শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ নিজেই তাঁর স্বরচিত প্রথম দিকের গ্রন্থগুলি(সহজতা ও প্রেম, বাউলের মর্মকথা, বাউল কথা – ১ম খন্ড, ২য় খন্ড ইত্যাদি ওনার নিজের হাতে লেখা গ্রন্থ।)-তে বারবার উল্লেখ করেছেন – ” আনন্দ প্রতিষ্ঠিত, পরমেশ্বরের মহিমা অপার !” “মহিমা অ-পার” অর্থাৎ যার ‘পার’ পাওয়া যায় না ! পরমেশ্বরের করুণা ও কৃপার প্রবাহ সবসময়েই প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এবার যার যেমন পাত্র – সে ততটুকুই ধরতে পারে ! এর বাইরে তার সাধ্য কোথায় ? ধরতে মন চাইলেও আধারের ক্ষুদ্রতায় ধরা যায় না ! তাহলে এখানে একটা জিজ্ঞাসা তো এসেই যাচ্ছে – আমাদের পাত্র বা আধারগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কেন ? একে কি বৃহৎ করা যায় না ?
নিশ্চয়ই যায় ! গুরুমহারাজই এই কথার উত্তর দিয়েছিলেন – উনি বলেছিলেন যে, ‘যখন কোন বৃহৎ বৃত্ত আঁকতে হয়, তখন প্রথমেই প্রয়োজন হয় একটি বিন্দু বা কেন্দ্রকে নির্দিষ্ট করার ! এইবার ওই কেন্দ্রটিকে নির্দিষ্ট(fixed) রেখে পরিধি বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমরা বড় বৃত্ত, আরো বড় বৃত্ত, আরো আরো বড় বৃত্ত – চাইকি এই সমগ্র পৃথিবী-জোড়া বৃত্তও আঁকতে পারি! বৃত্ত যত বড়ই হোক না কেন __কেন্দ্র সেই একটি নির্দিষ্ট বিন্দু !’
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ‘এখানে কেন্দ্র বিন্দুটি হলো এক একজন ব্যক্তি। সে তার sphere-টা কে শুধু তার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে, না তার গণ্ডিকে বাড়িয়ে সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেবে অথবা সে নিজেকে সমগ্র দেশের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করবে – আবার এমনটাও হতে পারে যে, কোন ব্যক্তি দেশের গন্ডিও ছাপিয়ে নিজেকে সমগ্র পৃথিবীর কোনায় কোনায় পরিব্যাপ্ত করতে পারলো !
ব্যক্তি কিন্তু সেই ব্যক্তি-ই রইলো – কিন্তু ব্যক্তিভেদে তার গণ্ডি বা সীমা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ-এর দিকে আগাতে আগাতে সমগ্র জগৎ পরিব্যপ্ত হয়ে গেল ! আমরা এমন অনেক মানুষকে পেয়েছি __যেমন ভগবান বুদ্ধ, প্রভু যীশু,স্বামী বিবেকানন্দ, হজরত মুহাম্মদ প্রমুখেরা ! পৃথিবীর কোনো একটি প্রান্তে, ছোট একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও এঁদের মহিমার প্রকাশ জগতে পরিব্যাপ্ত !
ভগবান পরমানন্দের মহিমার কথাও সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত হবে – এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা ! স্বামী পরমানন্দকে বর্ধমান জেলার বনগ্রাম আশ্রমে আমরা দেখলাম ব’লে __যদি আমরা বাঙালিরা মনে করি যে, আমরাই পরমানন্দের মহিমা শক্তির প্রকাশ দেখেছি বা একটু-আধটু বুঝেছি – তাহলে সেটা ভুল ভাবনা ! বাংলা ছাড়াও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ গুরুমহারাজের ভক্ত ছিল এবং তারা সকলেই কিছু-না-কিছু মহিমার প্রকাশ দেখেছে ! সুদূর ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশের ভক্তগণ, আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রের অনেক মানুষ, এশিয়া মহাদেশের ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল ইত্যাদি দেশের অনেক মানুষ যারা পরমানন্দের সংস্পর্শে এসেছিলেন (এদের অনেকের কথা হয়তো আমরা জানিই না) _ তারাও পরমানন্দের কৃপা ও করুনালাভে ধন্য হয়েছে ! তাঁর সংস্পর্শে আসেনি এমন অনেকেই পরবর্তীতে শুধুমাত্র তাঁর সম্বন্ধে কথা শুনে বা পরমানন্দ বিষয়ক বই পড়ে ইতিমধ্যেই ভগবান পরমানন্দের মহিমা শক্তির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছে ! এরপর যতদিন যাবে, ততই এই প্রভাব বাড়তে বাড়তে সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত হবে।
গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – এই সচ্চিদানন্দ (ব্রহ্ম) সাগরের মধ্যেই পৃথিবীর সমস্ত জীব রয়েছে। তাইতো জীব স্বরূপতঃ ব্রহ্ম ! তবে কোটি কোটি জীবের প্রকাশের তারতম্য, শক্তির তারতম্য রয়েছে ! যেমন সমুদ্রের বুকে বিরাট বিরাট তরঙ্গ উঠছে, যারা সৃষ্টি হবার পর বহুদূর পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত হচ্ছে, সুনামি বা সাইক্লোন ইত্যাদির ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ তো সমুদ্রবক্ষ ছেড়ে উপকূল ভাগকেও প্লাবিত করতে পারে। আবার সমুদ্রের বুকেই সৃষ্ট অজস্র ছোট ছোট তরঙ্গের বিস্তৃতি স্বল্প ! আবার কোটি কোটি বুদ্বুদও ওই মহাসমুদ্রেই সৃষ্টি হচ্ছে – কিন্তু সাথে সাথেই আবার তাতেই মিলিয়ে যাচ্ছে !
