গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) কাটোয়ার কাছে বারেন্দা আশ্রমে যখন অবস্থান করছিলেন , সেই সময়কার কথা হচ্ছিল ! গুরু মহারাজ Sitting-এর জন্য বাইরে এসে বসার পর আমরা কয়েকজন চারপাশে এমনভাবে ছড়িয়ে থাকলাম যাতে কেউ কোন অবভ্য আচরণ না করে ফেলতে পারে ! কিন্তু সমবেত জনতার গুরু মহারাজকে প্রণাম করার সময়েই বা Just তার পরে পরেই একে একে বয়স্ক পুরুষ ও মহিলারা তাদের নিজ নিজ শারীরিক আদিব্যাধির কথা , পারিবারিক অশান্তির কথা বলতে শুরু করল এবং তার প্রতিবিধানের জন্য গুরু মহারাজকে ধরে বসল ! যেভাবে আচমকা ঘটনাটা ঘটে যেতে লাগল – তাতে আমরা অসহায় বোধ করতে লাগলাম ! এমন সময় গুরু মহারাজ আমাদের মধ্যে একজন, জহরদা (ঘোষ)-কে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলে উঠলেন – ” এই জহর ! তোরা আমাকে কি মানুষের কাছে জড়ি-বুটি-তাবিজ-কবজ দেওয়া সাধু হিসাবে বর্ণনা করেছিস – নাকি রে ! এদেরকে বল্ রোগ হলে ডাক্তার দেখাতে হয় ! সাধুর কাছে এসে ধর্মকথা আলোচনা করতে হয় ।” আমরা তৎক্ষণাৎ ভিড় ঠেলে ঠেলে ওদের কাছে গিয়ে ওদেরকে নিরস্ত করলাম ৷
এরপর শুরু হল জিজ্ঞাসা-উত্তরের আসর ! সেইসময় গুরু মহারাজ যেখানে বসেছিলেন (ঘরের বারান্দায়) , ওখানেই গুরু মহারাজের কাছেই বসে ছিল গঙ্গাবাবুর মেয়ে (আমার ভাইঝি) রত্না , জহরদার দুটো বোন রূপা ও চঞ্চলা , এছাড়া আমাদের গ্রামের দুটি মেয়ে কানন ও মনিকা (এদের সকলেরই বয়স তখন ছিল ১৫-১৬ থেকে ১৭-১৮ এর মধ্যে) । ওরা শুধু সবসময় বসেই ছিল না , মাঝে মাঝে গুরু মহারাজের ঘরে ঢুকে বিছানাগুলো ঠিক করছিল , গুরু মহারাজকে প্রয়োজনে এক গ্লাস জল এনে দিচ্ছিল , গুরু মহারাজের সামনে বড় পাত্রে রাখা মিষ্টি প্রসাদ সকলকে দিচ্ছিল । এইটা দেখেই ওই গ্রামের একজন শিক্ষিত কমরেড (সি.পি.এম. পার্টি করা ব্যক্তি ভবিষ্যৎবাণী করে দিয়েছিল – ” এই ভদ্রলোক (গুরু মহারাজ) ২/১ বছরের মধ্যেই নারীঘটিত কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়বে ৷” বেচারা কমরেড ! মানুষের মুল্যায়ন করতে পারে না – ভগবানের মূল্যায়ন করে ফেলল একনজর দেখেই!!
