শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের মহিমার প্রকাশের অন্যতমটি ছিল ওনার ঐ _”বলে-কয়ে নির্বিকল্প”! আমার ধারণা গুরু মহারাজের আগে এই ঘটনা পৃথিবী গ্রহে আগে কখনো ঘটেনি!
সমাধির প্রকারভেদ অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন মহাপুরুষের ক্ষেত্রে দেখেছি ভাবসমাধি বা সহজ সমাধি, সবিকল্প সমাধি এবং নির্বিকল্প সমাধি। এছাড়া জড় সমাধি বা অন্যান্য সমাধির কথাও হয়তো কোনো কোনো গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে – কিন্তু পূর্ব পূর্ব ভারতীয় মহাপুরুষদের জীবনে উপরোক্ত তিনপ্রকার ‘সমাধি’-র প্রকাশই দেখা গিয়েছিল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে প্রায়ই ভাবসমাধি হোত – এটা শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত গ্রন্থে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর ঐ অবস্থার একটি বিখ্যাত চিত্ররূপও (photo) রয়েছে ! কথামৃত পাঠ করার পর আমাদের মনোজগতে ঠাকুরের এই সহজ সমাধির রূপটিই যেন সবসময় জ্বলজ্বল করে ! ভাব সমাধি অবস্থাটা আরও অনেকের জীবনেই প্রকাশিত ছিল, তার মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ! ওনারও খুবই এইরুপ সমাধি হোতো এবং উনি ভাবে উন্মত্তের ন্যায় নৃত্য করতেন (ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও কোনো কোনো সময় এমনটা করেছিলেন!) !
গুরুমহারাজের কাছে সবিকল্প সমাধি সম্বন্ধে শুনেছিলাম যে, সাধক তীব্র সাধনার দ্বারা সমাধি অবস্থায় পৌঁছেছে, কিন্তু তখনও মনের লয় হয় নি, ফলে ‘বিকল্প’ রয়েছে। এর অর্থ হল – “একম্ অদ্বিতীয়ম”- ব্রহ্ম বা অদ্বৈত তত্ত্বে লীন-অবস্থা তখনও আসেনি – তাই বিকল্প অর্থাৎ কোনো না কোনো দ্বৈত সত্তা রয়েছে ! “তুমি – আমি” –এইরূপ বোধ রয়েছে, “তুমিই আমি” এই বোধ হয়নি বা সম্পূর্ণভাবে “অহং”-এর নাশ হয়নি – তাই স–বিকল্প ! কিন্তু নির্বিকল্পে আর কোনো বিকল্প নাই। একে–একে “একাকার”! সবই ব্রহ্মময় ! উহাও পূর্ণ – ইহাও পূর্ণ !
“পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্চতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণামেবাবশিষ্যতে!” – উহাও পূর্ণ, ইহাও পূর্ণ! পূর্ণ থেকে পূর্ণ-ই আসে ! পূর্ণ থেকে পূর্ণ বাদ দিলে সেই পূর্ণ-ই অবশিষ্ট থাকে।” এক বিচিত্র ব্যাপার ! ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে এইসব শ্লোকের অর্থ বোধ করাই মুশকিল ! সদ্গুরুর কৃপায় যে যেটুকু বুঝতে পারে! নিজে নিজে এসব কথার মর্ম কিছুই বোঝা যায় না। কোনো ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি দিয়ে বা কোনোরূপ অন্যান্য তথাকথিত কৌলিন্যতার বিচারেও অধ্যাত্মতত্ত্বের বোধ হয় না ! এই শিক্ষা নিতে গেলে একমাত্র সদ্গুরুর শরণাপন্ন হোতে হয় এবং তাঁর চরণপ্রান্তে বসে পাঠগ্রহণ করতে হয়। “নান্যংপন্থা বিদ্যতে অয়নায় !” – এছাড়া অন্য আর কোনো পথ নাই !
