শ্রী শ্রী গুরুমহারাজের কথা (বলা ও লেখা) নিয়ে এখন এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ তাঁর “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে লিখেছেন – ” উৎসাহ ও প্রেরণা দ্বারা মানবের মহৎ ভাবের বিকাশ করা যায়। সমালোচনা, কটুক্তি, নিন্দা দ্বারা মানবের মহৎ আশা-উৎসাহ হ্রাস পায়, শ্রেষ্ঠ ভাবগুলি (প্রেম, ভক্তি, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ইত্যাদি)-র বিকাশ হয় না ! …..মানবকে কর্মমুখর হবার প্রেরণা ও উৎসাহ দাও। মানব যেন দেহ, মন, বুদ্ধি ও চিন্তায় কর্মমুখর হয়ে পড়ে। দোষ দেখার প্রবৃত্তিকে দূরে ফেলে দাও। যে শুধু নিজের সম্পর্কে কথা বলে, জানবে, সে শুধু নিজের সম্পর্কেই ভাবে এবং এটাও নিশ্চিত যে, সে কেবল নিজের সুখ ও স্বার্থের কথা চিন্তা করে। সে অতি বড় স্বার্থপর ও অসহজ !”
গুরুমহারাজের এই কথাগুলি যেমন ব্যক্তির পক্ষেও কার্যকরী, তেমনি সমষ্টির ক্ষেত্রে অর্থাৎ কোনো দল, ধর্মমত, সম্প্রদায় বা মজহবের ক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকরী। মানবের মধ্যে গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায় চেতনা, বিভিন্ন মতবাদের প্রতি গোঁড়ামি-ই বিরোধ সৃষ্টি করে। সমাজে বৃহৎ আকারে যত বিরোধ রয়েছে – তার মূলে রয়েছে ঐ গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা এবং বিভিন্ন মতবাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য ! এই প্রসঙ্গে মহাবাউল স্বামী পরমানন্দের সেই বিখ্যাত উক্তি – ” মুসলমান হোলে যদি খোদার অনুভূতি হয়, খ্রিস্টান হোলে যদি God-এর অনুভূতি হয়, হিন্দু হোলে যদি পরমেশ্বরের অনুভূতি হয় কিংবা বৌদ্ধ হোলে যদি পরম নির্বাণলাভ হয় – তাহলে আমি তাই হোতে রাজি। আমি তো ওই পরম সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের অনুভূতির কাঙাল !”
গুরুমহারাজ এবার একেবারে Practical কথাগুলি বলে গেলেন। উনি পরিষ্কার করে বলে গেছেন যে, ধর্ম-ধর্ম করে উতলা হয়ে বা ধর্মীয় বাহ্যিক আচার-আচরণের দ্বারা নিজেকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করতে চেয়ে কোনো লাভ হয় না – আসলে প্রয়োজন হোলো অনুভূতির ! অনুভূতিহীন ধর্মাচরণ একেবারেই নিষ্ফল। যেমন বাউল গানে রয়েছে – “ধান কুটিলে হবে চাউল–তুষ কুটিলে কিবা ফল !”__ ধর্মের অনুভূতিহীন ধর্মাচরণকারী ব্যক্তির–এইরকমই ব্যাপার হয়। এর আগের আগের মহাপুরুষরা বলে গেছিলেন – “ধর্মের ভানও ভালো।” গুরুমহারাজ বললেন – ” না ধর্মের ভান ভালো নয়, যথার্থ ধর্মাচরণ-ই ভালো। আর ধর্মের প্রাণ হলো অনুভূতি !” বিভিন্ন মহাপুরুষগণের জীবনে ধর্মাচরণের ফলে যেসব অনুভূতি হয়েছে, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মহা-মহাসাধকদের জীবনে যে সমস্ত অতিলৌকিক ক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে – সেইগুলিকে এক এক করে নিজের জীবনে অনুভূত হওয়াটাই মানব জীবনের ধর্মাচরণের উদ্দেশ্য। নিজেরই ধর্মের অনুভূতি হোলো না__অথচ অপরকে আঘাত করা, অপর ধর্মমতকে ছোট করা – এগুলো প্রকৃত ধার্মিকের কাজ নয়।
প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তির এইসব করার মানসিকতাই বা হবে কেন ? তার এইসব করার সময় কোথায় ? সে তো তখন পরম সত্যের আস্বাদ পেয়ে আত্মানন্দে মশগুল ! পরম শান্তিলাভ করে সে তখন মহাশান্ত ! আপাত static_ কিন্তু প্রচন্ড dynamic ! এইরূপ মানুষের সংস্পর্শে যারা আসে – তারাও শান্তি পায়, তারাও শান্ত হয়ে উঠতে থাকে। তার মানে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে যে, ঐরূপ প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি অর্থাৎ যিনি সহজতা লাভ করতে সমর্থ হয়েছেন – তাঁর বাহ্যিক রূপ আপাত শান্ত, কিন্তু তাঁর মধ্য থেকে সূক্ষ্ণ বা সুক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ শক্তির এমন বিকিরণ হোতে থাকে যে, চতুঃপার্শ্বস্থ জীবজগৎ এমনকি জড় পদার্থের মধ্যেও সেই সূক্ষ্ম শক্তির তীব্র vibration-এর প্রভাব ক্রিয়াশীল হোতে দেখা যায় !
