গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) বারেন্দা আশ্রমে বিকেলের দিকে (১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে) সিটিং-এ যে আলোচনা করেছিলেন – তাতে সেইসময় অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেনের নোবেল পাওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছিল ৷ অর্থনীতির বিভিন্ন Term যেমন – Consumerisation , Business -এর globalisation এইসব নানান শব্দ সেদিন-ই প্রথম আমরা শুনেছিলাম । বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ্-এর কথাও উনি সেদিন বলেছিলেন ! অমর্ত্য সেনের গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে উনি সেদিন বিকেলে এত সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে উপস্থিত শিক্ষিত মানুষজন পরে আমাদের কাছে খুবই প্রশংসা করেছিল ৷ অর্থনীতির আলোচনার সবটুকু আমার স্মৃতিতে নাই – [আর সেইসময় কর্মকর্ত্তা,আয়োজকে, ব্যাবস্থাপক ইত্যাদি সব দায়িত্ব থাকায় আমাদের সবসময় একনাগাড়ে বসে থাকাও হয়নি । এরফলে বারেন্দা আশ্রম এবং বোলপুরে ভল্লাবাবুর বাড়ির সিটিং-এর সমস্ত বিষয়বস্তু একনাগাড়ে আমার শোনাও হয়নি , note করে রাখাও হয়নি , — তাই এগুলো সম্পূর্ণভাবে বলা (লেখা) যাবে না ৷] তবে গ্রামের সাধারণ মানুষের টাকা , খেটে খাওয়া মানুষ বা শ্রমিকের টাকা , মধ্যবিত্তের টাকা কিভাবে কৌশল করে মাত্র কয়েক’শ মহাধনী ব্যবসায়ী এবং Multinational Company -গুলো নিয়ে চলে যায় – তার একটা রূপরেখা সেদিন উনি দিয়েছিলেন , সেইটা এখানে আলোচনা করছি ৷
Multinational Company বলতে সেইসব কোম্পানীগুলোকে বোঝায় – যাদের একাধিক দেশে কারবার রয়েছে ৷ এককথায় পৃথিবীতে এরাই ধনকুবের ! গোটা পৃথিবীর অর্থের একটা সিংহভাগ এদের দখলে ! বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ , বিদ্রোহ , অশান্তি , সরকার পতন , বিশৃঙ্খলা , দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি বিষয় ঘটানোর জন্যও এরাই দায়ী ! এরা রাজনীতি , ধর্মনীতি , সমাজনীতি এসব কিছুই বোঝেনা , শুধু ‘লাভ’ বোঝে ! দুটো পয়সা বেশী ‘লাভ’-এর জন্য এরা ঐগুলি সব ঘটাতে পারে! এক একটা দেশে নিজেদের পছন্দমত ‘রাজা’কে সিংহাসনে বসানোর জন্য এরা টাকা ঢেলে সেনাবিদ্রোহ বা প্রজাবিদ্রোহ পর্যন্ত ঘটাতে পারে ! গোটা পৃথিবীতে এরা বিভিন্ন রকম ব্যবসার জাল এমনভাবে বিছিয়ে রেখেছে আর সেই জালে সাধারণ মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত , খেটে খাওয়া মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত – সকলকেই পড়তে হবে !
