শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের ‘মহিমা’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। আমি ১৯৮৩ সালে যখন প্রথম বনগ্রামে যাই – তার আগেই স্বামী স্বরূপানন্দ এবং শ্রীধরপুরের তপন মুখার্জির কাছে গুরুমহারাজের বিশেষ বিশেষ শক্তির প্রকাশের কথা শুনেছিলাম৷ যদিও স্বামী পূর্ণানন্দ মহারাজ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিবারের পরিচিত ছিলেন কিন্তু উনি কখনোই গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কোনো মহিমার কথা বা তাঁর কোনো অতিলৌকিক গুণের কথা আমাদের কাছে প্রকাশ করেন নি ! ওনার style-টা ছিল এমনই, যেন – তোমাদেরকে সেই মহিমময় ভগবানের সন্ধান দিয়ে দিচ্ছি – পারো তো তোমরা তাঁর ‘মহিমা’ নিজেরাই উপলব্ধি করো – বোধে ‘বোধ’ করো !
অবশ্য এটাই সঠিক পদ্ধতি ! তবে সবার তো পরিবেশনের style ‘এক’ হতে পারে না – প্রত্যেকেরই পৃথক পৃথক-ই হয়। সুতরাং সকলের style-কেই welcome জানাতে হয়!
স্বামী পরমানন্দের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে(শিবপুর, হাওড়ায় গঙ্গানারায়ণ ব্যানার্জীর বাড়িতে)-ই দেখেছিলাম স্বামী স্বরূপানন্দ গুরুমহারাজের ব্যাপারে খুবই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন – গুরুমহারাজকে একেবারে প্রথমেই আমার কাছে “ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের” পরবর্তী শরীর হিসাবে উপস্থাপনা করেছিলেন ! আমার অবশ্য এটা ভালো লাগেনি। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, যে কোনো পরম্পরার শিষ্যরা যেমন তাঁর গুরুকে ‘মহানতম’, ‘শ্রেষ্ঠতম’ ভাবে – এরাও তেমনটাই করছে ! ‘এরা’ বলতে স্বামী স্বরূপানন্দ এবং ‘তপন’ ! তপন যেহেতু আমার-ই বয়সী তাই ওকে ‘তপন’ হিসাবেই উল্লেখ করছি ! সে-ও (গুরুমহারাজের কথা বলার সময়) কম আবেগী বা উচ্ছ্বাসপ্রবণ হয়ে পড়ছিল না।
! ওরা সেইসময় একটানা বেশ কয়েকদিন শিবপুর-হাওড়ায় ছিল, ফলে বুঝতেই পারছেন গুরুমহারাজ সম্বন্ধে সেই সময় অনেক কথা – অনেক অনেক কথাই শুনে ফেলেছিলাম।
তখন কিছুই বুঝিনি – কিন্তু পরে বুঝেছি এটাকেই ‘পূর্বরাগ’ বলা হয়। ‘রাধা’ যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দেখেনি – তখনই সখীদের কাছ থেকে কৃষ্ণের রূপের কথা, গুণের কথা শুনে শুনে তার মনে মনেই নানারকম চিন্তা-ভাবনার উদয় হোত! এই যে দয়িতের প্রতি এক প্রকার প্রীতি বা প্রেম জন্মে যাচ্ছে – এটাই পূর্বরাগ ! গুরুমহারাজের সাথে প্রথম সাক্ষাতেও আমার মনে ওনার সম্বন্ধে যে আগ্রহ তৈরি হয়নি – এই দুইজনের সান্নিধ্যে কয়েকদিন কাটানোর পর সত্যিই কিন্তু স্বামী পরমানন্দের প্রতি একটা চরম আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ! তখনও তো জানতাম না যে – এই আগ্রহ তৈরি করার ব্যবস্থাও তাঁর, তাঁর চরণের দাস করে নেবার সুযোগ করে দেওয়াটাও তাঁরই করুণা – সেসব কথা আপনাদের কাছে আর নতুন করে কি বলবো ?
আসলে ভগবানের করুণার কথা একমুখে বলা যায় না, তাঁর মহিমার কথাও একমুখে বলা যায় না। এটাই তো বলেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শিবপূজা করার সময়। বলেছিলেন – ” শিব গো তোমার মহিমা একমুখে বলতে পারবো না !”
