শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ এবং তাঁর ভক্ত, শিষ্য ও পার্ষদদের নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। সেই প্রসঙ্গে আমরা ছিলাম স্বামী ভাগবতানন্দজীর কথায়, যিনি এখন মালদহ জেলার মালদহ শহরের সন্নিকট মহানন্দা নদীর ধারে ছোট কাদিরপুর নামক স্থানে আশ্রম (পরমানন্দ মিশনের-ই একটি শাখা) করে রয়েছেন। আচ্ছা – একটা কথা আলোচনা করে নেওয়াই যায় ! সেটা হোলো – ‘আশ্রম’ কেন ? আর, গুরুমহারাজের একটা মূল আশ্রম থাকলেই তো হোতো, তাহলে ‘শাখা-আশ্রম’গুলি কেন ? এটা কিন্তু অনেক ভক্তদেরই মনের মধ্যে একটা কঠিন জিজ্ঞাসা ! আমরা সাধারন ভক্তরা হয়তো ভাবছি – এটা আবার কি এমন কঠিন জিজ্ঞাসা ! বড় বড় সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের-ই তো মূল আশ্রম এবং অনেক শাখা-আশ্রম রয়েছে, সুতরাং ভগবান পরমানন্দেরও অনেক শাখা-আশ্রম থাকবে; এটাই তো স্বাভাবিক ! এতে আবার জিজ্ঞাসার অবকাশ কোথায় ?
কিন্তু আছে ! জিজ্ঞাসার অবকাশ আছে ! গুরুমহারাজ যখন কর্মজীবনে (১৯৭৬/৭৭) থেকে তাঁর আধ্যাত্মিক জগতের কর্ম সম্পন্ন করার জন্য “লোকসংগ্রহ” করেছিলেন এবং তাঁর কাজের পটভূমি প্রস্তুত করেছিলেন, সেইসময় তিনি যাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশেছিলেন – তাদের অনেকের গুরুমহারাজের কাছে (যেমন চক্ষণজাদীর টগর মল্লিক) এই জিজ্ঞাসা ছিল – ” আবার আশ্রম প্রতিষ্ঠা কেন ?” একান্ত অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় আরো দুই-একজন এই জিজ্ঞাসা করেছিলেন গুরুমহারাজের কাছে ! কেন করেছিলেন ? তার কারণ, তাদের মতামত ছিল এই যে, “এর আগে আগে বহু মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাঁরাও বহু আশ্রম এবং অনেক শাখা-আশ্রম already তৈরি করে রেখেছেন ! সেগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু কাজও যে হোচ্ছে না – তা নয় ! কিন্তু সাক্ষাৎ নরশরীরে ভগবানের অবতরণ যখন হয় (যেমন গুরুমহারাজ), তখন তাঁর যে অপার্থিব প্রেম, তাঁর সঙ্গসুধার যে মাধুর্য্য – সেগুলির স্বাদ তো আর পরবর্তীকালে ভক্তরা পাবে না ! হয়তো সেখান থেকে কিছু কিছু সেবাকার্য হবে, কিছু কিছু মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে – কিন্তু ভগবানের (নরশরীরের ঈশ্বর) যে লীলারস, যে অপার্থিব প্রেম-মাধুর্য – তার বোধ তো হবে না ! সুতরাং তুমি আর নতুন করে কোনো আশ্রম তৈরি কোরো না !”
এরপর গুরুমহারাজের উত্তরদানের পালা – !
আমি ন’কাকার কাছে শুনেছিলাম যে, উনিও গুরুমহারাজকে এই ধরনের কথা বলেছিলেন ! আমাদের পরম গুরুদেব রামানন্দ অবধূতজী প্রাথমিকভাবে (হয়তো অপত্য স্নেহবশতঃ) গুরুমহারাজকে মানবসমাজে এসে কাজ করার ব্যপারে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই গুরুমহারাজের একটাই উত্তর ছিল – সেটা হলো “প্রেম – প্রেম – আর প্রেম” ! যারা তাঁর সশরীরের সান্নিধ্য পেয়েছে, তাঁর অপার্থিব প্রেমের স্পর্শ্য পেয়েছে, তারা তো ধন্য হোলোই (ধন্য হলো অর্থে, তাদের পূর্ণতার পথে অগ্রসরের গতি ত্বরান্বিত হোলো !), কিন্তু পরবর্তীকালের ভক্তরাও যেন সেই পরম প্রেমের Touch-টুকু পায় এবং সেইটা ধরেই তারা পূর্ণতালাভের ব্যাপারে সচেষ্ট হয় !
আর এইজন্যই ভগবান সুযোগ্য উত্তরসূরীদের তৈরি করে যান এবং বিভিন্ন আশ্রমের শাখা তৈরি করে সেখানে যোগ্য লোকেদের বসিয়ে দেন – যাতে তারা ভগবানের আরব্ধ কাজটি সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন !
