শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে গুরুমহারাজ আমাদের মতো সাধারন মানুষদের উদ্দেশ্যে ‘নাম উপাসনা’ নিয়ে যেসব কথা বলেছিলেন, আমরা ছিলাম সেইসব কথায়। আমরা আগের আলোচনায় দেখেছিলাম – উনি আমাদেরকে বুঝিয়েছিলেন যে পরমেশ্বরের ‘নামে’-র ভিন্নতা থাকলেও পরমেশ্বর সেই একই ! কিন্তু এই কথাগুলি আমরা, সাধারণ মানুষেরা বুঝতে পারি না। আর বুঝতে না পারাটা আমাদেরই মূর্খতা বা আহাম্মকী ! তাই উনি আমাদেরকে বিধান দিলেন যে – নিজ নিজ ভাব-অনুযায়ী পরমেশ্বরের যে কোনো ‘নাম’-কে গ্রহণ করে, সেই নাম নিয়েই অকপটভাবে ভজনা করতে হবে – তাহলেই ধীরে ধীরে ধারণা হবে যে, পরমেশ্বর প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ) ন’ন।
প্রকৃতপক্ষে পরমেশ্বর হোলো একটি তত্ত্ব। আর সাধক আরো গভীরে প্রবেশ করলে ঐ তত্ত্বের বোধ হয় !
দু’রকমভাবে এই বোধ প্রাপ্ত হবার কথা বলেছিলেন গুরুমহারাজ ! উনি বলেছিলেন, হয় সাধনায় সিদ্ধ হোতে হবে অথবা ভজনার দ্বারা ভাজতে হবে। কি ভাজতে হবে? – কামনা বাসনাকে ভাজতে হবে। তাহলেই তত্ত্বের ধারণা হবে এবং ‘বোধে বোধ’ সম্ভব হবে।
যাইহোক, এবার আমরা আবার ফিরে যাই ঐ ব্যাপারে গুরুমহারাজ আরো কি বলেছিলেন__ সেইসব কথায়। উনি বলেছেন – “তিনি (পরমেশ্বর) পরমতত্ত্ব, অভেদ, অবিভক্ত – একরস তত্ত্ব। নাম পরিবর্তনে তত্ত্ববস্তুর পরিবর্তন হয় না। যিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন – সেই নিত্যতত্ত্ব, তাঁর কোনো বিশেষ নাম নাই। তুমি তোমার মনোমত যেকোনো নামে তাঁকে ডাকতে থাকো। নিষ্কপট হয়ে নিষ্ঠা ও ভালোবাসার অনুরাগে অনুরণিত হয়ে আকুলতার আবেগে তাঁর অভাব বোধ করতে থাকো।৷ তোমার ঐ অভাবজনিত বেদনা মূর্ত হয়ে উঠুক জীবনরূপ একতারার সুষুম্মারূপ তারটিতে। আর তাঁর অভাবে তোমার জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে উঠুক ! ঐ পিপাসাতেই তোমার একতারার তারে ঝংকার উঠবে, আর তোমার অন্তর্দেশে বোধির দ্বার খুলে যাবে, বিমল জ্যোতি উদ্ভাসিত হবে অন্তর্দেশ মুখে ! সমস্ত অন্ধকার চকিতে বিদূরিত হবে আর মূর্ত হয়ে উঠবে তোমার চিরবাঞ্ছিত, চির আকাঙ্খিত সেই তত্ত্ব। যাঁর আবির্ভাব তোমাকে পূর্ণতার বোধে উপনীত করাবে। তুমি আত্ম-উপলব্ধি-স্থিতি লাভ করবে।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! গুরুমহারাজের বলা পুরো stanza-টা একলপ্তে বলে নিতেই হোলো। তার কারণ – এই কথাগুলির মধ্যে break আনলে একেবারেই রসভঙ্গ হয়ে যেতো। তা করলে_ গুরুমহারাজের ন্যায় অধ্যাত্মবিজ্ঞানীর বোধসঞ্জাত কথাগুলির প্রতি একেবারেই অমর্যাদা বা অসম্মান করা হোতো – তাই করা হয়নি। কিন্তু গুরু মহারাজের শেষের কথাগুলি কেমন যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতার লাইন বলে মনে হচ্ছিলো না ? দেখুন না__ কেমন করে গুরুমহারাজ কথাটা বললেন – ” …… ভালোবাসার অনুরাগে অনুরণিত হয়ে আকুলতার আবেগে তাঁর অভাববোধ করতে থাকো। তোমার ঐ অভাবজনিত বেদনা মূর্ত হয়ে উঠুক জীবনরূপ একতারার সুষুম্নারূপ তারটিতে।” আহা ! কি সুন্দর হৃদয় নিঙরানো কথা ! শুধুমাত্র এই কথাগুলি follow করতে পারলেই আমাদের ন্যায় সাধারণ মানুষের জীবনও মহাজীবনে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে !!
