‌‌গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছে বসে অনেক সময় ‘বাউলতত্ত্ব’ ও বাউল মতে সাধন সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছিলাম । তাছাড়া উনি “বাউলের মর্মকথা”- নামক বইটিতে বাউল সম্বন্ধে এবং তাদের সাধন-পদ্ধতি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনাও করেছিলেন । কিন্তু ‘নারী নিয়ে সাধন’- পদ্ধতি বলতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়েই উনি ‘ঠারেঠোরে’ কথা বলেছিলেন – একেবারে সরাসরি তেমন কিছু বলেন নি ! তবে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এবং বামদেব __এনারা সকলেই যে ‘নারী নিয়ে সাধন’ করেছিলেন – তার উল্লেখ উনি অনেকবারই করেছিলেন ! উনি বলেছিলেন_”এইসব মহাত্মাদের সাধনা ছিল – ওই সাধন-পদ্ধতিকে মর্যাদা দানের জন্য । ওনাদের আবার উর্ধ্বরেতা-নিম্নরেতা কি” !!
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের মুখে তাঁর শিষ্যদের কাছে নিঃসংকোচে তাঁর ঐ সাধনের পদ্ধতির প্রায় সবটাই বলে গেছিলেন ! যোগেশ্বরী ভৈরবী মা এই সাধন পদ্ধতির সমস্ত উপকরণ জোগাড় করে এনেছিলেন । এমনকি একজন পূর্ণযৌবনা রমণীকেও ! অমাবস্যার নিকষ কালো নিশিতে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় সেই উলঙ্গিনী নারীকে বিশেষ মুদ্রায় কোলে বসিয়ে জপ এবং ক্রিয়া-সাধন করতে হয়েছিল ঠাকুরকে ! বলাই বাহুল্য এক পরীক্ষাতেই – সব পরীক্ষায় পাস !
তারাপীঠ ভৈরব বামদেবকেও একবার বলতে শোনা গেছে – তাঁরা যেহেতু নারী নিয়ে সাধন করেছেন, তাই তাঁদেরকে প্রকৃত ব্রহ্মচারী বলা যায় না ! ইঙ্গিতটা – স্পষ্টতঃই বুদ্ধিমান পাঠকেরা বুঝতে পারছেন !
বাউল-বৈষ্ণবদের মধ্যে অনেককেই দেখা যায় বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত দু’তিনটে সঙ্গিনী রাখেন এবং ওই বাউল বা বৈষ্ণবটির শরীরের glaze বা glamour তাতেও অব্যাহত থাকে ! যোগী-সন্ন্যাসীদের মতোই তাদের মুখমন্ডলেও একটা কৌমার্য্য ভাব থাকে – এর রহস্যটা কি ? এটাই আমরা আগের কোন এক সংখ্যায় আলোচনা করতে করতে থেমে গিয়েছিলাম । আজ সেখান থেকেই শুরু করছি!
সাধারণ জীবের মৈথুন ক্রিয়ার প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র বংশরক্ষার জন্য ! “বাঁচো এবং বাড়ো” _এর অর্থ হল জীবন-সংগ্রামে fittest হবার জন্য জীবনভর লড়াই করে বেঁচে বর্তে থাকো এবং শরীরে উপযুক্ততা(যৌবন) এলেই তোমার প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য বংশবিস্তার করে যাও ! প্রকৃতিতে দেখা যায় – যে সমস্ত জীব-প্রজাতি যত দূর্বল তার বংশবিস্তারের প্রবণতা এবং ক্ষমতা তত বেশি ! গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন – “একটা বড় পচা কুমড়োয় যত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কীটাণুরা রয়েছে, তা সমগ্র পৃথিবীর লোকসংখ্যার চেয়েও বেশি হতে পারে” ।
উদ্ভিদজগতে বা প্রাণীজগতে প্রাকৃতিক ভাবেই এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – ঘাসজাতীয় উদ্ভিদের সংখ্যা বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ অপেক্ষা হাজার হাজার গুণ বেশি ! দুর্বল প্রাণী অর্থাৎ হরিণ, গরু (wild beast) ইত্যাদির সংখ্যা বাঘ-সিংহ অপেক্ষা অনেক গুণ বেশি – ইত্যাদি ! কিন্তু একমাত্র মানুষ এই naturality মানে না – সে তার বুদ্ধি খাটিয়ে, নানান যুক্তি (ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক) খাড়া করে অথবা অজ্ঞতাবশতঃ অকারণ জনন ক্রিয়া করে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে চলে ৷ কিন্তু মহাজ্ঞানীরা বলেছেন (যেমন স্বামী বাউলানন্দ) – এটাও প্রকৃতিরই খেলা, এমনটাই হবার ছিল – তাই ঘটেছে !
যাইহোক, আমরা ফিরে আসি বাউল-বৈষ্ণবের যুগল-সাধনা, কিশোরী ভজন, রস-রতিতত্ত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন নামে বর্ণিত সাধন পদ্ধতির আলোচনায় ! আমরা আগের কোন এক আলোচনায় উল্লেখ করেছিলাম যে, প্রাণায়াম-সিদ্ধ যোগী-সাধকেরা (বাউল-বৈষ্ণব পরম্পরার) এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় তলপেটের ‘আকুঞ্চন’ ক্রিয়ায় লিঙ্গনাল দিয়ে এককাপ বা মাঝারি ক্লাসের একগ্লাস জল বা দুধ চোঁ চোঁ করে টেনে নিতে পারেন । অর্থাৎ তাঁরা বিশেষ এই যৌগিক ক্রিয়ায় শরীরের অভ্যন্তরে (লিঙ্গনালে) এমন একটা vaccum তৈরি করতে পারেন যে ওই স্থানে বায়ুর একটা উর্দ্ধটান সৃষ্টি হয় (ঠিক যেমন একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় অজগর বা ময়াল সাপেরা প্রশ্বাসের সাহায্যে vaccum সৃষ্টি করে তাদের শিকারকে দূর থেকে আকর্ষণ করে মুখগহ্বরে ভরে ফেলে)_এই ক্রিয়ায় নিচের দিকে এইরকমই একটা টান সৃষ্টি হয় ! (পরের সংখ্যায় বাকিটা) …. [ক্রমশঃ]