শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ এবং তাঁর ভক্ত, শিষ্য ও পার্ষদদের নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা এখন কথা বলছিলাম স্বামী ভাগবতানন্দজীর সম্বন্ধে। কিভাবে উনি মালদহে ছোট কাদিরপুরে পরমানন্দ মিশনের শাখা-আশ্রমটি গড়ে তুলেছিলেন – সেইসব নিয়েই কথা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ প্রথমবারের জন্য যখন মালদহে গিয়েছিলেন তখনই উনি একটা স্থানে পা দেবার পর বলেছিলেন – “এখানে আমাদের আশ্রম হবে।” কিন্তু যে স্থানটি প্রথমেই পাওয়া গিয়েছিল, সেই স্থানটিতেই প্রথমে ভাগবতানন্দ মহারাজ আশ্রম তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন। মহারাজের ইচ্ছা ছিল (তখন যেমন ওনার সামর্থ্য ছিল – সেই অনুযায়ীই উনি চিন্তা করেছিলেন) বাঁশ, খড়, কাদা-মাটি দিয়ে ছোট ছোট কুটিয়া নির্মাণ করে – আশ্রমের কাজের শুভসূচনা করবেন।
এই ব্যাপারে গুরুমহারাজের সাথে কথা বলতে গেলে গুরুমহারাজ ওনাকে বলেছিলেন – ” যেটা ভাববে বা চিন্তা করবে, সেটা কিন্তু বড় করে ভাবতে হবে।” কিন্তু মহারাজের তখন সে সামর্থ্য কোথায় ? উনি কাদামাটি-বাঁশ-খড় দিয়েই ঘর তৈরি করেছিলেন ৷ কিন্তু ১৯৮৭ সালে মহানন্দা নদীর প্রলয়ঙ্করী বন্যা হোলো। সেই প্রবল বন্যায় আশ্রমের সদ্য তৈরি কুটিয়া ভেসে চলে গেল। বন্যার সময়টা মহারাজ গ্রামের কোনো ভক্তবাড়িতে থেকেছিলেন, কিন্তু বন্যার জল নেমে যাওয়ার পর মহারাজ আশ্রমের ঐ জায়গাটাতে চলে এসেছিলেন এবং সেখানেই গাছতলায় তাঁবু টাঙিয়ে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। বন্যার পর সরকারি অনুদানে ত্রিপল এবং খাবার-দাবার পাওয়া গিয়েছিল, সেই ত্রিপল খাটিয়ে তাঁবু বানানো হয়েছিল। ওখানে ওইভাবে থাকতে থাকতেই আবার আগের মতোই কুটিয়া তৈরী হয়ে গেল, ফলে উনি তাঁবুর জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে আবার কুটিয়ার জীবনে ফিরে গেলেন।
অবশেষে ১৯৮৮ সালে পাশের জায়গাটা পাওয়া গেল। প্রথমের জমিটা ছিল ৮ কাঠা বা ১৬ শতক। এইটার পরিমাণ ছিল ২৬ শতক। কিন্তু জানা গেল জমির মালিক জমিটার পুরোটাই বিক্রি করতে পারে – যদি উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় ! এইবার ভাগবতানন্দজী পড়লেন মহা ঝামেলায় ! পুরো জমিটা ৫৪ শতক। এতটা জমির দাম মেটানো তখন ভাগবতানন্দজীর পক্ষে সত্যিই অসম্ভব ছিল। সুতরাং – বিকল্প ভাবনা ভাবতেই হবে। কারো না কারোর সাহায্য নিতেই হবে। তাহলে ? একজন সন্ন্যাসী কার কাছে সাহায্য নেবে ?– নিশ্চই ইশ্বরের কাছে ! আর তখন তো স্বয়ং ইশ্বর নরতনু ধারণ করে ভগবৎ-শরীরে পরমানন্দরূপে লীলা করছেন – তাই মহারাজ চলে গেলেন সোজা তাঁর কাছে !
