গুরু মহারাজের (স্বামী পরমানন্দ) কথা গৌতমের মুখে যা শুনেছিলাম সেই কথা বলা হচ্ছিল! গৌতম তখন বয়সে খুবই ছোট হওয়ায় ওর পক্ষে তখন ‘গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দে’-র ব্যাপারে কিছু জানা প্রায় অসম্ভব ছিল । ওর মনে ছিল ওর ‘দাদা’-কে, স্বামী পরমানন্দকে নয় ! তবে ও বলত , ” ‘দাদা’ যখন যখন বাড়ীতে আসতো , তখন দেখতাম মা বা বাবা ওকে একটু বিশেষ সমীহ কোরতো !” গৌতম আরও যেকথা বলেছিল সেটা শুনলে পাঠককুল হয়তো একটু অবাকই হবেন ! গৌতম বলেছিল – ” ‘দাদা’ কিন্তু বৌদিদের সাথে বেশ রঙ্গ-রসিকতা কোরতো ! হাসাহাসি , রঙ্গ-রসিকতা সময় সময় এতটাই বাড়াবাড়ি হোত যে মা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বৌমাদের শাসন করতে বাধ্য হতেন !”
গৌতম একদিন বলেছিল – ” একদিন সকালের দিকে ‘দাদা’ সবে বাড়ী ঢুকেছে , এমন সময় মা (জননী নিভারানী) বলল ‘ জানিস্ তো রবি ! ওই যে কুকুরটা দেখছিস্ (একটা কুকুর বাড়ীর ভেতরে কুকুর-কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়েছিল) ওটা আমাকে ক’দিন ধরেই খুব বিরক্ত করছে !” গৌতম তখন ছোট হলেও ওর ঘটনাটা বেশ মনে ছিল , ও বলল – ” মায়ের মুখ থেকে এই কথা শোনা মাত্রই ‘দাদা’ কি করল জানো – খপ্ করে কুকুরটার লেজটা ধরে শূন্যে তুলে ধরে পাঁই পাঁই করে দুপাক ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিল একেবারে পাশের পুকুরের জলে ! ব্যস্ ! ওই কুকুরটি কোনদিনই আমাদের বাড়ীর ভিতরে আর ঢোকেনি !” আসলে কি হয়েছিল , কুকুরটি এমন এমন জায়গায় শুয়ে থাকত যে , অন্ধকারে(তখন তো গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসে নি _লন্ঠন বা ছোট কূপি জ্বেলে এঘর-ওঘর কোরতে হোত!) _ওর গায়ে পা লেগে মা দুদিন মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন ৷ এইটা শুনেই মাতৃভক্ত রবি (গুরু মহারাজ)-র তাৎক্ষণিক Proper action ! ‘মা-কে কষ্ট দিয়েছে’– একথা শুনে কি রবি-র মতো কোন সুসন্তান কখনও ঠিক থাকতে পারেন ! তিনি যে – ‘যেখানে যেমন সেখানে তেমন , যখন যেমন তখন তেমন , যার যেমন তার তেমন’ ! সন্তান হয়েছেন তো ঠিক ঠিক সন্তান ! বন্ধু তো প্রকৃত বন্ধু ! যখন পিতা ঠিক ঠিক পিতা ! যখন গুরু তখন তিনিই প্রকৃতপক্ষে সদ্-গুরু ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – ” ঈশ্বরের অবতার-ই সদ্-গুরু হিসাবে অবতীর্ণ হন ।”
যাইহোক , গুরু মহারাজ সম্বন্ধে ওনার ছোট ভাই গৌতম ছোটবেলায় যা দেখেছিল সেগুলির কথা হচ্ছিল । গৌতম বলেছিল সেইদিনগুলির কথা , যখন গুরু মহারাজ finally বাড়ী ছেড়ে , চাকরী (Rural Electrification) ছেড়ে সন্ন্যাসের পথে পা বাড়াবেন ! গৌতম বলেছিল – ” ‘দাদা’ (গুরু মহারাজ) ওইসময় ২/৩ দিন বাড়ীতে ছিল ! একটানা ২/৩ দিন বাড়ীতে থাকতে দাদাকে খুব কমই দেখেছি । কিন্তু আমাদের ওই সময় খুবই আনন্দ হয়েছিল কারণ ওই ক’দিন ‘দাদা’ (গুরু মহারাজ) নিজে বাজার যেতো এবং বাজার থেকে নানান জিনিস কিনে আনতো । ফলে ঐ কদিন বাড়ীতে তোড়জোড়ের খাওয়াদাওয়া ! ওই সময়ে ‘দাদা’ একদিন মা-কে বলল – ‘চল মা – তোমাকে নিয়ে স্টুডিও-য় যাবো । তোমার সাথে ফটো তুলব !’ এই বলে ‘দাদা’ সেদিন মা-কে নিয়ে গিয়ে তিনটে ফটো তুলেছিল (সম্ভবত আমরা ঐ সময়কার দুটো ফটো পাই , আর একটা হয়তো শুধু মা-এর ছবি ছিল)।”
