যায় যে, নারীরাই পুরুষকে নির্বাচন করে_ তার life-partner হিসাবে বা তার সন্তানের জনক হিসাবে ৷
গুরু মহারাজ বলেছিলেন একটি বিশেষ প্রজাতির পাখি-সমাজের কথা – যাদের মধ্যে স্বয়ংবর সভার মতোই আসর বসে ৷ জঙ্গলের মধ্যে একজন স্ত্রী পাখিকে ঘিরে অনেকগুলি পুরুষ পাখি এক জায়গা হয় – সেই স্থানটি ঝরাপাতা বা অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা তারাই পরিষ্কার করে । এরপর তারা (পুরুষ পাখিরা) নানারকম কসরৎ দেখায় – নাচ দেখায় ! এদের মধ্যে যে কোন একজনকে ওই নারী পাখিটি পছন্দ করে এবং দুজনে উড়ে চলে যায় – বাসা বাঁধার জন্য ! সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রাচীনকালের রাজন্যবর্গের স্বয়ংবর প্রথার চলও প্রকৃতি থেকেই নেওয়া হয়েছিল ।
আবার মহাভারতে বা অন্যান্য প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে যে “বীর্যশুল্কা” কথাটি রয়েছে । অনেক বীরদের পরাজিত করে যে “বীর” কোন রমণীকে জয় করে নিয়ে যেতো – সেই নারীই হত বীর্যশুল্কা নারী ! মহাভারতে রয়েছে আজন্ম ব্রহ্মচারী দেবব্রত (ভীষ্ম) কোশল রাজসভায় আচমকা উপস্থিত হয়ে কোশল রাজকন্যাদের পাণিপ্রার্থী সমস্ত রাজা বা রাজকুমারদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করে __অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা নামে তিন রাজকুমারীকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন হস্তিনাপুরে – তার ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের সাথে বিবাহ দেবার জন্য ! যদিও বড় রাজকুমারী অম্বা এই ঘটনাকে মেনে নেন নি – তিনি মনে মনে স্থানীয় এক বীর রাজকুমারকে কামনা করেছিলেন কিন্তু তিনি হীনবীর্য বিচিত্রবীর্যকে বিবাহ করতে রাজি হননি ৷ তিনি বীর পরাক্রমী দেবব্রতের স্ত্রী হতে পারেন – এমনটাও বলেছিলেন ৷ কিন্তু চিরকুমার ব্রহ্মচারী দেবব্রত রাজি হননি বলে অম্বা তাকে অভিশাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ৷
যাইহোক, পশু জগতেও দেখা যায় যে, একটা নারীর অধিকার নিয়ে একাধিক পুরুষের মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াই হয় – সেটাও তো ওই “বীর্যশুল্কা” প্রথাই ! কারণ সেখানেও লড়াইয়ে যে পুরুষ জেতে – সেই পায় নারীর অধিকার ! এইভাবেই দেখা যায় প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই মানুষ সমাজজীবনে সেগুলিকে implement করেছে !
তবে, যেটা আগেই বলা হয়েছিল যে – পরিবেশ পরিস্থিতিও অনেক সময় নতুন নতুন সামাজিক বিধান সৃষ্টি করতে মানুষকে বাধ্য করেছিল । যেমন ভারতীয় সমাজে বহুবিবাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ প্রথা – ইত্যাদি ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন – হযরত মুহাম্মদও যে মুসলিমদেরকে চারটি বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন – সেটাও এক বিশেষ পরিস্থিতিতে ! উনি জীবদ্দশায় যে তিন-চারটি যুদ্ধ করেছিলেন, তারমধ্যে একটি যুদ্ধের পর দেখা গেল বিপক্ষ দলের সমস্ত পুরুষ মানুষ মারা গেছে – সেখানে নারীরা ও শিশুরা অসহায় অবস্থায় কাঁদছিল । তাদের এই করুণ অবস্থা দেখে মুহাম্মদের মনে দয়া হলো, তিনি তাঁর সাথীদের কে ও সৈন্যদেরকে তাঁর কাছে ডাকলেন এবং গুণে দেখলেন যে এক-একজন সৈনিককে চারটি করে নারীর (এবং তাদের শিশুদের) ভার নিলে সব নারীরাই সমস্যামুক্ত হয় । তাই তিনি তাঁর সহযোগী সকলকেই আদেশ দিয়েছিলেন – প্রত্যেকে যেন চারটি করে রমণীর দায়ভার সমস্ত কিছুই গ্রহণ করে ! এই ঘটনাটাই পরবর্তীকালের মুসলিমরা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় এবং ইসলামীয় মতে হালাল আইন হিসাবে মান্যতা দেয় । হযরত কিন্তু ওই নির্দেশটি একটি বিশেষ সময়ে এবং একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দিয়েছিলেন – সবার জন্য দেন নি ! কিন্তু কে মানে সে কথা !
