গুরু মহারাজের (স্বামী পরমানন্দ)-বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কাছে বারেন্দা আশ্রমে প্রথমবার আসার ঘটনার কথা বলা হচ্ছিল । বারেন্দা আশ্রম তৈরী-ই বা হ’ল কেন – এর ইতিহাসটাও একটু জেনে নেওয়া যাক !
১৯৯১ সালের পর থেকেই কাটোয়া অঞ্চলে পরমানন্দ-ভক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে ৷ চরখীর সুব্রত চট্টোপাধ্যায় আমাদের সাথে যুক্ত হবার পর থেকে চরখী-বারেন্দা অঞ্চলে এই সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়তে থাকে ! ধানডুগির জহরদা (জহর ঘোষ) তো অনেক আগেই যুক্ত হয়ে গেছে ! সেই সময় ‘চরৈবেতি’ পত্রিকা নিয়ে স্বামী স্বরূপানন্দ স্বয়ং বছরে একবার করে আসতেন (অনেক পরে ইন্দ্রজিৎ মহারাজ/অসঙ্গানন্দ বা শম্ভু মহারাজ/সারদানন্দ পত্রিকা নিয়ে এইসব অঞ্চলে আসতো ! এখানে বলে রাখা যায় ইন্দ্রজিৎ মহারাজের নাম অসজ্ঞানন্দ নয় অসঙ্গানন্দ ! গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল , উনি বলেছিলেন – ” অসঙ্গানন্দ=অসঙ্গ + আনন্দ ! ইন্দ্রজিতের একা একা থাকতে , একা একা কাজ করতেই ভালো লাগে – এটাই ওর প্রকৃতি ! তাই অ-সঙ্গ !”) ৷ ফলে চরখী-বারেন্দা অঞ্চলে চরৈবেতি পত্রিকার গ্রাহকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিশনের ভক্তসংখ্যাও বাড়ছিল ! এছাড়াও সেই সময়ে আমাদের বাড়িতে (রশুই গ্রামে) পূর্ণানন্দ মহারাজ , কৃষ্ণানন্দ মহারাজ প্রমুখরা প্রায়ই আসতেন ৷ ওনারা এলেই আমি ওনাদের নিয়ে ঐ গ্রামগুলিতে(চরখী, বারেন্দা, যতীনপুর ইত্যাদি) বিভিন্ন ভক্তের বাড়ী নিয়ে যেতাম ! এইভাবে আমাদের একটা ছোটখাটো Unit বারেন্দা গ্রামকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়ে গিয়েছিল ৷
এইবার আসি প্রত্যক্ষ কারণে ! গুরু মহারাজের ইচ্ছায়(!) তখন (১৯৯২/৯৩) জহরদা (ঘোষ) চরখী গ্রামের অজয়ের বালি তুলে বিক্রি করার কাজে যুক্ত ছিল ! এখন যেখানে আশ্রমটি হয়েছে তখন ওখানে ‘বাগান’ ছিল । বেশ বড় বড় কয়েকটি গাছ ছিল ওখানে – ফলে স্থানটি ছিল ছায়া-সুনিবিড় ! গ্রামের মানুষের কাছে আমরা শুনেছিলাম ওখানে বহুকাল থেকেই কোন না কোন বৈষ্ণবরা আশ্রম বা আখড়া করে থাকতো ! শেষ যিনি ছিলেন তিনি ঐ গ্রামের-ই ভোলা বৈরাগী ! তাঁর সমাধির একটা ছোট নিদর্শন এখনও এই আশ্রমে রয়েছে ! যাইহোক , কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে-মধ্যেই বিশ্রাম নেবার জন্যই হোক বা ধ্যান করার জন্য _জহরদা ঐ বাগানের গাছগুলোর নীচে এসে বসতো! জহরদা এমনিতেই একটু আবেগ-উচ্ছ্বাসপ্রবণ মানুষ (গুরু মহারাজের সিটিং-এ প্রথম যেদিন Auto urine therapy -র সুফলের কথা শোনে _সেইদিনই বাথরুমে গিয়ে হাতে করে ধরে খানিকটা খেয়ে এবং মুখে মেখে নিয়ে আমাদেরকে বলেছিল – ” গুরুজীর কথা মতো খেলাম বুঝলি ! খেয়ে শরীরটা বেশ ফ্রেশ লাগছে !” অথচ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – এর ঠিক ঠিক ফল পেতে হলে নির্দিষ্ট নিয়মে খেতে হবে এবং অন্ততঃ ১২ বছর তা পালন করতে হবে ।) ! ফলে ও আমাদেরকে (সুব্রত ও আমি) প্রায়ই বলত – ” ঐ বাগানটায় একদিন এসো , দেখবে বাগানটার অন্যরকম vibration !” ওর কথাতেই হোক বা অন্য কোন কারণে একদিন আমি আর সুব্রত ওর সাথে ঐ বাগানে গিয়ে হাজির হলাম !