আমি প্রথমবার বনগ্রাম গিয়েই বনগ্রামের নগেন মন্ডলের সাথে আমার পরিচয় হয়ে যায়। ওর মুখেই প্রথম গুরুমহারাজের ভাব-সমাধির কথা শুনি, পরে অবশ্য গুরুমহারাজের নির্বিকল্প সমাধির কথাও শুনেছিলাম। সেটায় পরে আসবো – আগে গুরুমহারাজের মুহুর্মুহু ভাব-সমাধির কথা যা শুনেছিলাম __সেইটা শুনেই খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম ! ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’, ‘লীলাপ্রসঙ্গ’, অচিন্ত্য কুমারের ‘পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’ – ইত্যাদি বইগুলি বারবার পড়ে পড়ে তখন ঠাকুরের সমস্ত ঘটনা মুখস্থের মতো হয়ে গেছিলো ! এই ব্যাপারে পরমানন্দ ঠাকুর একদিন একটু প্রশংসাও করেছিলেন(সেই প্রসঙ্গ টা উহ্য থাকলো)।
ফলে নগেনদের মুখে শুনে প্রাথমিক ভাবে অবাক হোলেও গুরুমহারাজের ‘সমাধি অবস্থা’টা যে কি__তা বুঝতে পেরেছিলাম ! কিন্তু বইয়ে পড়া ঘটনা আর বাস্তবে সেইরকম একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাওয়া –তো এক নয়! তাই এটা মানতে একটু দেরি হয়েছিল। গুরুমহারাজের ওই প্রথম অবস্থার ঘনঘন ভাবসমাধি হওয়াটা বা ওনার নির্বিকল্পের ঠিক পরের অবস্থাটা আমি চাক্ষুষ করতে পারিনি – এটা আমার দুর্ভাগ্য ! কিন্তু যে মানুষগুলো অহরহ এগুলি প্রত্যক্ষ করেছে__ তাদের অনেকের সাথে তখন আমার সবসময় ওঠা-বসা থাকার সুবাদে, আমি গুরুমহারাজের বনগ্রামে ঘটা প্রায় সমস্ত ঘটনার-কথাই অবগত ছিলাম। আমার মনে হোতো – গুরুমহারাজের সমাধি অবস্থাগুলি যেন আমার সামনেই ঘটেছিল। ফলে আমি যখন ঐসমস্ত ঘটনা মানুষজনকে বলতাম – তারা মনে কোরতো আমি বোধহয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।
গুরুমহারাজের মহিমা শক্তির প্রকাশের অন্যতম একটা আঙ্গিক ছিল ওনার এই “সমাধি অবস্থা” !
সব অবতারপুরুষকেই মহিমা শক্তির প্রকাশ প্রথম অবস্থায় এইভাবেই ঘটাতে হয় – আর এটা ঘটাতে হয় লোকসংগ্রহের জন্য !
সমাধি অবস্থায় গুরুমহারাজের শরীরে কোনো হুঁশ থাকতো না (ভিতরে জ্ঞানের প্রবাহ চলছে!) ! একবার ওনার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট থাকায় হাতের আঙ্গুল পুড়ে গেছিলো ! ওনার শরীর ওই অবস্থায় কখনও কখনও ভীষণ ভারী হয়ে যেতো – কোনো কোনো সময় ভীষণ হালকা !
অবশ্য গুরুমহারাজ সাধারণ অবস্থাতেও ইচ্ছামাত্রই শরীরকে বড় বা ছোট অথবা ভারী বা হালকা করতে পারতেন ! নাহলে জুতো পায়ে কাদার উপর হেঁটে গেলেন – অথচ জুতোয় একটুও কাদা লাগলো না – তা হয় কি করে !! (ক্রমশঃ)
অবশ্য এটাই সঠিক পদ্ধতি ! তবে সবার তো পরিবেশনের style ‘এক’ হতে পারে না – প্রত্যেকেরই পৃথক পৃথক-ই হয়। সুতরাং সকলের style-কেই welcome জানাতে হয়!
স্বামী পরমানন্দের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে(শিবপুর, হাওড়ায় গঙ্গানারায়ণ ব্যানার্জীর বাড়িতে)-ই দেখেছিলাম স্বামী স্বরূপানন্দ গুরুমহারাজের ব্যাপারে খুবই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন – গুরুমহারাজকে একেবারে প্রথমেই আমার কাছে “ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের” পরবর্তী শরীর হিসাবে উপস্থাপনা করেছিলেন ! আমার অবশ্য এটা ভালো লাগেনি। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, যে কোনো পরম্পরার শিষ্যরা যেমন তাঁর গুরুকে ‘মহানতম’, ‘শ্রেষ্ঠতম’ ভাবে – এরাও তেমনটাই করছে ! ‘এরা’ বলতে স্বামী স্বরূপানন্দ এবং ‘তপন’ ! তপন যেহেতু আমার-ই বয়সী তাই ওকে ‘তপন’ হিসাবেই উল্লেখ করছি ! সে-ও (গুরুমহারাজের কথা বলার সময়) কম আবেগী বা উচ্ছ্বাসপ্রবণ হয়ে পড়ছিল না।
! ওরা সেইসময় একটানা বেশ কয়েকদিন শিবপুর-হাওড়ায় ছিল, ফলে বুঝতেই পারছেন গুরুমহারাজ সম্বন্ধে সেই সময় অনেক কথা – অনেক অনেক কথাই শুনে ফেলেছিলাম।
তখন কিছুই বুঝিনি – কিন্তু পরে বুঝেছি এটাকেই ‘পূর্বরাগ’ বলা হয়। ‘রাধা’ যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দেখেনি – তখনই সখীদের কাছ থেকে কৃষ্ণের রূপের কথা, গুণের কথা শুনে শুনে তার মনে মনেই নানারকম চিন্তা-ভাবনার উদয় হোত! এই যে দয়িতের প্রতি এক প্রকার প্রীতি বা প্রেম জন্মে যাচ্ছে – এটাই পূর্বরাগ ! গুরুমহারাজের সাথে প্রথম সাক্ষাতেও আমার মনে ওনার সম্বন্ধে যে আগ্রহ তৈরি হয়নি – এই দুইজনের সান্নিধ্যে কয়েকদিন কাটানোর পর সত্যিই কিন্তু স্বামী পরমানন্দের প্রতি একটা চরম আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ! তখনও তো জানতাম না যে – এই আগ্রহ তৈরি করার ব্যবস্থাও তাঁর, তাঁর চরণের দাস করে নেবার সুযোগ করে দেওয়াটাও তাঁরই করুণা – সেসব কথা আপনাদের কাছে আর নতুন করে কি বলবো ?