গুরুমহারাজকেও মোট ২১ দিন নির্বিকল্প সমাধিতে থাকতে হয়েছিল ! তবে বনগ্রামের তিনদিন ধরলে উনি খুব সম্ভবতঃ ১৮ দিন মাঝের গ্রামে তৃষাণ মহারাজ (স্বামী পরমেশ্বরানন্দ)-দের কালীঘরে একাসনে বসেছিলেন। তৃষাণ মহারাজের পিতা ৺পঞ্চানন ব্যানার্জি, তৃষাণ মহারাজ ও পুতুল মা(রামকৃষ্ণপ্রাণা মা) ছাড়া গুরুমহারাজের কথা ওখানকার প্রায় কেউই জানতো না !
গুরুমহারাজের শরীরের কিছু অংশ ইঁদুরের খুবলে খেয়ে দিয়েছিল, শরীরের মধ্যে একপাল পিঁপড়ে ঢুকে বাসা বেঁধে বাস করছিল। একুশ দিন পর গুরুমহারাজের যখন শরীরে হুঁশ ফিরে আসছিল, তখন সেগুলি সব পিলপিল্ করে নাক দিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল ! ইঁদুরে খুবলে দেওয়া জায়গাগুলির ঘা সারতেও সময় নিয়েছিল।
যাইহোক, ঘটনা যাই ঘটুক না কেন – ভগবানের মহিমা প্রকাশ পেয়েছিল তখনই, যখন গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – যেসব পিঁপড়েগুলি শরীরের মধ্যে ঢুকে বসে ছিল, ওরা সকলেই ছিল হিমালয়ের যোগী, যাঁরা গুরুমহারাজের শরীরের অভ্যন্তরে থেকে __ওনার শরীরকে রক্ষা করেছিলেন ! আর ইঁদুরগুলোও ছিল যোগী, ওরা শরীরের যে যে অংশ কেটেছিল – সেইগুলি ছিল এমনই point, যেগুলি regular দাঁতে করে করে touch করে ওরা গুরুমহারাজের শরীরের Nurvous system এবং Endocrine gland-এর ক্রিয়াকে healing ক’রে সজীব রেখেছিল !
গুরুমহারাজের নির্বিকল্পভূমি থেকে নেমে আসার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেকদিন সময় লেগেছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ব্যাপারটা খুব ধীর একটা প্রক্রিয়া ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই এমনটাই হয়েছিল – কিন্তু সেই সময়কালীন কেউতো আর এটা লিখে রাখেনি – তাই পুরোটা জানা যায় না। পরবর্তীতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যেটুকু ভক্তদেরকে বলেছিলেন, সেইটুকুই লেখা হয়েছে ! কিন্তু আমি ন’কাকার কাছে শুনেছিলাম যে, ওনার চোখের দৃষ্টি, কানের শ্রবণশক্তি, কথাবলার শক্তি, শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসারভাব কাটা – ইত্যাদি সবকিছু ঠিকঠাক হোতে বেশ কয়েকমাস সময় লেগেছিল।
গুরুমহারাজের মুখ থেকে যেদিন প্রথম কথা বা স্পষ্ট আওয়াজ বেরিয়েছিল (নির্বিকল্পের পর) – তার আগে ন’কাকাদের বাড়িতে অর্থাৎ বনগ্রামের মুখার্জি বাড়িতে গুরুমহারাজ চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে – হঠাৎ করে ওনার জিভ লক্-লক্ করতে করতে বাইরে বেড়িয়ে আসতে থাকে ! উপস্থিতজনেরা ঐ দৃশ্য দেখেই ভয়ে অস্থির হয়ে গেছিলেন !!
