শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লেখা ও বলা) থেকে বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। এখন আলোচনা হচ্ছিলো – মানবজীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা, ধর্মের প্রকৃত সংজ্ঞা, ধর্মাচরণ করতে গিয়ে মানব কিভাবে অসহজ হয়ে পড়ে – এইসব প্রসঙ্গে ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” জীবনের মধ্যে পরমাত্মার বোধ-ই মানবের ধর্ম, এটাই art of life and art of living !”
” মনের বিস্তার, চিত্তের প্রসার, বুদ্ধির উৎকর্ষতা, অন্তরের গভীরে পরম সত্যের অনুভূতি, মনুষ্যত্বলাভ এবং মহামানবের আশ্রয়লাভ।”– যথার্থ ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে এগুলিই প্রয়োজন হয়, গুরুমহারাজ এই কথাই বলেছিলেন। এটা তো সত্যিই ! ধর্মাচরণ কোরে যদি কোনো মানুষের মনের বিস্তার হোলো না – সে সংকীর্ণমনাই থেকে গেল, তার চিত্তের প্রসারতা ঘটলো না – সে সংকুচিত চিত্ত-বিশিষ্টই থেকে গেল – তাহলে তার ধর্মাচরণের ফলটা কি হোলো ? ধর্মাচরণ করে যদি মানুষের বুদ্ধির উৎকর্ষতা না হয় অর্থাৎ বিবেক-আশ্রিত বুদ্ধির ক্রিয়াশীলতা প্রকাশ না ঘটে – তাহলে তার সেই ধর্মমতের অনুসারী হয়ে লাভটা কি ? যে কোনো ধর্মমতের অনুসারীদের যদি অন্তরের গভীরে পরম সত্যের অনুভূতিই না হয়, সর্বোপরি তার যদি মনুষ্যত্ব লাভ-ই না হয় – তাহলে ধর্মাচরণ কেন ? কোনো ধর্মমতের শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করেও যদি আমাদের মধ্যে মুমুক্ষতা অর্থাৎ সমস্ত রকম বন্ধন থেকে মুক্তির ইচ্ছা না জাগে – তাহলে বৃথাই সেই ধর্মাচরণ,– নয় কি ? আর সবশেষে যেটা প্রকৃত ধর্মাচরণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ – তা হোলো কোনো না কোনো মহাপুরুষের সংসর্গ লাভ !
উপরোক্ত বিষয়গুলি যখন থেকে হোতে থাকবে – তখন একজন মানুষ নিজেই বুঝতে পারবে যে, তার ধর্মাচরণ ঠিক ঠিক হোচ্ছে, সঠিক পথে আগাচ্ছে। অন্যথায় নৌকাকে খোঁটায় বেঁধে রেখে প্রবলবেগে দাঁড় টানার মতোই হবে অর্থাৎ পারে উত্তরণের বৃথা চেষ্টা হবে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটাই হয়ে চলেছে। ধর্মাচরণের মাধ্যমে মানুষের মনের বিস্তার – বুদ্ধির উৎকর্ষতা – মুক্তি পাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা –আর কোথায়ই বা জাগ্রত হোচ্ছে ? বরং বলা যায়__বিভিন্ন ধর্মমতের দাসত্ব করতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানারকম ভ্রান্তির আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে। আর সেইজন্যই আমাদের ন্যায় সাধারণ মানুষের এতো ভেদদৃষ্টি, এতো বিভিন্নতার বোধ ! সেই যে এক-অদ্বিতীয়-অবিনশ্বর পরমসত্তা অখন্ডভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে – তার বোধ কোথায় ? আমরা শুধু মুখেই বলছি আল্লাহ-ঈশ্বর-গড সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, সর্বকালের নিয়ন্তা,___ কিন্তু সেই বোধ কই ? বোধের দরকার নাই – যদি শুধুমাত্র পরিস্কার ধারণাটুকুও থাকতো__ তাহলেও আমরা বুঝতে পারতাম যে, সেই সর্বশক্তিমান, পরমেশ্বর (আল্লাহ, ঈশ্বর, গড) থেকে পৃথক এই বিশ্বে কিছুই নাই !