এছাড়াও_ সাধকের সাধনায় আকুলতা বোঝাতে, গুরুমহারাজ যে কথাটা বললেন, সেটা হোলো – ” তাঁর অভাবে তোমার জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে উঠুক !” এই কথাগুলি বোঝাতেই বোধয় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ উদাহরণস্বরূপ বলেছিলেন – “একটা মানুষকে জলে ডুবিয়ে ধরলে, যেমন শ্বাস নেবার জন্য তার প্রাণটা আটুবাটু করতে থাকে, ঠিক তেমন ব্যাকুলতা প্রয়োজন !”
যাই হোক, এরপর গুরুমহারাজ মূল জায়গাটির কথা বললেন – ” ঐ পিপাসাতেই (আকুলতায়) তোমার একতারার তারে (ইড়া-পিঙ্গলা-সুষুম্না – এই তিন নাড়ীর রূপক হোলো একতারা) ঝংকার উঠবে, আর তোমার অন্তর্দেশে বোধির দ্বার খুলে যাবে, বিমল জ্যোতি উদ্ভাসিত হবে (ঐ) অন্তর্দেশের মুখে !” সাধকের অন্তর্দেশে বোধির দ্বার খুলে যাওয়া মানেই হোলো জ্ঞানরাশির বিমল জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হওয়া !
এরপর আর কথা থাকে না, তবুও গুরুমহারাজ বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – তুমি পূর্ব হোতেই পূর্ণ– এটা তোমার বোধ ছিল না, বোধ উদয়ে তুমি তা প্রত্যক্ষ করলে মাত্র। তোমার ভিতরে বাইরে – সর্বত্র, সর্বভূতে, সর্বনামে তাঁরই প্রকাশ ! আবার সমস্তের মধ্যে তিনি বিরাজমান, একমাত্র তিনি। শুধু তিনি ! শুধু তিনি ! ‘তিনি’ বা ‘সেই’ তত্ত্ব ছাড়া আর কিছুই নাই। ‘তিনি’ ছাড়া আর যা আছে, তা একমাত্র অজ্ঞানতা। এই ভ্রম বা অজ্ঞানতার কারণবশতঃ তুমি ভেদবুদ্ধি নিয়ে বিবাদ করছিলে, অস্থির হয়ে শোক করছিলে। এখন ভ্রান্তি বা অজ্ঞানতা মুক্ত হয়ে সমরস পরমতত্ত্ব বোধের উদয় হয়েছে। তুমি সহজ হয়েছো, তুমি স্ব-স্বরূপে পরমানন্দে বা সহজানন্দের অনাবিল উল্লাসে মগ্ন বা সমাহিত। তুমি তত্ত্বস্বরূপ, সাক্ষীস্বরূপ দ্রষ্টামাত্র। তত্ত্বমসি।”
[ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।]
প্রকৃতপক্ষে পরমেশ্বর হোলো একটি তত্ত্ব। আর সাধক আরো গভীরে প্রবেশ করলে ঐ তত্ত্বের বোধ হয় !
দু’রকমভাবে এই বোধ প্রাপ্ত হবার কথা বলেছিলেন গুরুমহারাজ ! উনি বলেছিলেন, হয় সাধনায় সিদ্ধ হোতে হবে অথবা ভজনার দ্বারা ভাজতে হবে। কি ভাজতে হবে? – কামনা বাসনাকে ভাজতে হবে। তাহলেই তত্ত্বের ধারণা হবে এবং ‘বোধে বোধ’ সম্ভব হবে।
যাইহোক, এবার আমরা আবার ফিরে যাই ঐ ব্যাপারে গুরুমহারাজ আরো কি বলেছিলেন__ সেইসব কথায়। উনি বলেছেন – “তিনি (পরমেশ্বর) পরমতত্ত্ব, অভেদ, অবিভক্ত – একরস তত্ত্ব। নাম পরিবর্তনে তত্ত্ববস্তুর পরিবর্তন হয় না। যিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন – সেই নিত্যতত্ত্ব, তাঁর কোনো বিশেষ নাম নাই। তুমি তোমার মনোমত যেকোনো নামে তাঁকে ডাকতে থাকো। নিষ্কপট হয়ে নিষ্ঠা ও ভালোবাসার অনুরাগে অনুরণিত হয়ে আকুলতার আবেগে তাঁর অভাব বোধ করতে থাকো।৷ তোমার ঐ অভাবজনিত বেদনা মূর্ত হয়ে উঠুক জীবনরূপ একতারার সুষুম্মারূপ তারটিতে। আর তাঁর অভাবে তোমার জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে উঠুক ! ঐ পিপাসাতেই তোমার একতারার তারে ঝংকার উঠবে, আর তোমার অন্তর্দেশে বোধির দ্বার খুলে যাবে, বিমল জ্যোতি উদ্ভাসিত হবে অন্তর্দেশ মুখে ! সমস্ত অন্ধকার চকিতে বিদূরিত হবে আর মূর্ত হয়ে উঠবে তোমার চিরবাঞ্ছিত, চির আকাঙ্খিত সেই তত্ত্ব। যাঁর আবির্ভাব তোমাকে পূর্ণতার বোধে উপনীত করাবে। তুমি আত্ম-উপলব্ধি-স্থিতি লাভ করবে।