কিছুক্ষণ কথাবার্ত্তা চলতে চলতেই একটা অবাক করার মতো ঘটনাও ঘটল। হটাৎ করে তিনজন বাউল-বোষ্টম (দুজন বোষ্টম একজন বোষ্টমী) নদীর ধার থেকে ঐখানে ঠিক আমাদের কাছে এসে হাজির হোল ! হাতে একতারা আছে দেখে তাদেরকে গান ধরতে বলায়_ তারা খুব আনন্দ করে গানও গেয়ে দিল ! জহরদা কিছু পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের তুষ্ট করায় তারা চলে গেল ! জহরদা তখনই ঘোষণা করেছিল – ” এখানে একটা আশ্রম করলে হয় না? গুরু মহারাজ তাহলে এখানে আসতেন !”
জহরদার ঐ হঠাৎ বলা কথায় আমি খুব একটা interested ছিলাম না (কারণ পরে বলা হবে) কিন্তু সুব্রত একটু interested হয়ে পড়েছিল ! ফলে ও(সুব্রত) গ্রামে গিয়ে সমর ঘোষ , লক্ষ্মী মাষ্টার , ধর্মদাস , ব্রজগোপাল , তপন প্রমুখের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে দেয় । তখন বারেন্দা গ্রামে লক্ষ্মী মাষ্টার এবং সমর ঘোষের ভালোই প্রভাব ছিল ৷ ওরা এই জায়গার মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে ! বর্তমান মালিক সুদেব ঘোষ , ওর মা এবং ওদের এক কাকা ঐ জায়গাটি পরমানন্দ মিশনকে দান করতে আগ্রহী হয়ে যায় ! এরপর প্রয়োজন হ’ল গুরু মহারাজের অনুমতি ৷ আমি জানতাম (তখন যেহেতু প্রায়ই বনগ্রাম আশ্রম যেতাম তাই সিটিং-এ শুনেছিলাম) যে গুরু মহারাজ অনেক বড় বড় লোকের বা ধনীলোকের এই ধরনের প্রস্তাব (আশ্রম তৈরীর ) গ্রহণ করেন নি ৷ তাছাড়া উনি প্রায়ই বলতেন – ” ব্রহ্মা সবাই হতে পারে , অর্থাৎ সৃষ্টি সবাই করাতে পারে , কিন্তু ‘বিষ্ণু’ হওয়া কঠিন , অর্থাৎ সেই সৃষ্টির পুষ্টি , বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটানো এবং তা continue করা খুবই কঠিন কাজ । এটা করতে না পারলে অপরাধ হয়।”
এই সমস্ত কারনে প্রথম দিকে আমি পুরো ব্যাপারটায় passive থাকার চেষ্টা করেছিলাম_কিন্তু যখন দেখলাম আশ্রম তৈরির ব্যাপারে আমাদের এখানকার ভক্তরা অনেকটাই এগিয়ে গেছে, তখন একদিন গুরুমহারাজের কানে কথাটা তুলেছিলাম। সব শুনে উনি বললেন _”তোদের ওখানে তো অজয় নদ প্রবাহিত! অজয়ের জল বর্ষার সময় কেমন গেরূয়া রঙ ধারণ করে দেখেছিস! গেরূয়া রঙ বৈরাগ্যের প্রতীক আর যে কোন স্রোতস্বিনী_ গতিশীল জীবনের প্রতীক! তাই অজয়ের তীরে তীরে বাউল বৈষ্ণব, কবি সাহিত্যিকদের সংখ্যাধিক্য! তাছাড়া নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা