গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ নারী-পুরুষ এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা যেগুলি আলোচনা করেছিলেন – তার মধ্যে আমার যেটুকু শোনা ছিল – সেইগুলি এখানে বলা হচ্ছিল ৷ এই ব্যাপারে স্বামী নিগমানন্দের বলা কিছু কথাও সংযোজিত হয়েছে ৷ যাইহোক, এবার আমরা পুনরায় আলোচনায় ফিরে আসি !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – এই জগতে শরীর নিলে জাগতিক যা কিছু রয়েছে_ সকলের শরীরে বা মনোজগতে তার সব কিছুরই প্রভাব পড়ে ! তাতে সে মহাত্মা-মহাপুরুষ-মহাজন-অবতারপুরুষ __যেই হোক না কেন? সাধিকা নারীশরীরে এই প্রভাবের প্রাবল্য অতটা অনুভূত হয় না – কারণ নারীর সহ্যশক্তি-ধৈর্যশক্তি অনেক বেশি । নারীকে ধরিত্রীর ন্যায় সর্বংসহা হিসাবে শাস্ত্র বর্ণনা করেছে – এইজন্যেই ! কিন্তু পুরুষ শরীরে যে কোন রিপুর বেগই বেশি – তারমধ্যে কামের বেগ সবচাইতে প্রবল ! জন্ম-জন্মান্তরের অভিজ্ঞতাপুষ্ট, সাধনায় সিদ্ধ দেহলাভের পরেও কিন্তু সেই শরীর বা মনে রিপুর প্রভাব পড়ে ! কিন্তু এতে বিচলিত হবার কিছুই নাই ৷ এটাকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে সাধকগণ উপেক্ষা করে যান ৷
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের ন্যায় সাক্ষাৎ হরির অবতার বা শিবাবতার-রাও যৌবনের প্রথমভাগে কোনো না কোনো সময়ে কাম-রিপুর প্রাবল্য শরীরে অনুভবের অভিজ্ঞতার কথা জগতবাসীর কাছে share করে গেছেন ! এটা তাঁরা করেছেন_ যাতে লোকশিক্ষা হয় অর্থাৎ পরবর্তীকালের সাধকেরা কোনরকম আত্মগ্লানি অনুভব না করে ।
সাক্ষাৎ শিবের অবতাররূপে পূজিত লোকনাথবাবা তো আরো এক কাঠি উপরে ! তিনি প্রথম যৌবনে গুরুর সাথে পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণকালে এক আদিবাসী মহিলার সাথে শুধুমাত্র মেলামেশাই নয়, দৈহিক সম্পর্কে পর্যন্ত যুক্ত হয়েছিলেন । তাঁর গুরু সবই জানতেন কিন্তু ব্যাপারটাকে allow করে যাচ্ছিলেন, যাতে শিষ্যের সংস্কারে যেটুকু ভোগেচ্ছা রয়েছে_ তা কেটে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগব্রতী হয়ে সাধন-জগতে প্রবেশ করতে পারে ৷৷
মনুষ্য সমাজে নারী ও পুরুষের বিবাহ নিয়ে আলোচনা করার সময় গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ভারতীয় শাস্ত্রে আট প্রকারের বিবাহ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছে ৷ তার মধ্যে সাধারণত যে বিবাহটা আমরা ভারতীয় সমাজে দেখি সেটি ‘প্রজাপাত্য বিবাহ’। ভালোবাসা করে অর্থাৎ বাড়ির অমতে – সামাজিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিবাহ হল ‘গান্ধর্ব বিবাহ’। জোর করে বিবাহ হ’ল ‘রাক্ষস বিবাহ’ – এইরকম আট প্রকার বিবাহ রয়েছে ।
তবে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ – এইসব হলো সামাজিক প্রথা । কোনো কোনো সময়ে, কোনো কোনো সমাজে হঠাৎ করে নানা রকম crisis দেখা দেয় – তখনই গড়ে ওঠে নানা রকম সামাজিক প্রথা! সেগুলি(প্রথাগুলি) দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলে অর্থাৎ দীর্ঘকাল ধরে সেগুলি সমাজে চলতে থাকলে – ওইগুলি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কুসংস্কার বা কুপ্রথায় পরিণত হয় ।
যেমন ধরা যাক,– কোন সময়ে কোন সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীর সংখ্যা অধিক হয়ে গিয়েছিল, ফলে সেখানকার সমাজপতিরা বিধান দিয়েছিল – একটি পুরুষ একাধিক নারী বিবাহ করতে পারবে – এইভাবেই সেখানে balance আনা হয়েছিল ৷ আবার মহাভারতে দেখা যায় দ্রোপদীর পঞ্চস্বামী ! এখনও হিমালয়ের কোলে বিভিন্ন আদিবাসী গ্রাম রয়েছে যেখানে এই প্রথা রয়েছে ! হয়তো কোন পরিবারে চার ভাই রয়েছে – শুধুমাত্র বড়ভাই একটি মেয়েকে বিবাহ করলেই বাকি ভাইরা ওই নারীর স্বামী হিসাবে বিবেচিত হবে ! বাকি ভাইদের মধ্যে কেউ যদি বয়সে খুব ছোট(minor) থাকে – তাহলে সে যখন mature হবে – তখন থেকে সে ওই নারীর সাথে সহবাসে অনুমতি লাভ করবে !