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় – দামী দামী আসবাবপত্র , ফ্রীজ , T.V. (তখন কালার T.V. উচ্চবিত্তরাই কিনত , সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ Black&White টিভি কিনত, নিম্নবিত্তরা টিভি কিনতেই পারতো না), Air-Conditioner , Micro-oven , Water-Purifire , Vaccum Cleaner , রান্নাঘরের আধুনিক সরঞ্জাম – এগুলি কেনে ধনীরা বা উচ্চবিত্তরা ! আর এই সমস্ত Product Multinational Company -রাই প্রস্তুত করে । বড় বড় এ্যারোপ্লেন কোম্পানীগুলিও ওদেরই – সাধারণ গরীব মানুষ তো আর প্লেনে চাপে না – HIG অর্থাৎ Higer Income Group-এর মানুষজনই ওতে চাপে ! দামী দামী Branded পোষাক – সাধারণ মানুষ পড়ে না , উচ্চবিত্তেরা পড়ে! এইভাবে উচ্চবিত্তদের টাকা সরাসরি ঐসব মহাধনী ব্যবসায়ী বা Multinational Company-র হাতে চলে যায় ।
এবার মধ্যবিত্তের টাকা কিভাবে ওদের হাতে আসে – তা বলতে গিয়ে উনি বললেন __ একজন স্কুলের শিক্ষকের (মধ্যবিত্ত) কথাই ধর– সারাজীবন গরম গরম আলুসিদ্ধ ডাল-ভাত খেয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়, হয়তো রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিনে এক টুকরো মাছ বা এক প্লেট মাংস ! রোজগারের টাকা ব্যাংকে , পোষ্টঅফিসে জমিয়ে যাচ্ছেন – ছেলেমেয়ের পড়াশুনো বাবদ ও সামাজিকতা রক্ষায় যা কিছু খরচা – তাছাড়া কোন বাজে খরচ নাই ! চাকরীর শেষের দিকে হয়তো মেয়েটার বিয়ে দিতে হোল, এইবার খরচা শুরু হোল – মেয়েটাকে দামী দামী ফার্নিচার দিতে হবে , সাধারণ বিছানা নয় ‘ডানলোপিলো’-র গদি , সাধারণ দোকানে সোনা কেনা নয় – হলমার্কযুক্ত সোনা ! মাষ্টারমশাই-এর দু-চার লাখ খরচা হয়ে গেল – প্রভিডেন্ট ফান্ডের লোন ও সারাজীবনের না খেয়ে , না শখ-আহ্লাদ – জমা টাকার একটা অংশ বেড়িয়ে গেল! বেশীরভাগটা কার কাছে জমা পড়ল –ঐ মহাধনী ব্যবসাদার অথবা Multinational Company-র কাছে ! ফ্রীজ , টিভি , হলমার্কযুক্ত সোনা , দামী পোষাক , ফার্নিচার — সব যে ওদেরই Product !
আবার চাকুরীজীবি-দের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটাও ধার হিসাবে ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে নেয় এরাই! এরাই ঐ টাকাগুলো ব্যবসায় খাটায়! অর্থাৎ টাকা যারই হোক এদের হাতেই সবসময় ঘোরাফেরা করে !
এবার ঐ মাষ্টারমশাই যদি একটা বাড়ি তৈরি করেন (চাকরি করাকালীন বা রিটায়ার্ড এর পর), তাহলে শিক, সিমেন্ট, বাথরুমের সমস্ত সরঞ্জাম, পাইপলাইনের সামগ্রী ইত্যাদি কিনতে যাওয়া মানেই তার টাকা আবার তাদের (ধনী ব্যবসায়ীদের) হাতেই ফিরে যাওয়া!
মাষ্টারমশাই রিটায়ার্মেন্টের পর এককালীন পেয়ে গেলেন বেশ কিছু টাকা!! ধরে নেওয়া যাক 8/10 – লাখ টাকা(1996/97)।আগে বাড়ি করলে অথবা মেয়ের বিয়ের সময় প্রভিডেন্ট ফান্ডে লোন নেওয়া থাকলে হয়তো সাকুল্যে 4/৫-লাখ। এই টাকা কি করে খরচা করবেন মাষ্টারমশাই!! মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে _ছেলেটির পড়াশোনা হয় প্রায় শেষ হয়ে গেছে নয়তো পড়া শেষ করে চাকরি করছে! তাহলে মাষ্টারমশাই এর টাকা কি এবার তার নিজের কাছেই থেকে যাবে?? __না, তা থাকবে না।
নাতি নাতনী কে অনেকদিন কাছে পাননি মাষ্টারমশাই , মেয়েকে আসার জন্য ফোন করেছেন গ্রীষ্মের ছুটিতে ছেলে-মেয়েদের কে নিয়ে বাড়ি আসার জন্য। মেয়ে উত্তরে লিখেছে _”তোমার বাড়িতে ফ্রীজ নাই, কালার টিভি নাই_তাই তোমার নাতি নাতনী ওখানে যেতে চায় না!”