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বহু বিবাহ করেছিলেন এবং তিনি বহুবিবাহের সমর্থনে বলেছিলেন যে, ” সমাজের সৎ-ব্যক্তিরা বহু বিবাহ করতে পারে । কারণ সৎ-ব্যক্তি বহু বিবাহ করলে বহু সৎ-সন্তান উৎপন্ন হবে এবং এইভাবে সমাজে সৎ-মানুষের সংখ্যাধিক্য ঘটবে ৷” কিন্তু গুরুমহারাজ এই যুক্তি তুড়ি মেরে উড়িয়ে বলেছিলেন – ” তাহলে অনুকূল পুত্রদের (বরদা-ছোড়দা) মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়ালো কেন ? কোন এক ভাইয়ের ছেলেকে murder-ই বা হতে হোলো কেন ? এমন সৎ-পুত্রদের ভারতীয় সমাজে কোন প্রয়োজন নাই !” … [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজ বলেছিলেন একটি বিশেষ প্রজাতির পাখি-সমাজের কথা – যাদের মধ্যে স্বয়ংবর সভার মতোই আসর বসে ৷ জঙ্গলের মধ্যে একজন স্ত্রী পাখিকে ঘিরে অনেকগুলি পুরুষ পাখি এক জায়গা হয় – সেই স্থানটি ঝরাপাতা বা অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা তারাই পরিষ্কার করে । এরপর তারা (পুরুষ পাখিরা) নানারকম কসরৎ দেখায় – নাচ দেখায় ! এদের মধ্যে যে কোন একজনকে ওই নারী পাখিটি পছন্দ করে এবং দুজনে উড়ে চলে যায় – বাসা বাঁধার জন্য ! সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রাচীনকালের রাজন্যবর্গের স্বয়ংবর প্রথার চলও প্রকৃতি থেকেই নেওয়া হয়েছিল ।
আবার মহাভারতে বা অন্যান্য প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে যে “বীর্যশুল্কা” কথাটি রয়েছে । অনেক বীরদের পরাজিত করে যে “বীর” কোন রমণীকে জয় করে নিয়ে যেতো – সেই নারীই হত বীর্যশুল্কা নারী ! মহাভারতে রয়েছে আজন্ম ব্রহ্মচারী দেবব্রত (ভীষ্ম) কোশল রাজসভায় আচমকা উপস্থিত হয়ে কোশল রাজকন্যাদের পাণিপ্রার্থী সমস্ত রাজা বা রাজকুমারদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করে __অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা নামে তিন রাজকুমারীকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন হস্তিনাপুরে – তার ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের সাথে বিবাহ দেবার জন্য ! যদিও বড় রাজকুমারী অম্বা এই ঘটনাকে মেনে নেন নি – তিনি মনে মনে স্থানীয় এক বীর রাজকুমারকে কামনা করেছিলেন কিন্তু তিনি হীনবীর্য বিচিত্রবীর্যকে বিবাহ করতে রাজি হননি ৷ তিনি বীর পরাক্রমী দেবব্রতের স্ত্রী হতে পারেন – এমনটাও বলেছিলেন ৷ কিন্তু চিরকুমার ব্রহ্মচারী দেবব্রত রাজি হননি বলে অম্বা তাকে অভিশাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ৷
যাইহোক, পশু জগতেও দেখা যায় যে, একটা নারীর অধিকার নিয়ে একাধিক পুরুষের মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াই হয় – সেটাও তো ওই “বীর্যশুল্কা” প্রথাই ! কারণ সেখানেও লড়াইয়ে যে পুরুষ জেতে – সেই পায় নারীর অধিকার ! এইভাবেই দেখা যায় প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই মানুষ সমাজজীবনে সেগুলিকে implement করেছে !
তবে, যেটা আগেই বলা হয়েছিল যে – পরিবেশ পরিস্থিতিও অনেক সময় নতুন নতুন সামাজিক বিধান সৃষ্টি করতে মানুষকে বাধ্য করেছিল । যেমন ভারতীয় সমাজে বহুবিবাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ প্রথা – ইত্যাদি ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন – হযরত মুহাম্মদও যে মুসলিমদেরকে চারটি বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন – সেটাও এক বিশেষ পরিস্থিতিতে ! উনি জীবদ্দশায় যে তিন-চারটি যুদ্ধ করেছিলেন, তারমধ্যে একটি যুদ্ধের পর দেখা গেল বিপক্ষ দলের সমস্ত পুরুষ মানুষ মারা গেছে – সেখানে নারীরা ও শিশুরা অসহায় অবস্থায় কাঁদছিল । তাদের এই করুণ অবস্থা দেখে মুহাম্মদের মনে দয়া হলো, তিনি তাঁর সাথীদের কে ও সৈন্যদেরকে তাঁর কাছে ডাকলেন এবং গুণে দেখলেন যে এক-একজন সৈনিককে চারটি করে নারীর (এবং তাদের শিশুদের) ভার নিলে সব নারীরাই সমস্যামুক্ত হয় । তাই তিনি তাঁর সহযোগী সকলকেই আদেশ দিয়েছিলেন – প্রত্যেকে যেন চারটি করে রমণীর দায়ভার সমস্ত কিছুই গ্রহণ করে ! এই ঘটনাটাই পরবর্তীকালের মুসলিমরা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় এবং ইসলামীয় মতে হালাল আইন হিসাবে মান্যতা দেয় । হযরত কিন্তু ওই নির্দেশটি একটি বিশেষ সময়ে এবং একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দিয়েছিলেন – সবার জন্য দেন নি ! কিন্তু কে মানে সে কথা !
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বহু বিবাহ করেছিলেন এবং তিনি বহুবিবাহের সমর্থনে বলেছিলেন যে, ” সমাজের সৎ-ব্যক্তিরা বহু বিবাহ করতে পারে । কারণ সৎ-ব্যক্তি বহু বিবাহ করলে বহু সৎ-সন্তান উৎপন্ন হবে এবং এইভাবে সমাজে সৎ-মানুষের সংখ্যাধিক্য ঘটবে ৷” কিন্তু গুরুমহারাজ এই যুক্তি তুড়ি মেরে উড়িয়ে বলেছিলেন – ” তাহলে অনুকূল পুত্রদের (বরদা-ছোড়দা) মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়ালো কেন ? কোন এক ভাইয়ের ছেলেকে murder-ই বা হতে হোলো কেন ? এমন সৎ-পুত্রদের ভারতীয় সমাজে কোন প্রয়োজন নাই !” … [ক্রমশঃ]