শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (বলা ও লেখা) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ তাঁর “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে লিখেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! সমস্ত জীব জগতের মধ্যে মানব হোলো সর্বাপেক্ষা হৃদয়বান। তাই মানব ধার্মিক ও প্রেমিক, সদয় ও সহানুভূতিশীল। যার হৃদয় বিকশিত হয়ে সীমার গণ্ডীকে অতিক্রম করে সম্প্রসারণমুখী হয়েছে – তিনিই তো সাক্ষাৎ ‘জীবন’। সংকীর্ণচিত্ত ও হৃদয়হীন মানব মৃতবৎ! সংকুচিত হৃদয়সম্পন্ন মানব-অন্তঃকরণে ভগবৎ প্রেমের আবির্ভাব হয় না।”
এখানে আমাদের জানা উচিৎ ‘হৃদয়’ বলতে কী বোঝানো হয় ? হৃদয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ heart, আবার heart অর্থে হৃৎপিণ্ড। সাধারণতঃ মানুষ ‘হৃদয়’ বোঝাতে বুকের মাঝখানটাই প্রদর্শন করে, আবার হৃৎপিন্ডের অবস্থানও বুকের মাঝেই (সামান্য একটু বাঁ-পাশে) ! এইসব নানাকারণে হৃদয়-হার্ট-হৃৎপিন্ড এইসব শব্দজালের ভিড়ে মাঝে মাঝে অনেককিছুই গোলমাল হয়ে যায় !
তবে আমরা গুরুমহারাজের কাছে শুনে যা বুঝেছিলাম তা হোলো – ‘হৃদয়’ অর্থে ‘অন্তঃকরণ’ ! আবার ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রে ‘অন্তঃকরণ চতুষ্টয়’_ বলতে মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকারকে বোঝায়। তাহলে আবার একটু confusion তৈরি হোলো – হৃদয়-অন্তঃকরণ-অন্তঃকরণ চতুষ্টয় ! আসল ব্যাপারটা হলো হৃদয়-অন্তর-অন্তঃকরণ কথাগুলি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
গুরুমহারাজ বলেছেন __”মানুষের শরীরে মুখ্যকেন্দ্র দুটি – একটি মস্তিষ্ক এবং অপরটি হৃদয়। মস্তিষ্ক চিন্তাশক্তির আধার এবং হৃদয় ভাবাবেগ ও প্রেরণার উৎস ! হৃদয়ে উন্নত বৃত্তিগুলির অনুসরণ না করে, অন্তর্জগৎ-এ মহৎ ভাবগুলির অনুধাবন না করে, কেবলমাত্র মস্তিষ্কচর্চা করলে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ হয় ও মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে – কিন্তু কি হয় তার পরিণাম ! হৃদয়হীনতার ফলে মানবের মধ্যে জাগ্রত হয় নীচ স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, নির্মম নিষ্ঠুরতা এবং হিংসা, লোভ, পরস্ব অপহরণের দুস্প্রবৃত্তি ও চতুরতা ! অপরপক্ষে শুধুমাত্র (মস্তিষ্ক বাদ দিয়ে) হৃদয়বৃত্তির অনুশীলন করলে মানব হয়ে পড়ে দুর্বলচিত্ত, অতি ভাবপ্রবণ এবং অন্ধবিশ্বাসী !”
