শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (বলা এবং লেখা) নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা আগের এপিসোডে আলোচনা করেছিলাম যে, সাধারন মানুষ কিভাবে সহজ-সাধক, মহাত্মা-মহাপুরুষদের শিক্ষা না গ্রহণ করে, বিভিন্ন বিকৃত ভাবের শিক্ষাকে গ্রহণ করে – নিজেও কষ্ট পায়, সমাজকেও কষ্ট দেয় ! কিন্তু এই ব্যাপারটাও স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে। সব মানুষই যে মহাপুরুষদের সহজ-শিক্ষা গ্রহণ করবে বা সকল মানুষই ‘সহজ’ হয়ে উঠবে – তা কিন্তু নয় ! কারণ গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” মানুষ নিজ নিজ স্বভাব অনুযায়ীই চলতে চায়। নিজ নিজ স্বভাবের অনুকূলে কাউকে পেলে_ তবেই তাকে বন্ধু বানায়, তার সাথে কিছুটা পথ চলতে চায়। এইভাবে মানুষ নিজ স্বভাবের অনুকূলে কোনো মানুষকে তার গুরু বলে মেনে নেয় বা তাঁকে আদর্শ করে জীবন কাটাতে চায়।” গুরুমহারাজ এই প্রসঙ্গেই আরও বলেছিলেন – ” দেখবি, জঙ্গলের পশুসমাজে – পশুরাজ সিংহ তো রয়েছেই। সমস্ত পশুই তাকে মর্যাদা দেয় – সিংহের সামনে বাঘ-ভাল্লুক ইত্যাদি অন্যান্য হিংস্র প্রাণীরাও দাঁড়াতে চায় না। কিন্তু ছাগলের দল যখন কোনো নেতা নির্বাচন করে – তারা একটা হৃষ্টপুষ্ট ‘পাঁঠা’-কেই বেছে নেয়, গরুর দল যখন তাদের নেতা নির্বাচন করে – তখন তারা একটা হৃষ্টপুষ্ট ‘ষাঁড়’-কেই বেছে নেয়।”
এইভাবেই মানুষেরা তাদের নিজ নিজ স্বভাব অনুযায়ী রাজনৈতিক এবং ধর্মনৈতিক নেতাদের নির্বাচন করে থাকে। আর সমাজের একটা বড় অংশের মানুষের ধর্মের প্রতি অবহেলার মূল কারণ হিসাবে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” সাধারণ মানুষ ধর্মের নামে প্রলাপ বচন শুনে ও ভন্ডামি দেখে ধর্মের প্রতি একটা অনীহা ও অশ্রদ্ধার ভাব পোষণ করছে।” কিন্তু এই যে সমাজের একাংশের কথা বলা হোলো – এরা কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ ! কিন্তু এরাও অসুস্থ বা অসহজ। আর গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” অসুস্থ বা অসহজ মস্তিষ্কে ধর্ম চিন্তা করা যায় না।” অথচ ধর্মের প্রকৃত তত্ত্ব বা তথ্য সকল মানুষকেই জানতে হবে – না জানলে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ কখনোই হবে না। গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” ধর্মকে বাদ দিয়ে মানবজাতির কল্যাণ করতে যাওয়া যেন মেরুদণ্ডহীন সরীসৃপকে দাঁড় করানোর চেষ্টা ! অসহজ ব্যক্তিরা মানবজাতির কল্যাণ করতে গিয়ে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই ঘটাচ্ছে।”
কিন্তু এখানে আবার সেই পুরোনো জিজ্ঞাসাটাই এসে যাচ্ছে – তাহলে ‘ধর্ম’ ব্যাপারটা কি ? গুরুমহারাজ একটু অন্য আঙ্গিকে বললেন – ” ধর্মের স্বরূপ সত্য !” এছাড়াও উনি ধর্ম কি – তা সহজ ভাষায় এবং প্রাঞ্জলভাবে অন্যত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উনি বলেছেন – ” বিশ্বের সমূহ অস্তিত্ব যার উপর অবস্থান করছে – অনু-পরমানু, উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ, পক্ষী, পশু, মানব ও চরাচর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যা ধারণ করে আছে এবং পরিপূরণ, পরিপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে – তাই ধর্ম ! আর এই ধর্মবোধ বা পরম সত্যের ‘বোধ’-ই হ’ল মানবজীবনের উদ্দেশ্য।”
