গুরু মহারাজ এখানে অর্থাৎ কাটোয়ার কাছে বারেন্দা আশ্রমে প্রথমবার আসা এবং এই আশ্রম প্রতিষ্ঠার পটভূমিকার কথা হচ্ছিল ! গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু পরবর্ত্তী যুগের সেই নিতাই চরণ গোস্বামী মহারাজের আকুল আর্তি থেকে শুরু করে গুরু মহারাজের আগমন পর্যন্ত বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার কথাও বলা হচ্ছিল ৷ কিন্তু এই প্রায় ৪৫০ বছরটা কি কম ? ক-ত-কা-ল ! এত বছর ধরে কত জল অজয়-গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে, কত মানুষ এই অঞ্চলে জন্মেছে-মরেছে , কত অহংকারের পতন হয়েছে , কত হিংসা-দ্বেষ-বিভেদ-বিভাজন হয়েছে , কত স্নেহ-প্রেম-ভালবাসার গাথা লোকমুখে প্রচারিত হয়েছে , কত প্রতিভার উত্থান হয়েছে, আরো কত – কত – কত কিছুই হয়েছে !! কিন্তু সেগুলি হয়তো কালের বুকে আঁচড় কাটেনি – সমসাময়িক কালে ক্ষণিক প্রভাব সৃষ্টি করেই আবার মহাকালের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে , হারিয়ে গেছে ! কিন্তু ইতিহাসে স্থান করে নিল “স্বামী পরমানন্দের বারেন্দা আশ্রমে আগমন” ৷ মহাকাল Accept করে নিল এই ঘটনাকে ! তাই এই অঞ্চলের শ্রুত-বিশ্রুত বহু ইতিহাস মানুষ ভুলে যাবে, কিন্তু স্বামী পরমানন্দকে এবং তাঁর বারেন্দা আশ্রম__হাজার হাজার বছর মানুষের মনোজগত- অন্তরজগত অধিকার করে রয়ে যাবে !
আমার মনে পড়ছে বারেন্দা আশ্রম প্রতিষ্ঠার আগে সেই নির্জন গ্রীষ্মের দুপুর ! সেই নিস্তব্ধ বিজন আম্রকানন (যেখানে আজ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত) ! সেই তিনজন পরমানন্দের সন্তান (অমি , সুব্রত আর জহরদা) ! সেই তিনজন বাউল-বৈষ্ণব ! যারা হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়ে একতারা , আনন্দ লহরী , ডুবকি বাজিয়ে গান গান গেয়েছিল সেই স্থানে__ যেখানে আজকে গুরু মহারাজের ঘর !
যে গানগুলি তারা গেয়েছিল সেগুলিও মনে পড়ছে – হয়তো প্রাসঙ্গিক হবে বলেই উল্লেখ করছি !
প্রথম গানটি ছিল –>
” আজও সেই বৃন্দাবনে বাঁশি বাজে রে –
বাঁশি শুনে, বনে বনে _ ময়ূর নাচে রে ।।
আজও সেই গাভীগুলি, গোচারণে ওড়ায় ধুলি –
সখাগণে কোলাকুলি, বনমাঝে রে ।।
আজও সেই …………. রে ৷৷”
দ্বিতীয় গানটি ছিল –>
” কৃষ্ণনাম যার অন্তরে লেগেছে, নয়ন দেখিলে যায় চেনা ৷।
পাখিধরা আঁখিদ্বয়, সমর্থা ভাবময় _
জগৎছাড়া চোখের চাহনি ৷৷
যে জনা শ্রীকৃষ্ণ ভজে, তারে আপন মানে_
তার সাথে করে লেনাদেনা ৷৷
কৃষ্ণনাম যার ………..চেনা ৷৷”
বাউলদের চেহারা, মুখাবয়ব __এগুলি আর ভালো মনে নেই কিন্তু গানগুলি আমাদের অন্তঃকরণকে খুবই নাড়া দিয়েছিল ! সেই সময় আমরা সবসময় গুরু মহারাজের কথাই আলোচনা করতাম , ফলে ঐ গানগুলি শুনতে শুনতে ‘গুরু মহারাজের কথা , তাঁর রূপ-গুণের কথাই যেন ঐ গানের মাধ্যমে ফুটে উঠছে’ – আমাদের এইরকম বোধ হয়েছিল !