অবশ্য গুরুমহারাজ মানবশরীরকেও খুবই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং সেইজন্য বলেছেন – ” মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের বিকাশ ঘটলেও যদি শরীর শ্রমবিমুখ ও শ্রমকাতর হয় – সেটাও অপূর্ণতা ! মানবের মস্তিষ্ক, হৃদয় ও শরীর এই তিনের সক্রিয়তাতেই মানবের জীবন ছন্দময় হয়ে ওঠে, আর সেই ছন্দের তালে তালে পরমানন্দময় পরমতত্ত্বে জীবন উপনীত হয়।৷”
তাহলে পাঠকবৃন্দ ! আমরা কি বুঝতে পারলাম বলুন তো ! আমরা এটাই বুঝলাম যে, আধ্যাত্মিক জীবনে কৃতকার্য হোতে গেলে__ আমাদের সকলকে মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং শরীর এই তিনটিরই একসাথে বিকাশের জন্য তৎপর হোতে হবে। শুধুমাত্র যে কোনো একটা অথবা যে কোনো দুটির বিকাশ ঘটলেও__ তা অসম্পূর্ণতা ! এইভাবে শুধু মস্তিষ্কের চর্চা করে, হৃদয়হীন বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠলে তো আসলে মানব সমাজেরই ক্ষতি । আর শরীর মজবুত না থাকলে শুধুমাত্র ঘরে বসে বা স্টেজে উঠে ‘লেকচার’ দেওয়ায়__ হয়তো খানিকটা বাহবা পাওয়া যায়, কিছু অনুগামী বা followers তৈরি করা যায়, কিন্তু ‘কাজের কাজ’ বিশেষ কিছুই হয় না।
গুরু মহারাজ বিভিন্ন নামকরা লেখক, শিল্পী, পন্ডিত ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইত্যাদিদের উল্লেখ করে বলতেন যে, ‘এদের বেশির ভাগের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো, ওরা কিন্তু সমকালীন মানুষের কাছেই মর্যাদা পায়, শ্রদ্ধা পায় । তারপর আবার নতুনরা এসে পুরানোদের জায়গা দখল করে নেয় । এরা সমকালীন কিন্তু চিরকালীন হয় না । ‘চিরকালীন’ কারা হয় জানো তো__ যারা কালীকে প্রসন্ন করতে পারেন । কালী প্রসন্ন হোলে__ তবে কোনো ব্যক্তি মহাকালের বুকে স্থান পায় । কিন্তু সে দু-এক জনা। আর বাকিরা কেউ মানুষের মনোজগতে কেউ 50 বছর, কেউ 100 বছর বা কেউ হয়তো আরও একটু বেশী সময় ধরে থাকে, তারপর তারা কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। সুতরাং শুধুমাত্র মস্তিষ্ক চর্চার দ্বারা প্রকৃত অর্থে মানবের কল্যাণ করা যায় না ।
আবার গুরুজী শুধুমাত্র হৃদয়বৃত্তির চর্চাকারীদের কথাও পরিষ্কার করে বলেছেন যে,__ “তারা দুর্বল চিত্ত, অতিশয় ভাবপ্রবণ এবং অন্ধ বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।” এটাও তো সাংঘাতিক কথা ! হৃদয়হীন মস্তিষ্ক চর্চাকারীরা, মহামানবদের শিক্ষাগুলিকে নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয় । লেখার মাধ্যমে, বক্তব্যের মাধ্যমে, বিভিন্ন রকম শিল্পকলার মাধ্যমে__তারা তাদের নিজস্ব মতামতগুলিকে সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মনে বিভেদ সৃষ্টি করে । আর মস্তিষ্কচর্চাহীন হৃদয়বৃত্তির চর্চাকারীরা ভাবপ্রবণ হয়ে, অন্ধবিশ্বাসী হয়ে__ তাদের কথায় প্রভাবান্বিত হয়ে নিজেদের মধ্যে (মানুষে-মানুষে)ঝগড়া বাধায়, মারামারি করে, রক্তপাত ঘটায়।
সেই জন্যই গুরুমহারাজ বলেছিলেন মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং শরীর__ এই তিনটিরই পরিপূর্ণতার প্রয়োজন। গুরুজীর নিজের কথাই তুলে ধরে, মানুষের ঐ তিনের পূর্ণতার অবস্থা তুলে ধরছি ! তখন মানুষ হবে_ “অন্তঃশৈব,বহির্শাক্ত ও ব্যবহারে বৈষ্ণব ।” ঐরূপ মানুষের হবে_ “বেদান্তের মস্তিস্ক, বৈষ্ণবের হৃদয় এবং শাক্তের শরীর। সুমেধা, সৎ-ব্যবহার এবং সৎকর্ম।”
এযুগের যুগপুরুষ গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের সমগ্র মানবজাতির প্রতি উদার আহ্বান দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি__” প্রিয় আত্মন্ !অন্তরে সাক্ষী পরায়ণ হও, ব্যবহারে ঈশ্বর পরায়ণ হও, এবং কর্মে সেবাপরায়ণ হও।৷”
এখানে আমাদের জানা উচিৎ ‘হৃদয়’ বলতে কী বোঝানো হয় ? হৃদয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ heart, আবার heart অর্থে হৃৎপিণ্ড। সাধারণতঃ মানুষ ‘হৃদয়’ বোঝাতে বুকের মাঝখানটাই প্রদর্শন করে, আবার হৃৎপিন্ডের অবস্থানও বুকের মাঝেই (সামান্য একটু বাঁ-পাশে) ! এইসব নানাকারণে হৃদয়-হার্ট-হৃৎপিন্ড এইসব শব্দজালের ভিড়ে মাঝে মাঝে অনেককিছুই গোলমাল হয়ে যায় !
