গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । গুরুমহারাজের চরণ যুগল ছিল ” *কৃষ্ণচরণ* “, কিন্তু ওনার চলন ছিল ” *শিবচলন* “! আমি গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একদিন মন্দিরের বাঁধানো উঠোনে ভাবস্থ অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলেন এবং ওই মন্দিরেই ঠাকুরের বিরোধী পুরোহিতগোষ্ঠীর অন্যতম একজন কালীঘাটের হালদার, নিজের পা দিয়ে ঠাকুরের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল বাঁধানো শানে-র সঙ্গে রগড়ে রগড়ে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন – ” বল্ না ! কোন কৌশলে তুই রানীকে বা তার জামাইকে বশ করলি ?”
এই ঘটনাটা যখন গুরুমহারাজের শ্রীমুখ থেকে শুনেছিলাম – তখন বেদনায় আমাদের হৃদয় যেন একেবারে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছিলো ! মনে হচ্ছিলো – “হে ভগবান! যুগ যুগ ধরে তুমি আমাদের ভালো করতে এসে আর কত নির্যাতন, কত লাঞ্ছনা সহ্য করবে প্রভু!” কিন্তু এরপর যেটা হয়েছিলো, সেটা হলো – গুরুমহারাজের কাছে গেলেই বা তাঁর সামনে দাঁড়ালেই মনে হোতো_ ওনার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটায় কোন আঘাত দিয়ে ফেলবো না তো !
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণেও তো জ্বরা ব্যাধ আঘাত করেছিল – আর সে আঘাত ছিল চরম আঘাত, একেবারে শেষ এবং মোক্ষম প্রাণঘাতী আঘাত !
কৃষ্ণচরণ !– ব্যাপারটা ভাবতেই যেন কেমন শরীরে শিহরণ দেয় ! শ্রীকৃষ্ণচরণ নিয়ে এতো গান, এতো কাব্য এত কীর্তনীয়ার প্রার্থনা শুনেছি – “হে গোবিন্দ রাখো চরণে”-, তাতে ওই চরণযুগল লাভের একান্ত বাসনা আমাদের মধ্যে অনেকেরই হৃদয়ে একেবারে গাঁথা হয়ে গেছিলো ৷ তারপর যখন গুরুমহারাজকে পেলাম, তাঁর চরণযুগল দর্শন করার সুযোগ পেলাম – তখন ভাবতাম কি এমন বিশেষ কিছু রয়েছে এই চরণ দু’টিতে ! একবার উনি দাঁড়িয়েছিলেন, আমি দুবাহু দিয়ে পুরো চরণদুটো আঁকড়ে ধরে দুটো পায়ে মাথা ঠুকে ঠুকে প্রণাম করতে করতে ভাবছিলাম – ‘এই সেই চরণ – যার জন্য শত সহস্র মানুষের এত প্রার্থনা, এত অভিলাষ ! পরে অবশ্য বুঝেছিলাম – ব্যাপারটা স্থূলেই শুধু নয় – এই কথার সূক্ষ্ম এবং কারণ জগতের তাৎপর্যও রয়েছে ! সে যাইহোক –সেদিন নয়নজলে সেই শ্রীচরণ ধৌত করা হয়নি ঠিকই কিন্তু দু-চার ফোঁটা পড়েছিল বৈকি !
একান্ত নিজের কথা বলা হয়ে গেলো – এবার ফিরে যাই চরণ বর্ণনায় এবং চরণ বন্দনায় ! গুরুমহারাজ নিজেই একদিন বলেছিলেন – ” আমার চরণ তলে বজ্র-অঙ্কুশ সহ সব রকম চিহ্নই রয়েছে । তবে আমি দেখিয়ে না দিলে তোমরা তা দেখলেও বুঝতে পারবে না !” আমার ঐভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি, কিন্তু ন’কাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) বা তপিমা’র বাবা রমাপ্রসাদ মুখার্জির কাছে শুনেছিলাম যে একদিন কৃপাময় _কৃপা করে ওনাদেরকে ওই চিহ্নগুলি একটা একটা করে দেখিয়েছিলেন !
