শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ এবং তাঁর ভক্ত, শিষ্য ও পার্ষদদের নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা কথা বলছিলাম স্বামী ভাগবতানন্দজীর সম্বন্ধে। কত সংগ্রামপূর্ণ জীবন এই বাউল সাধকের ! ১৯৭৭/৭৮ সালে যখন ওনার বয়স ছিল ১৯/২০ বছর, তখন থেকেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন, আরও দুই-তিন বছর পর গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের সাথে সাক্ষাৎ ! এই যে দুই-তিন বছর ওনার প্রাথমিকভাবে পথে পথে কেটেছিল, এর মধ্যে উনি contructor-এর অধীনে কাজও করেছেন, আবার কোনো কোনোসময় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরেছেন ! কিন্তু সবসময়েই চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন সাধু-সন্ত, বাবাজী-বৈষ্ণব, আউল-বাউল-দরবেশ ইত্যাদিদের সঙ্গ করতে। এদের অনেকের কাছেই উনি অনেককিছু শিখেছিলেন। কিন্তু, মনের যে তৃষ্ণা ওনাকে ঘরছাড়া করেছিল – সেইটা আর অন্য কোথাও মিটছিলো না – সেইটা মিটলো এসে বর্ধমানের একটা অজপাড়াগাঁ বনগ্রামে এসে !
এই ঘটনাগুলি আমরা আগেই বর্ণনা করেছি, তাই এখানে আর তার পুনরুক্তির প্রয়োজন নাই, বরং আমরা যে জায়গায় আগের দিনে শেষ করেছিলাম – সেইখানে ফিরে যাই। আমরা দেখেছিলাম যে প্রথমবারের জন্য গিয়ে গুরুমহারাজ মালদহের ছোট কাদিরপুর গ্রামে একটা দুর্গামন্ডপে উঠেছিলেন এবং সেইখানেই রাত্রের বিশ্রামও নিতে হয়েছিল। তখনকার দিনের গ্রামের দুর্গামন্ডপ – মানে বুঝতে পারছেন কি ? – কোনরকমে তৈরি করা, শারদীয়া দুর্গাঠাকুরকে আনার একটা স্থানবিশেষ ! আজকের পাথরবাঁধানো, মাথায় ছাদবিশিষ্ট বা ডিজাইন করা দূর্গামন্ডপ নয় ! ঐ দুর্গামন্ডপটির মাথায় টালি দেওয়া ছিল, হনুমানের লাফালাফিতে বা অন্য কোনো কারণে মাথার টালি সরে গিয়ে জায়গায় জায়গায় ফাঁক হয়ে গিয়েছিল !
দিনের আলো থাকতে থাকতেই ভাগবতানন্দজী গুরুমহারাজকে সেটা দেখিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, গ্রামের কারো কাছে একটা ত্রিপল চেয়ে এনে মাথায় চাপিয়ে দিলেই ঐ ফাঁকগুলি ঢাকা পড়ে যাবে। কিন্তু গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” থাক না যেমন রয়েছে ! তুমি তো এই অবস্থাতেই এখানে রয়েছো। তাহলে আমার জন্য আর আলাদা ব্যবস্থা করে কি হবে ! একটা রাত তো ! ঠিক-ই কেটে যাবে।” সেই রাতটি অন্যান্য লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি রাত্রির মতো কেটেও গিয়েছিল। কিন্তু ভাগবতানন্দ মহারাজ সেই রাত্রিটির কথা স্মরণ করে এখনও বেদনাক্রান্ত হয়ে পড়েন ! কারণ তখন ওই অঞ্চলে রাত্রির দিকে ভালোই শীত পড়ে গিয়েছিল। ফলে সারা রাতে টালির ফাঁক দিয়ে শিশির (হিম) পড়ে – ঘরের তাপমাত্রা হু হু