গুরু মহারাজের আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে — ওইখানে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে ! সেগুলি এখানেই না বলে নিলে হয়তো পরে আর লিপিবদ্ধ করা যাবে না – তাই বলেই নিচ্ছি ! আফ্রিকায় গুরু মহারাজ একা গিয়েছিলেন ৷ ইউরোপের কোন ভক্তকেই সঙ্গে নেন নি ! ওখানকার গ্রামগঞ্জের মানুষজনের চরম অসহায় অবস্থা , গরীবী , অশিক্ষা , রোগগ্রস্থতা এসব দেখে গুরু মহারাজ খুবই করুণাপরবশ হয়ে পড়েছিলেন – ওখানে ওনার শরীরের সুগার Level দারুনভাবে fall করে যায় ! উনি বিদেশ-বিভুঁই-এ একাকী মূর্ছিত হয়ে পড়ে যান । পরে শুনেছিলাম ঐ অবস্থায় ওনার শরীর থেকে Positive এনার্জী ওখানকার বাতাবরণে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওখানকার Negativity-কে Neutrilise করে ! উনি বলেছিলেন – এরপর ওখানে (আফ্রিকায়) বিভিন্ন মহাপুরুষগণ শরীর নেবেন এবং ওই দেশগুলির সব দিক থেকেই খুব দ্রুত উন্নতি হবে ! যাইহোক , ঐ অবস্থায় গুরু মহারাজকে একাকী পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় মানুষজন ওনার চারিদিকে ভিড় জমায় ! তখন গুরু মহারাজ ইঙ্গিত করে ওদেরকে দূরের স্টলে বিক্রি হওয়া ঠান্ডা পানীয় (কোকাকোলা জাতীয়) আনতে বলেন । ওদের মধ্যে কেউ একবোতল ঐ পানীয় এনে দিলে – উনি সেটি থেকে কিছুটা পান করায় ওনার শরীরের Sugar level আবার ঠিক হয়ে যায় এবং উনি আবার উঠে বসেন ৷
অনেক ঘটনার মধ্যে আর একটা ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করছি ! গুরু মহারাজ একবার শহর থেকে দূরবর্তী জঙ্গলাকীর্ণ গ্রামগুলির দিকে যাচ্ছিলেন । পথে একজন মহিলার সাথে ওনার আলাপ হয় যিনি সরকারী উচ্চপদস্থ অফিসার ৷ ওই ভদ্রমহিলার আসল বাড়ী শহর থেকে দূরে _একটি গ্রামে ৷ ওই মেয়েটি কোন একটা উৎসব উপলক্ষে এবং তার বাবা-মার সাথে দেখা করার জন্য নিজেই গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিল গ্রামের বাড়ী!
গুরু মহারাজ ওখানকার গ্রাম দেখতে এবং গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলতে চাইছিলেন শুনে ওই মহিলা গুরু মহারাজকে গাড়ীতে তুলে নেয় এবং কথা বলতে বলতেই ওনার গ্রামের দিকে যেতে থাকে।
কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার এই যে গ্রামে ঢোকার ঠিক আগে ঐ ভদ্রমহিলা এক জায়গায় গাড়ী থামিয়ে নিজের উর্দ্ধাঙ্গের পোষাক সব খুলে ফেলতে শুরু করল! এটা দেখে গুরু মহারাজ ওকে এইরকম করার কারণ কি – তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন ৷ তখন এর উত্তরে ঐ মহিলা বলেছিল যে তার যেখানে নিজের গ্রাম , সেইসব এলাকার মেয়েরা উর্দ্ধাঙ্গের কোন পোষাক পড়ে না – এটাই ওখানকার রীতি ! এই ভদ্রমহিলা কোনক্রমে বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে লেখাপড়া শিখেছে এবং বড় চাকরীও পেয়েছে ! কিন্তু ওর সমাজের যা Custom বা System , সেটাকে সে Break করতে চায় না এবং ওর বাবা-মা বা ওর গোষ্ঠির লোকেদের আঘাত দিতে চায় না _তাই ও এইরকম করছে! আর এইরকমটা করতে সে অভ্যস্ত _ফলে ওর কোন অসুবিধা হচ্ছে না!
যাই হোক, এইভাবেই একটি অর্ধউলঙ্গ নারীর পাশে বসে উনি ঐ গ্রামে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। সেখানে গিয়ে গুরু মহারাজ দেখেছিলেন – সম্ভবতঃ ওদের কোন একটা অনুষ্ঠান ছিল – সবাই মিলে হাত ধরাধরি করে নাচছিল ! এই অফিসার মহিলাও সেখানে তাদের সাথে তাল মিলিয়েছিলেন!