এইভাবে বাল্যবিবাহও ভারতীয় সমাজে এসেছিল মুসলিমদের আগমনের পর থেকে । ঘরে ঘরে অবিবাহিত তরুণী-যুবতীদের ধরে নিয়ে গিয়ে সম্রাটদের হারেমে ভরে দেওয়া হতো, লুটেরারা বা মুসলমান সৈন্যরা নারীদেরকে লুট করে নিয়ে যেতো । ফলে মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য মেয়ের বাবারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েকে পাত্রস্থ করে দিতো । তাছাড়া সমাজে মেয়ের সংখ্যা কমে গেলেও এমনটা হতে পারে ! কারণ সে ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষের অভিভাবকেরা ভাবে – ছেলে বড় হবার পর যদি তার ছেলের জন্য পাত্রী না পাওয়া যায় – তাই ছোট বয়সেই কোন অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিতো ! এইভাবেই এই ধরনের বিভিন্ন সামাজিক প্রথাগুলি সমাজে সৃষ্টি হয়েছিল !যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথেই আবার তার অবলুপ্তিও ঘটে গেছে ৷ … [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – এই জগতে শরীর নিলে জাগতিক যা কিছু রয়েছে_ সকলের শরীরে বা মনোজগতে তার সব কিছুরই প্রভাব পড়ে ! তাতে সে মহাত্মা-মহাপুরুষ-মহাজন-অবতারপুরুষ __যেই হোক না কেন? সাধিকা নারীশরীরে এই প্রভাবের প্রাবল্য অতটা অনুভূত হয় না – কারণ নারীর সহ্যশক্তি-ধৈর্যশক্তি অনেক বেশি । নারীকে ধরিত্রীর ন্যায় সর্বংসহা হিসাবে শাস্ত্র বর্ণনা করেছে – এইজন্যেই ! কিন্তু পুরুষ শরীরে যে কোন রিপুর বেগই বেশি – তারমধ্যে কামের বেগ সবচাইতে প্রবল ! জন্ম-জন্মান্তরের অভিজ্ঞতাপুষ্ট, সাধনায় সিদ্ধ দেহলাভের পরেও কিন্তু সেই শরীর বা মনে রিপুর প্রভাব পড়ে ! কিন্তু এতে বিচলিত হবার কিছুই নাই ৷ এটাকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে সাধকগণ উপেক্ষা করে যান ৷
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের ন্যায় সাক্ষাৎ হরির অবতার বা শিবাবতার-রাও যৌবনের প্রথমভাগে কোনো না কোনো সময়ে কাম-রিপুর প্রাবল্য শরীরে অনুভবের অভিজ্ঞতার কথা জগতবাসীর কাছে share করে গেছেন ! এটা তাঁরা করেছেন_ যাতে লোকশিক্ষা হয় অর্থাৎ পরবর্তীকালের সাধকেরা কোনরকম আত্মগ্লানি অনুভব না করে ।
সাক্ষাৎ শিবের অবতাররূপে পূজিত লোকনাথবাবা তো আরো এক কাঠি উপরে ! তিনি প্রথম যৌবনে গুরুর সাথে পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণকালে এক আদিবাসী মহিলার সাথে শুধুমাত্র মেলামেশাই নয়, দৈহিক সম্পর্কে পর্যন্ত যুক্ত হয়েছিলেন । তাঁর গুরু সবই জানতেন কিন্তু ব্যাপারটাকে allow করে যাচ্ছিলেন, যাতে শিষ্যের সংস্কারে যেটুকু ভোগেচ্ছা রয়েছে_ তা কেটে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগব্রতী হয়ে সাধন-জগতে প্রবেশ করতে পারে ৷৷