গিন্নীর পীড়াপীড়িতে মাষ্টারমশাই গেলেন বাজারে _এক ছাত্রের দোকান। এমনিতে কোন দিনই এখানে পা রাখেন নি_আজ রাখলেন! সব কথা শুনে ছাত্র বলল _” কোন চিন্তা করবেন না স্যার! আমি নিজে মিস্ত্রিকে নিয়ে গিয়ে নতুন বোর্ড লাগিয়ে ফ্রীজ সেট করে দিয়ে আসব।”
ছাত্র এসে সব ঠিক করে দিল, যাবার আগে পুরোনো black & white টিভি টা খুলে নিয়ে গেল। মেকানিক্ পাঠিয়ে মাষ্টারমশাই এর ঘরে বসিয়ে দিল নতুন কালার টিভি! গেল 20-25 হাজার টাকা করকরে! মাষ্টারমশাই গজগজ করতে লাগলেন _মাষ্টারনী কিন্তু খুব খুশি! বললেন_” টাকা যায় যাক – বহুদিনের সখ মিটল আজ! সেই মেয়েজামাই-এর বাড়ি গিয়ে দেখে এসেছিলাম, _কি সুন্দর ঝকঝকে ছবি!”
ছেলে যেখানে থাকে _সেইখানটায় খুব গরম! মায়ের কাছে গল্প করেছে _ গিন্নীর ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যানানিতে কিনে দিতে হোল একটা এয়ার_কন্ডিশনার! গেল আরো 15/20-হাজার।
সবার অনুরোধে মেয়ে-জামাই এর সাথে জীবনে প্রথমবারের জন্য প্লেনে চড়ে আন্দামানে যাওয়া!
এইভাবে ঘটির জল কমতে থাকল আর ভিটামিন M (টাকা) চলে যেতে থাকল সেই দেশের সবচাইতে ধনী ব্যবসায়ীদের হাতে। মাষ্টারমশাই প্রতিদিন বাজারে গিয়ে শাক-সবজি বিক্রি করা বুড়িটির সাথে চারআনা-আটআনা কমানোর জন্য ঝগড়া করেন! কিন্তু multi national company – র প্রোডাক্টে দর কষাকষি চলে না _গুনে গুনে টাকা মিটিয়ে দিতে হয়।
এই সব করতে করতেই কর্তা বা গিন্নী পড়ে গেল একটা বড়সড় রোগে! কলকাতা, বোম্বাই, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর ইত্যাদি যেখানেই যাও সেই ধনী ব্যবসায়ীরাই হসপিটাল রূপ ব্যবসা খুলে বসে আছে! নিয়ে নিল 4/5-লাখ টাকা।
এখন তো সবচেয়ে লাভজনক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং হোটেল ব্যবসা!
ধনী ব্যবসায়ীরা এখন এই তিনটে তেই টাকা বিনিয়োগ করছে সবচাইতে বেশি! (ক্রমশঃ)
Multinational Company বলতে সেইসব কোম্পানীগুলোকে বোঝায় – যাদের একাধিক দেশে কারবার রয়েছে ৷ এককথায় পৃথিবীতে এরাই ধনকুবের ! গোটা পৃথিবীর অর্থের একটা সিংহভাগ এদের দখলে ! বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ , বিদ্রোহ , অশান্তি , সরকার পতন , বিশৃঙ্খলা , দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি বিষয় ঘটানোর জন্যও এরাই দায়ী ! এরা রাজনীতি , ধর্মনীতি , সমাজনীতি এসব কিছুই বোঝেনা , শুধু ‘লাভ’ বোঝে ! দুটো পয়সা বেশী ‘লাভ’-এর জন্য এরা ঐগুলি সব ঘটাতে পারে! এক একটা দেশে নিজেদের পছন্দমত ‘রাজা’কে সিংহাসনে বসানোর জন্য এরা টাকা ঢেলে সেনাবিদ্রোহ বা প্রজাবিদ্রোহ পর্যন্ত ঘটাতে পারে ! গোটা পৃথিবীতে এরা বিভিন্ন রকম ব্যবসার জাল এমনভাবে বিছিয়ে রেখেছে আর সেই জালে সাধারণ মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত , খেটে খাওয়া মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত – সকলকেই পড়তে হবে !