গুরুমহারাজ বলেছেন – ” মানুষের ভিতর বা অন্তর এবং বাহির এক করাটাই সহজতা !” আমরা বেশিরভাগ মানুষই তো সেই অর্থে কপট–কপটাচারী ! আমাদের তো মন-মুখ এক নয় ! অন্তর-বাহির এক নাই ! আমরা ভেতরের ভাবকে দমিত করে – উপরে অন্যরকম কিছু একটা দেখাতে চেষ্টা করি, আর এখান থেকেই বিকৃতি আসে এবং মানুষ অসহজ হয়ে পড়ে। মানুষকে ‘সহজ’ হতে হোলে – নিজের মধ্যে সংকীর্ণ গন্ডীর মধ্যে না থেকে নিজেকে বিস্তার করতে হবে, আত্মশক্তির বিকাশ করতে হবে। আর এই বিকাশ বা বিস্তার-ই ধীরে ধীরে সাধককে অসীম-অনন্ত-চৈতন্যসত্তা সাগরে সমাহিত হতে সাহায্য করবে। গুরুমহারাজ এইসব কথা বলার পর বলেছিলেন, – “প্রতিটি জীবনের লক্ষ্য হোলো সীমার (ব্যক্তিজীবন) মধ্যে দিয়ে অসীমের (পরমেশ্বর) বোধ করা !”
‘কিন্তু তারজন্য প্রয়োজন হয়__ কোনো না কোনো মহাপুরুষের সংস্পর্শলাভ। মহাপুরুষদের মহাজীবনে সাম্য, প্রেম, মৈত্রী ও শান্তির এক বিশ্ব-উদারভাব ফুটে ওঠে। আর সেই ভাব সমগ্র জগৎ-কে প্রভাবিত করে৷ সেই মহাজীবনের অমৃতস্পর্শে মানব তথা মানবসমাজের মধ্যেও দিব্য অনুভূতির ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। উত্তরসূরীরা সেই মহান ভাবকে অনুসরণ করতে থাকে। তাদের সংস্পর্শে পশুমানব রূপান্তরিত হয় দেবমানবে। জগতে আসে একটা বিরাট রূপান্তর’ – এইসব কথাগুলি গুরুমহারাজ বলেছিলেন।
মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হবার জন্য সাধনপথে সাধককে নানান বাধার সম্মুখীন হোতে হয়। গুরুমহারাজ বলেছেন – “এইসব বাধাকে এড়িয়ে গেলে হবে না, এদের মোকাবিলা করতে হবে – এদের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে। তখন দেখা যাবে যে, যাদেরকে বাধা বলে মনে হচ্ছিলো – শত্রু বলে মনে হচ্ছিলো –তারাই তখন বন্ধু হবে, তারাই তখন সাধনপথে সহায়তা করবে”।৷
” মনের বিস্তার, চিত্তের প্রসার, বুদ্ধির উৎকর্ষতা, অন্তরের গভীরে পরম সত্যের অনুভূতি, মনুষ্যত্বলাভ এবং মহামানবের আশ্রয়লাভ।”– যথার্থ ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে এগুলিই প্রয়োজন হয়, গুরুমহারাজ এই কথাই বলেছিলেন। এটা তো সত্যিই ! ধর্মাচরণ কোরে যদি কোনো মানুষের মনের বিস্তার হোলো না – সে সংকীর্ণমনাই থেকে গেল, তার চিত্তের প্রসারতা ঘটলো না – সে সংকুচিত চিত্ত-বিশিষ্টই থেকে গেল – তাহলে তার ধর্মাচরণের ফলটা কি হোলো ? ধর্মাচরণ করে যদি মানুষের বুদ্ধির উৎকর্ষতা না হয় অর্থাৎ বিবেক-আশ্রিত বুদ্ধির ক্রিয়াশীলতা প্রকাশ না ঘটে – তাহলে তার সেই ধর্মমতের অনুসারী হয়ে লাভটা কি ? যে কোনো ধর্মমতের অনুসারীদের যদি অন্তরের গভীরে পরম সত্যের অনুভূতিই না হয়, সর্বোপরি তার যদি মনুষ্যত্ব লাভ-ই না হয় – তাহলে ধর্মাচরণ কেন ? কোনো ধর্মমতের শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করেও যদি আমাদের মধ্যে মুমুক্ষতা অর্থাৎ সমস্ত রকম বন্ধন থেকে মুক্তির ইচ্ছা না জাগে – তাহলে বৃথাই সেই ধর্মাচরণ,– নয় কি ? আর সবশেষে যেটা প্রকৃত ধর্মাচরণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ – তা হোলো কোনো না কোনো মহাপুরুষের সংসর্গ লাভ !
