গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলি মা জগদম্বা – কার কার কাছ থেকে নিয়ে সাজিয়েছিলেন – সেই কথাই এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো । এই অঙ্গগুলির বিশেষত্ব কি বা কেনো এগুলি তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন – গুরুমহারাজ সেই কথাও ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন । এখন সেইগুলিই আলোচনা করা হোক্ ! গুরুমহারাজ তাঁর শরীরে স্কন্ধের(কাঁধের) উপর থাকা অখন্ড ভারতবর্ষের ম্যাপ অনেককেই দেখিয়েছিলেন । গুরুমহারাজের খালি গা বা উন্মুক্ত শরীর খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য যাদের-ই হয়েছিল – তারা জানে যে, সেই শরীরের সৌন্দর্য কি অনুপম ! কিছুক্ষণ সেই শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকলেই মানুষের সমাধি পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে বলে আমার মনে হোত ! তবে ভগবানের লীলা-র অন্ত নাই – উনি ক্ষণে ক্ষণে রূপ লুকাতেও পারতেন বা প্রয়োজনে সামনের মানুষটির মনোজগতের পরিবর্তন করতেও পারতেন ! অর্থাৎ বলতে চাইছি তার দেখার দৃষ্টিভঙ্গির এমন পরিবর্তন করে দিতে পারতেন যে, সে হয়তো ভাবতো_ওনার শরীর আর এমন কি !
গুরুমহারাজের বাহু এবং স্কন্ধ বা কাঁধ ছিল ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত ! কেনো এমনটা মা জগদম্বা গুরুমহারাজের জন্য select করলেন – তার উত্তরটা গুরুমহারাজ নিজেই বলে গিয়েছিলেন ! উনি বলেছিলেন – রামচন্দ্র ক্ষত্রিয়কূলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷ ছোটবেলা থেকেই রামচন্দ্রকে অস্ত্রশিক্ষা করতে হয়েছিল এবং কিশোর বয়স থেকে যৌবনে পদার্পণের সময় থেকেই শক্তিশালী শত্রুদের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল । শস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শীদের হাতের কব্জি, বাহু এগুলি খুবই শক্তিশালী হোতে হয় ৷ এই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ গ্রীক বীর আলেকজান্ডারেরও উল্লেখ করেছিলেন ! উনি বলেছিলেন – আলেকজান্ডারেরও হাতের কব্জী এত শক্তিশালী ছিল যে, সে একটা বড় তলোয়ারের এক কোপে অশ্ব-সমেত অশ্বারোহীকে দ্বিখন্ডিত করে দিতে পারতো ! মারাঠা বীর শিবাজীরও উল্লেখ করেছিলেন গুরুমহারাজ – রণক্ষেত্রে অসম্ভব ক্ষিপ্র ছিলেন শিবাজী – ১০/১২ ফুট ‘স্পট জাম্প্’ করতে পারতেন । গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ভারতীয় পরম্পরায় শাস্ত্রবিদ্যার সাথে সাথে শস্ত্রবিদ্যাও শেখানো হোতো ৷ তবে অধিকারী ভেদে ! ভারতীয় যোগ-প্রাণায়াম সমৃদ্ধ শরীরচর্চার শিক্ষার ফলে ক্ষত্রিয়-যোদ্ধারা শরীরের পেশীতে পেশীতে বায়ু ভর্তি করতে পারতেন, ফলে শরীরের পেশীতে যে কোনো আঘাত-ই আসুক না কেনো – তারা তা সহ্য করে নিতে পারতেন । এমনকি মহাভারতের যুদ্ধের বর্ণনায় দেখা গেছে যে, ভীষ্ম বা দ্রোণ যখন যুদ্ধ করছেন, তখন তাদের শরীরে অস্ত্রের আঘাত লাগছে, শরীরে তীর ঢুকে রয়েছে – তবুও তাঁরা অক্লেশে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, সময় পেলে শরীর থেকে টেনে টেনে তীরগুলো তুলে বের করে নিচ্ছেন । গুরুমহারাজ বলেছিলেন যে, তাঁদের শরীরের পেশীর এমনই গঠন ছিল যে – কোন আঘাত-ই শরীরের কোষসমূহকে খুব বেশি নষ্ট করতে পারতো না, ফলে খুব বেশি রক্তপাতও হোতো না । পেশীগুলি প্রয়োজনে ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় হতে পারতো, আবার বায়ুপূর্ণ থলির মতোও হয়ে যেতে পারতো !
গুরুমহারাজ আরও বলতেন – তাঁর শরীরের পেশীগুলো দেখতে খুবই শিথিল কিন্তু প্রয়োজনে এগুলি ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় হয়ে যেতে পারে! আবার এমন তুলোর মতো নরম হয়ে যেতে পারে যে, যেকোন আঘাতকে accept করে নেবে কিন্তু কোন কোষ-কলার ক্ষতি হবে না ! যাইহোক, যে কথা হচ্ছিলো, গুরুমহারাজের বাহু বা কাঁধ ছিল ভগবান রামচন্দ্রের কাছ থেকে নেওয়া ! কথায় আছে ‘কাঁধে ভার চাপানো’! সমগ্র জীবজগতের মঙ্গলের ভার যাঁর কাঁধে – তাঁর কাঁধ কতটা মজবুত হওয়া দরকার সে তো বোঝাই যাচ্ছে !
গুরুমহারাজের গলায় কোন গাঁট ছিল না । যে কোন পুরুষশরীরের গলার মাঝখানে একটা উঁচু গাঁট বা adam’s apple থাকে ! নারীদের সেটা থাকে না । কিন্তু তবু নারীদের গলার নিচের দিকে অনেক সময় একটা গাঁটের মতো অংশ থাকে – কিন্তু দেবী-প্রকৃতির নারীর সেটাও থাকে না ৷ রামায়নে বর্ণিত সীতাদেবীর গলার বর্ণনায় দেখা যায় – সেটি ছিল সম্পূর্ণ গাঁটমুক্ত, সুডোল – যেমনটা ভাস্কররা দেবীমূর্তি বানানোর সময় নির্মাণ করে থাকে – ঠিক তেমনটা ! তাছাড়া সীতাদেবী খুবই সুকন্ঠী ছিলেন, তাঁর মধুর সম্ভাষণে সবাই মোহিত হোত ! কথায় রয়েছে “মধুরভাষিনী”– সীতাদেবীও তাই ছিলেন ৷ আমরা যারা গুরুমহারাজকে দেখেছি – তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করবে যে, গুরু মহারাজের কণ্ঠস্বর, তাঁর কথার জাদু, কথা বলার ভঙ্গিমা ছিল অসাধারণ ! গুরুমহারাজ নিখুঁত সুরে বিভিন্ন গান গাইতেন – একটুও তাল কাটতো না ৷ উনি নিজেই বলতেন – ” আমার তাল কাটলে যে জগতের তাল কেটে যাবে !” … [ক্রমশঃ]