গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের প্রথম সন্ন্যাসী শিষ্য স্বামী শংকরানন্দের সম্বন্ধে কিছু কথা বলা হচ্ছিল । এখন (সেপ্টেম্বর,২০২০) স্বামীজীর স্থূল শরীরের বয়স প্রায় ৮৭ বছর হবে । এমনিতে উনি বেশ অসুস্থ, বয়সজনিত কারনে এমনটা তো হোতেই পারে – কিন্তু উনি যখন কথা বলেন তখন বসা অবস্থায় ওনার শরীর সোজা এবং দৃঢ় হয়ে যায় ! আমরা অতি সম্প্রতি যেদিন ওনার কাছে গিয়েছিলাম – তার আগে দু’একদিন উনি বেশিরভাগ সময়ে শুয়ে-ই থাকতেন এবং বিশেষ কারো সাথে কথাও বলতেন না ! কিন্তু আমরা যাওয়ার পর দেখলাম উনি চেয়ারে বসে আছেন এবং এরপর আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন !
উনি প্রায় দেড় ঘণ্টা টানা কথা বলেছিলেন সেদিন ! কত কথা ! কিন্তু সব কথাই গুরুমহারাজ সংক্রান্ত ! যে মানুষটা আগে কথায় কথায় স্বামী বিবেকানন্দ নিয়ে কথা বলতেন – স্বামীজীর লেখা থেকে বাংলায় এবং ইংরেজিতে কোটেশন তুলে ধরতেন – সেই মানুষটাই শুধু পরমানন্দের কথাই বলেছিলেন – তাঁর স্মৃতিচারণা করছিলেন এবং কথা বলতে বলতে বারবার তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল, তাঁর দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জলের ধারা !!
কী ভাল যে লাগছিল – কি অদ্ভুত ভাবগম্ভীর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল – তা বলে বোঝাতে পারবো না ! আমার প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল যে, এই প্রাজ্ঞ-প্রবীণ সন্ন্যাসীর পায়ে একটু মাথা ছোঁয়াই, এনাকে একবার অন্তত: একটু স্পর্শ করি ! উনি বলে যাচ্ছিলেন __ওনার সাথে গুরুমহারাজের প্রথম দর্শনের কথা , ওনার প্রতি গুরুমহারাজের অপার্থিব ভালোবাসার কথা, ওনার প্রতি এবং সকলের প্রতি গুরুমহারাজের বিগলিত করুণার কথা – যা ওনার জীবনের “পরোতে পরোতে” ঝরে পড়েছিল !
বনগ্রামে থাকাকালীন একবার ওনার শরীর অসুস্থ হয়েছিল – গুরুমহারাজ নিজে ওনাকে সেবা-শুশ্রূষা করেছিলেন । উনি যেহেতু একটু বেশি বেশি পরিমাণে খেতে ভালবাসতেন – তাই গুরুমহারাজ ওনার ঘর থেকে ভক্তদের দেওয়া ফল-মিষ্টি শংকরানন্দ মহারাজের জন্য আলাদা করে একটু বেশি পরিমাণে পাঠিয়ে দিতেন ৷ গুরুমহারাজের সিটিং-এ উনি বড় একটা যেতে চাইতেন না, কারণ উনি গেলেই গুরুমহারাজ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন –হয় ওনার জন্য গুরুজী একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করতে বলতেন অথবা গুরুজীর কাছাকাছি জায়গায় আর একটা আসন করে দিতে বলতেন ! গুরুমহারাজ হয়তো এই প্রবীণ সন্ন্যাসীর (যদিও শংকরানন্দ গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দেরই দীক্ষিত শিষ্য) মর্যাদা দিতেন, কিন্তু এই ব্যাপারটা মহারাজকে একটু embarass কোরতো – তাই উনি গুরুমহারাজের সিটিং -এর কথা শুনতে চাইতেন একটু পাশ থেকে, একটু দূর থেকে !
