গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বিভিন্ন সিটিং-এ যে সমস্ত কথা বলতেন সেগুলি নিয়েই আলোচনা হচ্ছিলো ! গুরুমহারাজ ছিলেন স্বয়ং ভগবান। এই জগৎ-সংসারের কর্তা তিনি ! মানুষের রূপে এসে সেই বিরাট- হিরণ্যগর্ভ- ঈশ্বর স্বয়ং লীলা করে গেলেন ! এই কথাগুলি ভাবা বা চিন্তা করাটাই দুঃসাধ্য ! যা ভাবনার অতীত তাঁকে কে ভাবনা করতে পারে – কে তাঁকে ভাবনায় ধরতে পারে ? আর যাঁকে ভাবনাতেই ধরা যাচ্ছে না, তাহলে সেই অখন্ডতত্ত্ব যখন খণ্ডরূপে, ক্ষুদ্র একটা মনুষ্য-শরীররূপে এই ধরণীর ধুলা-মাটিতে, পৃথিবী গ্রহের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি গ্রাম বনগ্রামে লীলা করে গেলেন – তখন তাঁকে চেনা বা জানার কি কোন উপায় রয়েছে ? হ্যাঁ, তিনি যদি দয়া করে কারো চক্ষু (বিশেষ চক্ষু) খুলে দেন, চেতনার দ্বার উন্মুক্ত করে চৈতন্য এনে দেন – তাহলে নিশ্চয়ই তাঁর অনুভব হবে, উপলব্ধি হবে, হয়তো “বোধে বোধ”-ও হতে পারে !
কিন্তু সেই মহাভাগ্যবান ব্যক্তি ‘কোটিকে গুটিক’! এই যে বলা হলো অনুভব, উপলব্ধি এবং বোধের কথা – এখানে গুরুমহারাজ এই তিনটি শব্দের ব্যাখ্যা করেছিলেন। উনি বলেছিলেন – অনু উপসর্গ যোগে অনুভব এবং উপ উপসর্গ যোগে হয় উপলব্ধি ! অণু এবং উপ এই দুই উপসর্গ যে শব্দের সাথে যোগ হয় – সেই শব্দগুলি পূর্ণতা অর্থে ব্যবহৃত হয় না বরং মূলশব্দ অপেক্ষা কম মর্যাদাব্যঞ্জক অর্থ প্রতিপন্ন করে ! তাই মানবের সাধনার অন্তিম যে লক্ষ্য পূর্ণতা – তা অনুভব বা উপলব্ধি(ব্রহ্মোপলব্ধি,ব্রহ্মের অনুভব_ইত্যাদি) এই শব্দ দিয়ে ঠিক ঠিক ব্যাখ্যায়িত করা যায় না ! এইজন্যেই গুরুমহারাজ বলেছিলেন পূর্ণতার ‘বোধ’ হয়। ব্রহ্মােপলব্ধি নয় – ব্রহ্মের “বোধে বোধ” হয়৷ “বোধে বোধ”-টি কেমন ? এর উদাহরণ দিতে গিয়ে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “যেমন ধরো, তুমি কিছু টাকা পকেটে নিয়ে বাজারে গেছো, সেখানে তুমি যে জিনিস কিনতে চাইছো – তার দরদাম করতে করতে একবার পকেটে হাত দিয়ে দেখে নিলে__ টাকাটা রয়েছে কিনা ! তুমি জানতে যে টাকাটা রয়েছে, তবু যেন একবার touch করে confirm হয়ে নেওয়া !” জীব স্বরূপতঃ ব্রহ্ম-ই – শুধু বিস্মৃতির কবলে পড়ে সে নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবছে, খণ্ড ভাবছে, সাধারণ জীব ভাবছে ! সাধন ভজনের দ্বারা কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত করে একটা একটা চক্র ভেদ করতে করতে সাধক যখন দুই ভ্রূ-র মধ্যস্থিত স্থানে অবস্থিত আজ্ঞাচক্রে স্থিতি লাভ করে – তখনই তার জীবত্বের অবসান ঘটে। জীব শিবস্থিতি লাভ করে। ওখান থেকে পুনরায় যাত্রা শুরু করে ওই মহাশক্তি যখন মস্তিষ্কস্থিত সহস্রারচক্রে এসে পৌঁছায় __তখনই জীবের আত্মসাক্ষাৎকার হয়।
যখন যখন ঈশ্বরের অবতরণ হয় – প্রায়শঃই দেখা যায়_তাঁদেরকে জীবনের যে কোনো সময়ে নির্বিকল্প সমাধি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ! তাঁরা তো সদা-সর্বদা পূর্ণত্বের বোধেই থাকেন ! তবু তাঁদের এই যে সাধনা এবং সাধনার দ্বারা নির্বিকল্প সমাধি অবস্থা লাভ__ এটা ওই পকেটে থাকা টাকাগুলোকে আর একবার ছুঁয়ে দেখার মতোই ? আর – এটাই “বোধে বোধ” অবস্থা !