যাইহোক , একজন আনন্দমার্গী স্কুলের শিক্ষক কিছু কিছু জিজ্ঞাসা রাখছিল (অবশ্যই সে যে অনেক কিছু জানে – সেই জাহির করাটাই উদ্দেশ্য ছিল) ! গুরু মহারাজ উত্তর দিচ্ছিলেন । সে একটা উত্তর শেষ হতে না হতেই – আবার জিজ্ঞাসা করছিল ৷ পরপর এইরকম কয়েকবার করার পর — গুরু মহারাজ তাকে বললেন – ” এই ! তুমি কি জিজ্ঞাসা করার জন্য জিজ্ঞাসা করছ – না সত্যি সত্যিই জানার জন্য জিজ্ঞাসা করছ ?” ছেলেটি একটু লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেল – আর জিজ্ঞাসা করেনি । কিন্তু এই ব্যক্তি চুপ করে গেলে কি হবে ? আবার ঘটনা ঘটল – তখন ধর্ম কি এবং কেন – এই বিষয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা হচ্ছিল । আলোচনা তখনও শেষ হয়নি – গুরু মহারাজ কথা বলছিলেন – হঠাৎ করে ভিড়ের মাঝখান থেকে একটা শক্ত সমর্থ চেহারার ১৯/২০ বছরের ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল – তার দুহাত প্যান্টের দু পকেটে ঢোকানো ! কোশিগ্রাম বাড়ি ছেলেটির উঠতি ‘Angry image’ এর ‘কুছ পড়োয়া’ ভাবের যুবক ! উঠেই গুরু মহারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল – ” আচ্ছা দাদা ! (গুরু মহারাজ একজন গেরুয়া পড়া সন্ন্যাসী , ওনাকে কেন্দ্র করে কত মানুষের আগমন , উৎসাহ-উদ্দীপনা , আয়োজন – এইসব জেনেও এই সম্বোধন !!) আমরা ধর্ম করতেই বা যাব কেন ? সবাইকে ধর্ম করতেই হবে – এমন কি কোন মানে আছে ?” হঠাৎ করে ছেলেটির এইরকম আচরণের জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ! কি করব ভেবে পাচ্ছি না ! তারপর দেখি গুরু মহারাজ শান্তকন্ঠে ছেলেটির ঐরকম উদ্ধত ভাব দেখে বলে উঠলেন – ” এই ! তুই একটা উদো কাঁড়া ছেলে ! ইয়ং ছেলে হওয়া সত্ত্বেও মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছিস না ! অনিয়মিত উৎচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করিস – চুপ করে সোজা হয়ে বস্ তো ! বসে বসে কথা শোন্ – তোর মঙ্গল হবে ! না হলে যে ভাবে জীবন যাপন করছিস – ঐভাবে চললে তোর জীবনের সবকিছুই গোলমাল হয়ে যাবে !” (পরবর্ত্তীতে আমরা দেখেছিলাম ছেলেটি জীবনে আদর্শের পরিবর্ত্তন না করায় নানান ঝঞ্ঝাটের সম্মুখীন হয়েছিল এবং এই নিয়ে আমরা গুরু মহারাজের ওর উদ্দেশ্যে করা সাবধানবাণী না শোনার কথা প্রায়ই আলোচনা করতাম ।)
এই ধরণের দু-একটি অপ্রীতিকর ছোটখাটো ঘটনা ঘটে যাওয়া ছাড়া বাকি সব কিছুই ঠিকঠাক চলেছিল ৷ আরও যেটা হয়েছিল , সেটা হ’ল – দু-একজন বয়স্কা মা বা বয়স্ক ব্যক্তি গুরু মহারাজকে প্রণাম করতে গিয়ে ওনার মুখের সামনে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকছিল – এতে বাকী যারা বসে আছে , তারা বিরক্তূ হচ্ছিল । তখন ঐ সিটিং – পরিচালন কমিটির একজন সদস্য হিসাবে আমাদের এই ব্যাপারটি খুবই খারাপ লাগছিল। কিন্তু পরে বুঝেছিলাম যে __কোন মা বা বাবার কাছে একটা সুন্দর, সুদর্শন, জ্ঞানী-গুণী সন্তান ই তো কাম্য! ঐ মা-বাবারা হয়তো ওনার সামনে দাঁড়িয়ে গুরুজীর অনিন্দ্যসুন্দর কান্তি-র দিকে তাকিয়ে, তাঁর শিশুসুলভ হাসির দেখে বাৎসল্যরসে সিক্ত হয়ে স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা বোধ হারিয়ে ফেলেছিল। কারন সেদিন দেখেছিলাম গুরুমহারাজ এনাদের অনেককে উদ্দেশ্য করে খুবই মৃদু এবং স্নেহভরা কন্ঠে বলছিলেন _”এই যে মা _প্রসাদ নাও! আর ঐখানে গিয়ে বসো!”
