শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (কথিত এবং লিখিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। ‘পুরোনো সেই বনগ্রামের কথা’– লিখতে লিখতে একটা বড় এবং সুদৃশ ডায়েরী আজ শেষ হোলো। শ্রীরামপুরের গৌতম ভড় (বাস্তুকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের employee, বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনের প্রায় সব শাখাতেই নতুন construction হোলে যার ডাক পড়ে।) খুব বড় এবং সুন্দর ডায়েরী পেলে আমার জন্য রেখে দেয়। ও বলে যে, ‘এমন সুন্দর ডায়েরী আজেবাজে কাজে ব্যবহার না হোয়ে তাতে শ্রী শ্রী গুরুমহারাজের কথা লিপিবদ্ধ হোক – তাই তোমার জন্য রেখে দিই !’ অবশ্য “পুরোনো সেই বনগ্রামের কথা”-র অন্যতম রূপকার ধাত্রীগ্রামের আনন্দ-ও ভালো ডায়েরী পেলে__ আমার জন্য তুলে রাখে!
যাইহোক, আজ এইরকম একটা নতুন ডায়েরীতে সেই পরমপুরুষ, পরমপ্রেমময় গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথাই লেখা শুরু হোলো।
গুরুমহারাজের “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থ থেকে তাঁর কথা তুলে তুলে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। বেশ কয়েকদিন ধরেই ওনার কথা পরিবেশিত হোচ্ছে, ফলে পাঠককুল বুঝতেই পারছেন__ আমরা এখন প্রায় শেষের দিকে পৌঁছে গেছি। আর এইজন্য গুরুমহারাজও তাঁর আলোচনাকে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিকতার গভীরে নিয়ে যাচ্ছেন, অভিসারী রশ্মিগুচ্ছের ন্যায় concentrated করছেন। তাই উনি এবার বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – উপনিষদ প্রতিপাদ্য ঐ আত্মতত্ত্ব বা ব্রহ্মতত্ত্ব যোগলব্ধ বা সমাধিলব্ধ অর্থাৎ একমাত্র সমাধির দ্বারা তা বোধিতব্য। পার্থিব মন, বুদ্ধি, অহংকারের অতীত, অচিন্ত্য, অমৃতময় এই আত্মতত্ত্ব। এই তত্ত্ব আকাশকুসুম প্রসূত সৃষ্ট গল্প নয় বা কল্পনাসৃষ্ট পৌরাণিক কাহিনীও নয়। আবার ঝাড়ফুঁক, তুকতাক, জাদুমন্ত্রও নয়৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! এইসব কথা বলে গুরুমহারাজ বোঝাতে চাইলেন যে, আত্মতত্ত্ব-ই ব্রহ্মতত্ত্ব এবং এই তত্ত্ব লেখায়-পড়ায়-শ্রবণে বা অন্য কোনো বহিরঙ্গতায় পাওয়া যায় না – এই তত্ত্ব বোধিতব্য হয় একমাত্র যোগসাধনার গভীরে, নির্বিকল্প সমাধিতে।
সুতরাং, ‘ধর্ম’ নিয়ে রাতদিন এখানে ওখানে যে সমস্ত বক্তৃতা হয়, সভা-সমিতি-সেমিনার হয় – সেগুলি সবই বকওয়াশ্ ! হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে, আজেবাজে আলোচনা করার চাইতে অধ্যাত্ম-আলোচনা নিশ্চয়ই ভালো, কিন্তু সেটা___ ‘আমার ধর্মমতটা কতো ভালো, তোমারটা কতো খারাপ’– এই তুলনামূলক আলোচনা নয় । ‘আমার ধর্মমত না মানলে তোমার উপর জোর-জবরদস্তি করা হবে বা তোমাকে মেরে ফেলা হবে’– এটাও নয় ! অধ্যাত্মবিদ্যা অর্থাৎ ‘অধীত – আত্মবিদ্যা’ ! সুতরাং সকল ধর্মালোচনা হওয়া উচিৎ – আত্মবিদ্যা বা আত্মতত্ত্বের আলোচনা। কি করলে সকল মানুষ আত্মবোধে উপনীত হোতে পারে – শুধুমাত্র সেইসব আলোচনাই ধর্মালোচনা পদবাচ্য – এছাড়া যত রকমের ধর্মসভা, ধর্মালোচনা – সেগুলি সাময়িক বিনোদন দেয়, কিছুটা আত্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে – কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপথগামী করে । আত্মবোধের শিক্ষা থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যায় – মানুষে মানুষে বিভেদের বিষ ছড়িয়ে মানবজাতির চরম সর্বনাশ ডেকে আনে !