তবে আমরা গুরুমহারাজের কাছে শুনে যা বুঝেছিলাম তা হোলো – ‘হৃদয়’ অর্থে ‘অন্তঃকরণ’ ! আবার ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রে ‘অন্তঃকরণ চতুষ্টয়’_ বলতে মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকারকে বোঝায়। তাহলে আবার একটু confusion তৈরি হোলো – হৃদয়-অন্তঃকরণ-অন্তঃকরণ চতুষ্টয় ! আসল ব্যাপারটা হলো হৃদয়-অন্তর-অন্তঃকরণ কথাগুলি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
গুরুমহারাজ বলেছেন __”মানুষের শরীরে মুখ্যকেন্দ্র দুটি – একটি মস্তিষ্ক এবং অপরটি হৃদয়। মস্তিষ্ক চিন্তাশক্তির আধার এবং হৃদয় ভাবাবেগ ও প্রেরণার উৎস ! হৃদয়ে উন্নত বৃত্তিগুলির অনুসরণ না করে, অন্তর্জগৎ-এ মহৎ ভাবগুলির অনুধাবন না করে, কেবলমাত্র মস্তিষ্কচর্চা করলে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ হয় ও মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে – কিন্তু কি হয় তার পরিণাম ! হৃদয়হীনতার ফলে মানবের মধ্যে জাগ্রত হয় নীচ স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, নির্মম নিষ্ঠুরতা এবং হিংসা, লোভ, পরস্ব অপহরণের দুস্প্রবৃত্তি ও চতুরতা ! অপরপক্ষে শুধুমাত্র (মস্তিষ্ক বাদ দিয়ে) হৃদয়বৃত্তির অনুশীলন করলে মানব হয়ে পড়ে দুর্বলচিত্ত, অতি ভাবপ্রবণ এবং অন্ধবিশ্বাসী !”