এর অনেক পরে যখন ওখানে আশ্রম হল , তখন আমরা প্রায়ই আলোচনা করতাম ঐ বাউলগুলি (তিনজন) কারা ? কই_ ওদেরকে তো এই অঞ্চলে আর কোনদিন দেখিনি ! কোথা থেকেই বা এসেছিল – আর কোথা-ই বা চলে গেল !
আর যে গানগুলি ওরা গেয়েছিল, সেই গান আমাদের অন্তরে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে পরবর্ত্তীকালে আমরা বারেন্দা আশ্রমের উৎসবে (তখন বছরে দু-বার করে উৎসব হোত , একবার জন্মাষ্টমী এবং আর একবার ১লা বৈশাখ । তখনও ২৫শে ডিসেম্বর উৎসব সব শাখা আশ্রম পালন কোরতো না , কারণ গুরু মহারাজ শরীরে ছিলেন । আর তিনি যখন যেখানে থাকতেন – সবাই সেখানেই চলে যেতো । শেষের বেশ কয়েক বছর ২৫শে ডিসেম্বর উৎসব আজিমগঞ্জে পালন করা হোত ৷) আমরা বাউল কীর্ত্তনীয়াদের নিয়ে আসতাম এবং ওদেরকে অতি অবশ্যই “ওই গান দুটি গাইতে অনুরোধ করা হোত ! কোন শিল্পী গাইলে আমাদের হৃদয় জুড়িয়ে যেতো — ওই গানগুলির মাধ্যমে আমরা যেন গুরু মহারাজের-ই স্নেহের স্পর্শ্য পেতাম!
***. ***. ***. ****
আগেই বলেছি তৃতীয়বার গুরু মহারাজ বারেন্দা আশ্রমে এসেছিলেন টাটাসুমো গাড়ী করে _সরাসরি বনগ্রাম আশ্রম থেকে ! জাবুই-এর লক্ষ্মী-মা (গুরুজী ও ন’কাকার একনিষ্ঠ ভক্ত এক মা)-র ভাই (বিজুর বাড়ী ওদের ধানমিল রয়েছে , যে মিলে বর্তমানে বনগ্রাম মিশনের সমস্ত উৎপাদিত ধান পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ওরা সারা বছরের চাল আশ্রমকে সরবরাহ করে ৷ বছরের শেষে + – করে হিসাব শোধ করা হয় ।) নতুন ঐ গাড়িটি কিনে প্রথমেই গুরুমহারাজকে চাপিয়ে বারেন্দা আশ্রম হয়ে আজিমগন্জ পর্যন্ত নিয়ে যাবে _এটা মনস্থ করেছিল। আর সেইরকমটাই হয়েছিল ।
ঐ সময় (তৃতীয়বারে) গুরুমহারাজ বারেন্দা আশ্রমে দু-রাত্রি ছিলেন। উনি চলে যাবার আগের রাতে _খাওয়া-দাওয়ার পরে, আমরা যারা সেইসময়কার বারেন্দা আশ্রমের active member ছিলাম, তারা সকলে গুরুমহারাজের ঘরে অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎ-এর জন্য গেছিলাম! ‘পরবর্তীতে আশ্রমের রুপরেখা কেমন হবে, আমরা কিভাবে চলব’ _এই সব বিষয়ে ওনার সাথে কথা বলব এবং সর্বোপরি গুরুমহারাজকে একান্ত করে কাছে পাবো_এটাই ছিল উদ্দেশ্য(এইটা তখন আমরা দেখতাম প্রায় সব আশ্রমের কর্মকর্তারাই করত! গুরুমহারাজ সেই আশ্রম থেকে চলে যাবার আগের রাতে ওনার সাথে হোত special বৈঠক!)!
আশ্রমটি কেমনভাবে চলবে, কি তার রুপরেখা হবে _তা উনি ৫/১০-মিনিটেই আমাদেরকে বলে দিলেন। এরপর ব্যক্তিগত কথাবার্ত্তা! কে কি বলবে? কার বুকের কত চওড়া পাটা_সেটা গুরুমহারাজের সামনাসামনি হলে বোঝা যেতো!!