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! গুরুমহারাজের বলা পুরো stanza-টা একলপ্তে বলে নিতেই হোলো। তার কারণ – এই কথাগুলির মধ্যে break আনলে একেবারেই রসভঙ্গ হয়ে যেতো। তা করলে_ গুরুমহারাজের ন্যায় অধ্যাত্মবিজ্ঞানীর বোধসঞ্জাত কথাগুলির প্রতি একেবারেই অমর্যাদা বা অসম্মান করা হোতো – তাই করা হয়নি। কিন্তু গুরু মহারাজের শেষের কথাগুলি কেমন যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতার লাইন বলে মনে হচ্ছিলো না ? দেখুন না__ কেমন করে গুরুমহারাজ কথাটা বললেন – ” …… ভালোবাসার অনুরাগে অনুরণিত হয়ে আকুলতার আবেগে তাঁর অভাববোধ করতে থাকো। তোমার ঐ অভাবজনিত বেদনা মূর্ত হয়ে উঠুক জীবনরূপ একতারার সুষুম্নারূপ তারটিতে।” আহা ! কি সুন্দর হৃদয় নিঙরানো কথা ! শুধুমাত্র এই কথাগুলি follow করতে পারলেই আমাদের ন্যায় সাধারণ মানুষের জীবনও মহাজীবনে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে !!
এছাড়াও_ সাধকের সাধনায় আকুলতা বোঝাতে, গুরুমহারাজ যে কথাটা বললেন, সেটা হোলো – ” তাঁর অভাবে তোমার জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে উঠুক !” এই কথাগুলি বোঝাতেই বোধয় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ উদাহরণস্বরূপ বলেছিলেন – “একটা মানুষকে জলে ডুবিয়ে ধরলে, যেমন শ্বাস নেবার জন্য তার প্রাণটা আটুবাটু করতে থাকে, ঠিক তেমন ব্যাকুলতা প্রয়োজন !”
যাই হোক, এরপর গুরুমহারাজ মূল জায়গাটির কথা বললেন – ” ঐ পিপাসাতেই (আকুলতায়) তোমার একতারার তারে (ইড়া-পিঙ্গলা-সুষুম্না – এই তিন নাড়ীর রূপক হোলো একতারা) ঝংকার উঠবে, আর তোমার অন্তর্দেশে বোধির দ্বার খুলে যাবে, বিমল জ্যোতি উদ্ভাসিত হবে (ঐ) অন্তর্দেশের মুখে !” সাধকের অন্তর্দেশে বোধির দ্বার খুলে যাওয়া মানেই হোলো জ্ঞানরাশির বিমল জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হওয়া !
এরপর আর কথা থাকে না, তবুও গুরুমহারাজ বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – তুমি পূর্ব হোতেই পূর্ণ– এটা তোমার বোধ ছিল না, বোধ উদয়ে তুমি তা প্রত্যক্ষ করলে মাত্র। তোমার ভিতরে বাইরে – সর্বত্র, সর্বভূতে, সর্বনামে তাঁরই প্রকাশ ! আবার সমস্তের মধ্যে তিনি বিরাজমান, একমাত্র তিনি। শুধু তিনি ! শুধু তিনি ! ‘তিনি’ বা ‘সেই’ তত্ত্ব ছাড়া আর কিছুই নাই। ‘তিনি’ ছাড়া আর যা আছে, তা একমাত্র অজ্ঞানতা। এই ভ্রম বা অজ্ঞানতার কারণবশতঃ তুমি ভেদবুদ্ধি নিয়ে বিবাদ করছিলে, অস্থির হয়ে শোক করছিলে। এখন ভ্রান্তি বা অজ্ঞানতা মুক্ত হয়ে সমরস পরমতত্ত্ব বোধের উদয় হয়েছে। তুমি সহজ হয়েছো, তুমি স্ব-স্বরূপে পরমানন্দে বা সহজানন্দের অনাবিল উল্লাসে মগ্ন বা সমাহিত। তুমি তত্ত্বস্বরূপ, সাক্ষীস্বরূপ দ্রষ্টামাত্র। তত্ত্বমসি।”
[ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।]