তাছাড়া গৌতম সেইসময়ের আর একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেছিল ! সেটা হচ্ছে – ” একদিন বিকালে সবার খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাবার পর ‘রবিদাদা’ বৌদিদেরকে ডাকল এবং তাদের কাছে থাকা ছবির এ্যালবাম্-গুলো আনতে বলল ! সেখানে বিভিন্ন সময়ে তোলা পারিবারিক ছবির মধ্যে যেটি যেটিতে গুরু মহারাজের ছবি ছিল সেগুলি খুলে খুলে এক জায়গা করতে লাগল ৷ এমনকি ছবির Negative গুলোও খুঁজে খুঁজে বের করল। এইভাবে সব বৌদিদের কাছ থেকে অ্যালবাম নিয়ে সমস্ত ছবি (যেগুলিতে গুরুমহারাজ ছিলেন, হয়তো বিভিন্ন pose এর ছবি ছিল, ফ্যামিলি ফোটো যেমন হয় আর কি!! হয়তো কোন বৌদির কাঁধে হাত _এরকম হোতেই পারে! কারন ভগবান যার সাথে যে লীলাই করেছেন _তা তো নিখুঁত ছিল!) এবং সেগুলোর নেগেটিভ বের করে __সেগুলিকে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে পুকুরের জলে ফেলে দিয়েছিল। এটা কেন করা হোল তার উত্তরে উনি বলেছিলেন _”যে পরিচয়ে এতদিন তোমরা আমাকে জানতে _এখন থেকে সেই পরিচয় শেষ! এখন থেকে আমার নতুন পরিচয়! তোমাদের সাথেও এখন থেকে আমার নতুন সম্পর্ক!”
এসব কথার মর্মার্থ তখন গৌতম অতটা বোঝেনি কিন্তু মায়ের হাবভাব, আচার-আচরণ দেখে ও এটা বুঝেছিল যে কিছু একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে !
গৌতম বলেছিল যে, ঐ কদিন রবিদাদা সবসময় মায়ের কাছাকাছি থাকতো, নানান মজার মজার কথা বলে মা-কে হাসি-খুশিতে রাখার চেষ্টা করতো! কিন্তু গৌতম দেখেছিল যে গভীর রাতে মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো!
বহু আগে থেকেই গুরুমহারাজ মা-কে বলে রেখেছিলেন _”তাঁর জগতে আগমন মানুষের জন্য, গৃহকোনে আবদ্ধ থাকার জন্য নয়!” তাছাড়া ‘মা’ নিজেও এটা জানতেন যে_” ‘রবি’ (গুরুমহারাজ) শুধু আমার নয়, রবি সবার! সুর্য(রবি) যেমন সব জায়গায় সমানভাবে আলো দেয় _রবি ও তেমনি ভালো-মন্দ, ভক্ত-অভক্ত, সাধু-অসাধু সবার!”
তবুও তো মায়ের মন ! মা সবই জানতেন_সবই বুঝতেন, কিন্তু সন্তানকে ছাড়তে আর কোন মা চায়!!
গুরুমহারাজের মা, জননী নিভারানী নিশ্চিত জানতেন যে তাঁর ছেলে রবি, তাঁকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না! সদা-সর্বদা তাঁর কাছে কাছেই থাকবেন! স্থুলে কাছাকাছি না থাকলেও সুক্ষে বা অন্য কোনভাবে থাকবেনই! তাই ছেলেকে জগতের কাজে ছেড়ে দেবার আগে মা একটাই মাত্র দাবী রেখেছিলেন তাঁর আদরের পুত্র ভগবান পরমানন্দের কাছে_’মৃত্যুর সময় যেন উনি তাঁর পাশে থাকেন!’