অবশ্য গুরুমহারাজ মানবশরীরকেও খুবই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং সেইজন্য বলেছেন – ” মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের বিকাশ ঘটলেও যদি শরীর শ্রমবিমুখ ও শ্রমকাতর হয় – সেটাও অপূর্ণতা ! মানবের মস্তিষ্ক, হৃদয় ও শরীর এই তিনের সক্রিয়তাতেই মানবের জীবন ছন্দময় হয়ে ওঠে, আর সেই ছন্দের তালে তালে পরমানন্দময় পরমতত্ত্বে জীবন উপনীত হয়।৷”
তাহলে পাঠকবৃন্দ ! আমরা কি বুঝতে পারলাম বলুন তো ! আমরা এটাই বুঝলাম যে, আধ্যাত্মিক জীবনে কৃতকার্য হোতে গেলে__ আমাদের সকলকে মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং শরীর এই তিনটিরই একসাথে বিকাশের জন্য তৎপর হোতে হবে। শুধুমাত্র যে কোনো একটা অথবা যে কোনো দুটির বিকাশ ঘটলেও__ তা অসম্পূর্ণতা ! এইভাবে শুধু মস্তিষ্কের চর্চা করে, হৃদয়হীন বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠলে তো আসলে মানব সমাজেরই ক্ষতি । আর শরীর মজবুত না থাকলে শুধুমাত্র ঘরে বসে বা স্টেজে উঠে ‘লেকচার’ দেওয়ায়__ হয়তো খানিকটা বাহবা পাওয়া যায়, কিছু অনুগামী বা followers তৈরি করা যায়, কিন্তু ‘কাজের কাজ’ বিশেষ কিছুই হয় না।
গুরু মহারাজ বিভিন্ন নামকরা লেখক, শিল্পী, পন্ডিত ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইত্যাদিদের উল্লেখ করে বলতেন যে, ‘এদের বেশির ভাগের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো, ওরা কিন্তু সমকালীন মানুষের কাছেই মর্যাদা পায়, শ্রদ্ধা পায় । তারপর আবার নতুনরা এসে পুরানোদের জায়গা দখল করে নেয় । এরা সমকালীন কিন্তু চিরকালীন হয় না । ‘চিরকালীন’ কারা হয় জানো তো__ যারা কালীকে প্রসন্ন করতে পারেন । কালী প্রসন্ন হোলে__ তবে কোনো ব্যক্তি মহাকালের বুকে স্থান পায় । কিন্তু সে দু-এক জনা। আর বাকিরা কেউ মানুষের মনোজগতে কেউ 50 বছর, কেউ 100 বছর বা কেউ হয়তো আরও একটু বেশী সময় ধরে থাকে, তারপর তারা কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। সুতরাং শুধুমাত্র মস্তিষ্ক চর্চার দ্বারা প্রকৃত অর্থে মানবের কল্যাণ করা যায় না ।
আবার গুরুজী শুধুমাত্র হৃদয়বৃত্তির চর্চাকারীদের কথাও পরিষ্কার করে বলেছেন যে,__ “তারা দুর্বল চিত্ত, অতিশয় ভাবপ্রবণ এবং অন্ধ বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।” এটাও তো সাংঘাতিক কথা ! হৃদয়হীন মস্তিষ্ক চর্চাকারীরা, মহামানবদের শিক্ষাগুলিকে নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয় । লেখার মাধ্যমে, বক্তব্যের মাধ্যমে, বিভিন্ন রকম শিল্পকলার মাধ্যমে__তারা তাদের নিজস্ব মতামতগুলিকে সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মনে বিভেদ সৃষ্টি করে । আর মস্তিষ্কচর্চাহীন হৃদয়বৃত্তির চর্চাকারীরা ভাবপ্রবণ হয়ে, অন্ধবিশ্বাসী হয়ে__ তাদের কথায় প্রভাবান্বিত হয়ে নিজেদের মধ্যে (মানুষে-মানুষে)ঝগড়া বাধায়, মারামারি করে, রক্তপাত ঘটায়।
সেই জন্যই গুরুমহারাজ বলেছিলেন মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং শরীর__ এই তিনটিরই পরিপূর্ণতার প্রয়োজন। গুরুজীর নিজের কথাই তুলে ধরে, মানুষের ঐ তিনের পূর্ণতার অবস্থা তুলে ধরছি ! তখন মানুষ হবে_ “অন্তঃশৈব,বহির্শাক্ত ও ব্যবহারে বৈষ্ণব ।” ঐরূপ মানুষের হবে_ “বেদান্তের মস্তিস্ক, বৈষ্ণবের হৃদয় এবং শাক্তের শরীর। সুমেধা, সৎ-ব্যবহার এবং সৎকর্ম।”
এযুগের যুগপুরুষ গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের সমগ্র মানবজাতির প্রতি উদার আহ্বান দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি__” প্রিয় আত্মন্ !অন্তরে সাক্ষী পরায়ণ হও, ব্যবহারে ঈশ্বর পরায়ণ হও, এবং কর্মে সেবাপরায়ণ হও।৷”