গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ নিজের মুখে তাঁর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্বন্ধে যেসব কথা বলেছিলেন, সেগুলিই এখানে আলোচনা করা হচ্ছিল । গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন – তাঁর ঊরুদেশ পরশুরামের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত বা বলা যায় যে, মা জগদম্বা তাঁর এই প্রিয় পুত্রটির ঊরুদেশ বা জঙ্ঘাদেশ পরশুরামের উরুসদৃশ করে গড়ে তাঁকে পাঠিয়েছিলেন ৷ কেনো এই বিশেষ অঙ্গটি পরশুরামের কাছ থেকে নেওয়া হোলো ? এর কারণ হোতে পারে – একসময় জামদগ্নিপুত্র পরশুরাম এই পৃথিবীতে শরীর নিয়েছিলেন এবং উনি ব্রাহ্মণসমাজকে ক্ষত্রিয়দের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে একুশবার ক্ষত্রিয় দমনের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ।
পরশুরামের নাম হয়তো শুধুই ‘রাম’ ছিল, কিন্তু ওনার হাতে সবসময় ‘পরশু’ অর্থাৎ কুঠারের ন্যায় একটা অস্ত্র থাকতো –তাই এই নাম, এবং উনি তৎকালীন ভারতবর্ষে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে এই পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করার চেষ্টা করতেন । এই যে বছরের পর বছর হেঁটে বেড়ানো, এর জন্য প্রয়োজন হয় শক্তিশালী উরু বা জঙ্ঘার –যেটি ছিল পরশুরামের । গুরুমহারাজকেও মা জগদম্বার নির্দেশে খুব ছোটবেলা থেকেই প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এবং তার বেশিরভাগটাই পায়ে হেঁটে ! গুরুমহারাজ হিমালয়ের সমগ্র অঞ্চল (তা সে যতই দুর্গম হোক না কেনো) পায়ে হেঁটে হেঁটে অতিক্রম করেছেন । গুরুমহারাজ নিজের মুখে বলেছিলেন – “হিমালয়ের এমন কোন চূড়া নাই যেখানে আমার পা পড়েনি !” এমনকি গুরুমহারাজ দুজন নাঙ্গা সাধুর সাথে পায়ে হেঁটে আফগানিস্তান, ইরান-ইরাক হয়ে তুরস্কের ম্যাসিডন (যেটি আগে গ্রীসের অন্তর্গত ছিল) পর্যন্ত গিয়েছিলেন ! পূর্বে ব্রহ্মদেশেও গিয়েছিলেন ! অর্থাৎ এককথায় বলতে পারা যায় – গুরুমহারাজ প্রাচীন অখন্ড ভারতবর্ষের সমগ্র অংশটি-ই পায়ে হেঁটে বা অন্যভাবে ঘুরেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, প্রাচীন অখন্ড ভারতবর্ষের যে যে অংশে আমি পা দিয়েছি, সেগুলি আবার ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হবে ৷ প্রকৃতপক্ষে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ভারতের প্রতিবেশী বেশিরভাগ রাষ্ট্র-ই ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটা Federal বৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত হবে ।
তবে এই যে এসব হবে – এগুলি হবার আগে পৃথিবীতে নানারকম বিপর্যয় নেমে আসবে । গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” death, disease and destruction !” এই পৃথিবীতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে যুদ্ধ এবং এমনকি বৃহৎ আকারের যুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধও হতে পারে খুব শীঘ্রই ! যার অবশ্যাম্ভাবী পরিণতি লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু (death) ! গুরুমহারাজের কথামতো এরপরের যে বিপর্যয় পৃথিবীর মানুষের সামনে বিভীষিকার ন্যায় আসবে তা হলো – disease বা রোগ-ব্যাধি ! ক্যান্সার, এইডস-এর মতো মারাত্মক রোগে যেমন পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে, তেমনি আরো বেশি মানুষ মারা যাবে অজানা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ! ইতিমধ্যেই ইবোলা, সার্স, মার্স করোনাভাইরাস, কেভিড-১৯ -এর মতো মারণ ভাইরাসেরা মানুষ মারার কাজ শুরু করে দিয়েছে – এরপরে এর থেকেও আরও মারাত্মক ভাইরাস আসতে পারে – যাতে আরও বেশি বেশি মানুষ মারা যেতে পারে ।
সর্বোপরি পৃথিবীর মানুষের জনসংখ্যা কমাতে আসতে চলেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ! অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, বিভিন্ন ধরনের সাইক্লোন ও সুনামির জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প – ইত্যাদি নানান পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং এছাড়াও মহাজগতিক বিপদ যেমন – উল্কাপাত, কোন বড় ধুমকেতু বা অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তুর পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসার ফলেও ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হয়ে যেতে পারে ! এইসব বিভিন্ন বিপর্যয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা, বর্তমান জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যেতে পারে ।৷ … [ক্রমশঃ]