শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বিভিন্ন সিটিং-এ ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে বর্ণিত অনেক ঘটনা বা কাহিনীর উল্লেখ করতেন এবং সেগুলির আধুনিক ব্যাখ্যা দিতেন । সেগুলি শুনে প্রাচীন শাস্ত্রগুলি সম্বন্ধে আমাদের মনে গভীর শ্রদ্ধার উদ্রেক হোত এবং আমরা বুঝতে পারতাম যে, আমরা প্রথাগত যেসব শিক্ষা গ্রহণ করি – সেগুলো ঠিক নয়, সেগুলোতে কোথাও যেন বড়োসড়ো কোন একটা গোলমাল রয়েছে ! এইযে ‘গোলমাল’ কথাটা বললাম – এটারও মীমাংসা করে দিয়েছিলেন গুরুমহারাজ । উনি আমাদেরকে বলেছিলেন যে – সত্যি সত্যিই বিদেশীরা ভারতবর্ষের প্রাচীনত্ব, ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করানোর জন্যে খুবই চেষ্টা করেছিল, আর সেইজন্যেই তারা উল্টাপাল্টা নানারকম সব লিখে ভারতীয় শিক্ষিতদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল এমনকি পাঠ্যপুস্তকেও ভারতীয় সংস্কৃতির বিপক্ষে এবং পাশ্চাত্য দর্শনের স্বপক্ষে প্রচুর লেখা রয়েছে । ফলে সাধারণ শিক্ষিতরা জানতো প্রাশ্চাত্যের যা কিছু সে সবই ভালো এবং ভারতের যা কিছু তা সবই খারাপ ।
কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ গোটা পৃথিবীকে হেঁকে-ডেকে সঠিক সত্যটা শুনিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেটা ছিল আজ থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে । উনি নিজের জীবনের সর্বস্বটুকু দিয়ে তিনি পরাধীন ভারতবর্ষের একজন সাধারণ অধিবাসী হয়েও তৎকালীন পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী এবং উন্নত দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশে গিয়ে গর্বোন্নত ও দৃপ্তভঙ্গিতে ভারতবর্ষের প্রাচীনতার, প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির কথা এবং ভারতবর্ষ-ই যে সমস্ত দেশের সভ্যতার জনক – সেই সব কথা মুক্তকণ্ঠে প্রচার করেছিলেন । স্বামী বিবেকানন্দের কাছ থেকে ওইসব কথা শুনে তৎকালীন পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতেরা যেমন – ম্যাক্সমুলার, রোমা রোঁলা,ফ্রাঙ্ক ডোরাখ্ , জাপানের বিখ্যাত পন্ডিত ওকাকুরা প্রমুখরা ভারতবর্ষের প্রতি interested হয়ে পড়েন এবং নানারকম গবেষণা করে এঁদের মধ্যে অনেকে প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চার প্রশংসা করে বইও লেখেন । সেই থেকে আজও পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকার প্রকৃত পন্ডিত সমাজ ভারতবর্ষের প্রাচীন শাস্ত্রগুলি নিয়ে এবং ভারতীয় মহাপুরুষগণকে নিয়ে প্রচুর গবেষণা করে চলেছেন ।
অপরপক্ষে বেশিরভাগ ভারতীয় শিক্ষিত সমাজ বা পন্ডিত ব্যক্তিরা প্রাচীন ভারতের মহত্বকে ভুলে বিদেশি দর্শন এবং বিদেশি মনীষীদের শিক্ষাকেই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে মরিয়া !! বিদেশি শাসকদের শেখানো বুলি কপচিয়ে, তাদের তৈরি করা ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের দেশের সর্বনাশ করে চলেছে এবং সেইসাথে সমগ্র বিশ্বের ক্ষতিসাধন করে চলেছে !!
