শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লেখা এবং বলা) নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। এখন আমরা আলোচনা করছিলাম মানুষের ‘সহজতা’ বিষয়ে। গুরুমহারাজ সহজ করে বলেছিলেন – ” মানবজন্ম নিয়ে ‘মানুষ’ হওয়াটাই মানবের সাধনা। আর মনুষ্যত্বলাভই মানবের সহজ ধর্ম !” প্রকৃত আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠার জন্য কি কি শর্তপূরণের প্রয়োজন হয়_ তা বোঝাতে শাস্ত্রে বলা হয়েছে – ” মনুষ্যত্বম্ – মুমুক্ষুত্বম্ – মহাপুরুষসংসর্গম্ !” মানবজীবনের মূল উদ্দেশ্য হোলো আত্মসাক্ষাৎকার, কিন্তু তার জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন_ তা হোলো ‘মনুষ্যত্বলাভ’ ! কিন্তু এই মনুষ্যত্বলাভ ব্যাপারটা কি ? এর অর্থ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সহজ করে বলে গেছেন – ” যার মধ্যে ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ রয়েছে – সেই ঠিক ঠিক মানুষ !” গুরুমহারাজ এই কথার ব্যাখ্যায় বলেছিলেন – “এখানে ‘মান’ অর্থে স্বাভিমান – আত্মসম্মানবোধ অর্থাৎ কাণ্ডজ্ঞান’, আর ‘হুঁশ’ অর্থে বিবেকের জাগরন !” তার মানে দাঁড়ালো — গুরুমহারাজ যে কথাটা বারবার বলতেন – ” আত্মিক উত্তরণ আর বিবেকের জাগরন “,- এই দুটোই হলো ঠাকুরের ভাষায় ‘মান’ ও ‘হুঁশ’! কারণ ‘আত্মিক উত্তরণ’ না ঘটলে মানুষের ঠিক ঠিক কান্ডজ্ঞান জাগ্রত হয় না – স্বাভিমান বোধ আসে না।
গুরুমহারাজ বলেছেন – ” সেই পরমসত্তা (বা পরমেশ্বর অর্থাৎ আল্লাহ, হরি, কালী, গড) অখণ্ডভাবে বিশ্বব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন।” মানবকে আত্মিক উত্তরণের দ্বারা, আত্মশক্তির বিকাশের দ্বারা ঐ অনন্ত-অসীম-অখন্ড পরমেশ্বরের ‘বোধ’ করতে হবে। এটাই মানব জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য আমরা সাধারন মানবেরা মায়া ও মোহের আবর্তে পড়ে ভুলে গিয়েছি, বিস্মৃত হয়েছি ! গুরুমহারাজ কবিতার আকারে মানবের এই বিস্মৃতির কথা উল্লেখ করেছেন – উনি বলেছেন – ” কি হারিয়েছ তুমি ? সহজতা হারিয়েছ …. আত্মবিস্মৃতি মহামৃত্যু তোমাকে করেছে গ্রাস ! ওঠো – জাগো – পুনরুজ্জীবন লাভ করো !” গুরুমহারাজ ঐ কবিতায় আরও বলেছেন – ” তুমি যা হারিয়েছ, তা আমি খুঁজে পেয়েছি। তোমায় প্রদান করব পুনরুজ্জীবন।” এটাকেই বলা হয়েছে “ভগবানের করুনা” ! আমাদের মতো মৃত বা ‘মরা’ এবং ‘আধ-মরা’দেরকে বাঁচাতেই তো তাঁর আগমন !!