যাইহোক, আমরা আগের দুটো সংখ্যায় আলোচনা করছিলাম–এমন সব সাধকদের কথা__যাঁরা সাধনার উচ্চ উচ্চ অবস্থায় পৌঁছুতে পারলেও – কোনো-না-কোনো প্রলোভনে ফেঁসে গেছেন এবং আবার অন্য কোনো বন্ধনে আটকে পড়েছেন _ আবার চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলেছেন ! ফলে, সেই অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য পুনরায় শরীর ধারণ করতে হবে এবং যে ত্রিতাপ জ্বালায় জ্বলার হাত থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য সংসার ত্যাগ ও সাধন-ভজন, সেই জ্বালার মধ্যে পুনরায় প্রবেশ করতে হবে !
গৃহী মানুষেরা যেগুলিকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করেছে – তারা সেইগুলি নিয়েই থাকে এবং সেইগুলির মধ্যে থেকে __তারা তাদের জাগতিক আকর্ষণ কাটানোর চেষ্টা করে যায়(এটাই গৃহী মানুষের প্রধান সাধনা)৷ মা মহামায়াই বিভিন্ন পাকচক্রে ফেলে, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করিয়ে, জ্বালা-যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে – বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই জগতে ‘ভোগ’ অপেক্ষা ‘ভোগান্তি’-ই হয় বেশি ! তাছাড়া মানুষ যেগুলিকে ‘ভোগ’ বলে মনে করে সেগুলি তো আসলে ভোগ নয় _ওগুলি হোল ‘উপভোগ’ ! প্রকৃত অর্থে ‘ভোগ’ বলতে যা বোঝায় তা enjoy করতে পারেন যিনি_তিনি তো ভগবান !
যাইহোক, উপভোগের দ্বারাই বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে মানুষের চেতনা উন্নত হতে থাকে এবং তার মধ্যে বৈরাগ্যের সঞ্চার হয়৷ তখন এই সংসার ‘আলুনি’ (ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভাষায়, যে কোনো রান্না করা তরকারিতে নুন না থাকলে যেমন সেটা বিস্বাদ বোধ হয়) লাগে ! তার মন আর মায়া-মোহের বাঁধনে জড়াতে চায় না, তার আর ভোগ-স্পৃহায় আসক্তি থাকে না – সে পরিবার-পরিজনকে ত্যাগ করে, এসব থেকে দূরে কোথাও (কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকালয় থেকেও দূরে) চলে যেতে চায় !