এইজন্যেই গুরুমহারাজ একেবারে উল্লেখ করে করে পরমেশ্বর তত্ত্ব বা আত্মতত্ত্ব অথবা ব্রহ্মতত্ত্ব ঝাড়ফুঁক, তুকতাক, পৌরাণিক কল্পকাহিনী, যাদুমন্ত্র বা বিভিন্ন অভিচারাদি ক্রিয়ার দ্বারা বোধগম্য নয়। একমাত্র এই তত্ত্ব নির্বিকল্প সমাধিতেই ‘বোধে বোধ’ হয়।
গুরুমহারাজ এরপরে আরও clear করে বলেছেন – ” এটা হোলো চিন্তার(মানবের) পরিণতি– সম্পূর্ণ তত্ত্ব বা আত্মতত্ত্ব।” তার মানে হোচ্ছে অধ্যাত্মতত্ত্ব নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো ধর্মমতের মানুষ যত চিন্তা-ভাবনা করেন, তার পরিণতি এই সম্পূর্ণতত্ত্বের বোধ।
এরপর গুরুমহারাজ ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন দেশের উপাসনা প্রসঙ্গে বললেন – ” বর্তমানে ভারতে এবং বর্হিভারতে মানব-সাধারণ বহু বিশিষ্ট দেব-দেবীর উপাসনা করে থাকেন, কিন্তু বহু ঈশ্বর কখনই নয়। প্রাশ্চাত্যের কেউ কেউ ভেবে থাকেন – ভারতবর্ষের হিন্দুরা বহু ঈশ্বরবাদী এবং অসংখ্য ঈশ্বরের অস্তিত্বকে মেনে উপাসনা বা অর্চনা করে। কিন্তু এরূপ উক্তি তাদের ভ্রান্তির-ই পরিচয় দেয় অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা এরূপ বলে থাকেন।” এই কথাগুলির উল্লেখ করে গুরুমহারাজ ভারতীয় এবং ভারতবর্ষের বাইরের মানুষদের উদ্দেশ্য করে এই বার্তা দিয়েছেন যে,– ভারতীয় হিন্দুগণ বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে থাকে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ভিন্ন নাম – ভিন্ন মূর্তির মাধ্যমে সেই পরমেশ্বরেরই আরাধনা বা উপাসনা করে থাকে।
এরপরে গুরুমহারাজ আরো পরিষ্কার করে বললেন – ” আসলে যে কোনো নাম এবং রূপ দ্বারা তাঁকে উপাসনা বা অর্চনা করা হোক না কেন, স্বরূপতঃ সেই একই পরমেশ্বরকে উপাসনা করা হবে। এই পরমেশ্বর হোলেন সগুণ ব্রহ্ম – ইনিই উপাস্য। যে কোনো সম্প্রদায়, যে কোনো আচার ও অনুষ্ঠান সহকারে ও বিভিন্ন উপাচারে এই সগুণ ব্রহ্মরূপ পরমেশ্বরের উপাসনা করতে পারে। সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশ, কাল ও পাত্র বিশেষে যে কোনো ভেদ বা বিরোধ নাই। সুতরাং সমস্ত সংসারে যত প্রকারের উপাসনা বিরাজমান, তা সবই নাম-রূপাত্মক, শুধু পার্থক্য আচার-অনুষ্ঠানগত।”
যাইহোক, আজ এইরকম একটা নতুন ডায়েরীতে সেই পরমপুরুষ, পরমপ্রেমময় গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথাই লেখা শুরু হোলো।
গুরুমহারাজের “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থ থেকে তাঁর কথা তুলে তুলে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। বেশ কয়েকদিন ধরেই ওনার কথা পরিবেশিত হোচ্ছে, ফলে পাঠককুল বুঝতেই পারছেন__ আমরা এখন প্রায় শেষের দিকে পৌঁছে গেছি। আর এইজন্য গুরুমহারাজও তাঁর আলোচনাকে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিকতার গভীরে নিয়ে যাচ্ছেন, অভিসারী রশ্মিগুচ্ছের ন্যায় concentrated করছেন। তাই উনি এবার বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – উপনিষদ প্রতিপাদ্য ঐ আত্মতত্ত্ব বা ব্রহ্মতত্ত্ব যোগলব্ধ বা সমাধিলব্ধ অর্থাৎ একমাত্র সমাধির দ্বারা তা বোধিতব্য। পার্থিব মন, বুদ্ধি, অহংকারের অতীত, অচিন্ত্য, অমৃতময় এই আত্মতত্ত্ব। এই তত্ত্ব আকাশকুসুম প্রসূত সৃষ্ট গল্প নয় বা কল্পনাসৃষ্ট পৌরাণিক কাহিনীও নয়। আবার ঝাড়ফুঁক, তুকতাক, জাদুমন্ত্রও নয়৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! এইসব কথা বলে গুরুমহারাজ বোঝাতে চাইলেন যে, আত্মতত্ত্ব-ই ব্রহ্মতত্ত্ব এবং এই তত্ত্ব লেখায়-পড়ায়-শ্রবণে বা অন্য কোনো বহিরঙ্গতায় পাওয়া যায় না – এই তত্ত্ব বোধিতব্য হয় একমাত্র যোগসাধনার গভীরে, নির্বিকল্প সমাধিতে।