সেইজন্যেই মূল-আশ্রমের প্রতিষ্ঠা এবং সেইজন্যেই শাখা-আশ্রম তৈরির তোড়জোড় !
মানুষ তো ক্লাবে, মাঠে, পাড়ার মাচায়, চায়ের দোকানে, স্টেশনের প্লাটফর্মে বহু সময় কাটায়, আজেবাজে আলোচনা বা তর্ক-বিতর্ক করে থাকে ! তার বদলে যদি তাদের অনেকে কোনো-না-কোনো সাধুআশ্রমে এসে কিছুটা সময় কাটায়, সাধুর সঙ্গ করে – তাহলে সেই ব্যক্তিরই মঙ্গল হয় ! প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনের উদ্দেশ্য হোলো “পূর্ণতালাভ” ! বাকি যা কিছু কাজ – চিন্তাভাবনা এগুলো শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা অর্জন ! জন্ম-জন্মান্তর ধরে মানুষ শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন করেই চলেছে ! কিন্তু সেইসব অভিজ্ঞতা outer world-এর অর্থাৎ বর্হিঃজগতের ! মানুষের অন্তর্জগতের রহস্যের খোঁজ শুরু হয় সাধুসঙ্গের ফলে ! তাইতো বলা হয় “সাধুসঙ্গ – বড়সঙ্গ” ! সৎ-সংযমী-ত্যাগী-আধ্যাত্মিকজ্ঞানে জ্ঞানী__ ব্যক্তির সান্নিধ্যে এসে মানুষ প্রথম বুঝতে পারে যে, সে এতোদিন বৃথা কাজে সময় নষ্ট করেছে ! এইসব কাজ ছাড়াও তার আরও অন্যকিছু কাজ রয়েছে – যেটা সবচাইতে শান্তিপ্রদ, সবচাইতে আনন্দদায়ক !
আর যে পথে হাঁটলে শান্তি বা আনন্দ পাওয়া যায়, সেই পথটা হোলো – সাধনমার্গ। “সাধু সেই – যিনি সাধেন” অর্থাৎ যিনি সাধনা করেন। তিনি নিজে সাধনা করেন এবং তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়া ব্যক্তিদেরকেও তিনি সাধনের শিক্ষা দেন – যাতে তারাও ধীরে ধীরে ‘সাধু’ হয়ে উঠতে পারে ! ‘সাধু’ মানের গেরুয়া পড়া সন্ন্যাসী নয়, ‘সন্ন্যাস’ একটা জীবনধারা – জীবনচর্যা ! কিন্তু ‘সাধু’ সকলেই হোতে পারে। ‘সৎ’ শব্দ থেকে ‘সাধু’ কথাটি এসেছে। গুরুমহারাজও বলেছিলেন – ” সমাজের সর্বস্তরের মানুষই ‘সাধু’ হতে পারে। সেই অর্থে– সৎ ব্যবসাদারকেও বলা হয় সাধু ব্যবসাদার, সৎ ব্যক্তিকে বলা হয় – সাধু ব্যক্তি !” [ক্রমশঃ]
কিন্তু আছে ! জিজ্ঞাসার অবকাশ আছে ! গুরুমহারাজ যখন কর্মজীবনে (১৯৭৬/৭৭) থেকে তাঁর আধ্যাত্মিক জগতের কর্ম সম্পন্ন করার জন্য “লোকসংগ্রহ” করেছিলেন এবং তাঁর কাজের পটভূমি প্রস্তুত করেছিলেন, সেইসময় তিনি যাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশেছিলেন – তাদের অনেকের গুরুমহারাজের কাছে (যেমন চক্ষণজাদীর টগর মল্লিক) এই জিজ্ঞাসা ছিল – ” আবার আশ্রম প্রতিষ্ঠা কেন ?” একান্ত অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় আরো দুই-একজন এই জিজ্ঞাসা করেছিলেন গুরুমহারাজের কাছে ! কেন করেছিলেন ? তার কারণ, তাদের মতামত ছিল এই যে, “এর আগে আগে বহু মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাঁরাও বহু আশ্রম এবং অনেক শাখা-আশ্রম already তৈরি করে রেখেছেন ! সেগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু কাজও যে হোচ্ছে না – তা নয় ! কিন্তু সাক্ষাৎ নরশরীরে ভগবানের অবতরণ যখন হয় (যেমন গুরুমহারাজ), তখন তাঁর যে অপার্থিব প্রেম, তাঁর সঙ্গসুধার যে মাধুর্য্য – সেগুলির স্বাদ তো আর পরবর্তীকালে ভক্তরা পাবে না ! হয়তো সেখান থেকে কিছু কিছু সেবাকার্য হবে, কিছু কিছু মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে – কিন্তু ভগবানের (নরশরীরের ঈশ্বর) যে লীলারস, যে অপার্থিব প্রেম-মাধুর্য – তার বোধ তো হবে না ! সুতরাং তুমি আর নতুন করে কোনো আশ্রম তৈরি কোরো না !”