সেদিন উনি দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্য সিটিং থেকে উঠলেন (যেটা সাধারণত কখনই ঘটতো না, উনি দুপুর ১২-টার মধ্যে বা তার আগেই খেয়ে নিতেন।)। এবার যে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল সেটা( উনি ব্যাথা পেয়েছিলেন) মনে পড়লে আমরা আজও সমানভাবে ব্যথিত হই! ঘটনাটা বলি___।
বারেন্দা আশ্রমে গুরুমহারাজের জন্য আলাদা করে রান্না করার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছিল (ম্যাকমিলানের বাড়ি থেকে ৫-লিটারের একটা গ্যাস আনানো হয়েছিল, রান্নার সরঞ্জাম বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল)। কিন্তু পাশাপাশি গ্রামের গুরুভাই-বোনেরাও কিছু কিছু খাবার বাড়িতে তৈরি করে গুরুমহারাজের জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে করে পাঠিয়ে দিয়েছিল(এটা বনগ্রাম আশ্রমেও আমরা দেখতাম! বনগ্রামের অনেক বাড়ি থেকেই ছোট ছোট কৌটোয় করে গুরুমহারাজের জন্য কিছু রান্না করা খাবার আসত। গুরুজী সেগুলি থেকে খুব সামান্য হলেও _অন্তত একটুও খেতেন! কারণ সব কৌটোতেই ওনার আঙুলের ছাপ থাকতো।)।
গুরুমহারাজ খেতে বসেছিলেন! সবে হয়তো দু-এক গ্রাস খেয়েছেন(অবশ্য আমি ঐ সময় ওনার ঘরে ছিলাম না, পরে গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম ),চচ্চড়ি বা শাকের সাথে তারের টুকরোর মতো কিছু একটা গুরুমহারাজের মুখের মধ্যে চলে গিয়েছিল! ফলে ওনার আর সেদিন দুপুরে খাওয়াই হয় নি!
গুরুমহারাজ এক ঘন্টা মতো rest নেবার পর আমি আর তৃষাণ মহারাজ ওনার ঘরে ঢুকে দেখি উনি নিজে নিজেই হালকা কিছু খাবার (ওনার ঘরে আগে থেকেই কিছু dry নোনতা খাবার রেখে দেওয়া ছিল) নিয়ে খাচ্ছেন! তৃষাণ মহারাজ অসময়ে এসব খাবার কারণ জিজ্ঞাসা করায় উনি সব ঘটনা বিস্তারিত আমাদেরকে বলেছিলেন।
কিন্তু এমনটা হল কেন? – এটা জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন _”দ্যাখো, খাদ্য গ্রহণের সময় আমি কখনই দেখে দেখে, বেছে বেছে কোন খাবার খাই না! ফলে মনোনিবেশ না করলে সব খাদ্যের স্বাদও উপভোগ করতে পারি না! আমার আহার যেন আহুতি! কোন খাদ্য পেলেই আমি মুখে ফেলে দিই _এইজন্য মাঝে মাঝেই আমার খাদ্যগ্রহনের সময় এমন ঘটনা ঘটে যায়।”
এই মহাঅপরাধ বা মহাত্রুটি আমাদের দ্বারা হয়ে গিয়েছিল! উনি অবশ্য কারো কোন অপরাধ তো নেনই নি _বরং আর কাউকে জানতেও দেন নি!
উনি করুনাময় ভগবান! সবাইকে ক্ষমা, করুনা করতেই ওনার আসা! আমরা সবসময়ই ওনাকে আঘাত করি__আর উনি হাসিমুখে সব সহ্য করেন! আর শুধু সহ্য করেই ক্ষান্ত থাকেন না _বিনিময়ে দেন ভালোবাসা! প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসা!!! (ক্রমশঃ)
এরপর শুরু হল জিজ্ঞাসা-উত্তরের আসর ! সেইসময় গুরু মহারাজ যেখানে বসেছিলেন (ঘরের বারান্দায়) , ওখানেই গুরু মহারাজের কাছেই বসে ছিল গঙ্গাবাবুর মেয়ে (আমার ভাইঝি) রত্না , জহরদার দুটো বোন রূপা ও চঞ্চলা , এছাড়া আমাদের গ্রামের দুটি মেয়ে কানন ও মনিকা (এদের সকলেরই বয়স তখন ছিল ১৫-১৬ থেকে ১৭-১৮ এর মধ্যে) । ওরা শুধু সবসময় বসেই ছিল না , মাঝে মাঝে গুরু মহারাজের ঘরে ঢুকে বিছানাগুলো ঠিক করছিল , গুরু মহারাজকে প্রয়োজনে এক গ্লাস জল এনে দিচ্ছিল , গুরু মহারাজের সামনে বড় পাত্রে রাখা মিষ্টি প্রসাদ সকলকে দিচ্ছিল । এইটা দেখেই ওই গ্রামের একজন শিক্ষিত কমরেড (সি.পি.এম. পার্টি করা ব্যক্তি ভবিষ্যৎবাণী করে দিয়েছিল – ” এই ভদ্রলোক (গুরু মহারাজ) ২/১ বছরের মধ্যেই নারীঘটিত কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়বে ৷” বেচারা কমরেড ! মানুষের মুল্যায়ন করতে পারে না – ভগবানের মূল্যায়ন করে ফেলল একনজর দেখেই!!