এই রকম সহজ ভাষায় – যুগোপযোগী করে, সহজভাবে ‘ধর্মে’র ব্যাখ্যা একমাত্র যুগপুরুষ স্বামী পরমানন্দ ছাড়া আর কে-ই বা বলতে পারে ? সমস্ত বিশ্বে অনু-পরমানু হোতে – যেখানে যা কিছু আছে, সমস্তই ধর্মে আশ্রিত বা ধর্মে অবস্থান করছে। সুতরাং কেউই ধর্মচ্যুত নয়। কিন্তু এই চরাচরের সকলের ধর্মবোধ হয় না ! একমাত্র মানবজীবনেই এই বিশ্বরহস্য উদঘাটিত হয় এবং পরম তত্ত্বের বোধ হয়।”– এই কথাগুলিও গুরুমহারাজেরই কথা ! এইখানে একটা কথা নিয়ে আলোচনা করাই যায় – সেটা হোলো, ‘কেউই যখন ধর্মচ্যুত নয়’– তখন সকলের ধর্মবোধ হোচ্ছে না-ই বা কেন? প্রকৃতপক্ষে আমরা যেগুলিকে ‘ধর্ম’ নাম দিয়ে বুঝি অর্থাৎ খ্রিস্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, ইসলামধর্ম, জৈনধর্ম এমনকি হিন্দুধর্ম ইত্যাদি – এগুলি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা এক একটি ধর্মমত। এই সম্প্রদায়গুলিও তাই ধর্মের আশ্রিত মতবিশেষ। এইজন্যেই এক একটি ধর্মমতের followers-রা পরস্পরে পরস্পরের সঙ্গে বিরোধ করে, ঝগড়া করে ৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের সদস্যদের তো ‘ধর্মবোধ’ হয় নাই–এইজন্যেই তো এইসব বালখিল্যতা করে! পৃথিবী গ্রহে ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় মতবাদ বহু__ কিন্তু ধর্ম এক ! এই সহজ সত্য যখনই মানুষ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবে – তখনই আর পরস্পরে কোনো বিরোধ থাকবে না।
যে কোনো মানুষ, যে কোনো ধর্মীয় মতের মধ্যেই থাকুক না কেন – সেই মতকে আশ্রয় করেই মানবকে তার মনের বিস্তার ও চিত্তের প্রসার ঘটিয়ে পরিপূর্ণতার পথে অগ্রসর হোতে হবে। সমগ্র মানবজাতিকে গুরু মহারাজের এই কথাগুলিকে মাথায় রাখতেই হবে যে, “সমস্ত মতবাদের উর্দ্ধে রয়েছে পরমতত্ত্ব ! মানব যে কোনো ধর্মমতকে আশ্রয় করেই সেই পরমতত্ত্বে উপনীত হোতে পারে এবং এটাই মানবজীবনের উদ্দেশ্য ! মানবের জীবনে পরমতত্ত্বের বোধ হোলে তবেই মানবজীবনের সার্থকতা, আর তখনই জীবন – মহাজীবনে পরিণত হয়। যে কোনো মহাজীবনে প্রেম, মৈত্রী ও শান্তির এক বিশ্ব উদার ভাব ফুটে ওঠে। সেই ভাব সমগ্র জগৎকে প্রভাবিত করে। মানবজাতি সেই মহান ভাবকে অনুসরণ করতে থাকে। তাঁর সংস্পর্শে পশুমানব রূপান্তরিত হতে থাকে দেবমানবে। জগতে আসে এক বিরাট যুগান্তর !” [ক্রমশঃ]
এইভাবেই মানুষেরা তাদের নিজ নিজ স্বভাব অনুযায়ী রাজনৈতিক এবং ধর্মনৈতিক নেতাদের নির্বাচন করে থাকে। আর সমাজের একটা বড় অংশের মানুষের ধর্মের প্রতি অবহেলার মূল কারণ হিসাবে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” সাধারণ মানুষ ধর্মের নামে প্রলাপ বচন শুনে ও ভন্ডামি দেখে ধর্মের প্রতি একটা অনীহা ও অশ্রদ্ধার ভাব পোষণ করছে।” কিন্তু এই যে সমাজের একাংশের কথা বলা হোলো – এরা কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ ! কিন্তু এরাও অসুস্থ বা অসহজ। আর গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” অসুস্থ বা অসহজ মস্তিষ্কে ধর্ম চিন্তা করা যায় না।” অথচ ধর্মের প্রকৃত তত্ত্ব বা তথ্য সকল মানুষকেই জানতে হবে – না জানলে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ কখনোই হবে না। গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” ধর্মকে বাদ দিয়ে মানবজাতির কল্যাণ করতে যাওয়া যেন মেরুদণ্ডহীন সরীসৃপকে দাঁড় করানোর চেষ্টা ! অসহজ ব্যক্তিরা মানবজাতির কল্যাণ করতে গিয়ে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই ঘটাচ্ছে।”