বিভিন্ন মহাপুরুষরা যেন শক্তিশালী তরঙ্গ, অবতারপুরুষেরা সুনামি বা সাইক্লোনের ফলে সৃষ্ট মহাতরঙ্গ, আর সিদ্ধ সাধকেরা যেন ছোট ছোট তরঙ্গ – আর আমরা সাধারণ জীবেরা বুদ্বুদের ন্যায় – মহাসমুদ্রের বুকে জন্মাচ্ছি, অল্প স্থায়িত্বকাল নিয়ে থেকেই আবার সেখানেই মিলিয়ে যাচ্ছি !
কিন্তু এই উদাহরণ দিয়ে সবটা বোঝানো যায় না (গুরুমহারাজ বলেছিলেন – জড় দিয়ে জীবনের উদাহরণ দেওয়া যায় না – খানিকটা বোঝানো যায় মাত্র!) কারণ জীবরূপ বুদ্বুদের মধ্যে ‘অহং’রূপ একটা identity কাজ করে – তাই সে entity-র সঙ্গে একাত্ম হতে পারে না ! আর ওই identy crisis-ই তাকে মৃত্যুর পরে আবার পুনরায় জন্ম নিতে বাধ্য করে !
আজ আলোচনায় যা যা আপনাদেরকে বলবো মনে করেছিলাম, তা আর বলা হোলো না ! আলোচনার সূত্র আমাদেরকে কোথায় নিয়ে চলে গেল ! ঠিক আছে – ঈশ্বরের ইচ্ছা ছাড়া যদি গাছের পাতাটাও না নড়ে – তাহলে এটিকেও ঈশ্বরের ইচ্ছা বলেই মেনে নিতে হবে। তাই পরবর্তী এপিসোডে ভগবান পরমানন্দের মহিমা শক্তির যে যে প্রকাশ আমরা স্বচক্ষে দেখছিলাম সেগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে ! (ক্রমশঃ)
নিশ্চয়ই যায় ! গুরুমহারাজই এই কথার উত্তর দিয়েছিলেন – উনি বলেছিলেন যে, ‘যখন কোন বৃহৎ বৃত্ত আঁকতে হয়, তখন প্রথমেই প্রয়োজন হয় একটি বিন্দু বা কেন্দ্রকে নির্দিষ্ট করার ! এইবার ওই কেন্দ্রটিকে নির্দিষ্ট(fixed) রেখে পরিধি বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমরা বড় বৃত্ত, আরো বড় বৃত্ত, আরো আরো বড় বৃত্ত – চাইকি এই সমগ্র পৃথিবী-জোড়া বৃত্তও আঁকতে পারি! বৃত্ত যত বড়ই হোক না কেন __কেন্দ্র সেই একটি নির্দিষ্ট বিন্দু !’
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ‘এখানে কেন্দ্র বিন্দুটি হলো এক একজন ব্যক্তি। সে তার sphere-টা কে শুধু তার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে, না তার গণ্ডিকে বাড়িয়ে সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেবে অথবা সে নিজেকে সমগ্র দেশের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করবে – আবার এমনটাও হতে পারে যে, কোন ব্যক্তি দেশের গন্ডিও ছাপিয়ে নিজেকে সমগ্র পৃথিবীর কোনায় কোনায় পরিব্যাপ্ত করতে পারলো !
ব্যক্তি কিন্তু সেই ব্যক্তি-ই রইলো – কিন্তু ব্যক্তিভেদে তার গণ্ডি বা সীমা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ-এর দিকে আগাতে আগাতে সমগ্র জগৎ পরিব্যপ্ত হয়ে গেল ! আমরা এমন অনেক মানুষকে পেয়েছি __যেমন ভগবান বুদ্ধ, প্রভু যীশু,স্বামী বিবেকানন্দ, হজরত মুহাম্মদ প্রমুখেরা ! পৃথিবীর কোনো একটি প্রান্তে, ছোট একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও এঁদের মহিমার প্রকাশ জগতে পরিব্যাপ্ত !
