গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের বিভিন্ন সিটিংয়ে বলা মহাকাব্যসহ পৌরাণিক এবং প্রাচীন অন্যান্য শাস্ত্রে বিভিন্ন কাহিনী এবং তার আধুনিক ব্যাখ্যা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছিল । আজকে আবার আমরা আগের দিনের আলোচনাতেই ফিরে যাবো – যেখানে কথা হচ্ছিল শুক্রাচার্য ও বৃহস্পতির এবং তাঁদের ফলোয়ার্সদের নিয়ে !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন যে ভারতবর্ষের চিরকালীন আদর্শ গুরু ছিলেন বৃহস্পতি – শুক্রচার্য্য নয় ! তবে সবসময়েই পৃথিবীতে যে কোন ‘ক্রিয়া’র সমান শক্তিসম্পন্ন ‘প্রতিক্রিয়া’ যেমন থাকে, ঠিক তেমনি শুভশক্তির সমান পরিমাণ অশুভ শক্তিও বর্তমান থাকে ৷ সুতরাং ভারতবর্ষেও যে শুক্রাচার্যের সৃষ্ট কালচার, তাঁর followers-রা ছিল না, তা নয় ! কিন্তু ভারতবর্ষের উন্নত মানুষেরা, মনীষীরা বা মহাপুরুষরা সবসময় এখানকার মানুষকে বৃহস্পতির নীতি অনুসরণ করার জন্য, ভোগবাদীতা থেকে সরে এসে ত্যাগের পথ অবলম্বন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং ভোগের পথ অপেক্ষা ত্যাগের পথই যে শ্রেষ্ঠ – তা প্রতিপন্ন করে গেছেন !
কেন – ত্যাগের পথই শ্রেষ্ঠ কেন ? তারও উত্তর দিয়েছেন তারা ! গুরুমহারাজ সহ প্রায় সমস্ত মহাপুরুষরাই প্রকৃত আধ্যাত্মবিজ্ঞান বলেছেন ! যে বিজ্ঞানে ওনারা দেখিয়েছেন যে, জীবের যে evolution অর্থাৎ বিবর্তন বা সামনের দিকে অগ্রগতি – তা মানুষে এসে involution বা সংবর্ত্তনে পরিণত হয় অর্থাৎ তখন হয় চেতনার উৎবর্ত্তন ! মানুষ সাধনার দ্বারা তমঃগুন থেকে রজঃগুন, রজঃগুন থেকে সত্ত্বগুণ এবং আরো পরে সত্ত্বগুণ থেকে বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণে উন্নীত হতে পারে ! এখানে বিরাট ভূমিকা থাকে সদ্গুরু অর্থাৎ অবতারিত ঈশ্বরকোটি মহাপুরুষদের বা ঈশ্বর আদিষ্ট কোন উন্নত মহামানবের ! তাঁদের সংস্পর্শে বা সান্নিধ্যে এসেই মানুষের বিবেকের জাগরণ হয় এবং মানবের চেতনার উত্তরণ হয় ।
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – need of life (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান) এবং necessity of life (health, education and security) – এই দুটি উন্নত জীব হিসাবে সকল মানুষই প্রয়োজন অনুপাতে জীবনে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু purpose of life বা ‘জীবনের উদ্দেশ্য যে ঈশ্বর লাভ’ – তা আর সকল মানুষের চেতনায় জাগ্রত হয় না । মহাপুরুষরা যখন শরীর ধারণ করে মানবসমাজে অবতীর্ণ হ’ন – তখন তাঁদের জীবন দেখে, তাঁদের জীবনের অতিলৌকিক ক্রিয়াকর্ম দেখে মানুষজন আকৃষ্ট হয় এবং তারা বুঝতে পারে যে, এই মানুষটি আমাদের মত শরীরবিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি অনন্য সাধারণ, তিনি মহাশক্তিমান, তিনি স্ব-প্রকৃতিকে বশে এনে বহিঃপ্রকৃতিকে স্ববশে এনেছেন ! তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, সাধারণভাবে ধন-সম্পদ আহরণ করে বা ক্ষমতা অর্জন করে শক্তিমান হওয়া যায় ঠিকই – কিন্তু সেই শক্তি অর্জন করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে বঞ্চিত করতে হয়, শত শত মানুষের চোখের জল ঝরাতে হয়, তাদের অভিশাপ কুড়োতে হয় এবং এত কাণ্ড করে শক্তি বা ক্ষমতা অর্জন করেও দেখা যায় ওই ব্যক্তি ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে, ব্যভিচারী হয়ে পড়ে এবং ওই ব্যক্তির জীবন হয় যন্ত্রণাময়, অশান্তিময়, দুঃখময় ! সেই ব্যক্তির সবসময় ক্ষমতা হারানোর ভয়, সদাই মৃত্যুভয় যেন তাড়া করে বেড়ায় !