এইজন্যেই কোনো মহাপুরুষের সান্নিধ্যলাভ করলে সরাসরি ঐ vibration-এর কার্যকারিতায় উপস্থিত ব্যক্তিগণের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়তা করে এবং এইজন্যেই সেইসকল মহাপুরুষদের অবর্তমানেও সেই স্থানটির মহিমা বজায় থাকে ! ঐ স্থানে তখনও সহস্র সহস্র মানুষ গিয়ে একটু বসে মনে শান্তি পায়, ধ্যান করলে তন্ময়তা আসে, কোন মানত করলে তার ফল লাভ হয়।
যাইহোক, গুরুমহারাজ তাঁর ‘সহজতা ও প্রেম’ গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে একটা কথাই বলতে চেয়েছেন – মানবকে ‘সহজ’ হোতে হবে। মানব ‘সহজ’ না হলে তার জীবনে প্রেম লাভ হবে না ! সাধারণভাবে আমরা ‘প্রেম’ বা ‘ভালোবাসা’ বলতে যা বুঝি সেগুলি ‘কামজ’ প্রেম বা ভালোবাসা – এর মধ্যে চাওয়া-পাওয়া থাকে ! কিন্তু প্রকৃত ‘প্রেম’ হ’ল প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসা – যেটা লাভ হয় সাধনার চরমভূমিতে, যখন মানব তার পূর্ব পূর্ব জন্মের যাবতীয় সংস্কারকে ভস্মীভূত করতে পারে, কামনা-বাসনার দাসত্ব হতে মুক্ত হতে পারে – যখন সে ‘সহজ’ মানুষ হয়ে ওঠে।
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” ‘বাদ’-ই সমস্ত বিবাদের মূল ! জগতে যত রকমের দুর্ঘটনা, বিবাদ, সংঘর্ষ – তাদের মূলে ওই ‘বাদ’ !” সত্যিই তো আমরা সাধারন মানুষেরা কোনো না কোনো ‘বাদ’-এর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং ভাবছি – “আমি যে ‘বাদে’ আটকে পড়েছি সেটাই শ্রেষ্ঠ!” আর এইটা ভেবেই পরস্পরে লড়াই-ঝগড়া করছি ! এইজন্য মানবকে সর্বপ্রথম ‘সহজ’ হোতে হবে এবং সমস্ত ‘বাদে’-র ঊর্ধ্বে পরমবোধের অনুভব করতে হবে।”–এটাই হোলো এ যুগের মানুষের প্রতি গুরুমহারাজের নির্দেশ ও শিক্ষা!! [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজের এই কথাগুলি যেমন ব্যক্তির পক্ষেও কার্যকরী, তেমনি সমষ্টির ক্ষেত্রে অর্থাৎ কোনো দল, ধর্মমত, সম্প্রদায় বা মজহবের ক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকরী। মানবের মধ্যে গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায় চেতনা, বিভিন্ন মতবাদের প্রতি গোঁড়ামি-ই বিরোধ সৃষ্টি করে। সমাজে বৃহৎ আকারে যত বিরোধ রয়েছে – তার মূলে রয়েছে ঐ গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা এবং বিভিন্ন মতবাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য ! এই প্রসঙ্গে মহাবাউল স্বামী পরমানন্দের সেই বিখ্যাত উক্তি – ” মুসলমান হোলে যদি খোদার অনুভূতি হয়, খ্রিস্টান হোলে যদি God-এর অনুভূতি হয়, হিন্দু হোলে যদি পরমেশ্বরের অনুভূতি হয় কিংবা বৌদ্ধ হোলে যদি পরম নির্বাণলাভ হয় – তাহলে আমি তাই হোতে রাজি। আমি তো ওই পরম সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের অনুভূতির কাঙাল !”
