শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লেখা এবং বলা) নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ তাঁর “চরৈবেতি” নামক কবিতায় সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন – ” প্রিয় আত্মন –…..
….. তুমিই সেই অমৃত, পরমানন্দময় জীবন।
তুমি সেই মহাপ্রেমানন্দ স্বরূপ – সার্বজনীন ও সাম্যের
সংগীত দুই হস্ত তুলে গেয়ে চল।
তুমিই মহাকালের চেতনা।
প্রিয় জীবন, তুমি পরমেশ্বরের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ।
তুমিই সেই মহাজ্যোতি, পরমেশ্বরের প্রথম পরম প্রকাশ।
এই অন্ধকার সুপ্তির ভেতর–তুমিই একমাত্র জীবিত।
জড়ের আবিলতা হোতে তুমি জেগে ওঠো।
হে চৈতন্যময় – তুমি জেগে ওঠো।৷”
মানবের প্রতি গুরুমহারাজের ‘প্রেম যেন ঝরে ঝরে পড়ছে’ ! এই কবিতা পড়লে আমাদের এইরূপই অনুভূতি হয়। জীবনকে কি প্রাধান্যই না দিতেন গুরুমহারাজ ! প্রকৃত অর্থেই “জীবনের পূজারী” ছিলেন গুরুমহারাজ। অবশ্য এই কথা বারবার বলতে হয় যে, যেকোনো অবতারকল্প মহাপুরুষেরাই নিজে “জীবনের পূজারী” হয়েই মানুষকে জীবনের পূজারী হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। আমরা সাধারন মানুষেরা যেভাবে একটু একটু করে আমাদের এই সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করি, নষ্ট করি – তা দেখে তাঁদের দুঃখের অন্ত থাকে না। তাঁরা খুবই ব্যথিত হ’ন__ বলেই তো আমাদের প্রতি তাঁদের প্রেম এবং করুনা ঝরে ঝরে পড়ে। তাঁরা তাঁদের জীবনভর – সমগ্র জীবনপাত কোরে, সাধারন মানুষদের নিজেদের ভুলে_ নিজে নিজেই নষ্ট করতে থাকা জীবনগুলিকে আবার মূল ছন্দে-সুরে-সহজতায় নিয়ে এসে_ হৃতস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবার আপ্রান চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র যুগপুরুষ বা অবতারপুরুষগণই ন’ন, তাঁদের কাজের সহকারী অন্যান্য মহাত্মা, যোগী, সাধকগণও বারবার মানুষকে সতর্ক করেন, ঠিকমতো এবং সুশৃংখল জীবনযাপন করার কথা বলেন, আহারে-বিহারে সংযমী হোতে বলেন।
কিন্তু আমাদের অবস্থা কেমন জানেন – সেই ‘পানা পুকুরে ঢিল মারা’র মতো ! ঢিলটা ‘গবাং’ করে পড়লে পানাগুলি খানিকটা ফাঁক হোয়ে স্বচ্ছ জল একটুখানি দেখা যায় – কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই আবার পানাগুলি এসে সেই স্থান দখল করে নেয়। আমরাও মহাজনবাক্য অর্থাৎ মহাপুরুষদের উপদেশ শুনি, বুঝিও খানিকটা ! আমরা মনে মনে ভাবি যে – এইগুলি মেনে চললে আমাদেরই মঙ্গল হবে – কিন্তু মনে কথাগুলি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না । আবার আমরা আমাদের বহমান উৎশৃংখল জীবনে ফিরে যাই এবং কষ্ট পাই, দুঃখ পাই আর হাহাকার করি – “হে ঈশ্বর ! আমার এই কষ্ট মোচন করো।”__ কি মূর্খতা ! কি আহাম্মকি ! কিন্তু কি-ই বা করা যায়, এইটাই যেন জাগতিক নিয়মে পর্যবসিত হয়েছে ! আর এইজন্যেই বারবার মহাত্মা-মহাপুরুষদের পৃথিবীতে শরীর গ্রহণ করতে হোচ্ছে – আমাদেরকে এই অজ্ঞান অবস্থা থেকে তোলার জন্য, আলোর পথ দেখানোর জন্য।
