শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (ওনার রচনা এবং বক্তব্য) থেকে কিছু কিছু আলোচনা এখানে তুলে ধরা হচ্ছিলো। এখন যে চেষ্টা করা হোচ্ছে – তা হোলো গুরুমহারাজের নিজের লেখাগুলিকে আপনাদের সকলের সঙ্গে ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপনা করা ! এতে যেমন আমার নিজেরও মঙ্গল – সেইসঙ্গে আমাদের পাঠক-সকলেরও কল্যাণসাধন হবে। যুগপুরুষ পরমানন্দের বাণীগুলিই তো জীবন পথের পাথেয়। এছাড়া বাকি অন্য কথা তো ‘বকওয়াস’ ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘গুরুমহারাজের কথা’-র মধ্যে যে divine power সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে – তা পাঠ করলে বা শুনলে তা সমস্ত পাঠক বা শ্রোতার মধ্যে সঞ্চারিত হয় (এটা যে কোনো মহাপুরুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)। সুতরাং বুঝতেই পারছেন – গুরুমহারাজের কথাগুলি মানুষের কাছে পৌঁছানো কতটা প্রয়োজন ! তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এখন সেই চেষ্টাই করি ! আর তাঁর বলে যাওয়া কথা, তাঁর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে একটু একটু করে নিজেদের জীবনকে তৈরি করার চেষ্টা করি।
গুরুমহারাজের কথার সূত্র ধরে আমরা আগেই আলোচনা করেছিলাম যে, ‘ধর্ম’ হোলো – যা সমস্ত কিছুকে ধারণ করে বা ধরে রাখে এবং যাকে অবলম্বন করে সমষ্টিগতভাবে বাঁচা যায়। সুতরাং এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, একমাত্র ধর্মকে আশ্রয় করেই সমষ্টিগতভাবে বাঁচা যায় এবং ধর্মাচারণের দ্বারাই সমাজের সমস্ত সদস্যদের পূর্ণতালাভের পথ প্রশস্ত হয়। অন্যত্র গুরুমহারাজ এটাও বলেছিলেন যে,_ “ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা হোলো ‘বাঁচার কলা’ বা ‘জীবনের কলা’ “! আসলে প্রতিটি জীবের ন্যায় মানুষও তো বাঁচতে চায় – বরং বলা উচিত অন্যান্য জীব অপেক্ষা আরো ভালোভাবে বাঁচতে চায়। আর বাঁচার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে – আহার, বস্ত্র, বাসস্থান। এগুলিকে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – need of life ! মানুষ আরো ভালোভাবে বাঁচতে চায় বলে, মানুষের জীবনে আরও তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন হয় ! সেগুলি হোলো – স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষা ! এগুলিকে গুরুমহারাজ বলেছিলেন necessity of life !
এইবার গুরুমহারাজ একটু জিজ্ঞাসা রেখেছিলেন – ” মানব এইসব সুযোগ-সুবিধা লাভ করে, না হয় ভালোভাবে বাঁচলো কিন্তু এরপরে কি ? এই মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি ? এই জীবনের প্রয়োজনটাই বা কি ?” উনিই এর উত্তর দিয়ে বলেছিলেন – ” মানবজীবনের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন হোলো – পরম সত্যের বোধ, আত্মতত্ত্বের উপলব্ধি ও পরমানন্দ স্থিতি লাভ !” গুরুমহারাজ যেমন নতুন আঙ্গিকে ধর্মের সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন, তেমনি তিনি ধার্মিকেরও সংজ্ঞা দিয়েছেন। উনি বলেছেন – ” যখন মানবের জীবনধারা সমষ্টির অনুকূলে প্রভাবিত বা পরিচালিত হয়, তখনই সে ধার্মিক। অপরপক্ষে যে সমস্ত মানবের জীবনধারা সমষ্টির প্রতিকূলে চালিত হয় – তারাই অধার্মিক বা অসহজ !”