স্বামী শংকরানন্দ গুরুমহারাজকে “স্বামী বা স্বামীন্” বলে সম্বোধন করতেন ! ওনার উচ্চারণটা ছিল “স্বোয়ামী!”- এই রকমটা !
অনেক আগে যখন “পুরোনো বনগ্রামের কথা”-য় স্বামী শংকরানন্দ নিয়ে লেখা হয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল যে, শংকরানন্দ স্বামী পরমানন্দ-কথা লেখক, ‘শ্রুতি’ গ্রন্থাবলীর রচয়িতা রমেন চক্রবর্তীর নিকটাত্মীয় (ওনার স্ত্রীর দাদা)! শংকরানন্দের হাত ধরেই রমেনবাবুদের গুরুমহারাজের কাছে আসা ! সেইসময় রমেনবাবু বিহারের রাঁচিতে চাকরি করতেন, ওখানে বহুবার গুরুমহারাজ গেছেন এবং অনেক সময়েই ওখানে স্বামী শংকরানন্দ উপস্থিত থাকতেন । সেদিন রায়নায় বর্ণা মায়ের “মাতৃ আশ্রমে” বসে বসে মহারাজ __স্মৃতিচারণ করছিলেন, আবেগতাড়িত কন্ঠে বলছিলেন __সেই নির্জন পাহাড়ি পরিবেশে গুরুমহারাজের সাথে ওনার একান্তে কাটানো দিনগুলির কথা এবং সেই সময়কার গুরুমহারাজের বিভিন্ন আলোচনা ! তাঁর প্রতি গুরুমহারাজের বিভিন্ন নির্দেশের কথা স্মরণ করে মহারাজের চোখের বাঁধভাঙ্গা জল যেন কোনো বাধা মানছিল না !
একজন প্রবীণ সন্ন্যাসীর, তার চাইতে স্থূল বিচারে বয়সে কুড়ি বছরের ছোটো গুরুদেবের (স্বামী পরমানন্দ) প্রতি এই অসাধারণ ভক্তি-ভালোবাসা-শ্রদ্ধা দেখে আমরা আপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদেরও চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছিলো – আমরাও নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারছিলাম না ! গুরুমহারাজ, ন’কাকা স্থূলশরীর ছেড়ে চলে যাবার পর, অনেকদিন পরে এই প্রবীণ সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য সেদিন আমাদের মন-প্রাণকে খুবই অভিভূত করে রেখেছিল ! (ক্রমশঃ)
উনি প্রায় দেড় ঘণ্টা টানা কথা বলেছিলেন সেদিন ! কত কথা ! কিন্তু সব কথাই গুরুমহারাজ সংক্রান্ত ! যে মানুষটা আগে কথায় কথায় স্বামী বিবেকানন্দ নিয়ে কথা বলতেন – স্বামীজীর লেখা থেকে বাংলায় এবং ইংরেজিতে কোটেশন তুলে ধরতেন – সেই মানুষটাই শুধু পরমানন্দের কথাই বলেছিলেন – তাঁর স্মৃতিচারণা করছিলেন এবং কথা বলতে বলতে বারবার তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল, তাঁর দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জলের ধারা !!
কী ভাল যে লাগছিল – কি অদ্ভুত ভাবগম্ভীর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল – তা বলে বোঝাতে পারবো না ! আমার প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল যে, এই প্রাজ্ঞ-প্রবীণ সন্ন্যাসীর পায়ে একটু মাথা ছোঁয়াই, এনাকে একবার অন্তত: একটু স্পর্শ করি ! উনি বলে যাচ্ছিলেন __ওনার সাথে গুরুমহারাজের প্রথম দর্শনের কথা , ওনার প্রতি গুরুমহারাজের অপার্থিব ভালোবাসার কথা, ওনার প্রতি এবং সকলের প্রতি গুরুমহারাজের বিগলিত করুণার কথা – যা ওনার জীবনের “পরোতে পরোতে” ঝরে পড়েছিল !