আর ঘটনাটা ভয় পাওয়ার মতোই ছিল। ন’কাকার মুখে শুনেছিলাম গুরুমহারাজের জিভটা লক্-লক্ করে বের হতে হতে প্রায় নাভি পর্যন্ত নেমে এসেছিল ! তারপর ঐ জিভ যখন আবার ভিতরে ঢুকে গেল – এরপর থেকেই ধীরে ধীরে গুরুমহারাজ পুনরায় কথা বলা শুরু করেছিলেন। তবে ঐদিনের দৃশ্য দেখে উপস্থিতজনেদের অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন – গুরুমহারাজ যে মা জগদম্বার কথা বলেন, সেই ৺মা স্বয়ং গুরুমহারাজের শরীরেই অবস্থিত !! (ক্রমশঃ)
সমাধির প্রকারভেদ অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন মহাপুরুষের ক্ষেত্রে দেখেছি ভাবসমাধি বা সহজ সমাধি, সবিকল্প সমাধি এবং নির্বিকল্প সমাধি। এছাড়া জড় সমাধি বা অন্যান্য সমাধির কথাও হয়তো কোনো কোনো গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে – কিন্তু পূর্ব পূর্ব ভারতীয় মহাপুরুষদের জীবনে উপরোক্ত তিনপ্রকার ‘সমাধি’-র প্রকাশই দেখা গিয়েছিল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে প্রায়ই ভাবসমাধি হোত – এটা শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত গ্রন্থে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর ঐ অবস্থার একটি বিখ্যাত চিত্ররূপও (photo) রয়েছে ! কথামৃত পাঠ করার পর আমাদের মনোজগতে ঠাকুরের এই সহজ সমাধির রূপটিই যেন সবসময় জ্বলজ্বল করে ! ভাব সমাধি অবস্থাটা আরও অনেকের জীবনেই প্রকাশিত ছিল, তার মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ! ওনারও খুবই এইরুপ সমাধি হোতো এবং উনি ভাবে উন্মত্তের ন্যায় নৃত্য করতেন (ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও কোনো কোনো সময় এমনটা করেছিলেন!) !
গুরুমহারাজের কাছে সবিকল্প সমাধি সম্বন্ধে শুনেছিলাম যে, সাধক তীব্র সাধনার দ্বারা সমাধি অবস্থায় পৌঁছেছে, কিন্তু তখনও মনের লয় হয় নি, ফলে ‘বিকল্প’ রয়েছে। এর অর্থ হল – “একম্ অদ্বিতীয়ম”- ব্রহ্ম বা অদ্বৈত তত্ত্বে লীন-অবস্থা তখনও আসেনি – তাই বিকল্প অর্থাৎ কোনো না কোনো দ্বৈত সত্তা রয়েছে ! “তুমি – আমি” –এইরূপ বোধ রয়েছে, “তুমিই আমি” এই বোধ হয়নি বা সম্পূর্ণভাবে “অহং”-এর নাশ হয়নি – তাই স–বিকল্প ! কিন্তু নির্বিকল্পে আর কোনো বিকল্প নাই। একে–একে “একাকার”! সবই ব্রহ্মময় ! উহাও পূর্ণ – ইহাও পূর্ণ !
“পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্চতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণামেবাবশিষ্যতে!” – উহাও পূর্ণ, ইহাও পূর্ণ! পূর্ণ থেকে পূর্ণ-ই আসে ! পূর্ণ থেকে পূর্ণ বাদ দিলে সেই পূর্ণ-ই অবশিষ্ট থাকে।” এক বিচিত্র ব্যাপার ! ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে এইসব শ্লোকের অর্থ বোধ করাই মুশকিল ! সদ্গুরুর কৃপায় যে যেটুকু বুঝতে পারে! নিজে নিজে এসব কথার মর্ম কিছুই বোঝা যায় না। কোনো ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি দিয়ে বা কোনোরূপ অন্যান্য তথাকথিত কৌলিন্যতার বিচারেও অধ্যাত্মতত্ত্বের বোধ হয় না ! এই শিক্ষা নিতে গেলে একমাত্র সদ্গুরুর শরণাপন্ন হোতে হয় এবং তাঁর চরণপ্রান্তে বসে পাঠগ্রহণ করতে হয়। “নান্যংপন্থা বিদ্যতে অয়নায় !” – এছাড়া অন্য আর কোনো পথ নাই !