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় – দামী দামী আসবাবপত্র , ফ্রীজ , T.V. (তখন কালার T.V. উচ্চবিত্তরাই কিনত , সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ Black&White টিভি কিনত, নিম্নবিত্তরা টিভি কিনতেই পারতো না), Air-Conditioner , Micro-oven , Water-Purifire , Vaccum Cleaner , রান্নাঘরের আধুনিক সরঞ্জাম – এগুলি কেনে ধনীরা বা উচ্চবিত্তরা ! আর এই সমস্ত Product Multinational Company -রাই প্রস্তুত করে । বড় বড় এ্যারোপ্লেন কোম্পানীগুলিও ওদেরই – সাধারণ গরীব মানুষ তো আর প্লেনে চাপে না – HIG অর্থাৎ Higer Income Group-এর মানুষজনই ওতে চাপে ! দামী দামী Branded পোষাক – সাধারণ মানুষ পড়ে না , উচ্চবিত্তেরা পড়ে! এইভাবে উচ্চবিত্তদের টাকা সরাসরি ঐসব মহাধনী ব্যবসায়ী বা Multinational Company-র হাতে চলে যায় ।
এবার মধ্যবিত্তের টাকা কিভাবে ওদের হাতে আসে – তা বলতে গিয়ে উনি বললেন __ একজন স্কুলের শিক্ষকের (মধ্যবিত্ত) কথাই ধর– সারাজীবন গরম গরম আলুসিদ্ধ ডাল-ভাত খেয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়, হয়তো রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিনে এক টুকরো মাছ বা এক প্লেট মাংস ! রোজগারের টাকা ব্যাংকে , পোষ্টঅফিসে জমিয়ে যাচ্ছেন – ছেলেমেয়ের পড়াশুনো বাবদ ও সামাজিকতা রক্ষায় যা কিছু খরচা – তাছাড়া কোন বাজে খরচ নাই ! চাকরীর শেষের দিকে হয়তো মেয়েটার বিয়ে দিতে হোল, এইবার খরচা শুরু হোল – মেয়েটাকে দামী দামী ফার্নিচার দিতে হবে , সাধারণ বিছানা নয় ‘ডানলোপিলো’-র গদি , সাধারণ দোকানে সোনা কেনা নয় – হলমার্কযুক্ত সোনা ! মাষ্টারমশাই-এর দু-চার লাখ খরচা হয়ে গেল – প্রভিডেন্ট ফান্ডের লোন ও সারাজীবনের না খেয়ে , না শখ-আহ্লাদ – জমা টাকার একটা অংশ বেড়িয়ে গেল! বেশীরভাগটা কার কাছে জমা পড়ল –ঐ মহাধনী ব্যবসাদার অথবা Multinational Company-র কাছে ! ফ্রীজ , টিভি , হলমার্কযুক্ত সোনা , দামী পোষাক , ফার্নিচার — সব যে ওদেরই Product !
আবার চাকুরীজীবি-দের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটাও ধার হিসাবে ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে নেয় এরাই! এরাই ঐ টাকাগুলো ব্যবসায় খাটায়! অর্থাৎ টাকা যারই হোক এদের হাতেই সবসময় ঘোরাফেরা করে !
এবার ঐ মাষ্টারমশাই যদি একটা বাড়ি তৈরি করেন (চাকরি করাকালীন বা রিটায়ার্ড এর পর), তাহলে শিক, সিমেন্ট, বাথরুমের সমস্ত সরঞ্জাম, পাইপলাইনের সামগ্রী ইত্যাদি কিনতে যাওয়া মানেই তার টাকা আবার তাদের (ধনী ব্যবসায়ীদের) হাতেই ফিরে যাওয়া!
