গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ পৌরাণিক বিভিন্ন গল্প-কাহিনীগুলির মধ্যে যে সমস্ত সামাজিক, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বসমূহ রয়েছে – সেইগুলি অনেক সময় আলোচনা করতেন ৷ সেইসব আলোচনাগুলিকে এক জায়গা করে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে ! আগের দিন আমরা তারকা রাক্ষসী, ঘটোৎকচ ইত্যাদির কথা শুনেছিলাম । গুরুমহারাজ বলেছিলেন ওদেরকে নিধন করার (ধ্বংস করতে) জন্যও উন্নত technology অবলম্বন করতে হয়েছিল । ঘটোৎকচকে কেউ-ই মারতে পারছিলো না, কৌরব রাজাদের অস্ত্রাগারে তো অস্ত্রের সংখ্যা এবং বৈচিত্র কিছু ছিল না ! সেইসব প্রয়োগ করেও কোন কাজ হচ্ছিল না ! মহাবীর কর্ণের কাছে ছিল এক বিশেষ অস্ত্র – যা একবার-ই প্রয়োগ করা যায় – একবার প্রয়োগ হয়ে গেলে আর কোনভাবেই সেই ধরনের অস্ত্রকে নতুন করে বানানো সম্ভব নয় ! ওই অস্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছিল – “একাঘ্নী অস্ত্র”! নামকরণ দেখেও অস্ত্রের কার্যকারিতা বোঝা যায় ৷
যাইহোক গুরুমহারাজ বলেছিলেন – তখনকার দিনের এক একটি অস্ত্র, এক একটি উন্নত technology-র প্রয়োগ কৌশল ৷ যেমন অগ্নিবাণ, নাগবাণ, বরুণবাণ গরুড়বাণ – ইত্যাদি নামগুলো থেকে বোঝাই যায় যে, এই অস্ত্র-গুলির সৃষ্টির পিছনে বড় বড় বিজ্ঞানীদের কত প্রযুক্তি কৌশল কাজে লাগাতে হোত । সবচাইতে মারাত্মক অস্ত্র বলতে বোঝানো হতো -“ব্রহ্মাস্ত্র”! এটি বর্তমান বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত যুদ্ধাস্ত্র ‘পরমাণু বোমা’ ছাড়া অন্য কিছু নয় । কিন্তু পুরাণাদিতে এমন উল্লেখ রয়েছে যে, ব্রহ্মাস্ত্রের চাইতেও মারাত্মক অস্ত্র ছিল “পাশুপাত অস্ত্র”– যা ব্রহ্মাস্ত্রকেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারতো এবং আরো বেশি ধ্বংস সাধন করতে পারতো ! কিন্তু শাস্ত্রে এমনও উল্লেখ রয়েছে যে, “ব্রহ্মাস্ত্র”, “পাশুপাত অস্ত্র” এগুলি যেকোনো যোদ্ধা ব্যবহার করতে পারতো না । এই বিদ্যা উপযুক্ত পাত্র ছাড়া কাউকে শেখানোই হতো না ! এমন উল্লেখ রয়েছে যে, এইসব বিদ্যা হয় ঋষিদের কাছ থেকে অথবা দেবতাদের কাছ থেকে বা দেবাদিদেব মহাদেবের কাছ থেকে লাভ করতে হতো !