তাই হয়েছিল! শরীর ছাড়ার সময় বনগ্রাম আশ্রমে গুরুমহারাজের কোলে মাথা রেখেই শরীর ছেড়েছিলেন মহিমময়ী মাতা “জননী নিভারানী” ।(ক্রমশঃ)
গৌতম একদিন বলেছিল – ” একদিন সকালের দিকে ‘দাদা’ সবে বাড়ী ঢুকেছে , এমন সময় মা (জননী নিভারানী) বলল ‘ জানিস্ তো রবি ! ওই যে কুকুরটা দেখছিস্ (একটা কুকুর বাড়ীর ভেতরে কুকুর-কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়েছিল) ওটা আমাকে ক’দিন ধরেই খুব বিরক্ত করছে !” গৌতম তখন ছোট হলেও ওর ঘটনাটা বেশ মনে ছিল , ও বলল – ” মায়ের মুখ থেকে এই কথা শোনা মাত্রই ‘দাদা’ কি করল জানো – খপ্ করে কুকুরটার লেজটা ধরে শূন্যে তুলে ধরে পাঁই পাঁই করে দুপাক ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিল একেবারে পাশের পুকুরের জলে ! ব্যস্ ! ওই কুকুরটি কোনদিনই আমাদের বাড়ীর ভিতরে আর ঢোকেনি !” আসলে কি হয়েছিল , কুকুরটি এমন এমন জায়গায় শুয়ে থাকত যে , অন্ধকারে(তখন তো গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসে নি _লন্ঠন বা ছোট কূপি জ্বেলে এঘর-ওঘর কোরতে হোত!) _ওর গায়ে পা লেগে মা দুদিন মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন ৷ এইটা শুনেই মাতৃভক্ত রবি (গুরু মহারাজ)-র তাৎক্ষণিক Proper action ! ‘মা-কে কষ্ট দিয়েছে’– একথা শুনে কি রবি-র মতো কোন সুসন্তান কখনও ঠিক থাকতে পারেন ! তিনি যে – ‘যেখানে যেমন সেখানে তেমন , যখন যেমন তখন তেমন , যার যেমন তার তেমন’ ! সন্তান হয়েছেন তো ঠিক ঠিক সন্তান ! বন্ধু তো প্রকৃত বন্ধু ! যখন পিতা ঠিক ঠিক পিতা ! যখন গুরু তখন তিনিই প্রকৃতপক্ষে সদ্-গুরু ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – ” ঈশ্বরের অবতার-ই সদ্-গুরু হিসাবে অবতীর্ণ হন ।”
যাইহোক , গুরু মহারাজ সম্বন্ধে ওনার ছোট ভাই গৌতম ছোটবেলায় যা দেখেছিল সেগুলির কথা হচ্ছিল । গৌতম বলেছিল সেইদিনগুলির কথা , যখন গুরু মহারাজ finally বাড়ী ছেড়ে , চাকরী (Rural Electrification) ছেড়ে সন্ন্যাসের পথে পা বাড়াবেন ! গৌতম বলেছিল – ” ‘দাদা’ (গুরু মহারাজ) ওইসময় ২/৩ দিন বাড়ীতে ছিল ! একটানা ২/৩ দিন বাড়ীতে থাকতে দাদাকে খুব কমই দেখেছি । কিন্তু আমাদের ওই সময় খুবই আনন্দ হয়েছিল কারণ ওই ক’দিন ‘দাদা’ (গুরু মহারাজ) নিজে বাজার যেতো এবং বাজার থেকে নানান জিনিস কিনে আনতো । ফলে ঐ কদিন বাড়ীতে তোড়জোড়ের খাওয়াদাওয়া ! ওই সময়ে ‘দাদা’ একদিন মা-কে বলল – ‘চল মা – তোমাকে নিয়ে স্টুডিও-য় যাবো । তোমার সাথে ফটো তুলব !’ এই বলে ‘দাদা’ সেদিন মা-কে নিয়ে গিয়ে তিনটে ফটো তুলেছিল (সম্ভবত আমরা ঐ সময়কার দুটো ফটো পাই , আর একটা হয়তো শুধু মা-এর ছবি ছিল)।”