এরপর উনি মানব জীবনের চারটি অবলম্বনের কথা বলেছিলেন, সেগুলি হোলো – সত্য, ত্যাগ, প্রেম ও শান্তি এবং এইগুলি লাভের জন্য যে অনুশীলনগুলির প্রয়োজন, তা হলো – সদাচার, পরোপকার, ভালোবাসা এবং সংযম ! সাধারণ মানুষ দুর্বল, অজ্ঞানী, অসহজ, অসংযমী, অসদাচারী – ইত্যাদি ইত্যাদি ! কিন্তু প্রতিটি মানুষকেই তো পূর্ণত্বলাভ করতে হবে, আত্মসাক্ষাৎকার করতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত তো মুক্তি নাই ! “পুনরপি জনমম্, পুনরপি মরণম্, পুনরপি জননী জঠরে শয়ণম্”- বারবার শরীর গ্রহণ করতে হবে আর ত্রিতাপ জ্বালায় ক্লিষ্ট হোতে হোতে – অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে করতে সামনের দিকে আগাতে হবে।
মহাপুরুষগণ বারবার শরীরধারণ করে এই কথাগুলিই জীবসকলকে বোঝাতে আসেন ! যে বা যারা তাঁদের কথাকে অনুসরণ করে জীবন গঠন করতে পারে – তারা পরমানন্দ সাগরে সমাহিত হোতে পারে – ত্রিতাপ ক্লেশ থেকে মুক্ত হতে পারে, জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এই সবকিছুই সম্ভবপর হয় – যখন মানুষ সদ্গুরুর সান্নিধ্যলাভ করে। গুরুজী বলেছিলেন – ” সদ্গুরু লাভের পূর্বে মানুষের অন্তঃকরণে সদ্-বাসনা জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন !” কিন্তু এই সদ্-বাসনা জাগ্রত হোতে গেলেও মানবকে তার আগে খুব করে সৎসঙ্গ বা সাধুসঙ্গ করতে হয়। কারণ সৎব্যক্তির সান্নিধ্যলাভ ব্যতিরেকে মানুষের অন্তঃকরণে সদ্-বাসনা জাগ্রত হয় না ! গুরুমহারাজ জোর দিয়ে বলেছেন – ” সদ্-বাসনা জাগ্রত হোলে মানবের সদ্গুরু লাভ হবেই হবে !” উনি আরও বলেছেন – ” তখন তোমাকে সদ্গুরু খুঁজতে হবে না – তিনিই তোমাকে খুঁজে নেবেন !” মানুষের অন্তঃকরণে আত্মসাক্ষাৎকার বা ভগবদ্-লাভের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেই সদ্গুরু স্বয়ং এসে মানুষের কাছে ধরা দেন।
গুরুমহারাজ বলেছেন – জগতে এই যে হানাহানি, মারামারি, হিংসা. অসহিষ্ণুতা – এই সবকিছুর অবসান হোতে পারে তখনই – যখন মানুষ প্রকৃত অর্থে আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠে। জগতে যে সমস্ত বিভেদ অর্থাৎ ধর্মীয়ভাবে ভেদ, উচ্চ-নীচের ভেদ, দুর্বল-সবলের ভেদ – এছাড়াও বর্ণভেদ, জাতিভেদ ইত্যাদি সকল ভেদ বা ভেদ-দৃষ্টি খুব দূর হোতে পারে – যদি সমাজে অধিক সংখ্যক মানুষ আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হয়ে ওঠে ! অন্যথায় এই রকমটাই চলতেই থাকবে। বহু যুগ আগেও যুদ্ধ হয়েছে, অত্যাচার-অনাচার হয়েছে, মানুষে মানুষে হানাহানি হয়েছে, এখনও এইসব চলছে আবার পরেও থেকে যাবে__এটা ধ্রুব সত্য । কিন্তু সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মহাপ্রাকৃতিক বিবর্তনে মানুষসহ জড়জগৎ-জীবজগৎ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব-ই এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে – তাই এখন যে কোনো অত্যাচার-অনাচারের প্রতিবাদ হয়,দূর্বলেরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তবু এটা ঠিকই যে, সমাজে অস্থিরতা রয়েছে।
গুরুমহারাজ মানব সমাজের এই অস্থির অবস্থার কারণ হিসাবে বলেছেন – ” মানবের আত্মবিস্মৃতি এবং অসহজতাই এর জন্য দায়ী।” শুধু সমাজের দিকে আঙ্গুল তুলে – আর দোষারোপ করে সময় ব্যয় না করে নিজেকে তৈরি করার, নিজে-ই হয়ে ওঠার কথাই গুরুমহারাজ বলেছিলেন। উনি প্রায়ই বলতেন – ” তুই হয়ে ওঠ্ ! কারো দিকে তাকাবি না। সমাজের এক একটা unit যদি আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠে – তাহলেই ধীরে ধীরে সমাজে সাম্যতা আসবে।”
গুরুমহারাজ বলেছেন – ” সেই পরমসত্তা (বা পরমেশ্বর অর্থাৎ আল্লাহ, হরি, কালী, গড) অখণ্ডভাবে বিশ্বব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন।” মানবকে আত্মিক উত্তরণের দ্বারা, আত্মশক্তির বিকাশের দ্বারা ঐ অনন্ত-অসীম-অখন্ড পরমেশ্বরের ‘বোধ’ করতে হবে। এটাই মানব জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য আমরা সাধারন মানবেরা মায়া ও মোহের আবর্তে পড়ে ভুলে গিয়েছি, বিস্মৃত হয়েছি ! গুরুমহারাজ কবিতার আকারে মানবের এই বিস্মৃতির কথা উল্লেখ করেছেন – উনি বলেছেন – ” কি হারিয়েছ তুমি ? সহজতা হারিয়েছ …. আত্মবিস্মৃতি মহামৃত্যু তোমাকে করেছে গ্রাস ! ওঠো – জাগো – পুনরুজ্জীবন লাভ করো !” গুরুমহারাজ ঐ কবিতায় আরও বলেছেন – ” তুমি যা হারিয়েছ, তা আমি খুঁজে পেয়েছি। তোমায় প্রদান করব পুনরুজ্জীবন।” এটাকেই বলা হয়েছে “ভগবানের করুনা” ! আমাদের মতো মৃত বা ‘মরা’ এবং ‘আধ-মরা’দেরকে বাঁচাতেই তো তাঁর আগমন !!