সমগ্র বিশ্বের ক্ষতি কেন__এর কারণ হিসেবে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” পৃথিবী গ্রহের মাথা বা মস্তিষ্ক যেহেতু ভারতবর্ষ, তাই সমস্ত পৃথিবীর নিয়ন্তাশক্তি বা চালিকাশক্তির রাশ তো থাকা উচিত ভারতেরই হাতে । আধুনিককালের ইউরোপীয় নবজাগরণের আগে পর্যন্ত পৃথিবীর সমগ্র দেশে ভালো যা কিছু সে সমস্তই ভারতবর্ষ থেকেই গিয়েছে ! সেই অর্থে যে কোনো দেশের নবজাগরণের মূল খুঁজতে গেলেও ভারতবর্ষের-ই অবদান পাওয়া যাবে ।”
গুরুমহারাজ আমাদের কাছে যে কোনো বিদেশী মনীষী, দার্শনিকের নাম উল্লেখ করে করে তাঁদের দর্শন বা চিন্তাধারার পরিচয় করাতেন এবং তারপরে উনি আমাদের কাছে বোঝাতেন – তারা প্রাচীন ভারতের কোনো না কোনো চিন্তাবিদের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত অথবা ভারতীয় দর্শনের কোনো না কোনো অংশ থেকে নেওয়া ! গুরুমহারাজ কালমার্কস, হেগেল, কান্ট ইত্যাদি বিখ্যাত বিখ্যাত বিদেশি দার্শনিকদের চিন্তাভাবনাগুলি কিভাবে ভারতীয় দর্শন বা ভারতীয় মনীষীদের চিন্তাধারার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত – তা আমাদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছিলেন । প্রাশ্চাত্যের বিখ্যাত দার্শনিক স্পিনোজাকে কেন প্রচ্ছন্ন শঙ্কর (শঙ্করাচার্য) বলা হয়, ইউরোপের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের ভাষায় ভারতবর্ষের আদি ভাষা সংস্কৃত কিভাবে ঢুকে রয়েছে এবং শুধু তাই নয় ইউরোপীয়দের সমাজ বা পরিবার সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত শব্দ-ই সংস্কৃত শব্দ থেকে নেওয়া _এগুলি উনি আমাদেরকে বুঝিয়ে বলেছিলেন! এইসব থেকে বোঝাই যায় যে, প্রাচীনকালে ইউরোপের দেশগুলির সমাজ সৃষ্টিতে বা পরিবার সৃষ্টিতেও মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ভারতীয় শিক্ষা, ভারতীয় আচার্য বা মনীষীরা ।
গুরুমহারাজের কাছ থেকে ঐসব কথা শুনতে শুনতে আমাদেরও মাথা উঁচু হয়ে উঠতো – ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির গৌরবে ফুলে উঠতো আমাদের বুক ! মনে পড়তো স্বামী বিবেকানন্দের সেই উদাত্ত আহ্বান – ” তোমরা আর্য জাতির বংশধর ! তোমাদের পূর্বপুরুষেরাই একদিন পৃথিবীতে সভ্যতা ছড়িয়েছিল ৷” গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দও সারা পৃথিবী ঘুরে সেই কথাগুলিই প্রচার করে গিয়েছিলেন ৷ নরওয়ের এক ভক্তের কাছে শুনেছিলাম – সে গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিল যে, স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছিল ভারতবর্ষ থেকে আগত জ্ঞানী ব্যক্তিদের দ্বারাই ! [ক্রমশঃ]
কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ গোটা পৃথিবীকে হেঁকে-ডেকে সঠিক সত্যটা শুনিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেটা ছিল আজ থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে । উনি নিজের জীবনের সর্বস্বটুকু দিয়ে তিনি পরাধীন ভারতবর্ষের একজন সাধারণ অধিবাসী হয়েও তৎকালীন পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী এবং উন্নত দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশে গিয়ে গর্বোন্নত ও দৃপ্তভঙ্গিতে ভারতবর্ষের প্রাচীনতার, প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির কথা এবং ভারতবর্ষ-ই যে সমস্ত দেশের সভ্যতার জনক – সেই সব কথা মুক্তকণ্ঠে প্রচার করেছিলেন । স্বামী বিবেকানন্দের কাছ থেকে ওইসব কথা শুনে তৎকালীন পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতেরা যেমন – ম্যাক্সমুলার, রোমা রোঁলা,ফ্রাঙ্ক ডোরাখ্ , জাপানের বিখ্যাত পন্ডিত ওকাকুরা প্রমুখরা ভারতবর্ষের প্রতি interested হয়ে পড়েন এবং নানারকম গবেষণা করে এঁদের মধ্যে অনেকে প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চার প্রশংসা করে বইও লেখেন । সেই থেকে আজও পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকার প্রকৃত পন্ডিত সমাজ ভারতবর্ষের প্রাচীন শাস্ত্রগুলি নিয়ে এবং ভারতীয় মহাপুরুষগণকে নিয়ে প্রচুর গবেষণা করে চলেছেন ।
অপরপক্ষে বেশিরভাগ ভারতীয় শিক্ষিত সমাজ বা পন্ডিত ব্যক্তিরা প্রাচীন ভারতের মহত্বকে ভুলে বিদেশি দর্শন এবং বিদেশি মনীষীদের শিক্ষাকেই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে মরিয়া !! বিদেশি শাসকদের শেখানো বুলি কপচিয়ে, তাদের তৈরি করা ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের দেশের সর্বনাশ করে চলেছে এবং সেইসাথে সমগ্র বিশ্বের ক্ষতিসাধন করে চলেছে !!