গুরুমহারাজকেও মোট ২১ দিন নির্বিকল্প সমাধিতে থাকতে হয়েছিল ! তবে বনগ্রামের তিনদিন ধরলে উনি খুব সম্ভবতঃ ১৮ দিন মাঝের গ্রামে তৃষাণ মহারাজ (স্বামী পরমেশ্বরানন্দ)-দের কালীঘরে একাসনে বসেছিলেন। তৃষাণ মহারাজের পিতা ৺পঞ্চানন ব্যানার্জি, তৃষাণ মহারাজ ও পুতুল মা(রামকৃষ্ণপ্রাণা মা) ছাড়া গুরুমহারাজের কথা ওখানকার প্রায় কেউই জানতো না !
গুরুমহারাজের শরীরের কিছু অংশ ইঁদুরের খুবলে খেয়ে দিয়েছিল, শরীরের মধ্যে একপাল পিঁপড়ে ঢুকে বাসা বেঁধে বাস করছিল। একুশ দিন পর গুরুমহারাজের যখন শরীরে হুঁশ ফিরে আসছিল, তখন সেগুলি সব পিলপিল্ করে নাক দিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল ! ইঁদুরে খুবলে দেওয়া জায়গাগুলির ঘা সারতেও সময় নিয়েছিল।
যাইহোক, ঘটনা যাই ঘটুক না কেন – ভগবানের মহিমা প্রকাশ পেয়েছিল তখনই, যখন গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – যেসব পিঁপড়েগুলি শরীরের মধ্যে ঢুকে বসে ছিল, ওরা সকলেই ছিল হিমালয়ের যোগী, যাঁরা গুরুমহারাজের শরীরের অভ্যন্তরে থেকে __ওনার শরীরকে রক্ষা করেছিলেন ! আর ইঁদুরগুলোও ছিল যোগী, ওরা শরীরের যে যে অংশ কেটেছিল – সেইগুলি ছিল এমনই point, যেগুলি regular দাঁতে করে করে touch করে ওরা গুরুমহারাজের শরীরের Nurvous system এবং Endocrine gland-এর ক্রিয়াকে healing ক’রে সজীব রেখেছিল !
গুরুমহারাজের নির্বিকল্পভূমি থেকে নেমে আসার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেকদিন সময় লেগেছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ব্যাপারটা খুব ধীর একটা প্রক্রিয়া ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই এমনটাই হয়েছিল – কিন্তু সেই সময়কালীন কেউতো আর এটা লিখে রাখেনি – তাই পুরোটা জানা যায় না। পরবর্তীতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যেটুকু ভক্তদেরকে বলেছিলেন, সেইটুকুই লেখা হয়েছে ! কিন্তু আমি ন’কাকার কাছে শুনেছিলাম যে, ওনার চোখের দৃষ্টি, কানের শ্রবণশক্তি, কথাবলার শক্তি, শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসারভাব কাটা – ইত্যাদি সবকিছু ঠিকঠাক হোতে বেশ কয়েকমাস সময় লেগেছিল।
গুরুমহারাজের মুখ থেকে যেদিন প্রথম কথা বা স্পষ্ট আওয়াজ বেরিয়েছিল (নির্বিকল্পের পর) – তার আগে ন’কাকাদের বাড়িতে অর্থাৎ বনগ্রামের মুখার্জি বাড়িতে গুরুমহারাজ চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে – হঠাৎ করে ওনার জিভ লক্-লক্ করতে করতে বাইরে বেড়িয়ে আসতে থাকে ! উপস্থিতজনেরা ঐ দৃশ্য দেখেই ভয়ে অস্থির হয়ে গেছিলেন !!
আর ঘটনাটা ভয় পাওয়ার মতোই ছিল। ন’কাকার মুখে শুনেছিলাম গুরুমহারাজের জিভটা লক্-লক্ করে বের হতে হতে প্রায় নাভি পর্যন্ত নেমে এসেছিল ! তারপর ঐ জিভ যখন আবার ভিতরে ঢুকে গেল – এরপর থেকেই ধীরে ধীরে গুরুমহারাজ পুনরায় কথা বলা শুরু করেছিলেন। তবে ঐদিনের দৃশ্য দেখে উপস্থিতজনেদের অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন – গুরুমহারাজ যে মা জগদম্বার কথা বলেন, সেই ৺মা স্বয়ং গুরুমহারাজের শরীরেই অবস্থিত !! (ক্রমশঃ)