যাইহোক , একজন আনন্দমার্গী স্কুলের শিক্ষক কিছু কিছু জিজ্ঞাসা রাখছিল (অবশ্যই সে যে অনেক কিছু জানে – সেই জাহির করাটাই উদ্দেশ্য ছিল) ! গুরু মহারাজ উত্তর দিচ্ছিলেন । সে একটা উত্তর শেষ হতে না হতেই – আবার জিজ্ঞাসা করছিল ৷ পরপর এইরকম কয়েকবার করার পর — গুরু মহারাজ তাকে বললেন – ” এই ! তুমি কি জিজ্ঞাসা করার জন্য জিজ্ঞাসা করছ – না সত্যি সত্যিই জানার জন্য জিজ্ঞাসা করছ ?” ছেলেটি একটু লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেল – আর জিজ্ঞাসা করেনি । কিন্তু এই ব্যক্তি চুপ করে গেলে কি হবে ? আবার ঘটনা ঘটল – তখন ধর্ম কি এবং কেন – এই বিষয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা হচ্ছিল । আলোচনা তখনও শেষ হয়নি – গুরু মহারাজ কথা বলছিলেন – হঠাৎ করে ভিড়ের মাঝখান থেকে একটা শক্ত সমর্থ চেহারার ১৯/২০ বছরের ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল – তার দুহাত প্যান্টের দু পকেটে ঢোকানো ! কোশিগ্রাম বাড়ি ছেলেটির উঠতি ‘Angry image’ এর ‘কুছ পড়োয়া’ ভাবের যুবক ! উঠেই গুরু মহারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল – ” আচ্ছা দাদা ! (গুরু মহারাজ একজন গেরুয়া পড়া সন্ন্যাসী , ওনাকে কেন্দ্র করে কত মানুষের আগমন , উৎসাহ-উদ্দীপনা , আয়োজন – এইসব জেনেও এই সম্বোধন !!) আমরা ধর্ম করতেই বা যাব কেন ? সবাইকে ধর্ম করতেই হবে – এমন কি কোন মানে আছে ?” হঠাৎ করে ছেলেটির এইরকম আচরণের জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ! কি করব ভেবে পাচ্ছি না ! তারপর দেখি গুরু মহারাজ শান্তকন্ঠে ছেলেটির ঐরকম উদ্ধত ভাব দেখে বলে উঠলেন – ” এই ! তুই একটা উদো কাঁড়া ছেলে ! ইয়ং ছেলে হওয়া সত্ত্বেও মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছিস না ! অনিয়মিত উৎচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করিস – চুপ করে সোজা হয়ে বস্ তো ! বসে বসে কথা শোন্ – তোর মঙ্গল হবে ! না হলে যে ভাবে জীবন যাপন করছিস – ঐভাবে চললে তোর জীবনের সবকিছুই গোলমাল হয়ে যাবে !” (পরবর্ত্তীতে আমরা দেখেছিলাম ছেলেটি জীবনে আদর্শের পরিবর্ত্তন না করায় নানান ঝঞ্ঝাটের সম্মুখীন হয়েছিল এবং এই নিয়ে আমরা গুরু মহারাজের ওর উদ্দেশ্যে করা সাবধানবাণী না শোনার কথা প্রায়ই আলোচনা করতাম ।)
এই ধরণের দু-একটি অপ্রীতিকর ছোটখাটো ঘটনা ঘটে যাওয়া ছাড়া বাকি সব কিছুই ঠিকঠাক চলেছিল ৷ আরও যেটা হয়েছিল , সেটা হ’ল – দু-একজন বয়স্কা মা বা বয়স্ক ব্যক্তি গুরু মহারাজকে প্রণাম করতে গিয়ে ওনার মুখের সামনে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকছিল – এতে বাকী যারা বসে আছে , তারা বিরক্তূ হচ্ছিল । তখন ঐ সিটিং – পরিচালন কমিটির একজন সদস্য হিসাবে আমাদের এই ব্যাপারটি খুবই খারাপ লাগছিল। কিন্তু পরে বুঝেছিলাম যে __কোন মা বা বাবার কাছে একটা সুন্দর, সুদর্শন, জ্ঞানী-গুণী সন্তান ই তো কাম্য! ঐ মা-বাবারা হয়তো ওনার সামনে দাঁড়িয়ে গুরুজীর অনিন্দ্যসুন্দর কান্তি-র দিকে তাকিয়ে, তাঁর শিশুসুলভ হাসির দেখে বাৎসল্যরসে সিক্ত হয়ে স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা বোধ হারিয়ে ফেলেছিল। কারন সেদিন দেখেছিলাম গুরুমহারাজ এনাদের অনেককে উদ্দেশ্য করে খুবই মৃদু এবং স্নেহভরা কন্ঠে বলছিলেন _”এই যে মা _প্রসাদ নাও! আর ঐখানে গিয়ে বসো!”