এরপর গুরুমহারাজের উত্তরদানের পালা – !
আমি ন’কাকার কাছে শুনেছিলাম যে, উনিও গুরুমহারাজকে এই ধরনের কথা বলেছিলেন ! আমাদের পরম গুরুদেব রামানন্দ অবধূতজী প্রাথমিকভাবে (হয়তো অপত্য স্নেহবশতঃ) গুরুমহারাজকে মানবসমাজে এসে কাজ করার ব্যপারে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই গুরুমহারাজের একটাই উত্তর ছিল – সেটা হলো “প্রেম – প্রেম – আর প্রেম” ! যারা তাঁর সশরীরের সান্নিধ্য পেয়েছে, তাঁর অপার্থিব প্রেমের স্পর্শ্য পেয়েছে, তারা তো ধন্য হোলোই (ধন্য হলো অর্থে, তাদের পূর্ণতার পথে অগ্রসরের গতি ত্বরান্বিত হোলো !), কিন্তু পরবর্তীকালের ভক্তরাও যেন সেই পরম প্রেমের Touch-টুকু পায় এবং সেইটা ধরেই তারা পূর্ণতালাভের ব্যাপারে সচেষ্ট হয় !
আর এইজন্যই ভগবান সুযোগ্য উত্তরসূরীদের তৈরি করে যান এবং বিভিন্ন আশ্রমের শাখা তৈরি করে সেখানে যোগ্য লোকেদের বসিয়ে দেন – যাতে তারা ভগবানের আরব্ধ কাজটি সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন !
সেইজন্যেই মূল-আশ্রমের প্রতিষ্ঠা এবং সেইজন্যেই শাখা-আশ্রম তৈরির তোড়জোড় !
মানুষ তো ক্লাবে, মাঠে, পাড়ার মাচায়, চায়ের দোকানে, স্টেশনের প্লাটফর্মে বহু সময় কাটায়, আজেবাজে আলোচনা বা তর্ক-বিতর্ক করে থাকে ! তার বদলে যদি তাদের অনেকে কোনো-না-কোনো সাধুআশ্রমে এসে কিছুটা সময় কাটায়, সাধুর সঙ্গ করে – তাহলে সেই ব্যক্তিরই মঙ্গল হয় ! প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনের উদ্দেশ্য হোলো “পূর্ণতালাভ” ! বাকি যা কিছু কাজ – চিন্তাভাবনা এগুলো শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা অর্জন ! জন্ম-জন্মান্তর ধরে মানুষ শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন করেই চলেছে ! কিন্তু সেইসব অভিজ্ঞতা outer world-এর অর্থাৎ বর্হিঃজগতের ! মানুষের অন্তর্জগতের রহস্যের খোঁজ শুরু হয় সাধুসঙ্গের ফলে ! তাইতো বলা হয় “সাধুসঙ্গ – বড়সঙ্গ” ! সৎ-সংযমী-ত্যাগী-আধ্যাত্মিকজ্ঞানে জ্ঞানী__ ব্যক্তির সান্নিধ্যে এসে মানুষ প্রথম বুঝতে পারে যে, সে এতোদিন বৃথা কাজে সময় নষ্ট করেছে ! এইসব কাজ ছাড়াও তার আরও অন্যকিছু কাজ রয়েছে – যেটা সবচাইতে শান্তিপ্রদ, সবচাইতে আনন্দদায়ক !
আর যে পথে হাঁটলে শান্তি বা আনন্দ পাওয়া যায়, সেই পথটা হোলো – সাধনমার্গ। “সাধু সেই – যিনি সাধেন” অর্থাৎ যিনি সাধনা করেন। তিনি নিজে সাধনা করেন এবং তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়া ব্যক্তিদেরকেও তিনি সাধনের শিক্ষা দেন – যাতে তারাও ধীরে ধীরে ‘সাধু’ হয়ে উঠতে পারে ! ‘সাধু’ মানের গেরুয়া পড়া সন্ন্যাসী নয়, ‘সন্ন্যাস’ একটা জীবনধারা – জীবনচর্যা ! কিন্তু ‘সাধু’ সকলেই হোতে পারে। ‘সৎ’ শব্দ থেকে ‘সাধু’ কথাটি এসেছে। গুরুমহারাজও বলেছিলেন – ” সমাজের সর্বস্তরের মানুষই ‘সাধু’ হতে পারে। সেই অর্থে– সৎ ব্যবসাদারকেও বলা হয় সাধু ব্যবসাদার, সৎ ব্যক্তিকে বলা হয় – সাধু ব্যক্তি !” [ক্রমশঃ]