জয়দীপ একটা কবিতায় লিখেছিল _”এক কথাতেই সব কথা নিঃশেষ!” আর সত্যি সত্যিই হোত ও তাই! ফলে এখানেও হোল _সবাইকেই কথা বলার সুযোগ দেওয়া হোল বটে, কিন্তু ঐ__দু-এক কথাতেই সবকথা শেষ হয়ে গেল! আমাদের ঘটির মত আধার, তাই অনন্ত সাগরের জল থেকে একঘটি জল ভরে নিয়ে ই আমরা পূর্ণ হয়ে গেলাম! ফলে আধ ঘন্টার মধ্যেই আমাদের সবার সব বক্তব্য শেষ হয়ে গেল!
এরপর অনন্তের(গুরুমহারাজ) পালা! তিনি আমাদের সমস্ত দুর্বলতার কথা, আমাদের কতটা মুরোদ_সব জানেন! তাই এবার উনি নিজে নিজেই কথা শুরু করলেন _”তন্ত্র – মন্ত্র – যন্ত্র”! তনু বা দেহের সাথে মন্ত্রের অদ্ভুত সাজুয্যের কথা বোঝাতে শুরু করলেন! কত কৃপা তাঁর! কত করুনা!
কিন্তু তাঁর কৃপা বা করুনা থাকলে কি হবে? তিনি মন্ত্রবিজ্ঞান বোঝাতে শুরু করার সাথে সাথেই আশ্চর্যজনক ভাবে ঘরে উপবিষ্ট সকলেই ঘুমিয়ে পড়ল!!
আপনাদের মধ্যে _যাদের গুরুমহারাজের সিটিং শোনা হয়ে ওঠেনি _তারা হয়তো এ ব্যাপারটা শুনে অবাক হচ্ছেন বা আশ্চর্য হচ্ছেন! কিন্তু এটাই হোত! রাত্রি ১২-টার পর যদি গুরুমহারাজ কখনও কোথাও সিটিং করতেন _’তাহলে তিনি নিজে এবং তাঁর বক্তব্য’_ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যেত! তখন দেখা যেত ৮০% মানুষ উঠে চলে যেত শুধুমাত্র ঘুমকে আটকাতে পারতো না বলে! এটা ঠিকই যে রাত্রি ১২-টার পর স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের শরীরে ক্লান্তি আসে, ঘুম পায় _ফলে যে কোন স্থানে বসে থাকলেও ঘুম আসে! তবে আশ্চর্যের বিষয় ছিল এইটি যে, গুরুমহারাজের কাছে বসার সাথে সাথেই মানুষ ঘুমিয়ে পড়ত এবং সিটিং শেষ হলেই সবার ঘুম কোথায় উধাও হয়ে যেত!
প্রকৃত ঘটনা হোল _গুরুমহারাজের ঐ সময়কার high Vibration – যুক্ত আলোচনা আমাদের brain নিতে পারতো না _তাই এই ঘুম!
বারেন্দা আশ্রমেও সেই রাত্রে গুরুমহারাজ যখনই শরীরের বিভিন্ন চক্রে যে মন্ত্রগুলি আছে (অং,আং,ইং,ঈং,টং,ঠং…..রং,বং_ ইত্যাদি।), সেগুলি যেমনি উচ্চারণ করতে শুরু করলেন _অমনি গোটা ঘর প্রকম্পিত হতে লাগল আর সবাই ঘুমিয়ে পড়ল!!
(পরের episode এ বাকিটা বলা হবে) [ক্রমশঃ]
আমার মনে পড়ছে বারেন্দা আশ্রম প্রতিষ্ঠার আগে সেই নির্জন গ্রীষ্মের দুপুর ! সেই নিস্তব্ধ বিজন আম্রকানন (যেখানে আজ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত) ! সেই তিনজন পরমানন্দের সন্তান (অমি , সুব্রত আর জহরদা) ! সেই তিনজন বাউল-বৈষ্ণব ! যারা হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়ে একতারা , আনন্দ লহরী , ডুবকি বাজিয়ে গান গান গেয়েছিল সেই স্থানে__ যেখানে আজকে গুরু মহারাজের ঘর !
যে গানগুলি তারা গেয়েছিল সেগুলিও মনে পড়ছে – হয়তো প্রাসঙ্গিক হবে বলেই উল্লেখ করছি !