অপরপক্ষে মহাপুরুষেরা অর্থাৎ যাঁরা স্বপ্রকৃতিকে জয় করে আধ্যাত্মবিজ্ঞানী হয়ে উঠেছেন, প্রকৃত অর্থেই শক্তি লাভ করেছেন – তাঁর জীবনে দেখা যায় চূড়ান্ত ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রকাশ ! তাঁর জীবনে নিরবিচ্ছিন্ন প্রশান্তি সদাসর্বদা বিদ্যমান ! আর শুধু এইটাই নয় – যে সমস্ত মানুষ অশান্তিময় জীবন যাপন করছে – তারাও যখন এই ধরনের মহাপুরুষের কাছে যায় তখন তাঁদের সান্নিধ্যে এই মানুষেরাও সাময়িকভাবে শান্তি পায়, শান্ত হয় ! তাঁদের অপার্থিব ভালবাসার স্পর্শে মানুষ মধুলোভী ভ্রমর-মৌমাছির মতো ছুটে ছুটে তাঁর কাছে আসে ! জ্ঞানীরা জ্ঞানলাভে শান্তি পায়, ধ্যানীরা ধ্যানের বিষয় পেয়ে এবং ধ্যানের প্রকৃত তত্ত্ব বুঝতে পেরে শান্ত হয়, কর্মীরা বা সেবকেরা নিঃস্বার্থ সেবা এবং নিষ্কাম কর্ম করে শান্তি পায়, এমনকি নিতান্ত সাধারণ মানুষেরা কিছুই বুঝতে না পেরে – শুধু সেই মহান মানুষটার কাছে এসে, তাঁর একটু ছোঁয়া পেয়ে, তাঁর শ্রীমুখের একটু কথা শ্রবণ করে, কিছুই না হলে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই পরম শান্তি লাভ করে থাকে ! এই শান্তিময় মানুষটির কাছে যো সো করে পৌঁছাতে পারলেই অনাবিল শান্তি, অনন্ত সুখলাভ !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – মহাপুরুষের সংস্পর্শে এলেই মানুষের বিবেকের জাগরণ হয় । আর বিবেকের জাগরণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের মনুষত্ববোধ জাগ্রত হয় না । মনুষত্ববোধ জাগ্রত না হলে মানুষের অন্তর্জগতের অসুরশক্তির প্রাবল্য কমে না, এই নেগেটিভ শক্তি সবসময়েই মানুষের মনোজগতের পজিটিভ শক্তির উপর রাজত্ব করে – তাকে পদানত করে রাখে, মাথা ফুঁড়ে উঠতে দেয় না ! [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজ বলেছিলেন যে ভারতবর্ষের চিরকালীন আদর্শ গুরু ছিলেন বৃহস্পতি – শুক্রচার্য্য নয় ! তবে সবসময়েই পৃথিবীতে যে কোন ‘ক্রিয়া’র সমান শক্তিসম্পন্ন ‘প্রতিক্রিয়া’ যেমন থাকে, ঠিক তেমনি শুভশক্তির সমান পরিমাণ অশুভ শক্তিও বর্তমান থাকে ৷ সুতরাং ভারতবর্ষেও যে শুক্রাচার্যের সৃষ্ট কালচার, তাঁর followers-রা ছিল না, তা নয় ! কিন্তু ভারতবর্ষের উন্নত মানুষেরা, মনীষীরা বা মহাপুরুষরা সবসময় এখানকার মানুষকে বৃহস্পতির নীতি অনুসরণ করার জন্য, ভোগবাদীতা থেকে সরে এসে ত্যাগের পথ অবলম্বন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং ভোগের পথ অপেক্ষা ত্যাগের পথই যে শ্রেষ্ঠ – তা প্রতিপন্ন করে গেছেন !
