শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের ‘মহিমা’র প্রকাশ নিয়ে কথা হচ্ছিলো ! প্রথমেই আমি নিজে যেটুকু দেখেছি বা বুঝেছি – সেটা নিয়ে আলোচনা করবো এবং তারপর গুরুমহারাজের কাছে শোনা এবং অন্যান্য ভক্তদের কাছে শোনা ঘটনার কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
আমি আগেই আপনাদের বলেছি যে স্বামী পূর্ণানন্দ মহারাজ (তৎকালীন অনুপদা)-ই প্রথম আমার দাদা গঙ্গাবাবু (গঙ্গানারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং আমাকে গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের সাথে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন। সেইজন্যে ঐ মহারাজকেও আমার দ্বিতীয় গুরুর মতোই মনে হোতো ! পরবর্তীতে গুরু মহারাজের অলৌকিক, অপার্থিব ‘মহিমা’ শক্তির প্রভাবে – আমাদের মতো সাধারণ ভক্তদের সমস্ত concentration-টুকু গুরুমহারাজ সম্পূর্ণভাবে নিজের দিকে আকর্ষণ করে নিয়েছিলেন। ফলে গুরুমহারাজ থাকাকালীন বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনের বাকি সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী-ভক্তদের সাথে শুধু স্নেহ-ভালোবাসা-প্রেম-প্রীতির একটা সুসম্পর্ক-ই বজায় ছিল – আলাদা করে ভাবার বা সময় দেওয়ার কথা সেইসময় মনেই হয় নি ! সেই সময়ে আশ্রমের অন্যান্য সাধু-ব্রহ্মচারীরাও এই ব্যাপারে কেউ কিছু মনে করতেন না – কারণ তাঁদেরও তো সকলের সমস্ত concentration ছিল তখন ঐ গুরুমহারাজকে কেন্দ্র করেই !
আহা ! কি দিনই আমরা কাটিয়েছি ! বনগ্রামে তখন রাত্রে থাকার তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নাই, খাবারের মান এমন কিছু ভালো নয় – তবু সাধু-ব্রহ্মচারী আমাদের মতো গৃহী ভক্তরা একসাথে খাওয়া, একসাথে শোয়া, হইহই করে সময় কাটানো আর সকাল-বিকাল এবং সন্ধ্যায় (ন’কাকাদের বাড়িতে) ভগবান পরমানন্দের শ্রীমুখের বেদমন্ত্র সদৃশ বাণী অথবা উপনিষদের সারাংশ কথন ! এসব যদি নাও হোত, তাহলে বসতো সঙ্গীতের আসর ! গুরু গম্ভীর আলোচনা না হোলেও অর্থাৎ নিতান্ত সাধারণ আলোচনাও কি অপূর্ব যে লাগতো ! উপস্থিত সকলের মনে হোতো – “এই রাত যদি না শেষ হয় !”
আর এমনটা হোতোও মাঝেমাঝে ! সারারাত ধরে চলতো আলোচনা – আর মাঝে মাঝেই ছুটতো হাসির ফোয়ারা ! সেই আনন্দময় পুরুষ সিটিং-এ সকলকে কি আনন্দ-ই না দিতেন ! উনি নিজে যখন হাসতেন __তখন মনে হোত যেন ওনার সর্ব অঙ্গ হাসছে ! আনন্দের অভিব্যক্তিও যে এতো নিখুঁত – এত স্পষ্টভাবে কোনো মানুষের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠতে পারে, তা গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দকে না দেখলে আমরা বুঝতেই পারতাম না !