সমগ্র বিশ্বের ক্ষতি কেন__এর কারণ হিসেবে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” পৃথিবী গ্রহের মাথা বা মস্তিষ্ক যেহেতু ভারতবর্ষ, তাই সমস্ত পৃথিবীর নিয়ন্তাশক্তি বা চালিকাশক্তির রাশ তো থাকা উচিত ভারতেরই হাতে । আধুনিককালের ইউরোপীয় নবজাগরণের আগে পর্যন্ত পৃথিবীর সমগ্র দেশে ভালো যা কিছু সে সমস্তই ভারতবর্ষ থেকেই গিয়েছে ! সেই অর্থে যে কোনো দেশের নবজাগরণের মূল খুঁজতে গেলেও ভারতবর্ষের-ই অবদান পাওয়া যাবে ।”
গুরুমহারাজ আমাদের কাছে যে কোনো বিদেশী মনীষী, দার্শনিকের নাম উল্লেখ করে করে তাঁদের দর্শন বা চিন্তাধারার পরিচয় করাতেন এবং তারপরে উনি আমাদের কাছে বোঝাতেন – তারা প্রাচীন ভারতের কোনো না কোনো চিন্তাবিদের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত অথবা ভারতীয় দর্শনের কোনো না কোনো অংশ থেকে নেওয়া ! গুরুমহারাজ কালমার্কস, হেগেল, কান্ট ইত্যাদি বিখ্যাত বিখ্যাত বিদেশি দার্শনিকদের চিন্তাভাবনাগুলি কিভাবে ভারতীয় দর্শন বা ভারতীয় মনীষীদের চিন্তাধারার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত – তা আমাদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছিলেন । প্রাশ্চাত্যের বিখ্যাত দার্শনিক স্পিনোজাকে কেন প্রচ্ছন্ন শঙ্কর (শঙ্করাচার্য) বলা হয়, ইউরোপের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের ভাষায় ভারতবর্ষের আদি ভাষা সংস্কৃত কিভাবে ঢুকে রয়েছে এবং শুধু তাই নয় ইউরোপীয়দের সমাজ বা পরিবার সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত শব্দ-ই সংস্কৃত শব্দ থেকে নেওয়া _এগুলি উনি আমাদেরকে বুঝিয়ে বলেছিলেন! এইসব থেকে বোঝাই যায় যে, প্রাচীনকালে ইউরোপের দেশগুলির সমাজ সৃষ্টিতে বা পরিবার সৃষ্টিতেও মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ভারতীয় শিক্ষা, ভারতীয় আচার্য বা মনীষীরা ।
গুরুমহারাজের কাছ থেকে ঐসব কথা শুনতে শুনতে আমাদেরও মাথা উঁচু হয়ে উঠতো – ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির গৌরবে ফুলে উঠতো আমাদের বুক ! মনে পড়তো স্বামী বিবেকানন্দের সেই উদাত্ত আহ্বান – ” তোমরা আর্য জাতির বংশধর ! তোমাদের পূর্বপুরুষেরাই একদিন পৃথিবীতে সভ্যতা ছড়িয়েছিল ৷” গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দও সারা পৃথিবী ঘুরে সেই কথাগুলিই প্রচার করে গিয়েছিলেন ৷ নরওয়ের এক ভক্তের কাছে শুনেছিলাম – সে গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিল যে, স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছিল ভারতবর্ষ থেকে আগত জ্ঞানী ব্যক্তিদের দ্বারাই ! [ক্রমশঃ]