গুরুমহারাজ বললেন – ” প্রিয় আত্মন – সংকীর্ণতা ত্যাগ করে মুক্ত হও। স্বার্থাভিসন্ধিতে নিজেকে বিস্মৃত হয়ো না। আপন বিবেককে আবিষ্কার করো – আপনাকে ভুলে থেকো না।” উনি আরো বলেছিলেন – ” যেহেতু সর্বভূতে সেই সচ্চিদানন্দ বিরাজমান, তাই সকলকেই ভালোবাসো, আর তাহলেই সমস্ত কুসংস্কার দূরীভূত হবে, মানুষ ধীরে ধীরে অসহজতা মুক্ত হয়ে ‘সহজ’ হবে।”
কিন্তু আমরা কি পারছি সংকীর্ণতা মুক্ত হোতে, কুসংস্কার মুক্ত হোতে, অসহজতা মুক্ত হোতে ? পারছি না – তার কারণ আমাদের প্রচেষ্টার অভাব। আমরা যে যেখানে রয়েছি, যে অবস্থায়, যে বয়সে, যে স্থানে রয়েছি – সেই অবস্থা থেকেই আমরা শুরুটা কোরে দিতে পারি। ‘আচ্ছা দেখছি’ – ‘পরে হবে’ – ‘এই ঝামেলাটা যাক্ তো’– এইসব অজুহাত দিয়ে দিয়ে ‘জীবন’ বিশৃংখলার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে – সুশৃংখল আর হয়ে উঠছে না ! অবতাররূপে ভগবান স্বয়ং, মহাপুরুষ-মহাত্মাগণ কতবার কেঁদে কেঁদে ফিরে গেলেন, মানুষকে ভালোবেসে রক্তাক্ত হোলেন,– কিন্তু আমাদের আর চৈতন্য হোলো না – এখনও হোচ্ছে না !
আবার আমাদের মাঝে এই যুগের যুগপুরুষ স্বামী পরমানন্দ এসেছিলেন – তিনিও তাঁর সমগ্র জীবন শুধুমাত্র জীবজগতের কল্যাণের জন্যই পাত করে গেলেন। ছোটবেলা থেকেই পথে-প্রান্তরে, গিরি-গুহায়, বনে-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতে, লোকালয়ের মাঝে, নগরে-শহরে, গ্রামে-গ্রামান্তরে উনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। জগতের যা কিছু ভালো তা নিজের মধ্যে আত্মস্থ করেছেন এবং জগতে যেখানে যা কিছু কালো__ সেখানে তাঁর প্রেমের, তাঁর করুণার আলোয় ভরে দিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে আমরা সাধারন ভক্তরা তো তাঁকে আঘাত-ই দিলাম, হাজারো কষ্ট দিলাম – তাঁর আরব্ধ কাজের একনিষ্ঠ সহকারী আর হয়ে উঠতে পারলাম কই ?
যাইহোক, আবার গুরুমহারাজের কথাতেই ফিরে আসি। গুরুমহারাজ আমাদের মতো সাধারণ মানবদেরকে উদ্দেশ্য করে বারবার যেটা বলেছিলেন, সেটা হোলো – ” সহজ হও ! বাদ-মুক্ত হও ! সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠো !” আর এই হয়ে ওঠার জন্য মানুষের জীবনে উপাসনার প্রয়োজন। কিন্তু উপাসনা করলে কি হয় ? গুরুমহারাজ বললেন – ” উপাসনার মধ্যে দিয়ে উপাস্যের ভাবগুলি উপাসকের মধ্যে আবির্ভূত হোতে থাকে।”
গুরু মহারাজের এই কথা থেকে— জগতে যতরকম উপাসনা রয়েছে, তার সারমর্ম আমরা বুঝতে পারি। উপাসনার মধ্যে দিয়ে উপাস্যের ভাবগুলি উপাসকের মধ্যে চলে আসে – এটাই উপাসনার রহস্য। তার মানে হোচ্ছে — আমরা যদি ঠিক ঠিক গুরুর উপাসনা করি, তাহলে গুরুদেবের ভাবগুলি আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হবে। এইভাবে আমরা রাম-কৃষ্ণ-রামকৃষ্ণ-আল্লাহ-গড-ঈশ্বর এইরূপ যেকোন উপাস্যের উপাসক-ই হই না কেন – যদি আমরা ঠিক ঠিক উপাসনা করতে পারি, তাহলে আমাদের নিজ নিজ উপাস্যের ভাবগুলি আমাদের মধ্যে প্রকাশিত হোতে থাকবে। দীর্ঘদিন উপাসনা করার পরও সেইটা যদি না হয় – তাহলে জানতে হবে আমার উপাসনা পদ্ধতিতে-ই ভুল রয়েছে। একেই ব্যাকরণগতভাবে বলা হয় ‘গোড়ায় গলদ’ বা ‘বিসমিল্লায় গলদ’!