অন্যান্য আশ্রমের সাধুদের দেখতাম গৃহীদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে ! প্রণামীটা নেবার সময় টুক্ করে নিয়ে নেয় কিন্তু কাছে ঘেঁষতে দেয় না ! কিন্তু সুযোগ পেলেই জ্ঞানটা দিতে ছাড়ে না ! যেন তারা ধরেই নিয়েছে যে, সকল মানুষকে জ্ঞান দেবার অধিকার তাদের একারই ! তার নিজের ধারণা কতটা হয়েছে – সেটা দেখার প্রয়োজন নাই ! শ্রীরামকৃষ্ণপন্থী সাধু হোলে তো কথাই নাই – তারা যেন elite সম্প্রদায়ের সাধু !! তারা শুধু গৃহী কেন – অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাধু-সন্তকেও পাত্তা দেয় না ! কিন্তু গুরুমহারাজ শরীরে থাকাকালীন আমাদের আশ্রমের সাধু-সন্তদের মধ্যে এই মনোভাব কখনোই জাগ্রত হোতে পারে নি, কারণ তারা সকলেই জানতো যে, ‘গুরু মহারাজ-ই বড়ো, বাকি সবাই ছোট।’ আর এই যে term -“বড়ো”– এটা কতটা বড়ো, কতটা গরিষ্ঠ, কতটা মহিমামণ্ডিত – যে তার ব্যাখ্যার শেষ করা যায় না ! সুতরাং সেই বিরাট-বিশাল-বড়ত্বের কাছে ‘আমি সাধু-সন্ত-উন্নত অবস্থার ভক্ত ইত্যাদি হোলেও __আমি অতি ক্ষুদ্র’ ! সেইজন্যেই তারাও আমাদের মতো সাধারণ গৃহী-ভক্তদের সাথে অনায়াসে মিশতে দ্বিধাবোধ কোরতো না ! এখন যেহেতু গুরুমহারাজের স্থূল শরীর আর নাই – তাই হয়তো এখন পরমানন্দ মিশনের নবীন সাধু-সন্তদের মধ্যেও ঐরূপ বাইরের সাধুদের ভাব প্রবেশ করে যেতে পারে ! কিন্তু সিনিয়র সাধুদের মধ্যে এখনও পূর্বের ভাব-টাই বিদ্যমান রয়েছে !
এইসব কথার মাধ্যমে বোঝাতে পারলাম কি ভগবানের ‘মহিমা’র একটা বিশেষ দিক ! তিনি বড়ো, তিনি গরিষ্ঠ, তিনি মহান, তিনি মহিমময় ! আর এই যে ‘বড়ো’ এটা কতো ‘বড়ো’ – তার কূলকিনারা পাওয়া যায় না ! কূলকিনারা পাওয়া যায় না বলেই তো সমকালীন শিক্ষিত, ধনী, উচ্চকূলজাত, জ্ঞানী, সাধু-সন্ন্যাসী – ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত ব্যক্তিরাও নিজেদেরকে সেই ‘বড়ো’-র কাছে ক্ষুদ্র বা অতিক্ষুদ্র ভাবতে বাধ্য হোত। আর এইজন্যেই তখন বনগ্রাম আশ্রমে একটা ‘সাম্যবোধ’ (সাম্যবাদ নয়) কাজ করতো ! একটু-আধটু উঁচু-নিচুটাকেও সমান বলে মনে হোতো ! আমি ধনী তো কি হয়েছে – পরমানন্দের মতো ধনী তো নই ! আমি শিক্ষিত কি আমি সাধু-সন্ত – তো কি হয়েছে – আমি তো আর পরমানন্দ নই !
বুঝতে পারলেন কি__আমি কি বলতে চাইলাম ! যে কোনো মঠ-মিশনের সাধু-সন্তদের মধ্যে আজকেও যে ছোঁয়াছুঁয়ি, অস্পৃশ্যতার ভাব(গৃহী-সন্ন্যাসী sentiment) বিদ্যমান রয়েছে দেখা যায় – ওনাদের পরম্পরারও মূল গুরু যখন শরীরে ছিলেন – তখন কিন্তু তাদের আশ্রমেও এই একই চিত্র বিরাজিত ছিল ! অর্থাৎ তখন তাদের মধ্যেও এই sentiment কাজ কোরতো না!