তাছাড়া গৌতম সেইসময়ের আর একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেছিল ! সেটা হচ্ছে – ” একদিন বিকালে সবার খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাবার পর ‘রবিদাদা’ বৌদিদেরকে ডাকল এবং তাদের কাছে থাকা ছবির এ্যালবাম্-গুলো আনতে বলল ! সেখানে বিভিন্ন সময়ে তোলা পারিবারিক ছবির মধ্যে যেটি যেটিতে গুরু মহারাজের ছবি ছিল সেগুলি খুলে খুলে এক জায়গা করতে লাগল ৷ এমনকি ছবির Negative গুলোও খুঁজে খুঁজে বের করল। এইভাবে সব বৌদিদের কাছ থেকে অ্যালবাম নিয়ে সমস্ত ছবি (যেগুলিতে গুরুমহারাজ ছিলেন, হয়তো বিভিন্ন pose এর ছবি ছিল, ফ্যামিলি ফোটো যেমন হয় আর কি!! হয়তো কোন বৌদির কাঁধে হাত _এরকম হোতেই পারে! কারন ভগবান যার সাথে যে লীলাই করেছেন _তা তো নিখুঁত ছিল!) এবং সেগুলোর নেগেটিভ বের করে __সেগুলিকে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে পুকুরের জলে ফেলে দিয়েছিল। এটা কেন করা হোল তার উত্তরে উনি বলেছিলেন _”যে পরিচয়ে এতদিন তোমরা আমাকে জানতে _এখন থেকে সেই পরিচয় শেষ! এখন থেকে আমার নতুন পরিচয়! তোমাদের সাথেও এখন থেকে আমার নতুন সম্পর্ক!”
এসব কথার মর্মার্থ তখন গৌতম অতটা বোঝেনি কিন্তু মায়ের হাবভাব, আচার-আচরণ দেখে ও এটা বুঝেছিল যে কিছু একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে !
গৌতম বলেছিল যে, ঐ কদিন রবিদাদা সবসময় মায়ের কাছাকাছি থাকতো, নানান মজার মজার কথা বলে মা-কে হাসি-খুশিতে রাখার চেষ্টা করতো! কিন্তু গৌতম দেখেছিল যে গভীর রাতে মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো!
বহু আগে থেকেই গুরুমহারাজ মা-কে বলে রেখেছিলেন _”তাঁর জগতে আগমন মানুষের জন্য, গৃহকোনে আবদ্ধ থাকার জন্য নয়!” তাছাড়া ‘মা’ নিজেও এটা জানতেন যে_” ‘রবি’ (গুরুমহারাজ) শুধু আমার নয়, রবি সবার! সুর্য(রবি) যেমন সব জায়গায় সমানভাবে আলো দেয় _রবি ও তেমনি ভালো-মন্দ, ভক্ত-অভক্ত, সাধু-অসাধু সবার!”
তবুও তো মায়ের মন ! মা সবই জানতেন_সবই বুঝতেন, কিন্তু সন্তানকে ছাড়তে আর কোন মা চায়!!
গুরুমহারাজের মা, জননী নিভারানী নিশ্চিত জানতেন যে তাঁর ছেলে রবি, তাঁকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না! সদা-সর্বদা তাঁর কাছে কাছেই থাকবেন! স্থুলে কাছাকাছি না থাকলেও সুক্ষে বা অন্য কোনভাবে থাকবেনই! তাই ছেলেকে জগতের কাজে ছেড়ে দেবার আগে মা একটাই মাত্র দাবী রেখেছিলেন তাঁর আদরের পুত্র ভগবান পরমানন্দের কাছে_’মৃত্যুর সময় যেন উনি তাঁর পাশে থাকেন!’
তাই হয়েছিল! শরীর ছাড়ার সময় বনগ্রাম আশ্রমে গুরুমহারাজের কোলে মাথা রেখেই শরীর ছেড়েছিলেন মহিমময়ী মাতা “জননী নিভারানী” ।(ক্রমশঃ)