উনি অনেকসময়েই ইচ্ছা করে উপস্থিত সকল মানুষকে চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়তেন – কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই ওনার চরণযুগল ঢাকা থাকতো ! দাঁড়িয়ে থাকলে তা থাকতো জুতোর আবরণে ঢাকা আর বসে আলোচনা করার সময় এমন মুদ্রায় বসতেন যে, দুটি পা-ই এতটা ভেতরে থাকতো যে – ভক্তরা দু’একবার চেষ্টা করেও চরণ খুঁজে পেতো না ! অবশ্য relaxing mood -এ থাকলে চরণদুটি বের করেই বসতেন !
আর একটা কথা প্রথমেই যেটা বলেছিলাম – ওনার চলন ছিল ‘ *শিবচলন* ‘৷ ” *শিবচলন*” – নামটা দিয়েছিলেন ওনার গুরুদেব রামানন্দ অবধূত ৷ হিমালয় ঘোরার সময় অন্যান্য সাধুরাও একথা বলেছিল ৷ এইরকম নামকরণের রহস্যটা কি ? আসলে মহাদেব শিব যখন হিমালয়ের কৈলাস অঞ্চলে ঘোরাফেরা করতেন অর্থাৎ উনি যখন পাহাড়ে-পর্বতে হাঁটা-চলা করতেন _তখন এত দ্রুত তা সম্পন্ন করতেন যে, অন্যান্য যোগী-ঋষিরা আশ্চর্য্য হয়ে যেতো !
গুরু মহারাজের সাথে বনগ্রামের নগেন মন্ডল একবার গ্রাম থেকে আশ্রম পর্যন্ত হেঁটে আসছিল। রাস্তায় তখন খুবই কাদা ছিল । নগেনের পা কাদায় ডুবে যাচ্ছিলো কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে গুরু মহারাজ জুতো পায়ে দিয়ে কাদার উপর দিয়ে হেঁটে চলে এসেছিলেন কিন্তু জুতোয় কোনো কাদা লাগেনি।পরে নগিন নগিন ঘটনাটা গুরু মহারাজ কে বল আয় উনি বলেছিলেন আমার প্রাণায়াম সিদ্ধি রয়েছে_ তাই কাদা, কাঁটা,খোঁচা এগুলোর উপর দিয়ে আসতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না।
গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন সোজা রাস্তায় হাঁটতেন তখন কারো সাধ্য ছিল না_ ওনার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার ! সবাইকেই ওনার সঙ্গে যাবার জন্য ছুটতে হোতো – এমনই আশ্চর্য্য চলন ছিল স্বামী পরমানন্দের ! ওনার মুখেই শুনেছিলাম এই চলনই *শিবচলন*৷ … [ক্রমশঃ]
এই ঘটনাটা যখন গুরুমহারাজের শ্রীমুখ থেকে শুনেছিলাম – তখন বেদনায় আমাদের হৃদয় যেন একেবারে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছিলো ! মনে হচ্ছিলো – “হে ভগবান! যুগ যুগ ধরে তুমি আমাদের ভালো করতে এসে আর কত নির্যাতন, কত লাঞ্ছনা সহ্য করবে প্রভু!” কিন্তু এরপর যেটা হয়েছিলো, সেটা হলো – গুরুমহারাজের কাছে গেলেই বা তাঁর সামনে দাঁড়ালেই মনে হোতো_ ওনার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটায় কোন আঘাত দিয়ে ফেলবো না তো !
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণেও তো জ্বরা ব্যাধ আঘাত করেছিল – আর সে আঘাত ছিল চরম আঘাত, একেবারে শেষ এবং মোক্ষম প্রাণঘাতী আঘাত !
কৃষ্ণচরণ !– ব্যাপারটা ভাবতেই যেন কেমন শরীরে শিহরণ দেয় ! শ্রীকৃষ্ণচরণ নিয়ে এতো গান, এতো কাব্য এত কীর্তনীয়ার প্রার্থনা শুনেছি – “হে গোবিন্দ রাখো চরণে”-, তাতে ওই চরণযুগল লাভের একান্ত বাসনা আমাদের মধ্যে অনেকেরই হৃদয়ে একেবারে গাঁথা হয়ে গেছিলো ৷ তারপর যখন গুরুমহারাজকে পেলাম, তাঁর চরণযুগল দর্শন করার সুযোগ পেলাম – তখন ভাবতাম কি এমন বিশেষ কিছু রয়েছে এই চরণ দু’টিতে ! একবার উনি দাঁড়িয়েছিলেন, আমি দুবাহু দিয়ে পুরো চরণদুটো আঁকড়ে ধরে দুটো পায়ে মাথা ঠুকে ঠুকে প্রণাম করতে করতে ভাবছিলাম – ‘এই সেই চরণ – যার জন্য শত সহস্র মানুষের এত প্রার্থনা, এত অভিলাষ ! পরে অবশ্য বুঝেছিলাম – ব্যাপারটা স্থূলেই শুধু নয় – এই কথার সূক্ষ্ম এবং কারণ জগতের তাৎপর্যও রয়েছে ! সে যাইহোক –সেদিন নয়নজলে সেই শ্রীচরণ ধৌত করা হয়নি ঠিকই কিন্তু দু-চার ফোঁটা পড়েছিল বৈকি !