খুব জীবনীশক্তি বিশিষ্ট হয়। নদীর উত্থান-পতন, তীর ভাঙাগড়ার মতো মানুষের জীবনেরও ওঠা-পড়া, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ রয়েছে! দ্যাখা গেছে, নদীতীরবর্তী স্থানের মানুষ অনেক বেশি সংগ্রামশীল হয় _ভয়ঙ্কর বন্যার সামনাসামনি মোকাবিলা করে, আবার বন্যায় সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেও অতিদ্রুত সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলে!! সুতরাং তোদের ওখানে পরমানন্দ মিশনের একটা শাখা হলে _ভালোই হবে।”
এখানে ফিরে এসে কথাগুলো সুব্রতকে বললাম। ও সাথে সাথেই তোড়জোড় শুরু করে দিল। বারেন্দা গ্রামের লোকজনদের (লক্ষীমাষ্টার, সমর ঘোষ প্রমুখরা) নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। এই ব্যাপারে সমর ঘোষ এবং লক্ষীমাষ্টার জায়গার মালিকদের সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটা আগিয়ে ই রেখেছিল। এবার ওখানে সকলে মিলে বসে একটা চিঠির draft এমনভাবে করা হোল, যেন গ্রামবাসীরা গুরুমহারাজের কাছে আবেদন রাখছে _ বারেন্দা গ্রামের প্রান্তে ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় একটা শাখা আশ্রম তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়!
যেদিন সমর ঘোষের নেতৃত্বে বারেন্দা গ্রামের ভক্তদল(2/3-জন গিয়েছিল) যাবার কথা _আমি তার আগের দিন চলে গেলাম বনগ্রামে। গুরুমহারাজকে একটু বলে রাখলাম _যে আগামীকাল বারেন্দা গ্রামের লোকজন আসতে পারে।
ভগবানকে আবার জানানো!! আর যাঁর আশ্রম _তাকে মানানো র জন্য এতো ব্যবস্থা!! হায় মনুষ্যবুদ্ধি!!
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইরকমটাই হয় __এটাও আশ্চর্য!!
পরদিন ওরা পৌঁছালো_গুরুমহারাজকে চিঠিটা ও দেওয়া হোল এবং অনুমতিও পাওয়া গেল (যেটা আগে থেকেই ঠিক ছিল)! আশ্রম তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেল _বারেন্দা গ্রামের ভক্তরাই মাটি বয়ে এনে আশ্রম ঢুকতে বাঁদিকে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় temporary ভাবে একটা মাটির ঘর তুলে ফেলল! আমাদের বাড়িতে (রশুই) 200/250 বছরের পুরোনো দালান বাড়ির একটা অংশ ভেঙে পোড়োবাড়ির মতো হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে কড়ি-বড়গা গুলো ঝুলতো আর ওর ফাঁকে যত রাজ্যের চামচিকে বাসা বেঁধেছিল। বিষাক্ত সাপও কম ছিল না!