গুরুমহারাজ তখন ছিলেন রসবেরুলিয়া আশ্রমে (তখন রসবেরুলিয়ায় পরমানন্দ মিশনের শাখা তৈরী হয়ে গেছিলো)। ফলে মহারাজ সেখানেই গিয়েছিলেন এবং গুরুমহারাজের সাথে দেখা করে তাঁর অবস্থার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন।
এইবার ভগবানের ভূমিকা ! কিন্তু তিনি তো এখন স্থূলশরীর ধারণ করেছেন – প্রকৃতির অধীনে রয়েছেন – তাই তাঁর এই অবস্থায় ভূমিকাটি ঠিক কেমন হয় সেটাও দেখার মতো বিষয়ই বটে ! ভাগবতানন্দ মহারাজ যখন গুরুজীকে গিয়ে সরাসরি বলেছিলেন – ” গুরুজী ! আমার বেশ কিছু টাকার দরকার !” তখন এই কথা শুনে গুরুমহারাজ যেন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন – ” সে-কি রে ! তোর আবার অতো বেশি টাকার প্রয়োজন হোলো কেন ?” তখন ভাগবতানন্দজী জায়গা কেনার কথাটা বলেন এবং আরো বলেন যে, সেই বিশেষ জায়গাটি (যেটি গুরুজী প্রথমে পা দিয়েই Suggest করেছিলেন) পাবার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে,– ন’হাজার টাকা প্রয়োজন(১৯৮৭-সালে ঐ সমস্ত অঞ্চলে ন’হাজার টাকার অনেকটাই জমি পাওয়া যেতো।) !
তখন গুরুমহারাজ যেন খুবই চিন্তায় পড়ে গেছেন এমনভাব নিয়ে ভাগবতানন্দজীকে বলেছিলেন – ” তাই তো রে ! অতোগুলো টাকার কথা – কাকে বলি বল্ তো ?” ভাগবতানন্দজী বলেছিলেন – ” সাঁকোবাজারের দীপককে (……) বললেই পাওয়া যাবে !” ভগবান পরমানন্দ এর উত্তরে বলেছিলেন – ” সে না হয় বলা হোলো ! ধারের টাকাটাও পাওয়া গেল। কিন্তু তারপর শোধ কি করে হবে ?” মালদহের ঐ অঞ্চলে বর্ষার সময় সববছর ধান না হোলেও (বন্যায় নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে) গ্রীষ্মকালীন অর্থাৎ বোরো-সিজনের ধান ভালো হয়। ভাগবতানন্দজী বলেছিলেন – উনি জ্যৈষ্ঠমাসে গ্রামে গ্রামে ধান collection করে ঐ ঋণের অনেকটাই শোধ করে দেবেন। বাকি যেটা থাকবে সেটা পরে পরে শোধ হবে। এইসব কথা শুনে গুরুমহারাজ খুবই প্রসন্ন হয়েছিলেন।
এরপর গুরুমহারাজ নিজেই দীপকের সামনে টাকার কথাটা পেরেছিলেন। উনি বলেছিলেন – ” ভাগবতানন্দের এখন বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। ও ছোট কাদিরপুরে আশ্রমের জন্য জায়গা কিনছে !” দীপক টাকা দিয়েছিল, আশ্রমের জায়গাও কেনা হয়েছিল।৷ সেইসময় হরিমহারাজ এসে কিছুদিন থাকায় ভাগবতানন্দজীর অনেকটা উপকার হয়েছিল।৷ [ক্রমশঃ]
এই ব্যাপারে গুরুমহারাজের সাথে কথা বলতে গেলে গুরুমহারাজ ওনাকে বলেছিলেন – ” যেটা ভাববে বা চিন্তা করবে, সেটা কিন্তু বড় করে ভাবতে হবে।” কিন্তু মহারাজের তখন সে সামর্থ্য কোথায় ? উনি কাদামাটি-বাঁশ-খড় দিয়েই ঘর তৈরি করেছিলেন ৷ কিন্তু ১৯৮৭ সালে মহানন্দা নদীর প্রলয়ঙ্করী বন্যা হোলো। সেই প্রবল বন্যায় আশ্রমের সদ্য তৈরি কুটিয়া ভেসে চলে গেল। বন্যার সময়টা মহারাজ গ্রামের কোনো ভক্তবাড়িতে থেকেছিলেন, কিন্তু বন্যার জল নেমে যাওয়ার পর মহারাজ আশ্রমের ঐ জায়গাটাতে চলে এসেছিলেন এবং সেখানেই গাছতলায় তাঁবু টাঙিয়ে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। বন্যার পর সরকারি অনুদানে ত্রিপল এবং খাবার-দাবার পাওয়া গিয়েছিল, সেই ত্রিপল খাটিয়ে তাঁবু বানানো হয়েছিল। ওখানে ওইভাবে থাকতে থাকতেই আবার আগের মতোই কুটিয়া তৈরী হয়ে গেল, ফলে উনি তাঁবুর জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে আবার কুটিয়ার জীবনে ফিরে গেলেন।
অবশেষে ১৯৮৮ সালে পাশের জায়গাটা পাওয়া গেল। প্রথমের জমিটা ছিল ৮ কাঠা বা ১৬ শতক। এইটার পরিমাণ ছিল ২৬ শতক। কিন্তু জানা গেল জমির মালিক জমিটার পুরোটাই বিক্রি করতে পারে – যদি উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় ! এইবার ভাগবতানন্দজী পড়লেন মহা ঝামেলায় ! পুরো জমিটা ৫৪ শতক। এতটা জমির দাম মেটানো তখন ভাগবতানন্দজীর পক্ষে সত্যিই অসম্ভব ছিল। সুতরাং – বিকল্প ভাবনা ভাবতেই হবে। কারো না কারোর সাহায্য নিতেই হবে। তাহলে ? একজন সন্ন্যাসী কার কাছে সাহায্য নেবে ?– নিশ্চই ইশ্বরের কাছে ! আর তখন তো স্বয়ং ইশ্বর নরতনু ধারণ করে ভগবৎ-শরীরে পরমানন্দরূপে লীলা করছেন – তাই মহারাজ চলে গেলেন সোজা তাঁর কাছে !