গুরুমহারাজ নিজেই বলেছেন – ” সর্বত্র-ই তাঁর (সচ্চিদানন্দ) প্রকাশ, সর্বত্রই তিনি – এই অনুভূতিসম্পন্ন ‘সহজ’ মানব সংসারে বিরল। ….. এঁদের কদাচিৎ দর্শন লাভ হোলে জীবন ধন্য হয়ে যায়। সংসারে যিনি আসক্তি ও বিরতিশূন্য হয়ে সচ্চিদানন্দরূপ আপন স্বরূপকে জেনেছেন বা অনুভব করেছেন – তিনিই সহজ বা জীবনমুক্ত। মানবের এরূপ সহজতাসম্পন্ন সদ্গুরু লাভ হোলে সহজভাবেই শিষ্যের পুরুষার্থের প্রকাশ পায়৷ সদ্গুরু শিষ্যকে আত্মজ্ঞানের উপদেশ দান করেন তার চিত্তের সংশয় দূর করার নিমিত্তে। মানবের চিত্ত-সংশয় যখন ছিন্ন হয়, অন্তঃকরণের শঙ্কা দূরীভূত হয় – মানব তখনই বন্ধন ও মুক্তির ঊর্ধ্বে উঠে যায়।”
সুতরাং, হে পরমানন্দ ভক্তগণ – মাভৈঃ! ভগবান স্বামী পরমানন্দ এবার সদ্গুরুরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাই তাঁর শরণ নিলেই সমস্ত প্রকার অজ্ঞানতার বন্ধন কেটে যাবে এবং মানবের আত্মিক উত্তরণ ঘটবে। আর তখনই মানবজীবনের উদ্দেশ্য সফল হবে।।
….. তুমিই সেই অমৃত, পরমানন্দময় জীবন।
তুমি সেই মহাপ্রেমানন্দ স্বরূপ – সার্বজনীন ও সাম্যের
সংগীত দুই হস্ত তুলে গেয়ে চল।
তুমিই মহাকালের চেতনা।
প্রিয় জীবন, তুমি পরমেশ্বরের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ।
তুমিই সেই মহাজ্যোতি, পরমেশ্বরের প্রথম পরম প্রকাশ।
এই অন্ধকার সুপ্তির ভেতর–তুমিই একমাত্র জীবিত।
জড়ের আবিলতা হোতে তুমি জেগে ওঠো।
হে চৈতন্যময় – তুমি জেগে ওঠো।৷”
মানবের প্রতি গুরুমহারাজের ‘প্রেম যেন ঝরে ঝরে পড়ছে’ ! এই কবিতা পড়লে আমাদের এইরূপই অনুভূতি হয়। জীবনকে কি প্রাধান্যই না দিতেন গুরুমহারাজ ! প্রকৃত অর্থেই “জীবনের পূজারী” ছিলেন গুরুমহারাজ। অবশ্য এই কথা বারবার বলতে হয় যে, যেকোনো অবতারকল্প মহাপুরুষেরাই নিজে “জীবনের পূজারী” হয়েই মানুষকে জীবনের পূজারী হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। আমরা সাধারন মানুষেরা যেভাবে একটু একটু করে আমাদের এই সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করি, নষ্ট করি – তা দেখে তাঁদের দুঃখের অন্ত থাকে না। তাঁরা খুবই ব্যথিত হ’ন__ বলেই তো আমাদের প্রতি তাঁদের প্রেম এবং করুনা ঝরে ঝরে পড়ে। তাঁরা তাঁদের জীবনভর – সমগ্র জীবনপাত কোরে, সাধারন মানুষদের নিজেদের ভুলে_ নিজে নিজেই নষ্ট করতে থাকা জীবনগুলিকে আবার মূল ছন্দে-সুরে-সহজতায় নিয়ে এসে_ হৃতস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবার আপ্রান চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র যুগপুরুষ বা অবতারপুরুষগণই ন’ন, তাঁদের কাজের সহকারী অন্যান্য মহাত্মা, যোগী, সাধকগণও বারবার মানুষকে সতর্ক করেন, ঠিকমতো এবং সুশৃংখল জীবনযাপন করার কথা বলেন, আহারে-বিহারে সংযমী হোতে বলেন।