প্রথম গানটি ছিল –>
” আজও সেই বৃন্দাবনে বাঁশি বাজে রে –
বাঁশি শুনে, বনে বনে _ ময়ূর নাচে রে ।।
আজও সেই গাভীগুলি, গোচারণে ওড়ায় ধুলি –
সখাগণে কোলাকুলি, বনমাঝে রে ।।
আজও সেই …………. রে ৷৷”
দ্বিতীয় গানটি ছিল –>
” কৃষ্ণনাম যার অন্তরে লেগেছে, নয়ন দেখিলে যায় চেনা ৷।
পাখিধরা আঁখিদ্বয়, সমর্থা ভাবময় _
জগৎছাড়া চোখের চাহনি ৷৷
যে জনা শ্রীকৃষ্ণ ভজে, তারে আপন মানে_
তার সাথে করে লেনাদেনা ৷৷
কৃষ্ণনাম যার ………..চেনা ৷৷”
বাউলদের চেহারা, মুখাবয়ব __এগুলি আর ভালো মনে নেই কিন্তু গানগুলি আমাদের অন্তঃকরণকে খুবই নাড়া দিয়েছিল ! সেই সময় আমরা সবসময় গুরু মহারাজের কথাই আলোচনা করতাম , ফলে ঐ গানগুলি শুনতে শুনতে ‘গুরু মহারাজের কথা , তাঁর রূপ-গুণের কথাই যেন ঐ গানের মাধ্যমে ফুটে উঠছে’ – আমাদের এইরকম বোধ হয়েছিল !
এর অনেক পরে যখন ওখানে আশ্রম হল , তখন আমরা প্রায়ই আলোচনা করতাম ঐ বাউলগুলি (তিনজন) কারা ? কই_ ওদেরকে তো এই অঞ্চলে আর কোনদিন দেখিনি ! কোথা থেকেই বা এসেছিল – আর কোথা-ই বা চলে গেল !
আর যে গানগুলি ওরা গেয়েছিল, সেই গান আমাদের অন্তরে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে পরবর্ত্তীকালে আমরা বারেন্দা আশ্রমের উৎসবে (তখন বছরে দু-বার করে উৎসব হোত , একবার জন্মাষ্টমী এবং আর একবার ১লা বৈশাখ । তখনও ২৫শে ডিসেম্বর উৎসব সব শাখা আশ্রম পালন কোরতো না , কারণ গুরু মহারাজ শরীরে ছিলেন । আর তিনি যখন যেখানে থাকতেন – সবাই সেখানেই চলে যেতো । শেষের বেশ কয়েক বছর ২৫শে ডিসেম্বর উৎসব আজিমগঞ্জে পালন করা হোত ৷) আমরা বাউল কীর্ত্তনীয়াদের নিয়ে আসতাম এবং ওদেরকে অতি অবশ্যই “ওই গান দুটি গাইতে অনুরোধ করা হোত ! কোন শিল্পী গাইলে আমাদের হৃদয় জুড়িয়ে যেতো — ওই গানগুলির মাধ্যমে আমরা যেন গুরু মহারাজের-ই স্নেহের স্পর্শ্য পেতাম!
***. ***. ***. ****
আগেই বলেছি তৃতীয়বার গুরু মহারাজ বারেন্দা আশ্রমে এসেছিলেন টাটাসুমো গাড়ী করে _সরাসরি বনগ্রাম আশ্রম থেকে ! জাবুই-এর লক্ষ্মী-মা (গুরুজী ও ন’কাকার একনিষ্ঠ ভক্ত এক মা)-র ভাই (বিজুর বাড়ী ওদের ধানমিল রয়েছে , যে মিলে বর্তমানে বনগ্রাম মিশনের সমস্ত উৎপাদিত ধান পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ওরা সারা বছরের চাল আশ্রমকে সরবরাহ করে ৷ বছরের শেষে + – করে হিসাব শোধ করা হয় ।) নতুন ঐ গাড়িটি কিনে প্রথমেই গুরুমহারাজকে চাপিয়ে বারেন্দা আশ্রম হয়ে আজিমগন্জ পর্যন্ত নিয়ে যাবে _এটা মনস্থ করেছিল। আর সেইরকমটাই হয়েছিল ।
ঐ সময় (তৃতীয়বারে) গুরুমহারাজ বারেন্দা আশ্রমে দু-রাত্রি ছিলেন। উনি চলে যাবার আগের রাতে _খাওয়া-দাওয়ার পরে, আমরা যারা সেইসময়কার বারেন্দা আশ্রমের active member ছিলাম, তারা সকলে গুরুমহারাজের ঘরে অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎ-এর জন্য গেছিলাম! ‘পরবর্তীতে আশ্রমের রুপরেখা কেমন হবে, আমরা কিভাবে চলব’ _এই সব বিষয়ে ওনার সাথে কথা বলব এবং সর্বোপরি গুরুমহারাজকে একান্ত করে কাছে পাবো_এটাই ছিল উদ্দেশ্য(এইটা তখন আমরা দেখতাম প্রায় সব আশ্রমের কর্মকর্তারাই করত! গুরুমহারাজ সেই আশ্রম থেকে চলে যাবার আগের রাতে ওনার সাথে হোত special বৈঠক!)!