বনগ্রামে থাকাকালীন একবার ওনার শরীর অসুস্থ হয়েছিল – গুরুমহারাজ নিজে ওনাকে সেবা-শুশ্রূষা করেছিলেন । উনি যেহেতু একটু বেশি বেশি পরিমাণে খেতে ভালবাসতেন – তাই গুরুমহারাজ ওনার ঘর থেকে ভক্তদের দেওয়া ফল-মিষ্টি শংকরানন্দ মহারাজের জন্য আলাদা করে একটু বেশি পরিমাণে পাঠিয়ে দিতেন ৷ গুরুমহারাজের সিটিং-এ উনি বড় একটা যেতে চাইতেন না, কারণ উনি গেলেই গুরুমহারাজ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন –হয় ওনার জন্য গুরুজী একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করতে বলতেন অথবা গুরুজীর কাছাকাছি জায়গায় আর একটা আসন করে দিতে বলতেন ! গুরুমহারাজ হয়তো এই প্রবীণ সন্ন্যাসীর (যদিও শংকরানন্দ গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দেরই দীক্ষিত শিষ্য) মর্যাদা দিতেন, কিন্তু এই ব্যাপারটা মহারাজকে একটু embarass কোরতো – তাই উনি গুরুমহারাজের সিটিং -এর কথা শুনতে চাইতেন একটু পাশ থেকে, একটু দূর থেকে !
স্বামী শংকরানন্দ গুরুমহারাজকে “স্বামী বা স্বামীন্” বলে সম্বোধন করতেন ! ওনার উচ্চারণটা ছিল “স্বোয়ামী!”- এই রকমটা !
অনেক আগে যখন “পুরোনো বনগ্রামের কথা”-য় স্বামী শংকরানন্দ নিয়ে লেখা হয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল যে, শংকরানন্দ স্বামী পরমানন্দ-কথা লেখক, ‘শ্রুতি’ গ্রন্থাবলীর রচয়িতা রমেন চক্রবর্তীর নিকটাত্মীয় (ওনার স্ত্রীর দাদা)! শংকরানন্দের হাত ধরেই রমেনবাবুদের গুরুমহারাজের কাছে আসা ! সেইসময় রমেনবাবু বিহারের রাঁচিতে চাকরি করতেন, ওখানে বহুবার গুরুমহারাজ গেছেন এবং অনেক সময়েই ওখানে স্বামী শংকরানন্দ উপস্থিত থাকতেন । সেদিন রায়নায় বর্ণা মায়ের “মাতৃ আশ্রমে” বসে বসে মহারাজ __স্মৃতিচারণ করছিলেন, আবেগতাড়িত কন্ঠে বলছিলেন __সেই নির্জন পাহাড়ি পরিবেশে গুরুমহারাজের সাথে ওনার একান্তে কাটানো দিনগুলির কথা এবং সেই সময়কার গুরুমহারাজের বিভিন্ন আলোচনা ! তাঁর প্রতি গুরুমহারাজের বিভিন্ন নির্দেশের কথা স্মরণ করে মহারাজের চোখের বাঁধভাঙ্গা জল যেন কোনো বাধা মানছিল না !
একজন প্রবীণ সন্ন্যাসীর, তার চাইতে স্থূল বিচারে বয়সে কুড়ি বছরের ছোটো গুরুদেবের (স্বামী পরমানন্দ) প্রতি এই অসাধারণ ভক্তি-ভালোবাসা-শ্রদ্ধা দেখে আমরা আপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদেরও চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছিলো – আমরাও নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারছিলাম না ! গুরুমহারাজ, ন’কাকা স্থূলশরীর ছেড়ে চলে যাবার পর, অনেকদিন পরে এই প্রবীণ সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য সেদিন আমাদের মন-প্রাণকে খুবই অভিভূত করে রেখেছিল ! (ক্রমশঃ)