আসলে ভগবানের করুণার কথা একমুখে বলা যায় না, তাঁর মহিমার কথাও একমুখে বলা যায় না। এটাই তো বলেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শিবপূজা করার সময়। বলেছিলেন – ” শিব গো তোমার মহিমা একমুখে বলতে পারবো না !”
আমি প্রথমবার বনগ্রাম গিয়েই বনগ্রামের নগেন মন্ডলের সাথে আমার পরিচয় হয়ে যায়। ওর মুখেই প্রথম গুরুমহারাজের ভাব-সমাধির কথা শুনি, পরে অবশ্য গুরুমহারাজের নির্বিকল্প সমাধির কথাও শুনেছিলাম। সেটায় পরে আসবো – আগে গুরুমহারাজের মুহুর্মুহু ভাব-সমাধির কথা যা শুনেছিলাম __সেইটা শুনেই খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম ! ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’, ‘লীলাপ্রসঙ্গ’, অচিন্ত্য কুমারের ‘পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’ – ইত্যাদি বইগুলি বারবার পড়ে পড়ে তখন ঠাকুরের সমস্ত ঘটনা মুখস্থের মতো হয়ে গেছিলো ! এই ব্যাপারে পরমানন্দ ঠাকুর একদিন একটু প্রশংসাও করেছিলেন(সেই প্রসঙ্গ টা উহ্য থাকলো)।
ফলে নগেনদের মুখে শুনে প্রাথমিক ভাবে অবাক হোলেও গুরুমহারাজের ‘সমাধি অবস্থা’টা যে কি__তা বুঝতে পেরেছিলাম ! কিন্তু বইয়ে পড়া ঘটনা আর বাস্তবে সেইরকম একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাওয়া –তো এক নয়! তাই এটা মানতে একটু দেরি হয়েছিল। গুরুমহারাজের ওই প্রথম অবস্থার ঘনঘন ভাবসমাধি হওয়াটা বা ওনার নির্বিকল্পের ঠিক পরের অবস্থাটা আমি চাক্ষুষ করতে পারিনি – এটা আমার দুর্ভাগ্য ! কিন্তু যে মানুষগুলো অহরহ এগুলি প্রত্যক্ষ করেছে__ তাদের অনেকের সাথে তখন আমার সবসময় ওঠা-বসা থাকার সুবাদে, আমি গুরুমহারাজের বনগ্রামে ঘটা প্রায় সমস্ত ঘটনার-কথাই অবগত ছিলাম। আমার মনে হোতো – গুরুমহারাজের সমাধি অবস্থাগুলি যেন আমার সামনেই ঘটেছিল। ফলে আমি যখন ঐসমস্ত ঘটনা মানুষজনকে বলতাম – তারা মনে কোরতো আমি বোধহয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।
গুরুমহারাজের মহিমা শক্তির প্রকাশের অন্যতম একটা আঙ্গিক ছিল ওনার এই “সমাধি অবস্থা” !
সব অবতারপুরুষকেই মহিমা শক্তির প্রকাশ প্রথম অবস্থায় এইভাবেই ঘটাতে হয় – আর এটা ঘটাতে হয় লোকসংগ্রহের জন্য !
সমাধি অবস্থায় গুরুমহারাজের শরীরে কোনো হুঁশ থাকতো না (ভিতরে জ্ঞানের প্রবাহ চলছে!) ! একবার ওনার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট থাকায় হাতের আঙ্গুল পুড়ে গেছিলো ! ওনার শরীর ওই অবস্থায় কখনও কখনও ভীষণ ভারী হয়ে যেতো – কোনো কোনো সময় ভীষণ হালকা !
অবশ্য গুরুমহারাজ সাধারণ অবস্থাতেও ইচ্ছামাত্রই শরীরকে বড় বা ছোট অথবা ভারী বা হালকা করতে পারতেন ! নাহলে জুতো পায়ে কাদার উপর হেঁটে গেলেন – অথচ জুতোয় একটুও কাদা লাগলো না – তা হয় কি করে !! (ক্রমশঃ)