গুরুমহারাজ তখন ছিলেন রসবেরুলিয়া আশ্রমে (তখন রসবেরুলিয়ায় পরমানন্দ মিশনের শাখা তৈরী হয়ে গেছিলো)। ফলে মহারাজ সেখানেই গিয়েছিলেন এবং গুরুমহারাজের সাথে দেখা করে তাঁর অবস্থার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন।
এইবার ভগবানের ভূমিকা ! কিন্তু তিনি তো এখন স্থূলশরীর ধারণ করেছেন – প্রকৃতির অধীনে রয়েছেন – তাই তাঁর এই অবস্থায় ভূমিকাটি ঠিক কেমন হয় সেটাও দেখার মতো বিষয়ই বটে ! ভাগবতানন্দ মহারাজ যখন গুরুজীকে গিয়ে সরাসরি বলেছিলেন – ” গুরুজী ! আমার বেশ কিছু টাকার দরকার !” তখন এই কথা শুনে গুরুমহারাজ যেন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন – ” সে-কি রে ! তোর আবার অতো বেশি টাকার প্রয়োজন হোলো কেন ?” তখন ভাগবতানন্দজী জায়গা কেনার কথাটা বলেন এবং আরো বলেন যে, সেই বিশেষ জায়গাটি (যেটি গুরুজী প্রথমে পা দিয়েই Suggest করেছিলেন) পাবার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে,– ন’হাজার টাকা প্রয়োজন(১৯৮৭-সালে ঐ সমস্ত অঞ্চলে ন’হাজার টাকার অনেকটাই জমি পাওয়া যেতো।) !
তখন গুরুমহারাজ যেন খুবই চিন্তায় পড়ে গেছেন এমনভাব নিয়ে ভাগবতানন্দজীকে বলেছিলেন – ” তাই তো রে ! অতোগুলো টাকার কথা – কাকে বলি বল্ তো ?” ভাগবতানন্দজী বলেছিলেন – ” সাঁকোবাজারের দীপককে (……) বললেই পাওয়া যাবে !” ভগবান পরমানন্দ এর উত্তরে বলেছিলেন – ” সে না হয় বলা হোলো ! ধারের টাকাটাও পাওয়া গেল। কিন্তু তারপর শোধ কি করে হবে ?” মালদহের ঐ অঞ্চলে বর্ষার সময় সববছর ধান না হোলেও (বন্যায় নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে) গ্রীষ্মকালীন অর্থাৎ বোরো-সিজনের ধান ভালো হয়। ভাগবতানন্দজী বলেছিলেন – উনি জ্যৈষ্ঠমাসে গ্রামে গ্রামে ধান collection করে ঐ ঋণের অনেকটাই শোধ করে দেবেন। বাকি যেটা থাকবে সেটা পরে পরে শোধ হবে। এইসব কথা শুনে গুরুমহারাজ খুবই প্রসন্ন হয়েছিলেন।
এরপর গুরুমহারাজ নিজেই দীপকের সামনে টাকার কথাটা পেরেছিলেন। উনি বলেছিলেন – ” ভাগবতানন্দের এখন বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। ও ছোট কাদিরপুরে আশ্রমের জন্য জায়গা কিনছে !” দীপক টাকা দিয়েছিল, আশ্রমের জায়গাও কেনা হয়েছিল।৷ সেইসময় হরিমহারাজ এসে কিছুদিন থাকায় ভাগবতানন্দজীর অনেকটা উপকার হয়েছিল।৷ [ক্রমশঃ]