কিন্তু আমাদের অবস্থা কেমন জানেন – সেই ‘পানা পুকুরে ঢিল মারা’র মতো ! ঢিলটা ‘গবাং’ করে পড়লে পানাগুলি খানিকটা ফাঁক হোয়ে স্বচ্ছ জল একটুখানি দেখা যায় – কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই আবার পানাগুলি এসে সেই স্থান দখল করে নেয়। আমরাও মহাজনবাক্য অর্থাৎ মহাপুরুষদের উপদেশ শুনি, বুঝিও খানিকটা ! আমরা মনে মনে ভাবি যে – এইগুলি মেনে চললে আমাদেরই মঙ্গল হবে – কিন্তু মনে কথাগুলি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না । আবার আমরা আমাদের বহমান উৎশৃংখল জীবনে ফিরে যাই এবং কষ্ট পাই, দুঃখ পাই আর হাহাকার করি – “হে ঈশ্বর ! আমার এই কষ্ট মোচন করো।”__ কি মূর্খতা ! কি আহাম্মকি ! কিন্তু কি-ই বা করা যায়, এইটাই যেন জাগতিক নিয়মে পর্যবসিত হয়েছে ! আর এইজন্যেই বারবার মহাত্মা-মহাপুরুষদের পৃথিবীতে শরীর গ্রহণ করতে হোচ্ছে – আমাদেরকে এই অজ্ঞান অবস্থা থেকে তোলার জন্য, আলোর পথ দেখানোর জন্য।
গুরুমহারাজ বললেন – ” প্রিয় আত্মন – সংকীর্ণতা ত্যাগ করে মুক্ত হও। স্বার্থাভিসন্ধিতে নিজেকে বিস্মৃত হয়ো না। আপন বিবেককে আবিষ্কার করো – আপনাকে ভুলে থেকো না।” উনি আরো বলেছিলেন – ” যেহেতু সর্বভূতে সেই সচ্চিদানন্দ বিরাজমান, তাই সকলকেই ভালোবাসো, আর তাহলেই সমস্ত কুসংস্কার দূরীভূত হবে, মানুষ ধীরে ধীরে অসহজতা মুক্ত হয়ে ‘সহজ’ হবে।”
কিন্তু আমরা কি পারছি সংকীর্ণতা মুক্ত হোতে, কুসংস্কার মুক্ত হোতে, অসহজতা মুক্ত হোতে ? পারছি না – তার কারণ আমাদের প্রচেষ্টার অভাব। আমরা যে যেখানে রয়েছি, যে অবস্থায়, যে বয়সে, যে স্থানে রয়েছি – সেই অবস্থা থেকেই আমরা শুরুটা কোরে দিতে পারি। ‘আচ্ছা দেখছি’ – ‘পরে হবে’ – ‘এই ঝামেলাটা যাক্ তো’– এইসব অজুহাত দিয়ে দিয়ে ‘জীবন’ বিশৃংখলার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে – সুশৃংখল আর হয়ে উঠছে না ! অবতাররূপে ভগবান স্বয়ং, মহাপুরুষ-মহাত্মাগণ কতবার কেঁদে কেঁদে ফিরে গেলেন, মানুষকে ভালোবেসে রক্তাক্ত হোলেন,– কিন্তু আমাদের আর চৈতন্য হোলো না – এখনও হোচ্ছে না !