এখনও পরমাণু অস্ত্র বা এই ধরণের ধ্বংসাত্মক অস্ত্র কখনোই সাধারণ যোদ্ধাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় না ৷ এই ধরনের মারাত্মক অস্ত্রগুলিকে দেশের দায়িত্বশীল, চিন্তাশীল ব্যক্তিদের দ্বারা oparate করার ব্যাবস্থা করা হয় । অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, মাথা-গরম (যারা অল্পতেই রেগে যায়) ব্যক্তির হাতে যেকোনো অস্ত্রই পড়ুক না কেন – সে স্থান-কাল-পাত্র বিচার না করেই প্রয়োগ করে ফেলতে পারে এবং সমাজের চরম অনিষ্ট করে ফেলতে পারে ! তাই শাস্ত্রে চরমভাবে নিষেধ করা আছে যে, অধিকারী (উপযুক্ত ব্যক্তি) না হলে তাদেরকে উন্নত শস্ত্রবিদ্যা শেখানো হতো না ! ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘পাশুপাত অস্ত্র’ – এগুলি দেওয়া হয়েছিল রামচন্দ্রকে, রাবণ তপস্যার দ্বারা লাভ করলেও (তপস্যা করাকালীন যেকোনো সাধকের মধ্যে শুদ্ধসত্ত্ব ভাব বজায় থাকে)– পরে তা হরণ (হনুমানের দ্বারা) করে নেওয়া হয়েছিল ! মহাভারতে পাওয়া যায় এইসব অস্ত্রের কিছু কিছু তপস্যার দ্বারা লাভ করেছিলেন অর্জুন ! অন্য কাউকে কিন্তু দেওয়া হয়নি ! আর একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, এসব অস্ত্রবিদ্যার শিক্ষকরা ছিলেন ঋষি বা দেবশ্রেষ্ঠরা ! সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রাচীন ভারতবর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার সম্বন্ধেও কতটা সচেতনতা অবলম্বন করা হতো ! অকারণে কোন কিছু ধ্বংস করা ঈশ্বরের সৃষ্টির উদ্দেশ্য নয়, সবকিছুকে বজায় রেখে অভিব্যক্তির মাধ্যমে সবকিছুকে উন্নততর করে গড়ে তোলাই প্রকৃতির ক্রম !
এইবার আমরা এই প্রসঙ্গেই মহাকাব্য বা পৌরাণিক কাহিনীগুলিতে আরো কত উন্নত বিজ্ঞানের প্রয়োগের উল্লেখ রয়েছে তার দু-চারটি এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন আচার্য্য দ্রোণের জন্মের কথা ! ‘দ্রোণ’ কথাটির অর্থ একটা বাঁকা পাত্র – সেখানে দ্রোণের জন্ম হয়েছিল ৷ গান্ধারীর ছিল শত পুত্র ও এক কন্যা, তারা সবাই জন্মেছিল একটি ঘৃতকুম্ভ অলাবু-র (লাউ-এর মতাে পাত্র) মধ্যে । এগুলি সবই হলো বর্তমানের test-tube baby -র নানারকম experiment ! কিন্তু গুরুমহারাজ এটাও বলেছিলেন – এইসব experiment গুলি innatural ! প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ যত বেশি করা যাবে – ততই প্রকৃতি তার শোধ নেবে এবং যার ফল সেই উন্নতির ধ্বংস ! যুগে যুগে এই পৃথিবী এইরকম নানান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি দেখেছে – কিন্তু সেগুলি যতদিন মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয়েছে ততদিন mother-nature মানুষকে সাহায্য করেছে – কিন্তু যেইমাত্র তা মানববিরোধী হয়েছে, পৃথিবীর জীববৈচিত্রের পরিপন্থী হয়েছে – সাথে সাথেই মহাপ্রকৃতি ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে সেইসব বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে বিনাশ করে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে । অতিসম্প্রতি সমগ্র বিশ্বের অবস্থা এইরকমই একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে ! যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে এবং তা হোলেই প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় সমগ্র বিশ্বের সর্বোন্নত দেশগুলির সব বিদ্যাবুদ্ধি-জারিজুরির অবসান হয়ে যাবে ! শহর বলতে পৃথিবীতে আর কিছুই থাকবে না – পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা পড়বে । আবার গ্রাম থেকে, মাটি থেকে শুরু হবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মানুষের পথচলা !