তাই প্রয়োজন একজন মহিমময় ব্যক্তির(যাঁর মধ্যে মহিমা শক্তির স্বতঃপ্রকাশ) ! যিনি সূর্যের মতো – যাঁর আলোতেই সবকিছু আলোকিত ! যার তুলনায় লন্ঠন, 100 watt-এর বাল্ব, 1000 watt-এর বাল্ব সব-ই ম্লান ! মানব সমাজের মধ্যেও যে বিভেদ, বিবাদ-বিসম্বাদ – এগুলি মিটে যেতে পারে যদি সমাজ এই ধরনের কোনো মহিমময় মানুষকে আদর্শ করে চলতে পারে। কিন্তু সেটা তো হবার নয় – কারণ মহামায়ার জগৎ, তিনি যেভাবে চালাবেন জগৎ-ও সেইরকম-ই চলবে !(ক্রমশঃ)
আমি আগেই আপনাদের বলেছি যে স্বামী পূর্ণানন্দ মহারাজ (তৎকালীন অনুপদা)-ই প্রথম আমার দাদা গঙ্গাবাবু (গঙ্গানারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং আমাকে গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের সাথে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন। সেইজন্যে ঐ মহারাজকেও আমার দ্বিতীয় গুরুর মতোই মনে হোতো ! পরবর্তীতে গুরু মহারাজের অলৌকিক, অপার্থিব ‘মহিমা’ শক্তির প্রভাবে – আমাদের মতো সাধারণ ভক্তদের সমস্ত concentration-টুকু গুরুমহারাজ সম্পূর্ণভাবে নিজের দিকে আকর্ষণ করে নিয়েছিলেন। ফলে গুরুমহারাজ থাকাকালীন বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনের বাকি সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী-ভক্তদের সাথে শুধু স্নেহ-ভালোবাসা-প্রেম-প্রীতির একটা সুসম্পর্ক-ই বজায় ছিল – আলাদা করে ভাবার বা সময় দেওয়ার কথা সেইসময় মনেই হয় নি ! সেই সময়ে আশ্রমের অন্যান্য সাধু-ব্রহ্মচারীরাও এই ব্যাপারে কেউ কিছু মনে করতেন না – কারণ তাঁদেরও তো সকলের সমস্ত concentration ছিল তখন ঐ গুরুমহারাজকে কেন্দ্র করেই !
আহা ! কি দিনই আমরা কাটিয়েছি ! বনগ্রামে তখন রাত্রে থাকার তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নাই, খাবারের মান এমন কিছু ভালো নয় – তবু সাধু-ব্রহ্মচারী আমাদের মতো গৃহী ভক্তরা একসাথে খাওয়া, একসাথে শোয়া, হইহই করে সময় কাটানো আর সকাল-বিকাল এবং সন্ধ্যায় (ন’কাকাদের বাড়িতে) ভগবান পরমানন্দের শ্রীমুখের বেদমন্ত্র সদৃশ বাণী অথবা উপনিষদের সারাংশ কথন ! এসব যদি নাও হোত, তাহলে বসতো সঙ্গীতের আসর ! গুরু গম্ভীর আলোচনা না হোলেও অর্থাৎ নিতান্ত সাধারণ আলোচনাও কি অপূর্ব যে লাগতো ! উপস্থিত সকলের মনে হোতো – “এই রাত যদি না শেষ হয় !”
আর এমনটা হোতোও মাঝেমাঝে ! সারারাত ধরে চলতো আলোচনা – আর মাঝে মাঝেই ছুটতো হাসির ফোয়ারা ! সেই আনন্দময় পুরুষ সিটিং-এ সকলকে কি আনন্দ-ই না দিতেন ! উনি নিজে যখন হাসতেন __তখন মনে হোত যেন ওনার সর্ব অঙ্গ হাসছে ! আনন্দের অভিব্যক্তিও যে এতো নিখুঁত – এত স্পষ্টভাবে কোনো মানুষের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠতে পারে, তা গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দকে না দেখলে আমরা বুঝতেই পারতাম না !