মনুষ্য সমাজে নারী ও পুরুষের বিবাহ নিয়ে আলোচনা করার সময় গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ভারতীয় শাস্ত্রে আট প্রকারের বিবাহ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছে ৷ তার মধ্যে সাধারণত যে বিবাহটা আমরা ভারতীয় সমাজে দেখি সেটি ‘প্রজাপাত্য বিবাহ’। ভালোবাসা করে অর্থাৎ বাড়ির অমতে – সামাজিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিবাহ হল ‘গান্ধর্ব বিবাহ’। জোর করে বিবাহ হ’ল ‘রাক্ষস বিবাহ’ – এইরকম আট প্রকার বিবাহ রয়েছে ।
তবে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ – এইসব হলো সামাজিক প্রথা । কোনো কোনো সময়ে, কোনো কোনো সমাজে হঠাৎ করে নানা রকম crisis দেখা দেয় – তখনই গড়ে ওঠে নানা রকম সামাজিক প্রথা! সেগুলি(প্রথাগুলি) দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলে অর্থাৎ দীর্ঘকাল ধরে সেগুলি সমাজে চলতে থাকলে – ওইগুলি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কুসংস্কার বা কুপ্রথায় পরিণত হয় ।
যেমন ধরা যাক,– কোন সময়ে কোন সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীর সংখ্যা অধিক হয়ে গিয়েছিল, ফলে সেখানকার সমাজপতিরা বিধান দিয়েছিল – একটি পুরুষ একাধিক নারী বিবাহ করতে পারবে – এইভাবেই সেখানে balance আনা হয়েছিল ৷ আবার মহাভারতে দেখা যায় দ্রোপদীর পঞ্চস্বামী ! এখনও হিমালয়ের কোলে বিভিন্ন আদিবাসী গ্রাম রয়েছে যেখানে এই প্রথা রয়েছে ! হয়তো কোন পরিবারে চার ভাই রয়েছে – শুধুমাত্র বড়ভাই একটি মেয়েকে বিবাহ করলেই বাকি ভাইরা ওই নারীর স্বামী হিসাবে বিবেচিত হবে ! বাকি ভাইদের মধ্যে কেউ যদি বয়সে খুব ছোট(minor) থাকে – তাহলে সে যখন mature হবে – তখন থেকে সে ওই নারীর সাথে সহবাসে অনুমতি লাভ করবে !
এইভাবে বাল্যবিবাহও ভারতীয় সমাজে এসেছিল মুসলিমদের আগমনের পর থেকে । ঘরে ঘরে অবিবাহিত তরুণী-যুবতীদের ধরে নিয়ে গিয়ে সম্রাটদের হারেমে ভরে দেওয়া হতো, লুটেরারা বা মুসলমান সৈন্যরা নারীদেরকে লুট করে নিয়ে যেতো । ফলে মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য মেয়ের বাবারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েকে পাত্রস্থ করে দিতো । তাছাড়া সমাজে মেয়ের সংখ্যা কমে গেলেও এমনটা হতে পারে ! কারণ সে ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষের অভিভাবকেরা ভাবে – ছেলে বড় হবার পর যদি তার ছেলের জন্য পাত্রী না পাওয়া যায় – তাই ছোট বয়সেই কোন অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিতো ! এইভাবেই এই ধরনের বিভিন্ন সামাজিক প্রথাগুলি সমাজে সৃষ্টি হয়েছিল !যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথেই আবার তার অবলুপ্তিও ঘটে গেছে ৷ … [ক্রমশঃ]