এতদূর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল ! কিন্তু বৈরাগ্য অবলম্বন করে দূরে গিয়েও যদি পুনরায় কোনো মায়া-মোহের বাঁধনে ফাঁসতে হয় অথবা ভোগ-স্পৃহার আকর্ষণে পড়তে হয় – তাহলে সেটা বড়ই বেদনাদায়ক ! কত জন্মজন্মান্তরের তিক্ত অভিজ্ঞতার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মানুষ উন্নত সংস্কার অর্থাৎ ত্যাগ-বৈরাগ্যের সংস্কার লাভ করে ! আর তার ফলেই ঐ সমস্ত নর বা নারীরা গৃহস্থ জীবনে প্রবেশ না করে সন্ন্যাস জীবনকে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু সেই পবিত্র জীবনযাপনের মধ্যে থেকেও যদি মনোজগতে ক্লেদ-গ্লানি এসে যায় – তখন গুরুপরম্পরা তার প্রতি রুষ্ট হ’ন ! তাদের চরম panishment হয়। কিন্তু যদি স্বামী পরমানন্দের ন্যায় স্বয়ং ভগবান সেখানে উপস্থিত থাকেন – তখন তিনি এই মহাপাতকীর ভার নিজের দায়িত্বে নিয়ে তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দেন।৷
কিন্তু সেই মহাভাগ্যবান ব্যক্তি ‘কোটিকে গুটিক’! এই যে বলা হলো অনুভব, উপলব্ধি এবং বোধের কথা – এখানে গুরুমহারাজ এই তিনটি শব্দের ব্যাখ্যা করেছিলেন। উনি বলেছিলেন – অনু উপসর্গ যোগে অনুভব এবং উপ উপসর্গ যোগে হয় উপলব্ধি ! অণু এবং উপ এই দুই উপসর্গ যে শব্দের সাথে যোগ হয় – সেই শব্দগুলি পূর্ণতা অর্থে ব্যবহৃত হয় না বরং মূলশব্দ অপেক্ষা কম মর্যাদাব্যঞ্জক অর্থ প্রতিপন্ন করে ! তাই মানবের সাধনার অন্তিম যে লক্ষ্য পূর্ণতা – তা অনুভব বা উপলব্ধি(ব্রহ্মোপলব্ধি,ব্রহ্মের অনুভব_ইত্যাদি) এই শব্দ দিয়ে ঠিক ঠিক ব্যাখ্যায়িত করা যায় না ! এইজন্যেই গুরুমহারাজ বলেছিলেন পূর্ণতার ‘বোধ’ হয়। ব্রহ্মােপলব্ধি নয় – ব্রহ্মের “বোধে বোধ” হয়৷ “বোধে বোধ”-টি কেমন ? এর উদাহরণ দিতে গিয়ে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “যেমন ধরো, তুমি কিছু টাকা পকেটে নিয়ে বাজারে গেছো, সেখানে তুমি যে জিনিস কিনতে চাইছো – তার দরদাম করতে করতে একবার পকেটে হাত দিয়ে দেখে নিলে__ টাকাটা রয়েছে কিনা ! তুমি জানতে যে টাকাটা রয়েছে, তবু যেন একবার touch করে confirm হয়ে নেওয়া !” জীব স্বরূপতঃ ব্রহ্ম-ই – শুধু বিস্মৃতির কবলে পড়ে সে নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবছে, খণ্ড ভাবছে, সাধারণ জীব ভাবছে ! সাধন ভজনের দ্বারা কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত করে একটা একটা চক্র ভেদ করতে করতে সাধক যখন দুই ভ্রূ-র মধ্যস্থিত স্থানে অবস্থিত আজ্ঞাচক্রে স্থিতি লাভ করে – তখনই তার জীবত্বের অবসান ঘটে। জীব শিবস্থিতি লাভ করে। ওখান থেকে পুনরায় যাত্রা শুরু করে ওই মহাশক্তি যখন মস্তিষ্কস্থিত সহস্রারচক্রে এসে পৌঁছায় __তখনই জীবের আত্মসাক্ষাৎকার হয়।
যখন যখন ঈশ্বরের অবতরণ হয় – প্রায়শঃই দেখা যায়_তাঁদেরকে জীবনের যে কোনো সময়ে নির্বিকল্প সমাধি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ! তাঁরা তো সদা-সর্বদা পূর্ণত্বের বোধেই থাকেন ! তবু তাঁদের এই যে সাধনা এবং সাধনার দ্বারা নির্বিকল্প সমাধি অবস্থা লাভ__ এটা ওই পকেটে থাকা টাকাগুলোকে আর একবার ছুঁয়ে দেখার মতোই ? আর – এটাই “বোধে বোধ” অবস্থা !