গুরুমহারাজের দেওয়া এই সংজ্ঞা থেকে আমরা যদি নিজেদেরকে বিচার করি, তাহলেই বুঝতে পারবো যে, আমরা কে কতটা ধার্মিক !! আমরা কি সমষ্টির অনুকূলে আমাদের জীবনধারাকে পরিচালিত করি – না সমষ্টির প্রতিকূলে ? যদি আমার দ্বারা কারো ধর্মাচরণে ব্যাঘাত না ঘটে – তাহলেই আমি ঠিক ঠিক ধর্মপথে অগ্রসর হচ্ছি ! আর যদি আমার জীবনধারায়, আমার আচরণে__ অপরের জীবনধারা ব্যাহত হয়, তাহলে আমি অসহজ, অধার্মিক ! এইভাবে আত্মবিচার করার কথাই বলেছিলেন গুরুমহারাজ। প্রতিটি মানুষেরই উচিত – একান্তে বসে আত্মবিচার করা, আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করানো ! মহাপুরুষদের শিক্ষাকে জীবনে এইভাবেই যোজনা করা উচিত !
কিন্তু সাধারণ মানুষই বা কি করবে ? তারা তো অসহজ, ভ্রান্ত, অজ্ঞ – কিন্তু তাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধর্মমতের ধর্মগুরুরা তাদেরকে ধর্মীয়ভাবে শোষণ করছে। তারা মানুষকে নানাভাবে ধর্মভয় দেখিয়ে, এই ধর্মীয় শোষণ করে থাকে। তাদেরকে অন্ধবিশ্বাসী হোতে শেখায়, যুক্তি-বুদ্ধি থেকে দূরে রাখে, সাধারণ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি যাতে ক্রিয়াশীল না হয় – তার জন্য নানান কুসংস্কার ও বিচারবিহীন আচার তৈরি করে।
আর শুধু একেবারে সাধারণ মানুষই নয় – তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরাও এইসব ধর্মনেতাদের খপ্পরে গিয়ে পড়ে এবং ঐসব স্বার্থান্বেষীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। একমাত্র বিবেক-আশ্রিত বুদ্ধিসম্পন্ন, আধ্যাত্মচেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই তথাকথিত ধর্মগুরু রূপ ধর্ম-ব্যবসায়ীদের এইসব চালাকি ধরে ফেলে এবং তাদের কুচক্রের ব্যুহভেদ করে বেরিয়ে আসে। সুতরাং এইসব ভ্রান্তি, অজ্ঞানতা, অসহজতার হাত থেকে মানুষকে বাঁচতে হোলে_ জীবনে অধ্যাত্মচেতনার উন্মেষ ঘটানো একান্ত প্রয়োজন ! গুরুমহারাজ এক কথায় জীবন ও ধর্মের সংযোগসাধন করেছিলেন, উনি বলেছিলেন – ” ধর্ম জীবনকে বাদ দিয়ে নয়, ….. জীবনকে আলিঙ্গন করে জীবনের মধ্য দিয়েই আত্মসাক্ষাৎকার সম্ভব।” (ক্রমশঃ)
গুরুমহারাজের কথার সূত্র ধরে আমরা আগেই আলোচনা করেছিলাম যে, ‘ধর্ম’ হোলো – যা সমস্ত কিছুকে ধারণ করে বা ধরে রাখে এবং যাকে অবলম্বন করে সমষ্টিগতভাবে বাঁচা যায়। সুতরাং এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, একমাত্র ধর্মকে আশ্রয় করেই সমষ্টিগতভাবে বাঁচা যায় এবং ধর্মাচারণের দ্বারাই সমাজের সমস্ত সদস্যদের পূর্ণতালাভের পথ প্রশস্ত হয়। অন্যত্র গুরুমহারাজ এটাও বলেছিলেন যে,_ “ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা হোলো ‘বাঁচার কলা’ বা ‘জীবনের কলা’ “! আসলে প্রতিটি জীবের ন্যায় মানুষও তো বাঁচতে চায় – বরং বলা উচিত অন্যান্য জীব অপেক্ষা আরো ভালোভাবে বাঁচতে চায়। আর বাঁচার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে – আহার, বস্ত্র, বাসস্থান। এগুলিকে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – need of life ! মানুষ আরো ভালোভাবে বাঁচতে চায় বলে, মানুষের জীবনে আরও তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন হয় ! সেগুলি হোলো – স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষা ! এগুলিকে গুরুমহারাজ বলেছিলেন necessity of life !