কিন্তু এখানে আবার সেই পুরোনো জিজ্ঞাসাটাই এসে যাচ্ছে – তাহলে ‘ধর্ম’ ব্যাপারটা কি ? গুরুমহারাজ একটু অন্য আঙ্গিকে বললেন – ” ধর্মের স্বরূপ সত্য !” এছাড়াও উনি ধর্ম কি – তা সহজ ভাষায় এবং প্রাঞ্জলভাবে অন্যত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উনি বলেছেন – ” বিশ্বের সমূহ অস্তিত্ব যার উপর অবস্থান করছে – অনু-পরমানু, উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ, পক্ষী, পশু, মানব ও চরাচর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যা ধারণ করে আছে এবং পরিপূরণ, পরিপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে – তাই ধর্ম ! আর এই ধর্মবোধ বা পরম সত্যের ‘বোধ’-ই হ’ল মানবজীবনের উদ্দেশ্য।”
এই রকম সহজ ভাষায় – যুগোপযোগী করে, সহজভাবে ‘ধর্মে’র ব্যাখ্যা একমাত্র যুগপুরুষ স্বামী পরমানন্দ ছাড়া আর কে-ই বা বলতে পারে ? সমস্ত বিশ্বে অনু-পরমানু হোতে – যেখানে যা কিছু আছে, সমস্তই ধর্মে আশ্রিত বা ধর্মে অবস্থান করছে। সুতরাং কেউই ধর্মচ্যুত নয়। কিন্তু এই চরাচরের সকলের ধর্মবোধ হয় না ! একমাত্র মানবজীবনেই এই বিশ্বরহস্য উদঘাটিত হয় এবং পরম তত্ত্বের বোধ হয়।”– এই কথাগুলিও গুরুমহারাজেরই কথা ! এইখানে একটা কথা নিয়ে আলোচনা করাই যায় – সেটা হোলো, ‘কেউই যখন ধর্মচ্যুত নয়’– তখন সকলের ধর্মবোধ হোচ্ছে না-ই বা কেন? প্রকৃতপক্ষে আমরা যেগুলিকে ‘ধর্ম’ নাম দিয়ে বুঝি অর্থাৎ খ্রিস্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, ইসলামধর্ম, জৈনধর্ম এমনকি হিন্দুধর্ম ইত্যাদি – এগুলি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা এক একটি ধর্মমত। এই সম্প্রদায়গুলিও তাই ধর্মের আশ্রিত মতবিশেষ। এইজন্যেই এক একটি ধর্মমতের followers-রা পরস্পরে পরস্পরের সঙ্গে বিরোধ করে, ঝগড়া করে ৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের সদস্যদের তো ‘ধর্মবোধ’ হয় নাই–এইজন্যেই তো এইসব বালখিল্যতা করে! পৃথিবী গ্রহে ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় মতবাদ বহু__ কিন্তু ধর্ম এক ! এই সহজ সত্য যখনই মানুষ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবে – তখনই আর পরস্পরে কোনো বিরোধ থাকবে না।
যে কোনো মানুষ, যে কোনো ধর্মীয় মতের মধ্যেই থাকুক না কেন – সেই মতকে আশ্রয় করেই মানবকে তার মনের বিস্তার ও চিত্তের প্রসার ঘটিয়ে পরিপূর্ণতার পথে অগ্রসর হোতে হবে। সমগ্র মানবজাতিকে গুরু মহারাজের এই কথাগুলিকে মাথায় রাখতেই হবে যে, “সমস্ত মতবাদের উর্দ্ধে রয়েছে পরমতত্ত্ব ! মানব যে কোনো ধর্মমতকে আশ্রয় করেই সেই পরমতত্ত্বে উপনীত হোতে পারে এবং এটাই মানবজীবনের উদ্দেশ্য ! মানবের জীবনে পরমতত্ত্বের বোধ হোলে তবেই মানবজীবনের সার্থকতা, আর তখনই জীবন – মহাজীবনে পরিণত হয়। যে কোনো মহাজীবনে প্রেম, মৈত্রী ও শান্তির এক বিশ্ব উদার ভাব ফুটে ওঠে। সেই ভাব সমগ্র জগৎকে প্রভাবিত করে। মানবজাতি সেই মহান ভাবকে অনুসরণ করতে থাকে। তাঁর সংস্পর্শে পশুমানব রূপান্তরিত হতে থাকে দেবমানবে। জগতে আসে এক বিরাট যুগান্তর !” [ক্রমশঃ]