অন্যান্য আশ্রমের সাধুদের দেখতাম গৃহীদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে ! প্রণামীটা নেবার সময় টুক্ করে নিয়ে নেয় কিন্তু কাছে ঘেঁষতে দেয় না ! কিন্তু সুযোগ পেলেই জ্ঞানটা দিতে ছাড়ে না ! যেন তারা ধরেই নিয়েছে যে, সকল মানুষকে জ্ঞান দেবার অধিকার তাদের একারই ! তার নিজের ধারণা কতটা হয়েছে – সেটা দেখার প্রয়োজন নাই ! শ্রীরামকৃষ্ণপন্থী সাধু হোলে তো কথাই নাই – তারা যেন elite সম্প্রদায়ের সাধু !! তারা শুধু গৃহী কেন – অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাধু-সন্তকেও পাত্তা দেয় না ! কিন্তু গুরুমহারাজ শরীরে থাকাকালীন আমাদের আশ্রমের সাধু-সন্তদের মধ্যে এই মনোভাব কখনোই জাগ্রত হোতে পারে নি, কারণ তারা সকলেই জানতো যে, ‘গুরু মহারাজ-ই বড়ো, বাকি সবাই ছোট।’ আর এই যে term -“বড়ো”– এটা কতটা বড়ো, কতটা গরিষ্ঠ, কতটা মহিমামণ্ডিত – যে তার ব্যাখ্যার শেষ করা যায় না ! সুতরাং সেই বিরাট-বিশাল-বড়ত্বের কাছে ‘আমি সাধু-সন্ত-উন্নত অবস্থার ভক্ত ইত্যাদি হোলেও __আমি অতি ক্ষুদ্র’ ! সেইজন্যেই তারাও আমাদের মতো সাধারণ গৃহী-ভক্তদের সাথে অনায়াসে মিশতে দ্বিধাবোধ কোরতো না ! এখন যেহেতু গুরুমহারাজের স্থূল শরীর আর নাই – তাই হয়তো এখন পরমানন্দ মিশনের নবীন সাধু-সন্তদের মধ্যেও ঐরূপ বাইরের সাধুদের ভাব প্রবেশ করে যেতে পারে ! কিন্তু সিনিয়র সাধুদের মধ্যে এখনও পূর্বের ভাব-টাই বিদ্যমান রয়েছে !
এইসব কথার মাধ্যমে বোঝাতে পারলাম কি ভগবানের ‘মহিমা’র একটা বিশেষ দিক ! তিনি বড়ো, তিনি গরিষ্ঠ, তিনি মহান, তিনি মহিমময় ! আর এই যে ‘বড়ো’ এটা কতো ‘বড়ো’ – তার কূলকিনারা পাওয়া যায় না ! কূলকিনারা পাওয়া যায় না বলেই তো সমকালীন শিক্ষিত, ধনী, উচ্চকূলজাত, জ্ঞানী, সাধু-সন্ন্যাসী – ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত ব্যক্তিরাও নিজেদেরকে সেই ‘বড়ো’-র কাছে ক্ষুদ্র বা অতিক্ষুদ্র ভাবতে বাধ্য হোত। আর এইজন্যেই তখন বনগ্রাম আশ্রমে একটা ‘সাম্যবোধ’ (সাম্যবাদ নয়) কাজ করতো ! একটু-আধটু উঁচু-নিচুটাকেও সমান বলে মনে হোতো ! আমি ধনী তো কি হয়েছে – পরমানন্দের মতো ধনী তো নই ! আমি শিক্ষিত কি আমি সাধু-সন্ত – তো কি হয়েছে – আমি তো আর পরমানন্দ নই !
বুঝতে পারলেন কি__আমি কি বলতে চাইলাম ! যে কোনো মঠ-মিশনের সাধু-সন্তদের মধ্যে আজকেও যে ছোঁয়াছুঁয়ি, অস্পৃশ্যতার ভাব(গৃহী-সন্ন্যাসী sentiment) বিদ্যমান রয়েছে দেখা যায় – ওনাদের পরম্পরারও মূল গুরু যখন শরীরে ছিলেন – তখন কিন্তু তাদের আশ্রমেও এই একই চিত্র বিরাজিত ছিল ! অর্থাৎ তখন তাদের মধ্যেও এই sentiment কাজ কোরতো না!
তাই প্রয়োজন একজন মহিমময় ব্যক্তির(যাঁর মধ্যে মহিমা শক্তির স্বতঃপ্রকাশ) ! যিনি সূর্যের মতো – যাঁর আলোতেই সবকিছু আলোকিত ! যার তুলনায় লন্ঠন, 100 watt-এর বাল্ব, 1000 watt-এর বাল্ব সব-ই ম্লান ! মানব সমাজের মধ্যেও যে বিভেদ, বিবাদ-বিসম্বাদ – এগুলি মিটে যেতে পারে যদি সমাজ এই ধরনের কোনো মহিমময় মানুষকে আদর্শ করে চলতে পারে। কিন্তু সেটা তো হবার নয় – কারণ মহামায়ার জগৎ, তিনি যেভাবে চালাবেন জগৎ-ও সেইরকম-ই চলবে !(ক্রমশঃ)