সুব্রতর নেতৃত্বে বারেন্দা গ্রামের ছেলেরা মোষের গাড়ি নিয়ে এসে _সেই ঝুলন্ত সব কাঠ (কাঠগুলোর ভিতরটা কিন্তু খুব ভালো ছিল। 200/250-বছরেও নষ্ট হয় নি) ছাড়িয়ে ফেলল! কাঠগুলো করাত কলে চিঁড়িয়ে এনে দরজা জানালার ফ্রেম হয়ে গেল! একটা বকুল গাছ অজয় নদীর জলে পড়ে ছিল _ঐটা লোকজন যোগাড় করে নদী থেকে তুলে চেড়াই করে নিয়ে আসা হল। ওখান থেকে দরজা জানালার পাটাও হয়ে গেল। এইভাবে বারেন্দা আশ্রমের প্রথম ঘর complete হয়ে গেল ।
এবার বাকি থাকলো আশ্রমের জায়গাটি রেজিস্ট্রির কাজ ! রেজেষ্ট্রি র আগে গুরুমহারাজের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল _কি নামে রেজেষ্ট্রি হবে? উনি বলেছিলেন _”সেক্রেটারি পরমানন্দ মিশন! “।(ক্রমশঃ)
১৯৯১ সালের পর থেকেই কাটোয়া অঞ্চলে পরমানন্দ-ভক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে ৷ চরখীর সুব্রত চট্টোপাধ্যায় আমাদের সাথে যুক্ত হবার পর থেকে চরখী-বারেন্দা অঞ্চলে এই সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়তে থাকে ! ধানডুগির জহরদা (জহর ঘোষ) তো অনেক আগেই যুক্ত হয়ে গেছে ! সেই সময় ‘চরৈবেতি’ পত্রিকা নিয়ে স্বামী স্বরূপানন্দ স্বয়ং বছরে একবার করে আসতেন (অনেক পরে ইন্দ্রজিৎ মহারাজ/অসঙ্গানন্দ বা শম্ভু মহারাজ/সারদানন্দ পত্রিকা নিয়ে এইসব অঞ্চলে আসতো ! এখানে বলে রাখা যায় ইন্দ্রজিৎ মহারাজের নাম অসজ্ঞানন্দ নয় অসঙ্গানন্দ ! গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল , উনি বলেছিলেন – ” অসঙ্গানন্দ=অসঙ্গ + আনন্দ ! ইন্দ্রজিতের একা একা থাকতে , একা একা কাজ করতেই ভালো লাগে – এটাই ওর প্রকৃতি ! তাই অ-সঙ্গ !”) ৷ ফলে চরখী-বারেন্দা অঞ্চলে চরৈবেতি পত্রিকার গ্রাহকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিশনের ভক্তসংখ্যাও বাড়ছিল ! এছাড়াও সেই সময়ে আমাদের বাড়িতে (রশুই গ্রামে) পূর্ণানন্দ মহারাজ , কৃষ্ণানন্দ মহারাজ প্রমুখরা প্রায়ই আসতেন ৷ ওনারা এলেই আমি ওনাদের নিয়ে ঐ গ্রামগুলিতে(চরখী, বারেন্দা, যতীনপুর ইত্যাদি) বিভিন্ন ভক্তের বাড়ী নিয়ে যেতাম ! এইভাবে আমাদের একটা ছোটখাটো Unit বারেন্দা গ্রামকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়ে গিয়েছিল ৷
এইবার আসি প্রত্যক্ষ কারণে ! গুরু মহারাজের ইচ্ছায়(!) তখন (১৯৯২/৯৩) জহরদা (ঘোষ) চরখী গ্রামের অজয়ের বালি তুলে বিক্রি করার কাজে যুক্ত ছিল ! এখন যেখানে আশ্রমটি হয়েছে তখন ওখানে ‘বাগান’ ছিল । বেশ বড় বড় কয়েকটি গাছ ছিল ওখানে – ফলে স্থানটি ছিল ছায়া-সুনিবিড় ! গ্রামের মানুষের কাছে আমরা শুনেছিলাম ওখানে বহুকাল থেকেই কোন না কোন বৈষ্ণবরা আশ্রম বা আখড়া করে থাকতো ! শেষ যিনি ছিলেন তিনি ঐ গ্রামের-ই ভোলা বৈরাগী ! তাঁর সমাধির একটা ছোট নিদর্শন এখনও এই আশ্রমে রয়েছে ! যাইহোক , কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে-মধ্যেই বিশ্রাম নেবার জন্যই হোক বা ধ্যান করার জন্য _জহরদা ঐ বাগানের গাছগুলোর নীচে এসে বসতো! জহরদা এমনিতেই একটু আবেগ-উচ্ছ্বাসপ্রবণ মানুষ (গুরু মহারাজের সিটিং-এ প্রথম যেদিন Auto urine therapy -র সুফলের কথা শোনে _সেইদিনই বাথরুমে গিয়ে হাতে করে ধরে খানিকটা খেয়ে এবং মুখে মেখে নিয়ে আমাদেরকে বলেছিল – ” গুরুজীর কথা মতো খেলাম বুঝলি ! খেয়ে শরীরটা বেশ ফ্রেশ লাগছে !” অথচ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – এর ঠিক ঠিক ফল পেতে হলে নির্দিষ্ট নিয়মে খেতে হবে এবং অন্ততঃ ১২ বছর তা পালন করতে হবে ।) ! ফলে ও আমাদেরকে (সুব্রত ও আমি) প্রায়ই বলত – ” ঐ বাগানটায় একদিন এসো , দেখবে বাগানটার অন্যরকম vibration !” ওর কথাতেই হোক বা অন্য কোন কারণে একদিন আমি আর সুব্রত ওর সাথে ঐ বাগানে গিয়ে হাজির হলাম !