উপরোক্ত বিষয়গুলি যখন থেকে হোতে থাকবে – তখন একজন মানুষ নিজেই বুঝতে পারবে যে, তার ধর্মাচরণ ঠিক ঠিক হোচ্ছে, সঠিক পথে আগাচ্ছে। অন্যথায় নৌকাকে খোঁটায় বেঁধে রেখে প্রবলবেগে দাঁড় টানার মতোই হবে অর্থাৎ পারে উত্তরণের বৃথা চেষ্টা হবে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটাই হয়ে চলেছে। ধর্মাচরণের মাধ্যমে মানুষের মনের বিস্তার – বুদ্ধির উৎকর্ষতা – মুক্তি পাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা –আর কোথায়ই বা জাগ্রত হোচ্ছে ? বরং বলা যায়__বিভিন্ন ধর্মমতের দাসত্ব করতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানারকম ভ্রান্তির আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে। আর সেইজন্যই আমাদের ন্যায় সাধারণ মানুষের এতো ভেদদৃষ্টি, এতো বিভিন্নতার বোধ ! সেই যে এক-অদ্বিতীয়-অবিনশ্বর পরমসত্তা অখন্ডভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে – তার বোধ কোথায় ? আমরা শুধু মুখেই বলছি আল্লাহ-ঈশ্বর-গড সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, সর্বকালের নিয়ন্তা,___ কিন্তু সেই বোধ কই ? বোধের দরকার নাই – যদি শুধুমাত্র পরিস্কার ধারণাটুকুও থাকতো__ তাহলেও আমরা বুঝতে পারতাম যে, সেই সর্বশক্তিমান, পরমেশ্বর (আল্লাহ, ঈশ্বর, গড) থেকে পৃথক এই বিশ্বে কিছুই নাই !
গুরুমহারাজ বলেছেন – ” মানুষের ভিতর বা অন্তর এবং বাহির এক করাটাই সহজতা !” আমরা বেশিরভাগ মানুষই তো সেই অর্থে কপট–কপটাচারী ! আমাদের তো মন-মুখ এক নয় ! অন্তর-বাহির এক নাই ! আমরা ভেতরের ভাবকে দমিত করে – উপরে অন্যরকম কিছু একটা দেখাতে চেষ্টা করি, আর এখান থেকেই বিকৃতি আসে এবং মানুষ অসহজ হয়ে পড়ে। মানুষকে ‘সহজ’ হতে হোলে – নিজের মধ্যে সংকীর্ণ গন্ডীর মধ্যে না থেকে নিজেকে বিস্তার করতে হবে, আত্মশক্তির বিকাশ করতে হবে। আর এই বিকাশ বা বিস্তার-ই ধীরে ধীরে সাধককে অসীম-অনন্ত-চৈতন্যসত্তা সাগরে সমাহিত হতে সাহায্য করবে। গুরুমহারাজ এইসব কথা বলার পর বলেছিলেন, – “প্রতিটি জীবনের লক্ষ্য হোলো সীমার (ব্যক্তিজীবন) মধ্যে দিয়ে অসীমের (পরমেশ্বর) বোধ করা !”
‘কিন্তু তারজন্য প্রয়োজন হয়__ কোনো না কোনো মহাপুরুষের সংস্পর্শলাভ। মহাপুরুষদের মহাজীবনে সাম্য, প্রেম, মৈত্রী ও শান্তির এক বিশ্ব-উদারভাব ফুটে ওঠে। আর সেই ভাব সমগ্র জগৎ-কে প্রভাবিত করে৷ সেই মহাজীবনের অমৃতস্পর্শে মানব তথা মানবসমাজের মধ্যেও দিব্য অনুভূতির ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। উত্তরসূরীরা সেই মহান ভাবকে অনুসরণ করতে থাকে। তাদের সংস্পর্শে পশুমানব রূপান্তরিত হয় দেবমানবে। জগতে আসে একটা বিরাট রূপান্তর’ – এইসব কথাগুলি গুরুমহারাজ বলেছিলেন।
মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হবার জন্য সাধনপথে সাধককে নানান বাধার সম্মুখীন হোতে হয়। গুরুমহারাজ বলেছেন – “এইসব বাধাকে এড়িয়ে গেলে হবে না, এদের মোকাবিলা করতে হবে – এদের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে। তখন দেখা যাবে যে, যাদেরকে বাধা বলে মনে হচ্ছিলো – শত্রু বলে মনে হচ্ছিলো –তারাই তখন বন্ধু হবে, তারাই তখন সাধনপথে সহায়তা করবে”।৷