গুরুমহারাজ এই কথাগুলি যখন বলতেন তখন খুব যে দুঃখিত হতেন তা নয় – কারণ তিনি তো পূর্ণ । তিনি তো আগের আগের সভ্যতা এবং তাদের ধ্বংসেরও সাক্ষী ! আবার এখন যে আর একটা ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বর্তমানের মানবসমাজ – তাও তিনি পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত । সেজন্যেই তিনি সিটিং-য়ে উপস্থিতজনদের উদ্দেশ্য করে বারবার বলতেন – ” তোমরা বাইরের এইসব দেখে বিচলিত হয়ো না – তোমরা অন্তর্জগতে বিকশিত হয়ে ওঠো ! জগৎ-এ যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তা একদিন না একদিন ধ্বংস হবেই ! পূর্ণতালাভ-ই মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য – তোমরা সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হও ! সৎ হও, সহজ হও, পূর্ণ হও !” (ক্রমশঃ)
যাইহোক গুরুমহারাজ বলেছিলেন – তখনকার দিনের এক একটি অস্ত্র, এক একটি উন্নত technology-র প্রয়োগ কৌশল ৷ যেমন অগ্নিবাণ, নাগবাণ, বরুণবাণ গরুড়বাণ – ইত্যাদি নামগুলো থেকে বোঝাই যায় যে, এই অস্ত্র-গুলির সৃষ্টির পিছনে বড় বড় বিজ্ঞানীদের কত প্রযুক্তি কৌশল কাজে লাগাতে হোত । সবচাইতে মারাত্মক অস্ত্র বলতে বোঝানো হতো -“ব্রহ্মাস্ত্র”! এটি বর্তমান বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত যুদ্ধাস্ত্র ‘পরমাণু বোমা’ ছাড়া অন্য কিছু নয় । কিন্তু পুরাণাদিতে এমন উল্লেখ রয়েছে যে, ব্রহ্মাস্ত্রের চাইতেও মারাত্মক অস্ত্র ছিল “পাশুপাত অস্ত্র”– যা ব্রহ্মাস্ত্রকেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারতো এবং আরো বেশি ধ্বংস সাধন করতে পারতো ! কিন্তু শাস্ত্রে এমনও উল্লেখ রয়েছে যে, “ব্রহ্মাস্ত্র”, “পাশুপাত অস্ত্র” এগুলি যেকোনো যোদ্ধা ব্যবহার করতে পারতো না । এই বিদ্যা উপযুক্ত পাত্র ছাড়া কাউকে শেখানোই হতো না ! এমন উল্লেখ রয়েছে যে, এইসব বিদ্যা হয় ঋষিদের কাছ থেকে অথবা দেবতাদের কাছ থেকে বা দেবাদিদেব মহাদেবের কাছ থেকে লাভ করতে হতো !
এখনও পরমাণু অস্ত্র বা এই ধরণের ধ্বংসাত্মক অস্ত্র কখনোই সাধারণ যোদ্ধাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় না ৷ এই ধরনের মারাত্মক অস্ত্রগুলিকে দেশের দায়িত্বশীল, চিন্তাশীল ব্যক্তিদের দ্বারা oparate করার ব্যাবস্থা করা হয় । অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, মাথা-গরম (যারা অল্পতেই রেগে যায়) ব্যক্তির হাতে যেকোনো অস্ত্রই পড়ুক না কেন – সে স্থান-কাল-পাত্র বিচার না করেই প্রয়োগ করে ফেলতে পারে এবং সমাজের চরম অনিষ্ট করে ফেলতে পারে ! তাই শাস্ত্রে চরমভাবে নিষেধ করা আছে যে, অধিকারী (উপযুক্ত ব্যক্তি) না হলে তাদেরকে উন্নত শস্ত্রবিদ্যা শেখানো হতো না ! ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘পাশুপাত অস্ত্র’ – এগুলি দেওয়া হয়েছিল রামচন্দ্রকে, রাবণ তপস্যার দ্বারা লাভ করলেও (তপস্যা করাকালীন যেকোনো সাধকের মধ্যে শুদ্ধসত্ত্ব ভাব বজায় থাকে)– পরে তা হরণ (হনুমানের দ্বারা) করে নেওয়া হয়েছিল ! মহাভারতে পাওয়া যায় এইসব অস্ত্রের কিছু কিছু তপস্যার দ্বারা লাভ করেছিলেন অর্জুন ! অন্য কাউকে কিন্তু দেওয়া হয়নি ! আর একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, এসব অস্ত্রবিদ্যার শিক্ষকরা ছিলেন ঋষি বা দেবশ্রেষ্ঠরা ! সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রাচীন ভারতবর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার সম্বন্ধেও কতটা সচেতনতা অবলম্বন করা হতো ! অকারণে কোন কিছু ধ্বংস করা ঈশ্বরের সৃষ্টির উদ্দেশ্য নয়, সবকিছুকে বজায় রেখে অভিব্যক্তির মাধ্যমে সবকিছুকে উন্নততর করে গড়ে তোলাই প্রকৃতির ক্রম !