কিছুক্ষণ কথাবার্ত্তা চলতে চলতেই একটা অবাক করার মতো ঘটনাও ঘটল। হটাৎ করে তিনজন বাউল-বোষ্টম (দুজন বোষ্টম একজন বোষ্টমী) নদীর ধার থেকে ঐখানে ঠিক আমাদের কাছে এসে হাজির হোল ! হাতে একতারা আছে দেখে তাদেরকে গান ধরতে বলায়_ তারা খুব আনন্দ করে গানও গেয়ে দিল ! জহরদা কিছু পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের তুষ্ট করায় তারা চলে গেল ! জহরদা তখনই ঘোষণা করেছিল – ” এখানে একটা আশ্রম করলে হয় না? গুরু মহারাজ তাহলে এখানে আসতেন !”
জহরদার ঐ হঠাৎ বলা কথায় আমি খুব একটা interested ছিলাম না (কারণ পরে বলা হবে) কিন্তু সুব্রত একটু interested হয়ে পড়েছিল ! ফলে ও(সুব্রত) গ্রামে গিয়ে সমর ঘোষ , লক্ষ্মী মাষ্টার , ধর্মদাস , ব্রজগোপাল , তপন প্রমুখের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে দেয় । তখন বারেন্দা গ্রামে লক্ষ্মী মাষ্টার এবং সমর ঘোষের ভালোই প্রভাব ছিল ৷ ওরা এই জায়গার মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে ! বর্তমান মালিক সুদেব ঘোষ , ওর মা এবং ওদের এক কাকা ঐ জায়গাটি পরমানন্দ মিশনকে দান করতে আগ্রহী হয়ে যায় ! এরপর প্রয়োজন হ’ল গুরু মহারাজের অনুমতি ৷ আমি জানতাম (তখন যেহেতু প্রায়ই বনগ্রাম আশ্রম যেতাম তাই সিটিং-এ শুনেছিলাম) যে গুরু মহারাজ অনেক বড় বড় লোকের বা ধনীলোকের এই ধরনের প্রস্তাব (আশ্রম তৈরীর ) গ্রহণ করেন নি ৷ তাছাড়া উনি প্রায়ই বলতেন – ” ব্রহ্মা সবাই হতে পারে , অর্থাৎ সৃষ্টি সবাই করাতে পারে , কিন্তু ‘বিষ্ণু’ হওয়া কঠিন , অর্থাৎ সেই সৃষ্টির পুষ্টি , বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটানো এবং তা continue করা খুবই কঠিন কাজ । এটা করতে না পারলে অপরাধ হয়।”
এই সমস্ত কারনে প্রথম দিকে আমি পুরো ব্যাপারটায় passive থাকার চেষ্টা করেছিলাম_কিন্তু যখন দেখলাম আশ্রম তৈরির ব্যাপারে আমাদের এখানকার ভক্তরা অনেকটাই এগিয়ে গেছে, তখন একদিন গুরুমহারাজের কানে কথাটা তুলেছিলাম। সব শুনে উনি বললেন _”তোদের ওখানে তো অজয় নদ প্রবাহিত! অজয়ের জল বর্ষার সময় কেমন গেরূয়া রঙ ধারণ করে দেখেছিস! গেরূয়া রঙ বৈরাগ্যের প্রতীক আর যে কোন স্রোতস্বিনী_ গতিশীল জীবনের প্রতীক! তাই অজয়ের তীরে তীরে বাউল বৈষ্ণব, কবি সাহিত্যিকদের সংখ্যাধিক্য! তাছাড়া নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা খুব জীবনীশক্তি বিশিষ্ট হয়। নদীর উত্থান-পতন, তীর ভাঙাগড়ার মতো মানুষের জীবনেরও ওঠা-পড়া, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ রয়েছে! দ্যাখা গেছে, নদীতীরবর্তী স্থানের মানুষ অনেক বেশি সংগ্রামশীল হয় _ভয়ঙ্কর বন্যার সামনাসামনি মোকাবিলা করে, আবার বন্যায় সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেও অতিদ্রুত সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলে!! সুতরাং তোদের ওখানে পরমানন্দ মিশনের একটা শাখা হলে _ভালোই হবে।”