মাষ্টারমশাই রিটায়ার্মেন্টের পর এককালীন পেয়ে গেলেন বেশ কিছু টাকা!! ধরে নেওয়া যাক 8/10 – লাখ টাকা(1996/97)।আগে বাড়ি করলে অথবা মেয়ের বিয়ের সময় প্রভিডেন্ট ফান্ডে লোন নেওয়া থাকলে হয়তো সাকুল্যে 4/৫-লাখ। এই টাকা কি করে খরচা করবেন মাষ্টারমশাই!! মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে _ছেলেটির পড়াশোনা হয় প্রায় শেষ হয়ে গেছে নয়তো পড়া শেষ করে চাকরি করছে! তাহলে মাষ্টারমশাই এর টাকা কি এবার তার নিজের কাছেই থেকে যাবে?? __না, তা থাকবে না।
নাতি নাতনী কে অনেকদিন কাছে পাননি মাষ্টারমশাই , মেয়েকে আসার জন্য ফোন করেছেন গ্রীষ্মের ছুটিতে ছেলে-মেয়েদের কে নিয়ে বাড়ি আসার জন্য। মেয়ে উত্তরে লিখেছে _”তোমার বাড়িতে ফ্রীজ নাই, কালার টিভি নাই_তাই তোমার নাতি নাতনী ওখানে যেতে চায় না!”
গিন্নীর পীড়াপীড়িতে মাষ্টারমশাই গেলেন বাজারে _এক ছাত্রের দোকান। এমনিতে কোন দিনই এখানে পা রাখেন নি_আজ রাখলেন! সব কথা শুনে ছাত্র বলল _” কোন চিন্তা করবেন না স্যার! আমি নিজে মিস্ত্রিকে নিয়ে গিয়ে নতুন বোর্ড লাগিয়ে ফ্রীজ সেট করে দিয়ে আসব।”
ছাত্র এসে সব ঠিক করে দিল, যাবার আগে পুরোনো black & white টিভি টা খুলে নিয়ে গেল। মেকানিক্ পাঠিয়ে মাষ্টারমশাই এর ঘরে বসিয়ে দিল নতুন কালার টিভি! গেল 20-25 হাজার টাকা করকরে! মাষ্টারমশাই গজগজ করতে লাগলেন _মাষ্টারনী কিন্তু খুব খুশি! বললেন_” টাকা যায় যাক – বহুদিনের সখ মিটল আজ! সেই মেয়েজামাই-এর বাড়ি গিয়ে দেখে এসেছিলাম, _কি সুন্দর ঝকঝকে ছবি!”
ছেলে যেখানে থাকে _সেইখানটায় খুব গরম! মায়ের কাছে গল্প করেছে _ গিন্নীর ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যানানিতে কিনে দিতে হোল একটা এয়ার_কন্ডিশনার! গেল আরো 15/20-হাজার।
সবার অনুরোধে মেয়ে-জামাই এর সাথে জীবনে প্রথমবারের জন্য প্লেনে চড়ে আন্দামানে যাওয়া!
এইভাবে ঘটির জল কমতে থাকল আর ভিটামিন M (টাকা) চলে যেতে থাকল সেই দেশের সবচাইতে ধনী ব্যবসায়ীদের হাতে। মাষ্টারমশাই প্রতিদিন বাজারে গিয়ে শাক-সবজি বিক্রি করা বুড়িটির সাথে চারআনা-আটআনা কমানোর জন্য ঝগড়া করেন! কিন্তু multi national company – র প্রোডাক্টে দর কষাকষি চলে না _গুনে গুনে টাকা মিটিয়ে দিতে হয়।
এই সব করতে করতেই কর্তা বা গিন্নী পড়ে গেল একটা বড়সড় রোগে! কলকাতা, বোম্বাই, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর ইত্যাদি যেখানেই যাও সেই ধনী ব্যবসায়ীরাই হসপিটাল রূপ ব্যবসা খুলে বসে আছে! নিয়ে নিল 4/5-লাখ টাকা।
এখন তো সবচেয়ে লাভজনক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং হোটেল ব্যবসা!
ধনী ব্যবসায়ীরা এখন এই তিনটে তেই টাকা বিনিয়োগ করছে সবচাইতে বেশি! (ক্রমশঃ)