একান্ত নিজের কথা বলা হয়ে গেলো – এবার ফিরে যাই চরণ বর্ণনায় এবং চরণ বন্দনায় ! গুরুমহারাজ নিজেই একদিন বলেছিলেন – ” আমার চরণ তলে বজ্র-অঙ্কুশ সহ সব রকম চিহ্নই রয়েছে । তবে আমি দেখিয়ে না দিলে তোমরা তা দেখলেও বুঝতে পারবে না !” আমার ঐভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি, কিন্তু ন’কাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) বা তপিমা’র বাবা রমাপ্রসাদ মুখার্জির কাছে শুনেছিলাম যে একদিন কৃপাময় _কৃপা করে ওনাদেরকে ওই চিহ্নগুলি একটা একটা করে দেখিয়েছিলেন !
উনি অনেকসময়েই ইচ্ছা করে উপস্থিত সকল মানুষকে চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়তেন – কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই ওনার চরণযুগল ঢাকা থাকতো ! দাঁড়িয়ে থাকলে তা থাকতো জুতোর আবরণে ঢাকা আর বসে আলোচনা করার সময় এমন মুদ্রায় বসতেন যে, দুটি পা-ই এতটা ভেতরে থাকতো যে – ভক্তরা দু’একবার চেষ্টা করেও চরণ খুঁজে পেতো না ! অবশ্য relaxing mood -এ থাকলে চরণদুটি বের করেই বসতেন !
আর একটা কথা প্রথমেই যেটা বলেছিলাম – ওনার চলন ছিল ‘ *শিবচলন* ‘৷ ” *শিবচলন*” – নামটা দিয়েছিলেন ওনার গুরুদেব রামানন্দ অবধূত ৷ হিমালয় ঘোরার সময় অন্যান্য সাধুরাও একথা বলেছিল ৷ এইরকম নামকরণের রহস্যটা কি ? আসলে মহাদেব শিব যখন হিমালয়ের কৈলাস অঞ্চলে ঘোরাফেরা করতেন অর্থাৎ উনি যখন পাহাড়ে-পর্বতে হাঁটা-চলা করতেন _তখন এত দ্রুত তা সম্পন্ন করতেন যে, অন্যান্য যোগী-ঋষিরা আশ্চর্য্য হয়ে যেতো !
গুরু মহারাজের সাথে বনগ্রামের নগেন মন্ডল একবার গ্রাম থেকে আশ্রম পর্যন্ত হেঁটে আসছিল। রাস্তায় তখন খুবই কাদা ছিল । নগেনের পা কাদায় ডুবে যাচ্ছিলো কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে গুরু মহারাজ জুতো পায়ে দিয়ে কাদার উপর দিয়ে হেঁটে চলে এসেছিলেন কিন্তু জুতোয় কোনো কাদা লাগেনি।পরে নগিন নগিন ঘটনাটা গুরু মহারাজ কে বল আয় উনি বলেছিলেন আমার প্রাণায়াম সিদ্ধি রয়েছে_ তাই কাদা, কাঁটা,খোঁচা এগুলোর উপর দিয়ে আসতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না।
গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন সোজা রাস্তায় হাঁটতেন তখন কারো সাধ্য ছিল না_ ওনার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার ! সবাইকেই ওনার সঙ্গে যাবার জন্য ছুটতে হোতো – এমনই আশ্চর্য্য চলন ছিল স্বামী পরমানন্দের ! ওনার মুখেই শুনেছিলাম এই চলনই *শিবচলন*৷ … [ক্রমশঃ]