করে কমে যেতে শুরু করেছিল ! ভাগবতানন্দজীর তখন নিজেরই থাকার জায়গা নাই – ফলে শীতবস্ত্র বা কম্বল-বিছানা ইত্যাদির কোনো গল্প বলা__ মানে চরম রসিকতা হয়ে যাবে ! সেই রাত্রে গুরুমহারাজের রাত্রিকালীন বিশ্রামের খুবই অসুবিধা হয়েছিল (তবে, যিনি বরফগলা জলে দাঁড়িয়ে রাত কাটাতে পারেন, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বরফের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে কাটাতে পারেন – তাঁর কাছে এইটা হয়তো এমন কিছু কষ্ট ছিল না ! কিন্তু ভক্তের কাছে তার প্রভুর সামান্য ব্যথাও তো অনেকখানি কষ্টের – তাই না !)। ভাগবতানন্দজী এইটা দেখে খুবই ব্যথিত হয়েছিলেন।
যাইহোক, ঐ সময়েই যে দু-চারজনের দীক্ষা হয়েছিল এবং যে সমস্ত মানুষ ওনার সঙ্গপ্রভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল – তাদের প্রচেষ্টায় প্রথমে আশ্রম তৈরীর জন্য ষোল (১৬) শতক একটা জায়গা পাওয়া গিয়েছিল। বাসুদেব …… নামে একজন দীক্ষা নিয়েছিল, সেই ছেলেটিই ঐ জায়গাটার ব্যবস্থা করেছিল। সেটা ১৯৮৬ সাল। গুরুমহারাজকে ঐ সব স্থান দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এখন যেখানে আশ্রমের ঘরবাড়ি হয়েছে (তখন ঐ জায়গাটা যে আশ্রমের হবে তার কোনো ঠিকই ছিল না ! কারণ সেই জায়গাটি যার বা যাদের ছিল, সে বা তারা ঐ স্থানটি আশ্রমকে দান করার ব্যাপারে বা বিক্রি করার ব্যাপারে মোটেই রাজি ছিল না !) – গুরুমহারাজ সেই স্থানে পা দিয়েই বলেছিলেন – ” এইখানে আমাদের আশ্রম হবে।” আর পরবর্তীতে সেটাই হয়েছে।
কিন্তু আগের স্থানটিতেই প্রথম আশ্রম স্থাপনা হয়েছিল, গুরু মহারাজ ঐ স্থানে তৈরি হওয়া আশ্রমে বেশ কয়েকবার গেছিলেন। তবে, গুরুমহারাজ-নির্দিষ্ট স্থানটিতে আশ্রমের ঘর শুরু হবার পরেও একবারের জন্য উনি মালদহে গিয়েছিলেন। ওইটাই ছিল গুরুমহারাজের স্থূলশরীরে শেষবারের মতো যাওয়া ! তবে এগুলো অনেক পরের কথা ! আগে – আগের কথাগুলো বলতে হবে। আর সেটা হবে পরের দিন ! – [ক্রমশঃ]
এই ঘটনাগুলি আমরা আগেই বর্ণনা করেছি, তাই এখানে আর তার পুনরুক্তির প্রয়োজন নাই, বরং আমরা যে জায়গায় আগের দিনে শেষ করেছিলাম – সেইখানে ফিরে যাই। আমরা দেখেছিলাম যে প্রথমবারের জন্য গিয়ে গুরুমহারাজ মালদহের ছোট কাদিরপুর গ্রামে একটা দুর্গামন্ডপে উঠেছিলেন এবং সেইখানেই রাত্রের বিশ্রামও নিতে হয়েছিল। তখনকার দিনের গ্রামের দুর্গামন্ডপ – মানে বুঝতে পারছেন কি ? – কোনরকমে তৈরি করা, শারদীয়া দুর্গাঠাকুরকে আনার একটা স্থানবিশেষ ! আজকের পাথরবাঁধানো, মাথায় ছাদবিশিষ্ট বা ডিজাইন করা দূর্গামন্ডপ নয় ! ঐ দুর্গামন্ডপটির মাথায় টালি দেওয়া ছিল, হনুমানের লাফালাফিতে বা অন্য কোনো কারণে মাথার টালি সরে গিয়ে জায়গায় জায়গায় ফাঁক হয়ে গিয়েছিল !