যাইহোক, আমরা আগের দুটো সংখ্যায় আলোচনা করছিলাম–এমন সব সাধকদের কথা__যাঁরা সাধনার উচ্চ উচ্চ অবস্থায় পৌঁছুতে পারলেও – কোনো-না-কোনো প্রলোভনে ফেঁসে গেছেন এবং আবার অন্য কোনো বন্ধনে আটকে পড়েছেন _ আবার চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলেছেন ! ফলে, সেই অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য পুনরায় শরীর ধারণ করতে হবে এবং যে ত্রিতাপ জ্বালায় জ্বলার হাত থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য সংসার ত্যাগ ও সাধন-ভজন, সেই জ্বালার মধ্যে পুনরায় প্রবেশ করতে হবে !
গৃহী মানুষেরা যেগুলিকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করেছে – তারা সেইগুলি নিয়েই থাকে এবং সেইগুলির মধ্যে থেকে __তারা তাদের জাগতিক আকর্ষণ কাটানোর চেষ্টা করে যায়(এটাই গৃহী মানুষের প্রধান সাধনা)৷ মা মহামায়াই বিভিন্ন পাকচক্রে ফেলে, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করিয়ে, জ্বালা-যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে – বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই জগতে ‘ভোগ’ অপেক্ষা ‘ভোগান্তি’-ই হয় বেশি ! তাছাড়া মানুষ যেগুলিকে ‘ভোগ’ বলে মনে করে সেগুলি তো আসলে ভোগ নয় _ওগুলি হোল ‘উপভোগ’ ! প্রকৃত অর্থে ‘ভোগ’ বলতে যা বোঝায় তা enjoy করতে পারেন যিনি_তিনি তো ভগবান !
যাইহোক, উপভোগের দ্বারাই বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে মানুষের চেতনা উন্নত হতে থাকে এবং তার মধ্যে বৈরাগ্যের সঞ্চার হয়৷ তখন এই সংসার ‘আলুনি’ (ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভাষায়, যে কোনো রান্না করা তরকারিতে নুন না থাকলে যেমন সেটা বিস্বাদ বোধ হয়) লাগে ! তার মন আর মায়া-মোহের বাঁধনে জড়াতে চায় না, তার আর ভোগ-স্পৃহায় আসক্তি থাকে না – সে পরিবার-পরিজনকে ত্যাগ করে, এসব থেকে দূরে কোথাও (কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকালয় থেকেও দূরে) চলে যেতে চায় !
এতদূর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল ! কিন্তু বৈরাগ্য অবলম্বন করে দূরে গিয়েও যদি পুনরায় কোনো মায়া-মোহের বাঁধনে ফাঁসতে হয় অথবা ভোগ-স্পৃহার আকর্ষণে পড়তে হয় – তাহলে সেটা বড়ই বেদনাদায়ক ! কত জন্মজন্মান্তরের তিক্ত অভিজ্ঞতার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মানুষ উন্নত সংস্কার অর্থাৎ ত্যাগ-বৈরাগ্যের সংস্কার লাভ করে ! আর তার ফলেই ঐ সমস্ত নর বা নারীরা গৃহস্থ জীবনে প্রবেশ না করে সন্ন্যাস জীবনকে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু সেই পবিত্র জীবনযাপনের মধ্যে থেকেও যদি মনোজগতে ক্লেদ-গ্লানি এসে যায় – তখন গুরুপরম্পরা তার প্রতি রুষ্ট হ’ন ! তাদের চরম panishment হয়। কিন্তু যদি স্বামী পরমানন্দের ন্যায় স্বয়ং ভগবান সেখানে উপস্থিত থাকেন – তখন তিনি এই মহাপাতকীর ভার নিজের দায়িত্বে নিয়ে তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দেন।৷