গুরুমহারাজ এবার একেবারে Practical কথাগুলি বলে গেলেন। উনি পরিষ্কার করে বলে গেছেন যে, ধর্ম-ধর্ম করে উতলা হয়ে বা ধর্মীয় বাহ্যিক আচার-আচরণের দ্বারা নিজেকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করতে চেয়ে কোনো লাভ হয় না – আসলে প্রয়োজন হোলো অনুভূতির ! অনুভূতিহীন ধর্মাচরণ একেবারেই নিষ্ফল। যেমন বাউল গানে রয়েছে – “ধান কুটিলে হবে চাউল–তুষ কুটিলে কিবা ফল !”__ ধর্মের অনুভূতিহীন ধর্মাচরণকারী ব্যক্তির–এইরকমই ব্যাপার হয়। এর আগের আগের মহাপুরুষরা বলে গেছিলেন – “ধর্মের ভানও ভালো।” গুরুমহারাজ বললেন – ” না ধর্মের ভান ভালো নয়, যথার্থ ধর্মাচরণ-ই ভালো। আর ধর্মের প্রাণ হলো অনুভূতি !” বিভিন্ন মহাপুরুষগণের জীবনে ধর্মাচরণের ফলে যেসব অনুভূতি হয়েছে, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মহা-মহাসাধকদের জীবনে যে সমস্ত অতিলৌকিক ক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে – সেইগুলিকে এক এক করে নিজের জীবনে অনুভূত হওয়াটাই মানব জীবনের ধর্মাচরণের উদ্দেশ্য। নিজেরই ধর্মের অনুভূতি হোলো না__অথচ অপরকে আঘাত করা, অপর ধর্মমতকে ছোট করা – এগুলো প্রকৃত ধার্মিকের কাজ নয়।
প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তির এইসব করার মানসিকতাই বা হবে কেন ? তার এইসব করার সময় কোথায় ? সে তো তখন পরম সত্যের আস্বাদ পেয়ে আত্মানন্দে মশগুল ! পরম শান্তিলাভ করে সে তখন মহাশান্ত ! আপাত static_ কিন্তু প্রচন্ড dynamic ! এইরূপ মানুষের সংস্পর্শে যারা আসে – তারাও শান্তি পায়, তারাও শান্ত হয়ে উঠতে থাকে। তার মানে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে যে, ঐরূপ প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি অর্থাৎ যিনি সহজতা লাভ করতে সমর্থ হয়েছেন – তাঁর বাহ্যিক রূপ আপাত শান্ত, কিন্তু তাঁর মধ্য থেকে সূক্ষ্ণ বা সুক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ শক্তির এমন বিকিরণ হোতে থাকে যে, চতুঃপার্শ্বস্থ জীবজগৎ এমনকি জড় পদার্থের মধ্যেও সেই সূক্ষ্ম শক্তির তীব্র vibration-এর প্রভাব ক্রিয়াশীল হোতে দেখা যায় !
এইজন্যেই কোনো মহাপুরুষের সান্নিধ্যলাভ করলে সরাসরি ঐ vibration-এর কার্যকারিতায় উপস্থিত ব্যক্তিগণের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়তা করে এবং এইজন্যেই সেইসকল মহাপুরুষদের অবর্তমানেও সেই স্থানটির মহিমা বজায় থাকে ! ঐ স্থানে তখনও সহস্র সহস্র মানুষ গিয়ে একটু বসে মনে শান্তি পায়, ধ্যান করলে তন্ময়তা আসে, কোন মানত করলে তার ফল লাভ হয়।
যাইহোক, গুরুমহারাজ তাঁর ‘সহজতা ও প্রেম’ গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে একটা কথাই বলতে চেয়েছেন – মানবকে ‘সহজ’ হোতে হবে। মানব ‘সহজ’ না হলে তার জীবনে প্রেম লাভ হবে না ! সাধারণভাবে আমরা ‘প্রেম’ বা ‘ভালোবাসা’ বলতে যা বুঝি সেগুলি ‘কামজ’ প্রেম বা ভালোবাসা – এর মধ্যে চাওয়া-পাওয়া থাকে ! কিন্তু প্রকৃত ‘প্রেম’ হ’ল প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসা – যেটা লাভ হয় সাধনার চরমভূমিতে, যখন মানব তার পূর্ব পূর্ব জন্মের যাবতীয় সংস্কারকে ভস্মীভূত করতে পারে, কামনা-বাসনার দাসত্ব হতে মুক্ত হতে পারে – যখন সে ‘সহজ’ মানুষ হয়ে ওঠে।
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” ‘বাদ’-ই সমস্ত বিবাদের মূল ! জগতে যত রকমের দুর্ঘটনা, বিবাদ, সংঘর্ষ – তাদের মূলে ওই ‘বাদ’ !” সত্যিই তো আমরা সাধারন মানুষেরা কোনো না কোনো ‘বাদ’-এর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং ভাবছি – “আমি যে ‘বাদে’ আটকে পড়েছি সেটাই শ্রেষ্ঠ!” আর এইটা ভেবেই পরস্পরে লড়াই-ঝগড়া করছি ! এইজন্য মানবকে সর্বপ্রথম ‘সহজ’ হোতে হবে এবং সমস্ত ‘বাদে’-র ঊর্ধ্বে পরমবোধের অনুভব করতে হবে।”–এটাই হোলো এ যুগের মানুষের প্রতি গুরুমহারাজের নির্দেশ ও শিক্ষা!! [ক্রমশঃ]