দিনের আলো থাকতে থাকতেই ভাগবতানন্দজী গুরুমহারাজকে সেটা দেখিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, গ্রামের কারো কাছে একটা ত্রিপল চেয়ে এনে মাথায় চাপিয়ে দিলেই ঐ ফাঁকগুলি ঢাকা পড়ে যাবে। কিন্তু গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” থাক না যেমন রয়েছে ! তুমি তো এই অবস্থাতেই এখানে রয়েছো। তাহলে আমার জন্য আর আলাদা ব্যবস্থা করে কি হবে ! একটা রাত তো ! ঠিক-ই কেটে যাবে।” সেই রাতটি অন্যান্য লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি রাত্রির মতো কেটেও গিয়েছিল। কিন্তু ভাগবতানন্দ মহারাজ সেই রাত্রিটির কথা স্মরণ করে এখনও বেদনাক্রান্ত হয়ে পড়েন ! কারণ তখন ওই অঞ্চলে রাত্রির দিকে ভালোই শীত পড়ে গিয়েছিল। ফলে সারা রাতে টালির ফাঁক দিয়ে শিশির (হিম) পড়ে – ঘরের তাপমাত্রা হু হু করে কমে যেতে শুরু করেছিল ! ভাগবতানন্দজীর তখন নিজেরই থাকার জায়গা নাই – ফলে শীতবস্ত্র বা কম্বল-বিছানা ইত্যাদির কোনো গল্প বলা__ মানে চরম রসিকতা হয়ে যাবে ! সেই রাত্রে গুরুমহারাজের রাত্রিকালীন বিশ্রামের খুবই অসুবিধা হয়েছিল (তবে, যিনি বরফগলা জলে দাঁড়িয়ে রাত কাটাতে পারেন, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বরফের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে কাটাতে পারেন – তাঁর কাছে এইটা হয়তো এমন কিছু কষ্ট ছিল না ! কিন্তু ভক্তের কাছে তার প্রভুর সামান্য ব্যথাও তো অনেকখানি কষ্টের – তাই না !)। ভাগবতানন্দজী এইটা দেখে খুবই ব্যথিত হয়েছিলেন।
যাইহোক, ঐ সময়েই যে দু-চারজনের দীক্ষা হয়েছিল এবং যে সমস্ত মানুষ ওনার সঙ্গপ্রভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল – তাদের প্রচেষ্টায় প্রথমে আশ্রম তৈরীর জন্য ষোল (১৬) শতক একটা জায়গা পাওয়া গিয়েছিল। বাসুদেব …… নামে একজন দীক্ষা নিয়েছিল, সেই ছেলেটিই ঐ জায়গাটার ব্যবস্থা করেছিল। সেটা ১৯৮৬ সাল। গুরুমহারাজকে ঐ সব স্থান দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এখন যেখানে আশ্রমের ঘরবাড়ি হয়েছে (তখন ঐ জায়গাটা যে আশ্রমের হবে তার কোনো ঠিকই ছিল না ! কারণ সেই জায়গাটি যার বা যাদের ছিল, সে বা তারা ঐ স্থানটি আশ্রমকে দান করার ব্যাপারে বা বিক্রি করার ব্যাপারে মোটেই রাজি ছিল না !) – গুরুমহারাজ সেই স্থানে পা দিয়েই বলেছিলেন – ” এইখানে আমাদের আশ্রম হবে।” আর পরবর্তীতে সেটাই হয়েছে।
কিন্তু আগের স্থানটিতেই প্রথম আশ্রম স্থাপনা হয়েছিল, গুরু মহারাজ ঐ স্থানে তৈরি হওয়া আশ্রমে বেশ কয়েকবার গেছিলেন। তবে, গুরুমহারাজ-নির্দিষ্ট স্থানটিতে আশ্রমের ঘর শুরু হবার পরেও একবারের জন্য উনি মালদহে গিয়েছিলেন। ওইটাই ছিল গুরুমহারাজের স্থূলশরীরে শেষবারের মতো যাওয়া ! তবে এগুলো অনেক পরের কথা ! আগে – আগের কথাগুলো বলতে হবে। আর সেটা হবে পরের দিন ! – [ক্রমশঃ]