এরপর উনি মানব জীবনের চারটি অবলম্বনের কথা বলেছিলেন, সেগুলি হোলো – সত্য, ত্যাগ, প্রেম ও শান্তি এবং এইগুলি লাভের জন্য যে অনুশীলনগুলির প্রয়োজন, তা হলো – সদাচার, পরোপকার, ভালোবাসা এবং সংযম ! সাধারণ মানুষ দুর্বল, অজ্ঞানী, অসহজ, অসংযমী, অসদাচারী – ইত্যাদি ইত্যাদি ! কিন্তু প্রতিটি মানুষকেই তো পূর্ণত্বলাভ করতে হবে, আত্মসাক্ষাৎকার করতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত তো মুক্তি নাই ! “পুনরপি জনমম্, পুনরপি মরণম্, পুনরপি জননী জঠরে শয়ণম্”- বারবার শরীর গ্রহণ করতে হবে আর ত্রিতাপ জ্বালায় ক্লিষ্ট হোতে হোতে – অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে করতে সামনের দিকে আগাতে হবে।
মহাপুরুষগণ বারবার শরীরধারণ করে এই কথাগুলিই জীবসকলকে বোঝাতে আসেন ! যে বা যারা তাঁদের কথাকে অনুসরণ করে জীবন গঠন করতে পারে – তারা পরমানন্দ সাগরে সমাহিত হোতে পারে – ত্রিতাপ ক্লেশ থেকে মুক্ত হতে পারে, জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এই সবকিছুই সম্ভবপর হয় – যখন মানুষ সদ্গুরুর সান্নিধ্যলাভ করে। গুরুজী বলেছিলেন – ” সদ্গুরু লাভের পূর্বে মানুষের অন্তঃকরণে সদ্-বাসনা জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন !” কিন্তু এই সদ্-বাসনা জাগ্রত হোতে গেলেও মানবকে তার আগে খুব করে সৎসঙ্গ বা সাধুসঙ্গ করতে হয়। কারণ সৎব্যক্তির সান্নিধ্যলাভ ব্যতিরেকে মানুষের অন্তঃকরণে সদ্-বাসনা জাগ্রত হয় না ! গুরুমহারাজ জোর দিয়ে বলেছেন – ” সদ্-বাসনা জাগ্রত হোলে মানবের সদ্গুরু লাভ হবেই হবে !” উনি আরও বলেছেন – ” তখন তোমাকে সদ্গুরু খুঁজতে হবে না – তিনিই তোমাকে খুঁজে নেবেন !” মানুষের অন্তঃকরণে আত্মসাক্ষাৎকার বা ভগবদ্-লাভের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেই সদ্গুরু স্বয়ং এসে মানুষের কাছে ধরা দেন।
গুরুমহারাজ বলেছেন – জগতে এই যে হানাহানি, মারামারি, হিংসা. অসহিষ্ণুতা – এই সবকিছুর অবসান হোতে পারে তখনই – যখন মানুষ প্রকৃত অর্থে আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠে। জগতে যে সমস্ত বিভেদ অর্থাৎ ধর্মীয়ভাবে ভেদ, উচ্চ-নীচের ভেদ, দুর্বল-সবলের ভেদ – এছাড়াও বর্ণভেদ, জাতিভেদ ইত্যাদি সকল ভেদ বা ভেদ-দৃষ্টি খুব দূর হোতে পারে – যদি সমাজে অধিক সংখ্যক মানুষ আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হয়ে ওঠে ! অন্যথায় এই রকমটাই চলতেই থাকবে। বহু যুগ আগেও যুদ্ধ হয়েছে, অত্যাচার-অনাচার হয়েছে, মানুষে মানুষে হানাহানি হয়েছে, এখনও এইসব চলছে আবার পরেও থেকে যাবে__এটা ধ্রুব সত্য । কিন্তু সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মহাপ্রাকৃতিক বিবর্তনে মানুষসহ জড়জগৎ-জীবজগৎ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব-ই এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে – তাই এখন যে কোনো অত্যাচার-অনাচারের প্রতিবাদ হয়,দূর্বলেরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তবু এটা ঠিকই যে, সমাজে অস্থিরতা রয়েছে।
গুরুমহারাজ মানব সমাজের এই অস্থির অবস্থার কারণ হিসাবে বলেছেন – ” মানবের আত্মবিস্মৃতি এবং অসহজতাই এর জন্য দায়ী।” শুধু সমাজের দিকে আঙ্গুল তুলে – আর দোষারোপ করে সময় ব্যয় না করে নিজেকে তৈরি করার, নিজে-ই হয়ে ওঠার কথাই গুরুমহারাজ বলেছিলেন। উনি প্রায়ই বলতেন – ” তুই হয়ে ওঠ্ ! কারো দিকে তাকাবি না। সমাজের এক একটা unit যদি আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠে – তাহলেই ধীরে ধীরে সমাজে সাম্যতা আসবে।”