কেন – ত্যাগের পথই শ্রেষ্ঠ কেন ? তারও উত্তর দিয়েছেন তারা ! গুরুমহারাজ সহ প্রায় সমস্ত মহাপুরুষরাই প্রকৃত আধ্যাত্মবিজ্ঞান বলেছেন ! যে বিজ্ঞানে ওনারা দেখিয়েছেন যে, জীবের যে evolution অর্থাৎ বিবর্তন বা সামনের দিকে অগ্রগতি – তা মানুষে এসে involution বা সংবর্ত্তনে পরিণত হয় অর্থাৎ তখন হয় চেতনার উৎবর্ত্তন ! মানুষ সাধনার দ্বারা তমঃগুন থেকে রজঃগুন, রজঃগুন থেকে সত্ত্বগুণ এবং আরো পরে সত্ত্বগুণ থেকে বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণে উন্নীত হতে পারে ! এখানে বিরাট ভূমিকা থাকে সদ্গুরু অর্থাৎ অবতারিত ঈশ্বরকোটি মহাপুরুষদের বা ঈশ্বর আদিষ্ট কোন উন্নত মহামানবের ! তাঁদের সংস্পর্শে বা সান্নিধ্যে এসেই মানুষের বিবেকের জাগরণ হয় এবং মানবের চেতনার উত্তরণ হয় ।
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – need of life (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান) এবং necessity of life (health, education and security) – এই দুটি উন্নত জীব হিসাবে সকল মানুষই প্রয়োজন অনুপাতে জীবনে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু purpose of life বা ‘জীবনের উদ্দেশ্য যে ঈশ্বর লাভ’ – তা আর সকল মানুষের চেতনায় জাগ্রত হয় না । মহাপুরুষরা যখন শরীর ধারণ করে মানবসমাজে অবতীর্ণ হ’ন – তখন তাঁদের জীবন দেখে, তাঁদের জীবনের অতিলৌকিক ক্রিয়াকর্ম দেখে মানুষজন আকৃষ্ট হয় এবং তারা বুঝতে পারে যে, এই মানুষটি আমাদের মত শরীরবিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি অনন্য সাধারণ, তিনি মহাশক্তিমান, তিনি স্ব-প্রকৃতিকে বশে এনে বহিঃপ্রকৃতিকে স্ববশে এনেছেন ! তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, সাধারণভাবে ধন-সম্পদ আহরণ করে বা ক্ষমতা অর্জন করে শক্তিমান হওয়া যায় ঠিকই – কিন্তু সেই শক্তি অর্জন করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে বঞ্চিত করতে হয়, শত শত মানুষের চোখের জল ঝরাতে হয়, তাদের অভিশাপ কুড়োতে হয় এবং এত কাণ্ড করে শক্তি বা ক্ষমতা অর্জন করেও দেখা যায় ওই ব্যক্তি ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে, ব্যভিচারী হয়ে পড়ে এবং ওই ব্যক্তির জীবন হয় যন্ত্রণাময়, অশান্তিময়, দুঃখময় ! সেই ব্যক্তির সবসময় ক্ষমতা হারানোর ভয়, সদাই মৃত্যুভয় যেন তাড়া করে বেড়ায় !
অপরপক্ষে মহাপুরুষেরা অর্থাৎ যাঁরা স্বপ্রকৃতিকে জয় করে আধ্যাত্মবিজ্ঞানী হয়ে উঠেছেন, প্রকৃত অর্থেই শক্তি লাভ করেছেন – তাঁর জীবনে দেখা যায় চূড়ান্ত ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রকাশ ! তাঁর জীবনে নিরবিচ্ছিন্ন প্রশান্তি সদাসর্বদা বিদ্যমান ! আর শুধু এইটাই নয় – যে সমস্ত মানুষ অশান্তিময় জীবন যাপন করছে – তারাও যখন এই ধরনের মহাপুরুষের কাছে যায় তখন তাঁদের সান্নিধ্যে এই মানুষেরাও সাময়িকভাবে শান্তি পায়, শান্ত হয় ! তাঁদের অপার্থিব ভালবাসার স্পর্শে মানুষ মধুলোভী ভ্রমর-মৌমাছির মতো ছুটে ছুটে তাঁর কাছে আসে ! জ্ঞানীরা জ্ঞানলাভে শান্তি পায়, ধ্যানীরা ধ্যানের বিষয় পেয়ে এবং ধ্যানের প্রকৃত তত্ত্ব বুঝতে পেরে শান্ত হয়, কর্মীরা বা সেবকেরা নিঃস্বার্থ সেবা এবং নিষ্কাম কর্ম করে শান্তি পায়, এমনকি নিতান্ত সাধারণ মানুষেরা কিছুই বুঝতে না পেরে – শুধু সেই মহান মানুষটার কাছে এসে, তাঁর একটু ছোঁয়া পেয়ে, তাঁর শ্রীমুখের একটু কথা শ্রবণ করে, কিছুই না হলে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই পরম শান্তি লাভ করে থাকে ! এই শান্তিময় মানুষটির কাছে যো সো করে পৌঁছাতে পারলেই অনাবিল শান্তি, অনন্ত সুখলাভ !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – মহাপুরুষের সংস্পর্শে এলেই মানুষের বিবেকের জাগরণ হয় । আর বিবেকের জাগরণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের মনুষত্ববোধ জাগ্রত হয় না । মনুষত্ববোধ জাগ্রত না হলে মানুষের অন্তর্জগতের অসুরশক্তির প্রাবল্য কমে না, এই নেগেটিভ শক্তি সবসময়েই মানুষের মনোজগতের পজিটিভ শক্তির উপর রাজত্ব করে – তাকে পদানত করে রাখে, মাথা ফুঁড়ে উঠতে দেয় না ! [ক্রমশঃ]