আশ্রমটি কেমনভাবে চলবে, কি তার রুপরেখা হবে _তা উনি ৫/১০-মিনিটেই আমাদেরকে বলে দিলেন। এরপর ব্যক্তিগত কথাবার্ত্তা! কে কি বলবে? কার বুকের কত চওড়া পাটা_সেটা গুরুমহারাজের সামনাসামনি হলে বোঝা যেতো!!
জয়দীপ একটা কবিতায় লিখেছিল _”এক কথাতেই সব কথা নিঃশেষ!” আর সত্যি সত্যিই হোত ও তাই! ফলে এখানেও হোল _সবাইকেই কথা বলার সুযোগ দেওয়া হোল বটে, কিন্তু ঐ__দু-এক কথাতেই সবকথা শেষ হয়ে গেল! আমাদের ঘটির মত আধার, তাই অনন্ত সাগরের জল থেকে একঘটি জল ভরে নিয়ে ই আমরা পূর্ণ হয়ে গেলাম! ফলে আধ ঘন্টার মধ্যেই আমাদের সবার সব বক্তব্য শেষ হয়ে গেল!
এরপর অনন্তের(গুরুমহারাজ) পালা! তিনি আমাদের সমস্ত দুর্বলতার কথা, আমাদের কতটা মুরোদ_সব জানেন! তাই এবার উনি নিজে নিজেই কথা শুরু করলেন _”তন্ত্র – মন্ত্র – যন্ত্র”! তনু বা দেহের সাথে মন্ত্রের অদ্ভুত সাজুয্যের কথা বোঝাতে শুরু করলেন! কত কৃপা তাঁর! কত করুনা!
কিন্তু তাঁর কৃপা বা করুনা থাকলে কি হবে? তিনি মন্ত্রবিজ্ঞান বোঝাতে শুরু করার সাথে সাথেই আশ্চর্যজনক ভাবে ঘরে উপবিষ্ট সকলেই ঘুমিয়ে পড়ল!!
আপনাদের মধ্যে _যাদের গুরুমহারাজের সিটিং শোনা হয়ে ওঠেনি _তারা হয়তো এ ব্যাপারটা শুনে অবাক হচ্ছেন বা আশ্চর্য হচ্ছেন! কিন্তু এটাই হোত! রাত্রি ১২-টার পর যদি গুরুমহারাজ কখনও কোথাও সিটিং করতেন _’তাহলে তিনি নিজে এবং তাঁর বক্তব্য’_ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যেত! তখন দেখা যেত ৮০% মানুষ উঠে চলে যেত শুধুমাত্র ঘুমকে আটকাতে পারতো না বলে! এটা ঠিকই যে রাত্রি ১২-টার পর স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের শরীরে ক্লান্তি আসে, ঘুম পায় _ফলে যে কোন স্থানে বসে থাকলেও ঘুম আসে! তবে আশ্চর্যের বিষয় ছিল এইটি যে, গুরুমহারাজের কাছে বসার সাথে সাথেই মানুষ ঘুমিয়ে পড়ত এবং সিটিং শেষ হলেই সবার ঘুম কোথায় উধাও হয়ে যেত!
প্রকৃত ঘটনা হোল _গুরুমহারাজের ঐ সময়কার high Vibration – যুক্ত আলোচনা আমাদের brain নিতে পারতো না _তাই এই ঘুম!
বারেন্দা আশ্রমেও সেই রাত্রে গুরুমহারাজ যখনই শরীরের বিভিন্ন চক্রে যে মন্ত্রগুলি আছে (অং,আং,ইং,ঈং,টং,ঠং…..রং,বং_ ইত্যাদি।), সেগুলি যেমনি উচ্চারণ করতে শুরু করলেন _অমনি গোটা ঘর প্রকম্পিত হতে লাগল আর সবাই ঘুমিয়ে পড়ল!!
(পরের episode এ বাকিটা বলা হবে) [ক্রমশঃ]