এখানে ফিরে এসে কথাগুলো সুব্রতকে বললাম। ও সাথে সাথেই তোড়জোড় শুরু করে দিল। বারেন্দা গ্রামের লোকজনদের (লক্ষীমাষ্টার, সমর ঘোষ প্রমুখরা) নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। এই ব্যাপারে সমর ঘোষ এবং লক্ষীমাষ্টার জায়গার মালিকদের সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটা আগিয়ে ই রেখেছিল। এবার ওখানে সকলে মিলে বসে একটা চিঠির draft এমনভাবে করা হোল, যেন গ্রামবাসীরা গুরুমহারাজের কাছে আবেদন রাখছে _ বারেন্দা গ্রামের প্রান্তে ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় একটা শাখা আশ্রম তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়!
যেদিন সমর ঘোষের নেতৃত্বে বারেন্দা গ্রামের ভক্তদল(2/3-জন গিয়েছিল) যাবার কথা _আমি তার আগের দিন চলে গেলাম বনগ্রামে। গুরুমহারাজকে একটু বলে রাখলাম _যে আগামীকাল বারেন্দা গ্রামের লোকজন আসতে পারে।
ভগবানকে আবার জানানো!! আর যাঁর আশ্রম _তাকে মানানো র জন্য এতো ব্যবস্থা!! হায় মনুষ্যবুদ্ধি!!
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইরকমটাই হয় __এটাও আশ্চর্য!!
পরদিন ওরা পৌঁছালো_গুরুমহারাজকে চিঠিটা ও দেওয়া হোল এবং অনুমতিও পাওয়া গেল (যেটা আগে থেকেই ঠিক ছিল)! আশ্রম তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেল _বারেন্দা গ্রামের ভক্তরাই মাটি বয়ে এনে আশ্রম ঢুকতে বাঁদিকে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় temporary ভাবে একটা মাটির ঘর তুলে ফেলল! আমাদের বাড়িতে (রশুই) 200/250 বছরের পুরোনো দালান বাড়ির একটা অংশ ভেঙে পোড়োবাড়ির মতো হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে কড়ি-বড়গা গুলো ঝুলতো আর ওর ফাঁকে যত রাজ্যের চামচিকে বাসা বেঁধেছিল। বিষাক্ত সাপও কম ছিল না!
সুব্রতর নেতৃত্বে বারেন্দা গ্রামের ছেলেরা মোষের গাড়ি নিয়ে এসে _সেই ঝুলন্ত সব কাঠ (কাঠগুলোর ভিতরটা কিন্তু খুব ভালো ছিল। 200/250-বছরেও নষ্ট হয় নি) ছাড়িয়ে ফেলল! কাঠগুলো করাত কলে চিঁড়িয়ে এনে দরজা জানালার ফ্রেম হয়ে গেল! একটা বকুল গাছ অজয় নদীর জলে পড়ে ছিল _ঐটা লোকজন যোগাড় করে নদী থেকে তুলে চেড়াই করে নিয়ে আসা হল। ওখান থেকে দরজা জানালার পাটাও হয়ে গেল। এইভাবে বারেন্দা আশ্রমের প্রথম ঘর complete হয়ে গেল ।
এবার বাকি থাকলো আশ্রমের জায়গাটি রেজিস্ট্রির কাজ ! রেজেষ্ট্রি র আগে গুরুমহারাজের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল _কি নামে রেজেষ্ট্রি হবে? উনি বলেছিলেন _”সেক্রেটারি পরমানন্দ মিশন! “।(ক্রমশঃ)