সেদিন উনি দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্য সিটিং থেকে উঠলেন (যেটা সাধারণত কখনই ঘটতো না, উনি দুপুর ১২-টার মধ্যে বা তার আগেই খেয়ে নিতেন।)। এবার যে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল সেটা( উনি ব্যাথা পেয়েছিলেন) মনে পড়লে আমরা আজও সমানভাবে ব্যথিত হই! ঘটনাটা বলি___।
বারেন্দা আশ্রমে গুরুমহারাজের জন্য আলাদা করে রান্না করার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছিল (ম্যাকমিলানের বাড়ি থেকে ৫-লিটারের একটা গ্যাস আনানো হয়েছিল, রান্নার সরঞ্জাম বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল)। কিন্তু পাশাপাশি গ্রামের গুরুভাই-বোনেরাও কিছু কিছু খাবার বাড়িতে তৈরি করে গুরুমহারাজের জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে করে পাঠিয়ে দিয়েছিল(এটা বনগ্রাম আশ্রমেও আমরা দেখতাম! বনগ্রামের অনেক বাড়ি থেকেই ছোট ছোট কৌটোয় করে গুরুমহারাজের জন্য কিছু রান্না করা খাবার আসত। গুরুজী সেগুলি থেকে খুব সামান্য হলেও _অন্তত একটুও খেতেন! কারণ সব কৌটোতেই ওনার আঙুলের ছাপ থাকতো।)।
গুরুমহারাজ খেতে বসেছিলেন! সবে হয়তো দু-এক গ্রাস খেয়েছেন(অবশ্য আমি ঐ সময় ওনার ঘরে ছিলাম না, পরে গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম ),চচ্চড়ি বা শাকের সাথে তারের টুকরোর মতো কিছু একটা গুরুমহারাজের মুখের মধ্যে চলে গিয়েছিল! ফলে ওনার আর সেদিন দুপুরে খাওয়াই হয় নি!
গুরুমহারাজ এক ঘন্টা মতো rest নেবার পর আমি আর তৃষাণ মহারাজ ওনার ঘরে ঢুকে দেখি উনি নিজে নিজেই হালকা কিছু খাবার (ওনার ঘরে আগে থেকেই কিছু dry নোনতা খাবার রেখে দেওয়া ছিল) নিয়ে খাচ্ছেন! তৃষাণ মহারাজ অসময়ে এসব খাবার কারণ জিজ্ঞাসা করায় উনি সব ঘটনা বিস্তারিত আমাদেরকে বলেছিলেন।
কিন্তু এমনটা হল কেন? – এটা জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন _”দ্যাখো, খাদ্য গ্রহণের সময় আমি কখনই দেখে দেখে, বেছে বেছে কোন খাবার খাই না! ফলে মনোনিবেশ না করলে সব খাদ্যের স্বাদও উপভোগ করতে পারি না! আমার আহার যেন আহুতি! কোন খাদ্য পেলেই আমি মুখে ফেলে দিই _এইজন্য মাঝে মাঝেই আমার খাদ্যগ্রহনের সময় এমন ঘটনা ঘটে যায়।”
এই মহাঅপরাধ বা মহাত্রুটি আমাদের দ্বারা হয়ে গিয়েছিল! উনি অবশ্য কারো কোন অপরাধ তো নেনই নি _বরং আর কাউকে জানতেও দেন নি!
উনি করুনাময় ভগবান! সবাইকে ক্ষমা, করুনা করতেই ওনার আসা! আমরা সবসময়ই ওনাকে আঘাত করি__আর উনি হাসিমুখে সব সহ্য করেন! আর শুধু সহ্য করেই ক্ষান্ত থাকেন না _বিনিময়ে দেন ভালোবাসা! প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসা!!! (ক্রমশঃ)