এইবার আমরা এই প্রসঙ্গেই মহাকাব্য বা পৌরাণিক কাহিনীগুলিতে আরো কত উন্নত বিজ্ঞানের প্রয়োগের উল্লেখ রয়েছে তার দু-চারটি এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন আচার্য্য দ্রোণের জন্মের কথা ! ‘দ্রোণ’ কথাটির অর্থ একটা বাঁকা পাত্র – সেখানে দ্রোণের জন্ম হয়েছিল ৷ গান্ধারীর ছিল শত পুত্র ও এক কন্যা, তারা সবাই জন্মেছিল একটি ঘৃতকুম্ভ অলাবু-র (লাউ-এর মতাে পাত্র) মধ্যে । এগুলি সবই হলো বর্তমানের test-tube baby -র নানারকম experiment ! কিন্তু গুরুমহারাজ এটাও বলেছিলেন – এইসব experiment গুলি innatural ! প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ যত বেশি করা যাবে – ততই প্রকৃতি তার শোধ নেবে এবং যার ফল সেই উন্নতির ধ্বংস ! যুগে যুগে এই পৃথিবী এইরকম নানান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি দেখেছে – কিন্তু সেগুলি যতদিন মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয়েছে ততদিন mother-nature মানুষকে সাহায্য করেছে – কিন্তু যেইমাত্র তা মানববিরোধী হয়েছে, পৃথিবীর জীববৈচিত্রের পরিপন্থী হয়েছে – সাথে সাথেই মহাপ্রকৃতি ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে সেইসব বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে বিনাশ করে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে । অতিসম্প্রতি সমগ্র বিশ্বের অবস্থা এইরকমই একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে ! যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে এবং তা হোলেই প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় সমগ্র বিশ্বের সর্বোন্নত দেশগুলির সব বিদ্যাবুদ্ধি-জারিজুরির অবসান হয়ে যাবে ! শহর বলতে পৃথিবীতে আর কিছুই থাকবে না – পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা পড়বে । আবার গ্রাম থেকে, মাটি থেকে শুরু হবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মানুষের পথচলা !
গুরুমহারাজ এই কথাগুলি যখন বলতেন তখন খুব যে দুঃখিত হতেন তা নয় – কারণ তিনি তো পূর্ণ । তিনি তো আগের আগের সভ্যতা এবং তাদের ধ্বংসেরও সাক্ষী ! আবার এখন যে আর একটা ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বর্তমানের মানবসমাজ – তাও তিনি পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত । সেজন্যেই তিনি সিটিং-য়ে উপস্থিতজনদের উদ্দেশ্য করে বারবার বলতেন – ” তোমরা বাইরের এইসব দেখে বিচলিত হয়ো না – তোমরা অন্তর্জগতে বিকশিত হয়ে ওঠো ! জগৎ-এ যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তা একদিন না একদিন ধ্বংস হবেই ! পূর্ণতালাভ-ই মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য – তোমরা সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হও ! সৎ হও, সহজ হও, পূর্ণ হও !” (ক্রমশঃ)