সুতরাং, ‘ধর্ম’ নিয়ে রাতদিন এখানে ওখানে যে সমস্ত বক্তৃতা হয়, সভা-সমিতি-সেমিনার হয় – সেগুলি সবই বকওয়াশ্ ! হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে, আজেবাজে আলোচনা করার চাইতে অধ্যাত্ম-আলোচনা নিশ্চয়ই ভালো, কিন্তু সেটা___ ‘আমার ধর্মমতটা কতো ভালো, তোমারটা কতো খারাপ’– এই তুলনামূলক আলোচনা নয় । ‘আমার ধর্মমত না মানলে তোমার উপর জোর-জবরদস্তি করা হবে বা তোমাকে মেরে ফেলা হবে’– এটাও নয় ! অধ্যাত্মবিদ্যা অর্থাৎ ‘অধীত – আত্মবিদ্যা’ ! সুতরাং সকল ধর্মালোচনা হওয়া উচিৎ – আত্মবিদ্যা বা আত্মতত্ত্বের আলোচনা। কি করলে সকল মানুষ আত্মবোধে উপনীত হোতে পারে – শুধুমাত্র সেইসব আলোচনাই ধর্মালোচনা পদবাচ্য – এছাড়া যত রকমের ধর্মসভা, ধর্মালোচনা – সেগুলি সাময়িক বিনোদন দেয়, কিছুটা আত্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে – কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপথগামী করে । আত্মবোধের শিক্ষা থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যায় – মানুষে মানুষে বিভেদের বিষ ছড়িয়ে মানবজাতির চরম সর্বনাশ ডেকে আনে !
এইজন্যেই গুরুমহারাজ একেবারে উল্লেখ করে করে পরমেশ্বর তত্ত্ব বা আত্মতত্ত্ব অথবা ব্রহ্মতত্ত্ব ঝাড়ফুঁক, তুকতাক, পৌরাণিক কল্পকাহিনী, যাদুমন্ত্র বা বিভিন্ন অভিচারাদি ক্রিয়ার দ্বারা বোধগম্য নয়। একমাত্র এই তত্ত্ব নির্বিকল্প সমাধিতেই ‘বোধে বোধ’ হয়।
গুরুমহারাজ এরপরে আরও clear করে বলেছেন – ” এটা হোলো চিন্তার(মানবের) পরিণতি– সম্পূর্ণ তত্ত্ব বা আত্মতত্ত্ব।” তার মানে হোচ্ছে অধ্যাত্মতত্ত্ব নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো ধর্মমতের মানুষ যত চিন্তা-ভাবনা করেন, তার পরিণতি এই সম্পূর্ণতত্ত্বের বোধ।
এরপর গুরুমহারাজ ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন দেশের উপাসনা প্রসঙ্গে বললেন – ” বর্তমানে ভারতে এবং বর্হিভারতে মানব-সাধারণ বহু বিশিষ্ট দেব-দেবীর উপাসনা করে থাকেন, কিন্তু বহু ঈশ্বর কখনই নয়। প্রাশ্চাত্যের কেউ কেউ ভেবে থাকেন – ভারতবর্ষের হিন্দুরা বহু ঈশ্বরবাদী এবং অসংখ্য ঈশ্বরের অস্তিত্বকে মেনে উপাসনা বা অর্চনা করে। কিন্তু এরূপ উক্তি তাদের ভ্রান্তির-ই পরিচয় দেয় অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা এরূপ বলে থাকেন।” এই কথাগুলির উল্লেখ করে গুরুমহারাজ ভারতীয় এবং ভারতবর্ষের বাইরের মানুষদের উদ্দেশ্য করে এই বার্তা দিয়েছেন যে,– ভারতীয় হিন্দুগণ বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে থাকে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ভিন্ন নাম – ভিন্ন মূর্তির মাধ্যমে সেই পরমেশ্বরেরই আরাধনা বা উপাসনা করে থাকে।
এরপরে গুরুমহারাজ আরো পরিষ্কার করে বললেন – ” আসলে যে কোনো নাম এবং রূপ দ্বারা তাঁকে উপাসনা বা অর্চনা করা হোক না কেন, স্বরূপতঃ সেই একই পরমেশ্বরকে উপাসনা করা হবে। এই পরমেশ্বর হোলেন সগুণ ব্রহ্ম – ইনিই উপাস্য। যে কোনো সম্প্রদায়, যে কোনো আচার ও অনুষ্ঠান সহকারে ও বিভিন্ন উপাচারে এই সগুণ ব্রহ্মরূপ পরমেশ্বরের উপাসনা করতে পারে। সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশ, কাল ও পাত্র বিশেষে যে কোনো ভেদ বা বিরোধ নাই। সুতরাং সমস্ত সংসারে যত প্রকারের উপাসনা বিরাজমান, তা সবই নাম-রূপাত্মক, শুধু পার্থক্য আচার-অনুষ্ঠানগত।”