আবার আমাদের মাঝে এই যুগের যুগপুরুষ স্বামী পরমানন্দ এসেছিলেন – তিনিও তাঁর সমগ্র জীবন শুধুমাত্র জীবজগতের কল্যাণের জন্যই পাত করে গেলেন। ছোটবেলা থেকেই পথে-প্রান্তরে, গিরি-গুহায়, বনে-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতে, লোকালয়ের মাঝে, নগরে-শহরে, গ্রামে-গ্রামান্তরে উনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। জগতের যা কিছু ভালো তা নিজের মধ্যে আত্মস্থ করেছেন এবং জগতে যেখানে যা কিছু কালো__ সেখানে তাঁর প্রেমের, তাঁর করুণার আলোয় ভরে দিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে আমরা সাধারন ভক্তরা তো তাঁকে আঘাত-ই দিলাম, হাজারো কষ্ট দিলাম – তাঁর আরব্ধ কাজের একনিষ্ঠ সহকারী আর হয়ে উঠতে পারলাম কই ?
যাইহোক, আবার গুরুমহারাজের কথাতেই ফিরে আসি। গুরুমহারাজ আমাদের মতো সাধারণ মানবদেরকে উদ্দেশ্য করে বারবার যেটা বলেছিলেন, সেটা হোলো – ” সহজ হও ! বাদ-মুক্ত হও ! সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠো !” আর এই হয়ে ওঠার জন্য মানুষের জীবনে উপাসনার প্রয়োজন। কিন্তু উপাসনা করলে কি হয় ? গুরুমহারাজ বললেন – ” উপাসনার মধ্যে দিয়ে উপাস্যের ভাবগুলি উপাসকের মধ্যে আবির্ভূত হোতে থাকে।”
গুরু মহারাজের এই কথা থেকে— জগতে যতরকম উপাসনা রয়েছে, তার সারমর্ম আমরা বুঝতে পারি। উপাসনার মধ্যে দিয়ে উপাস্যের ভাবগুলি উপাসকের মধ্যে চলে আসে – এটাই উপাসনার রহস্য। তার মানে হোচ্ছে — আমরা যদি ঠিক ঠিক গুরুর উপাসনা করি, তাহলে গুরুদেবের ভাবগুলি আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হবে। এইভাবে আমরা রাম-কৃষ্ণ-রামকৃষ্ণ-আল্লাহ-গড-ঈশ্বর এইরূপ যেকোন উপাস্যের উপাসক-ই হই না কেন – যদি আমরা ঠিক ঠিক উপাসনা করতে পারি, তাহলে আমাদের নিজ নিজ উপাস্যের ভাবগুলি আমাদের মধ্যে প্রকাশিত হোতে থাকবে। দীর্ঘদিন উপাসনা করার পরও সেইটা যদি না হয় – তাহলে জানতে হবে আমার উপাসনা পদ্ধতিতে-ই ভুল রয়েছে। একেই ব্যাকরণগতভাবে বলা হয় ‘গোড়ায় গলদ’ বা ‘বিসমিল্লায় গলদ’!
গুরুমহারাজ নিজেই বলেছেন – ” সর্বত্র-ই তাঁর (সচ্চিদানন্দ) প্রকাশ, সর্বত্রই তিনি – এই অনুভূতিসম্পন্ন ‘সহজ’ মানব সংসারে বিরল। ….. এঁদের কদাচিৎ দর্শন লাভ হোলে জীবন ধন্য হয়ে যায়। সংসারে যিনি আসক্তি ও বিরতিশূন্য হয়ে সচ্চিদানন্দরূপ আপন স্বরূপকে জেনেছেন বা অনুভব করেছেন – তিনিই সহজ বা জীবনমুক্ত। মানবের এরূপ সহজতাসম্পন্ন সদ্গুরু লাভ হোলে সহজভাবেই শিষ্যের পুরুষার্থের প্রকাশ পায়৷ সদ্গুরু শিষ্যকে আত্মজ্ঞানের উপদেশ দান করেন তার চিত্তের সংশয় দূর করার নিমিত্তে। মানবের চিত্ত-সংশয় যখন ছিন্ন হয়, অন্তঃকরণের শঙ্কা দূরীভূত হয় – মানব তখনই বন্ধন ও মুক্তির ঊর্ধ্বে উঠে যায়।”
সুতরাং, হে পরমানন্দ ভক্তগণ – মাভৈঃ! ভগবান স্বামী পরমানন্দ এবার সদ্গুরুরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাই তাঁর শরণ নিলেই সমস্ত প্রকার অজ্ঞানতার বন্ধন কেটে যাবে এবং মানবের আত্মিক উত্তরণ ঘটবে। আর তখনই মানবজীবনের উদ্দেশ্য সফল হবে।।