ভগবান পরমানন্দের মহিমার কথাও সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত হবে – এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা ! স্বামী পরমানন্দকে বর্ধমান জেলার বনগ্রাম আশ্রমে আমরা দেখলাম ব’লে __যদি আমরা বাঙালিরা মনে করি যে, আমরাই পরমানন্দের মহিমা শক্তির প্রকাশ দেখেছি বা একটু-আধটু বুঝেছি – তাহলে সেটা ভুল ভাবনা ! বাংলা ছাড়াও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ গুরুমহারাজের ভক্ত ছিল এবং তারা সকলেই কিছু-না-কিছু মহিমার প্রকাশ দেখেছে ! সুদূর ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশের ভক্তগণ, আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রের অনেক মানুষ, এশিয়া মহাদেশের ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল ইত্যাদি দেশের অনেক মানুষ যারা পরমানন্দের সংস্পর্শে এসেছিলেন (এদের অনেকের কথা হয়তো আমরা জানিই না) _ তারাও পরমানন্দের কৃপা ও করুনালাভে ধন্য হয়েছে ! তাঁর সংস্পর্শে আসেনি এমন অনেকেই পরবর্তীতে শুধুমাত্র তাঁর সম্বন্ধে কথা শুনে বা পরমানন্দ বিষয়ক বই পড়ে ইতিমধ্যেই ভগবান পরমানন্দের মহিমা শক্তির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছে ! এরপর যতদিন যাবে, ততই এই প্রভাব বাড়তে বাড়তে সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত হবে।
গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – এই সচ্চিদানন্দ (ব্রহ্ম) সাগরের মধ্যেই পৃথিবীর সমস্ত জীব রয়েছে। তাইতো জীব স্বরূপতঃ ব্রহ্ম ! তবে কোটি কোটি জীবের প্রকাশের তারতম্য, শক্তির তারতম্য রয়েছে ! যেমন সমুদ্রের বুকে বিরাট বিরাট তরঙ্গ উঠছে, যারা সৃষ্টি হবার পর বহুদূর পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত হচ্ছে, সুনামি বা সাইক্লোন ইত্যাদির ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ তো সমুদ্রবক্ষ ছেড়ে উপকূল ভাগকেও প্লাবিত করতে পারে। আবার সমুদ্রের বুকেই সৃষ্ট অজস্র ছোট ছোট তরঙ্গের বিস্তৃতি স্বল্প ! আবার কোটি কোটি বুদ্বুদও ওই মহাসমুদ্রেই সৃষ্টি হচ্ছে – কিন্তু সাথে সাথেই আবার তাতেই মিলিয়ে যাচ্ছে !
বিভিন্ন মহাপুরুষরা যেন শক্তিশালী তরঙ্গ, অবতারপুরুষেরা সুনামি বা সাইক্লোনের ফলে সৃষ্ট মহাতরঙ্গ, আর সিদ্ধ সাধকেরা যেন ছোট ছোট তরঙ্গ – আর আমরা সাধারণ জীবেরা বুদ্বুদের ন্যায় – মহাসমুদ্রের বুকে জন্মাচ্ছি, অল্প স্থায়িত্বকাল নিয়ে থেকেই আবার সেখানেই মিলিয়ে যাচ্ছি !
কিন্তু এই উদাহরণ দিয়ে সবটা বোঝানো যায় না (গুরুমহারাজ বলেছিলেন – জড় দিয়ে জীবনের উদাহরণ দেওয়া যায় না – খানিকটা বোঝানো যায় মাত্র!) কারণ জীবরূপ বুদ্বুদের মধ্যে ‘অহং’রূপ একটা identity কাজ করে – তাই সে entity-র সঙ্গে একাত্ম হতে পারে না ! আর ওই identy crisis-ই তাকে মৃত্যুর পরে আবার পুনরায় জন্ম নিতে বাধ্য করে !
আজ আলোচনায় যা যা আপনাদেরকে বলবো মনে করেছিলাম, তা আর বলা হোলো না ! আলোচনার সূত্র আমাদেরকে কোথায় নিয়ে চলে গেল ! ঠিক আছে – ঈশ্বরের ইচ্ছা ছাড়া যদি গাছের পাতাটাও না নড়ে – তাহলে এটিকেও ঈশ্বরের ইচ্ছা বলেই মেনে নিতে হবে। তাই পরবর্তী এপিসোডে ভগবান পরমানন্দের মহিমা শক্তির যে যে প্রকাশ আমরা স্বচক্ষে দেখছিলাম সেগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে ! (ক্রমশঃ)