এবার আমরা ফিরে আসছি আমাদের এখানে_অর্থাৎ বারেন্দা আশ্রমের সেই রাত্রে – যে রাত্রে গুরু মহারাজ মন্ত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন এবং আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ! গুরু মহারাজ বলেছিলেন –’ মন্ত্র মনকে ত্রাণ করে’ _এইসব বলা হয় বটে,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রের অন্য অর্থ আছে!
মন্ত্রের প্রকৃত তাৎপর্য্য বলতে গিয়ে বললেন — প্রতিটি স্থূল শরীরকে কেন্দ্র করে রয়েছে সূক্ষ্মশরীর , আর প্রতিটি সূক্ষ্মশরীরের কেন্দ্রে রয়েছে কারণশরীর ! প্রতিটি শরীরের-ই নির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে – এই Harmony যখনই নষ্ট হয় তখনই গণ্ডগোল ! সূক্ষ্মশরীরের ছন্দ ঠিক রাখলে স্থূলশরীর ছন্দে ফিরে আসবে ৷ আর কারণশরীরকে যদি ঠিকমতো Tune করা যায় – তাহলে ত্রিশরীরের ছন্দ-ই ঠিক থাকে ! প্রতিটি মানুষের কারণশরীর হ’ল একটি নির্দিষ্ট ছন্দের বা সুরের Vibration ! ইষ্টমন্ত্র-ও হচ্ছে নির্দিষ্ট ছন্দ ও সুরের Vibration ! সদ্-গুরু যে প্রতিটি পৃথক পৃথক মানুষের জন্য পৃথক পৃথক মন্ত্র নির্দ্ধারণ করেন – সেটা এই জন্যই(মাইকে গনদীক্ষা, বা মন্ত্রবিজ্ঞান না জেনে লোককে দীক্ষা দেওয়ায় কোন লাভই হয় না!)! প্রতিটি মানুষের কারণশরীরের Vibration -এর disharmony পুনরায় harmonise করে _তার জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্রের Vibration ! এইভাবে কারণশরীর harmonise হলেই সূক্ষ্মশরীরে harmony আসে এবং সূক্ষ্মশরীরে harmony এলে স্থূলশরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির সাম্যতা আসে , ফলে ঐ শরীরে রিপুরা আর রিপু বা শত্রু না হয়ে চরম মিত্র হিসাবে কাজ করে এবং এই শরীর পূর্ণতা লাভের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
এবার গুরুমহারাজ শরীরের যে ছয়টি গ্রন্থি রয়েছে অর্থাৎ মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মনিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞাচক্র _এই গুলির কথা বলতে শুরু করলেন। প্রতিটি চক্রে বিভিন্ন বর্ন এবং বীজমন্ত্র রয়েছে। যেমন মূলাধারে চতুর্দল পদ্মে চারটি বর্ন এবং পৃথ্বীবীজ “লং” রয়েছে। স্বাধিষ্ঠানে ষড়দলে ছয়টি বর্ন ও বরুনবীজ “বং” _রয়েছে ।মনিপুর চক্রে দশদল পদ্মে দশটি বর্ন, এখানে অগ্নিবীজ “রং”।
অনাহত চক্রে বারোটি দল বিশিষ্ট পদ্ম রয়েছে ফলে এখানে বারোটি বর্ন এবং বায়ুবীজ “যং”। বিশুদ্ধ চক্রে ষোলটি দলে ষোলটি বর্ন এবং রয়েছে ব্যোমবীজ বা আকাশবীজ “হং” ।আজ্ঞাচক্রে দিদ্বলপদ্মে দুটি বর্ন এখানেই সব তত্ত্ব অহং তত্ত্বে মিশে যায়।
এইসব কথা বলার পর সাথে সাথে গুরুমহারাজ পদ্মাসনে শিড়দাঁড়া খাড়া করে বসলেন এবং মূলাধারকে point out করে মূলাধারের বীজমন্ত্র “লং” – জপ করতে শুরু করলেন! জোরে জোরে উচ্চারণ করছিলেন “লং-লং-লং-লং…”!
তারপরেই বললেন _”দেখেছিস! এখন আমার কুলকুণ্ডলিনী এখন এখানে ক্রিয়াশীল! এবার দ্যাখ্_আমি স্বাধিষ্ঠানে মনঃসংযোগ করছি।”
এই কথা বলে উনি স্বাধিষ্ঠানের বীজমন্ত্র উচ্চারণ করতে শুরু করলেন _” বং-বং–বং–বং”! এইভাবে গুরুমহারাজ যখন মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করছিলেন _তখন গোটা ঘরটাই স্পন্দিত হচ্ছিল! আর এরপরে যেইমাত্র গুরুমহারাজ মনিপুরের বীজমন্ত্র “রং” জপ করতে শুরু করলেন _” রং-রং-রং-রং”__তখনই ঘরের প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। (ক্রমশঃ)