এইবার গুরুমহারাজ একটু জিজ্ঞাসা রেখেছিলেন – ” মানব এইসব সুযোগ-সুবিধা লাভ করে, না হয় ভালোভাবে বাঁচলো কিন্তু এরপরে কি ? এই মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি ? এই জীবনের প্রয়োজনটাই বা কি ?” উনিই এর উত্তর দিয়ে বলেছিলেন – ” মানবজীবনের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন হোলো – পরম সত্যের বোধ, আত্মতত্ত্বের উপলব্ধি ও পরমানন্দ স্থিতি লাভ !” গুরুমহারাজ যেমন নতুন আঙ্গিকে ধর্মের সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন, তেমনি তিনি ধার্মিকেরও সংজ্ঞা দিয়েছেন। উনি বলেছেন – ” যখন মানবের জীবনধারা সমষ্টির অনুকূলে প্রভাবিত বা পরিচালিত হয়, তখনই সে ধার্মিক। অপরপক্ষে যে সমস্ত মানবের জীবনধারা সমষ্টির প্রতিকূলে চালিত হয় – তারাই অধার্মিক বা অসহজ !”
গুরুমহারাজের দেওয়া এই সংজ্ঞা থেকে আমরা যদি নিজেদেরকে বিচার করি, তাহলেই বুঝতে পারবো যে, আমরা কে কতটা ধার্মিক !! আমরা কি সমষ্টির অনুকূলে আমাদের জীবনধারাকে পরিচালিত করি – না সমষ্টির প্রতিকূলে ? যদি আমার দ্বারা কারো ধর্মাচরণে ব্যাঘাত না ঘটে – তাহলেই আমি ঠিক ঠিক ধর্মপথে অগ্রসর হচ্ছি ! আর যদি আমার জীবনধারায়, আমার আচরণে__ অপরের জীবনধারা ব্যাহত হয়, তাহলে আমি অসহজ, অধার্মিক ! এইভাবে আত্মবিচার করার কথাই বলেছিলেন গুরুমহারাজ। প্রতিটি মানুষেরই উচিত – একান্তে বসে আত্মবিচার করা, আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করানো ! মহাপুরুষদের শিক্ষাকে জীবনে এইভাবেই যোজনা করা উচিত !
কিন্তু সাধারণ মানুষই বা কি করবে ? তারা তো অসহজ, ভ্রান্ত, অজ্ঞ – কিন্তু তাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধর্মমতের ধর্মগুরুরা তাদেরকে ধর্মীয়ভাবে শোষণ করছে। তারা মানুষকে নানাভাবে ধর্মভয় দেখিয়ে, এই ধর্মীয় শোষণ করে থাকে। তাদেরকে অন্ধবিশ্বাসী হোতে শেখায়, যুক্তি-বুদ্ধি থেকে দূরে রাখে, সাধারণ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি যাতে ক্রিয়াশীল না হয় – তার জন্য নানান কুসংস্কার ও বিচারবিহীন আচার তৈরি করে।
আর শুধু একেবারে সাধারণ মানুষই নয় – তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরাও এইসব ধর্মনেতাদের খপ্পরে গিয়ে পড়ে এবং ঐসব স্বার্থান্বেষীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। একমাত্র বিবেক-আশ্রিত বুদ্ধিসম্পন্ন, আধ্যাত্মচেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই তথাকথিত ধর্মগুরু রূপ ধর্ম-ব্যবসায়ীদের এইসব চালাকি ধরে ফেলে এবং তাদের কুচক্রের ব্যুহভেদ করে বেরিয়ে আসে। সুতরাং এইসব ভ্রান্তি, অজ্ঞানতা, অসহজতার হাত থেকে মানুষকে বাঁচতে হোলে_ জীবনে অধ্যাত্মচেতনার উন্মেষ ঘটানো একান্ত প্রয়োজন ! গুরুমহারাজ এক কথায় জীবন ও ধর্মের সংযোগসাধন করেছিলেন, উনি বলেছিলেন – ” ধর্ম জীবনকে বাদ দিয়ে নয়, ….. জীবনকে আলিঙ্গন করে জীবনের মধ্য দিয়েই আত্মসাক্ষাৎকার সম্ভব।” (ক্রমশঃ)